Reading Time: 4 minutes

“ইন্টেরিয়র ডিজাইন” কথাটি শুনলে আপনার মাথায় প্রথমে কোন কথাটি আসে? কিছু মানুষ ধারণা করেন ইন্টেরিয়র ডিজাইন মানে কেবলই নতুন স্পেসে ফিচার অ্যাড করে দেয়া। আর বাকিরা ভাবেন, পুরোনো আসবাবকে নতুন দিয়ে বদলে ফেলার মত বড় বড় পরিবর্তনই যেন ইন্টেরিয়র ডিজাইন। কিন্তু, ইন্টেরিয়র ডিজাইনের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে যেগুলোর অংশ এই ধারণাগুলো। তাই এই ধারনাগুলোও একদম মিথ্যা নয়। কিন্তু বাকি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো কী কী সেই সম্বন্ধে জানতে হবে। ইন্টেরিয়র ডিজাইনের এক একটি মৌলিক উপাদান যেমন, স্পেস থেকে শুরু করে প্যাটার্ন সবকিছুর পারফেক্ট ব্লেন্ডিং এর ফলেই কিন্তু নান্দনিক ইন্টেরিয়র তৈরি হয়। তাই আপনার ইন্টেরিয়য়ের যেকোন ধরণের পরিবর্তন করার আগে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের মৌলিক উপাদানগুলো সম্বন্ধে জেনে নিন। এই ৭ টি মৌলিক উপাদান সম্বন্ধে জানলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন এগুলো কিভাবে একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। 

ডেকরেটিভ আইটেম
ইন্টেরিয়র ডিজাইনের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে

স্পেস 

যেকোন স্পেসকে ডিজাইনের দিক থেকে ফাংশনালি সর্বোচ্চ ব্যবহার করার লক্ষ্যেই ইন্টেরিয়র ডিজাইন মূলত কাজ করে থাকে। তাই এই স্পেসিংকে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের অন্যতম মৌলিক উপাদান হিসাবে ধরা হয়। ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা যেকোন স্পেস যখন মডিফাই করতে যান তখন স্বভাবতই কিছু প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হন। সাধারণত, স্পেসকে দুটি প্রধান বিভাগে ভাগ করা হয়, একটি পজিটিভ অন্যটি নেগেটিভ! পজিটিভ স্পেস হচ্ছে, যেখানে কোন জিনিস বা বস্তু রাখা আছে আর নেগেটিভ স্পেস হচ্ছে জিনিস বা কোন বস্তুর মাঝের ফাঁকা জায়গা। এই ধরুন, ঘরের বাকি আসবাব চারদিকে রাখা থাকলেও ঘরের মাঝের জায়গাটা একদমই খালি এটা এক্ষেত্রে নেগেটিভ স্পেস! পজিটিভ ও নেগেটিভ স্পেসের ভারসাম্য বজায় রেখে নির্দিষ্ট স্পেসের ইন্টেরিয়রটা ডিজাইন করা উচিত। উদাহরণে বলা যায়, ঘরে যদি আসবাব বেশি হয়ে যায় এক্ষেত্রে ঘরের ভেতর হাটাচলার জন্য জায়গা খুব বেশি থাকে না। বরঞ্চ, কিছু জায়গায় আসবাবও রাখলেন যাতে ঘরের ভেতর মিনিমাল ভাব থাকে আবার কিছু জায়গা খালিও রাখলেন যাতে করে ইন্টেরিয়র ফাংশানালিটির জন্য সুযোগ থাকে। অন্যদিকে, যদি কেউ ম্যাক্সিমালিটি পছন্দ করেন এক্ষেত্রে এর বিপরীতও করতে পারে। 

লাইট

লাইট
মুড লাইট এই দিক দিয়ে আলাদা

লাইট ইন্টেরিয়র ডিজাইনের এমন একটি মৌলিক উপাদান যে কিনা যেকোন ডিজাইনে মান বাড়ানো বা কমানোর ক্ষমতা রাখে। সুতরাং এই লাইট বাছাই এ আমাদের হতে হবে শতভাগ সতর্ক। লাইটকে আমরা ৩ ভাগে ভাগ করা যায়, টাস্ক লাইটিং, অ্যাকসেন্ট লাইটিং এবং মুড লাইটিং! নির্দিষ্ট স্থান বা বস্তুকে হাইলাইট করার জন্য টাস্ক লাইটিং ব্যবহৃত হয়। পেনডেন্ট লাইট বা টেবিল ল্যাম্প টাস্ক লাইটের ভাল উদাহরণ। অ্যাকসেন্ট লাইট নির্দিষ্ট দিকের উপর জোর দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। আর্ট ওয়ার্ক বা নির্দিষ্ট কোন স্থান হাইলাইট করতে ব্যবহৃত হয়। অ্যাকসেন্ট লাইটগুলো প্রায়শই ওয়াকওয়ে বা সিনেমা হলে বা কখনও সিঁড়িতে সাজাতে দেখা যায়। মুড লাইট এই দিক দিয়ে আলাদা। মুড লাইটিং একটি ঘরের ভেতরে পছন্দসই পরিবেশ তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। ঘরের ভেতর আলাদা একটা পরিবেশ বা ভাব তৈরি করতে এই মুড লাইটের জুড়ি নাই। 

কালার

ঘরের ভেতর আলাদা একটা মেজাজ তৈরি করার জন্য আপনি রঙকে নিশ্চিন্তে বেছে নিতে পারেন। এটা ইন্টেরিয়র ডিজাইনের অন্যতম মৌলিক উপাদান যা কিনা ঘরের ভেতর মেজাজ সেট করতে যেমন পারে তেমনি ঘরটি কত বড় বা ছোট সেই ধারণার রূপান্তর করারও ক্ষমতা রাখে। রঙের পছন্দ সাধারণত একজন থেকে অন্যজনে পরিবর্তিত হয়। অনেকে আছে প্রাণবন্ত রং ব্যবহার করতে পছন্দ করে আবার কেউ কেউ আছে নিউট্রাল পছন্দ করেন। ঘরের জন্য কোন রঙ বেছে নিবেন সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ঘরটি কোন উদ্দ্যেশ্যে ব্যবহার হবে তা আগে ঠিক করুন। দেয়ালের জন্য গাঢ়  রঙগুলো বেছে নিলে ঘরের ভেতর একটা গুমট ভাব ভিরাজ করে। অন্যদিকে হালকা রঙের দেয়াল হলে ঘরটা বেশ খোলামেলা দেখায়।

প্যাটার্ন 

বেডরুম
প্যাটার্ন ব্যবহারে ঘরের ভেতর চলে আসে নতুনত্ব

ইন্টেরিয়র ডিজাইনের মৌলিক উপাদান গুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, প্যাটার্ন! প্যাটার্নের লাইন আর ফর্মের কারণেই ঘরের সৌন্দর্য আরও নিখুঁত ভাবে ফোটে উঠে! হোম ডেকোরে ড্রামা অ্যাড করার জন্য প্যাটার্নের জুড়ি নেই। এমনকি প্যাটার্ন ব্যবহারে ঘরের ভেতর চলে আসে নতুনত্ব।প্যাটার্নও আপনাকে রঙের সাথে ঘরের মেজাজ বদলে দিতে পারে। কিন্তু তার জন্য আপনাকে প্যাটার্নকে রঙের সাথে বা ডিজাইনের সাথে মিলিয়ে ব্যবহার করতে হবে। দেখে যেন খাপছাড়া না মনে হয়! নানা রূপে আপনি প্যাটার্ন পেতে পারেন। ওয়ালপেপার থেকে শুরু করে স্ট্রাইপ, প্রিন্টস বা কোনও ফটোগ্রাফ এই সবকয়টি উপায়েই আপনি প্যাটার্ন ব্যবহার করতে পারেন। তবে প্যাটার্ন ব্যবহার করার আগে ঘরের স্টাইল ডেকোর আগে ভালভাবে বিবেচনা করা উচিত। যে এই স্টাইলে প্যাটার্ন আদৌ মানাবে কিনা!

লাইন 

হোম ডেকোরে লাইন খুঁজে পাওয়া যায় ৩ টি ফর্মে, হরাইজন্টাল, ভার্টিকাল এবং ডাইন্যামিক। ডিজাইনে হরাইজন্টাল ব্যবহৃত হয় স্থিতিশীলতা এবং প্রশান্তির বোধ তৈরি করতে। ভার্টিকাল লাইনগুলো ব্যবহৃত হয় যেকোন ঘরকে লম্বা আকারে দেখাতে। এগুলো সাধারণত অফিস বা ডাইনিং স্পেসের জন্য ব্যবহৃত হয়। আর ডাইন্যামিক লাইনগুলো বেশ প্রাণবন্ত আর চঞ্চল একটা মেজাজ এনে দেয়। ডাইন্যামিক লাইন আপনি দেখতে পারবেন কার্ভড শেপে, জিগজ্যাগ ও তির্যক ফর্মে। ডাইন্যামিক লাইনগুলো সিঁড়িতে দেখতে বেশ ভাল মানায়।

ফর্ম 

বেডরুম
হোম ডেকোরে প্রোগ্রেসিভ লুক আনতে ফর্ম ব্যবহার করা যেতে পারে

ফর্ম হ’ল ইন্টিরিওর ডিজাইনিংয়ের অন্যতম মৌলিক উপাদান। এটা শেপেরই আর একটি টার্ম। ইন্টেরিয়র ডিজাইনে ফর্ম একটা সংযোগ স্থাপন করতে পারে। হোম ডেকোরে প্রোগ্রেসিভ লুক আনতে ফর্ম ব্যবহার করা যেতে পারে। ফর্ম ‘জ্যামিতিক’ বা ‘ন্যাচারাল’ ও হতে পারে। ন্যাচারাল ফর্ম প্রাকৃতিক একটা অনুভূতি দিলেও, ‘জ্যামিতিক ফর্মগুলো স্বতন্ত্রভাবে কাজ করে থাকে স্কোয়ার বা ত্রিভুজকে হাইলাইট করার জন্য। ঘরকে আরও দৃষ্টি নন্দন দেখাতে ফর্মগুলোর ভেতরে স্পেস ব্যবহৃত হয়ে থাকে। নিশ্চিত করুন যে দেয়ালে তৈরি ফর্মগুলি যেন আকারে সুন্দর আর অভিন্ন হয়। ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের উপর নির্ভর করে পুরো কনসেপ্টটাকে কিভাবে মিলিয়ে মিশিয়ে উপস্থাপন করবে। ফর্ম নিয়ে কাজ করার সময় আপনাকে রুমের অনুপাত এবং স্কেল নিয়েও ভাবতে হবে। এই দুটো বিষয়ই আপনাকে সাহায্য করবে ঘরের স্পেস এবং ডেকোর আইটেম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে। 

টেক্সচার 

টেক্সচার ঘরের ভেতর ডেপথ এবং ডিটেইলস যোগ করে। এটিকে দুটি রূপে ভাগ করা যায় – ভিজ্যুয়াল টেক্সচার এবং একচুয়াল টেক্সচার। ভিজ্যুয়াল টেক্সচারটি কেবলমাত্র সেই টেক্সচারকে বোঝায় যা ওয়ালপেপারের মতো মানুষের চোখে ধরা পড়ে। অন্যদিকে থ্রি ডি বৈশিষ্ট্যযুক্ত বস্তুগুলির সাথে সম্পর্কিত হয় এই একচুয়াল টেক্সচার, উদাহরণস্বরূপ ফ্লাফি বা সিল্কের কুশন। দেখার পাশাপাশি স্পর্শ করার সাথে কোনও বস্তু কীভাবে অনুভূত হয় তার সাথে, এটির আরও বেশি সম্পর্ক রয়েছে। টেক্সচার একটি ঘরে প্রধান ভূমিকা পালন করে এবং তাই শুরু থেকেই টেক্সচারকে ভালভাবে ইন্টেরিয়র ডিজাইনে পরিচালনা করা উচিত। টেক্সচার হতে পারে নানানকিছু, আয়না, কাগজ, কাচ, রেশম, সুতি এবং আরও জিনিস হতে পারে। আপনার ঘরের টেক্সচার সম্বন্ধে এখনই মনোযোগী হোন। 

এই ছিল ইন্টেরিয়র ডিজাইনের মৌলিক কিছু উপাদান! আর এই উপাদানগুলোর গুরুত্ব এবং প্রভাব তো আমরা জেনেছি। কেমন লাগলো আজকের এই ব্লগ, আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন।

Write A Comment