একটি দিনকে ঘিরে আমাদের সব আয়োজন। সারা বছর অপেক্ষা করে থাকা কবে আসবে ঈদ। কবে আলমারির নতুন পোশাকটা ভাঁজ খুলে পরবো! কবে মজাদার সব খাবার খাবো। ঈদের দিনের একটা অন্যরকম মায়া আছে। সকালে ঘুম থেকে জলদি উঠে পড়া। সবার সাথে নামায আদায় করা এরপর বাড়ি ফিরে মজাদার সব খাবার খাওয়া। আত্মীয়স্বজনদের বাড়ি ঘুরতে যাওয়া এই সবকিছুই ঈদের এই দিনটিকে করে আরও স্পেশাল। ঈদের দিনের অনুভূতিটাই আসলে ভিন্ন। মুসলমানদের জন্য এই দিনটির তাৎপর্য অনেক। কেবল মুসলমান বললে ভুল হবে। গোটা দেশ এই দিনটি উদযাপন করে থাকে এক ভিন্নরূপে। চলুন একটু একটু করে জানবো কীভাবে এই দিনটিকে উদযাপন এবং ঈদের আনন্দ ভাগ করা হয়।
ঈদের তাৎপর্য
বিশ্বজুড়ে মুসলমানেরা অত্যন্ত আনন্দ এবং গুরুত্ব সহকারে ঈদের দিনটি উদযপন করে থাকে। শাওয়াল মাসের প্রথম দিনে পৃথিবীর সব জায়গায় এই দিনটি উদযাপিত হয়। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে এই খুশির দিনটি। একটি মাস সংযম করার পর, রোজা রাখার পর এই দিনটি বয়ে আনে পরিবার নিয়ে আনন্দ ও মনভরে উদযাপন করার সুযোগ। রমজান মাসে মুসলিমরা কেবল খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকে না, বিরত থাকে সবধরনের খারাপ কাজ করা থেকেও যা ইসলামে বলা আছে। রমজান মাসের জন্য যেমন পূর্ব প্রস্তুতি চাই তেমনি প্রয়োজন রমজানে সুস্থ থাকা। কেননা হুট করে আমাদের ডেইলি রুটিনে চলে আসে পরিবর্তন। সারা মাস আমরা চলি এক নতুন রুটিনে। মেনে চলি অনেক নিয়ম কানুন তাই হয়তো ঈদের আনন্দ আরও বেড়ে যায়। যারা সারা মাস রোজা রাখেন, তারাবীহ সালাত আদায় করেন এবং কোরআন পাঠ করেন এই একটি দিন তাদের জন্য
অনেক অর্থবহ। ঈদের নামাজ আদায় করে প্রিয়জনদের সাথে ঘুরে ফিরে এবং মজাদার খাবার খেয়ে আমরা সবাই এই দিনটি কাটাই।
ঈদ উদযাপনের উদ্দেশ্য
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) পবিত্র এই দিনটির সূচনা করেছিলেন। রমজানের শেষে প্রথমবারের মতো অবতীর্ণ হয়েছিল মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ পবিত্র কোরআন। এই দিনে কোরআন শরীফকে পাওয়ার আনন্দে, আল্লাহ্ তাআলাকে ধন্যবাদ জানাতে সমগ্র বিশ্ব ঈদ উদযাপন করে থাকে। এছাড়াও, সারা মাস রোজা রাখার সমাপ্তি হিসেবেও এই দিনটিকে বেশ আনন্দঘনভাবেই উদযাপন করা হয়।
ঈদুল ফিতর উদযাপন
হিজরি পঞ্জিকার দশম মাস শাওয়ালের চাঁদ দেখে শুরু হয় ঈদুল ফিতর। টানা ৩০ দিন সিয়াম সাধনার পর কাঙ্ক্ষিত এই দিনটি আসে। তাই বরাবরের মত এই দিনটি হয় বিশেষ। চাঁদ রাত থেকেই শুরু হয়ে যায় নানা রকম আয়োজন। মাঝরাত অব্দি চলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর খাওয়া-দাওয়া। সকল বয়সী মেয়েরা হাতে মেহেদি দিয়ে আঁকে নানা নকশা। উৎসবের এই আমেজটি ঈদের আগের দিন থেকে শুরু হয়, চলতে থাকে ঈদের পর কয়েকদিন পর্যন্ত। আর এই দিনগুলোতে প্রিয়জনদের বাসায় বেড়াতে যাওয়ার হিড়িক পড়ে যায়। সম্ভবত ঈদের এই কাজটিই সবচেয়ে আনন্দের। প্রিয়জনদের সাথে কাটানো প্রতিটা মূহুর্তই অনেক মূল্যবান তার মধ্যে তা যদি কাটে ঈদের সময়ে, তাহলে তো কথাই নেই। শুধু দেশেই নয় বিশ্বজুড়ে এই দিনটি প্রচুর আনন্দের সাথে উদযাপিত হয়। ঈদুল ফিতরে গরিব দুঃখীদের যাকাত ও ফিতরা প্রদানে আনন্দ যেন দ্বিগুণ হয়ে যায়। যদিও এই বছর মহামারীজনিত কারণে, ঈদ উদযাপনে অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকবে তাই বলে ঈদের আনন্দ কমে যাবে তা কিন্তু নয়! বরং বাড়বে আরও বহুগুণে।
ঈদুল আযহা উদযাপন
ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এখন কোরবানির ঈদ উদযাপন করে। এটি একটি সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে তাই কোন অ্যাকটিভিটির অভাব নেই। তবে কোরবানির ঈদে ঈদুল ফিতরের মত আনন্দ উল্লাস থাকে না। এই ঈদটি স্বভাবতই ত্যাগের তাই, সকলের কর্তব্য পালনের দিকে মনোযোগ থাকে বেশি। কিন্তু তাই বলে আনন্দের রথ থেমে থাকে না। সকালের ঈদের নামায শেষে সকলে একত্রিত হয়ে কোরবানির পশু কোরবানি করার মাধ্যমে, এই ঈদের প্রধান দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কোরবানির ঈদের একটি বিশেষ ব্যাপার হল, কোরবানির আগ পর্যন্ত বাসার ছেলেরা উপোস থাকেন। কোরবানি সম্পন্ন হলে তবেই তারা মুখে খাবার নেন। তারপর কোরবানির পশু কাটাকাটি ও ভাগাভাগির কাজ শুরু হয়ে যায়। কোরবানির মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ নিজেদের জন্য রেখে বাকি ২ ভাগ সমাজের সকল শ্রেণী পেশার মানুষদের মধ্যে বিতরণ করা হয়ে থাকে। এরপর ভাগ করা মাংস নিয়ে এলাকায় কিংবা আত্বীয় স্বজনদের বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। এরপরই সদ্য কোরবানি হওয়া মাংস রান্না করার জন্য ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়। পরিবারের সকলে মিলে ঈদে এক সাথে খাওয়া-দাওয়া করেন। কোরবানির ঈদ চলে ৩ দিন যাবত। এই ৩ দিনই বেশ উৎসবের আমেজে কাটে। দাওয়াত খাওয়া এবং ঘোরাফেরার মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হয়। বড় ছোট সকলে বেশ আনন্দে এই দিনগুলো উপভোগ করে থাকে। ছোটরা সালামী সংগ্রহ করতেও বেড়িয়ে পড়ে ঈদের সকাল থেকেই। সবমিলিয়ে কোরবানির ঈদ কাটে বেশ উৎসব আমেজে।
বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মুসলমান এই দিনটিকে আনন্দের সাথে উদযাপন করে থাকেন। পৃথিবীর প্রায় সব কোণে রয়েছেন মুসলমানেরা। কমবেশি প্রায় সব দেশেই ঈদের দিনটি একইভাবে উদযাপিত হলেও কিছু তো ব্যতিক্রম থাকবেই। রমজানের রোজা আত্মনিয়ন্ত্রণের শিক্ষা দেয়। অন্যদিকে ঈদুল আযহা আমাদের শিক্ষা দেয় আত্মত্যাগের।