আপনার স্বপ্নের বাড়িটি তৈরি করায় পুরাতন নির্মাণ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে আসতে পারে মারাত্মক ফলাফল। এই বিল্ডিংগুলো অজান্তেই কোন এক দূর্ঘটনা ডেকে আনবে, যা কেড়ে নেবে অসংখ্য নিরীহ প্রাণ। পুরানো পদ্ধতি এবং ফ্ল্যাট স্ল্যাবের মতো প্রযুক্তি দিয়ে নির্মিত যেকোন বিল্ডিংই ভূমিকম্পের কারণ হতে পারে। তাই নিঃসন্দেহে এই বিল্ডিংগুলোকে “বিপজ্জনক” হিসাবে আখ্যায়িত করা যেতেই পারে। এমনকি নির্মাণকালীন সময়ে পুরাতন প্রযুক্তি ব্যবহারও ঝুঁকির কারণ হতে পারে।এমন বিপজ্জনক পরিণতি এড়াতে উন্নতমানের নির্মাণ প্রযুক্তি সম্বন্ধে আরও জানি।
দ্রুত কার্য প্রক্রিয়াকরণ

প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত বিকশিত হচ্ছে। অনেকগুলো নির্মাণ শিল্পের কঠোর পরিবর্তনের কারণে তারা আজ সফলতার শীর্ষে। এমনকি তাদের দৈনন্দিন অপারেশনগুলোও উন্নতমানের প্রযুক্তি দিয়েই সম্পন্ন হচ্ছে। সুতরাং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এবং দ্রুত এগিয়ে যেতে উন্নত নির্মাণ প্রযুক্তির অবশ্যই কোন বিকল্প নেই। এই ক্ষেত্রে বলাই যায় উন্নত প্রযুক্তি একটি আশীর্বাদ। বর্তমান অবস্থায়, আমরা যদি সামগ্রিক নির্মাণ শিল্পের কথা চিন্তা করি,তাহলে আমরা দেখতে পাই যে তারা নতুন প্রযুক্তিগত পদ্ধতিগুলোকে ব্যবহার করার জন্য তাদের নিজস্ব ব্যবসায় এনেছে লক্ষণীয় পরিবর্তন।
প্রকল্প পরিচালকদের জন্য সহজ স্ট্রিমলাইন রাখা

উন্নত প্রযুক্তির সুবাদে প্রকল্পে ম্যানুয়ালি কাজ করা এখন অনেকটাই কমে আসছে। এখন অনেক প্রকল্প পরিচালকরা আর তাদের টিমের জন্য ম্যানুয়ালি প্রকল্পের প্ল্যান, ম্যাপ বা লিস্ট কোনটাই এখন আর তৈরি করেন না। উন্নত মোবাইল প্রযুক্তি এবং প্রকল্প পরিচালনার সফ্টওয়্যার এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলোর কল্যাণে ম্যানুয়ালি কাজের দিনগুলোর থেকে বরং আরও দ্রুত ও সহজে কাজ করতে পারেন। তাই প্রকল্প পরিচালকরা তাদের কর্মীদের সাথে মোবাইলের দ্বারা দ্রুত যোগাযোগ এবং থ্রি ডি মডেলের সাহায্যে প্রকল্প ভালমত বোঝাতে পারেন। এতেও তাদের প্রকল্প নির্মাণে অনেক বেশি অগ্রগতি আসে। এই উন্নত প্রযুক্তি অবলম্বনের কারণে প্রকল্পের ব্যয় অনেকটা কমে আসে।
ঝুঁকি কমে আসা

কোন সফ্টওয়্যার কীভাবে কোন নির্মাণ প্রকল্পের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করবে তার জন্য আগে জানতে হবে, ঝুঁকিগুলো কী কী এবং কিভাবে তা ঘটতে পারে। সাধারণত, নির্মাণ সাইটগুলোর প্রধান ঝুঁকিগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে, যেমন- ফিনান্স, সময় সূচি/ রোস্টার, এবং ডিজাইন / নান্দনিকতা।
ফিনান্স / অর্থায়ন
বাজেটের বাইরে অর্থ খরচ হওয়া মূলত একটি দূর্বল পরিকল্পনারই ফলাফল বলা যায়। বাংলাদেশের বেশিরভাগ প্রকল্পেই দেখা যায় নজরদারি ও পর্যবেক্ষণতার অভাব থাকে। তাই, অ্যাকাউন্টগুলোর নিয়মিত তদারকি ও ফিনান্সিয়াল রিপোর্টের যথাযথ বিশ্লেষণ প্রকল্পে ব্যয় হওয়া অর্থের হ্রাস কমিয়ে আনতে পারে।
সময় সূচি/ রোস্টার
নির্মাণ শিল্পের মত গুরুত্বপূর্ণ শিল্পের জন্য সময় সবচেয়ে মূল্যবান একটা উপকরণ। অপরিকল্পিত রোস্টার প্ল্যান শুধু সময়ই ব্যয়ই করে না, বরং অর্থও ব্যয় করে। ছোট কোন ভুল কিংবা একটু সময়ের হেরফের বড় বড় রোস্টার প্ল্যানকে অর্থহীন করে তুলতে পারে। সুতরাং, সাইট ইঞ্জিনিয়ার বা প্রকল্প পরিচালকদের দ্বারা বিভিন্ন সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে তৈরি করা সঠিক রোস্টার প্ল্যান সকলের সময়কে সঠিক ভাবে ট্র্যাক করতে পারবে।
ডিজাইন / নান্দনিকতা
অনেক নির্মাণ কাজই পরিচালকরা করে থাকেন ডিজাইনের উপর জোড় দিয়ে, দ্রুত সময়ে যাতে প্রকল্প নির্মাণ হয় তাই তারা প্রকল্পের মান এড়িয়ে শুধু নান্দনিকতার উপর জোড় দেন বলে। কম সময়ে প্রকল্প নির্মাণ করার জন্য তারা মাটি পরীক্ষা, রড টেস্টিংয়ের পাশাপাশি উপাদানগুলির মিশ্রন যথাযথভাবে পরীক্ষা করেন না। এতে কিন্তু প্রকল্প ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।
অপারেশনাল নির্ভরতা

যতই প্রযুক্তি উন্নত হবে তা ততোই অপারেশনাল দিক থেকে নির্ভুল হবে। কেননা, প্রতিটি লেভেলের গণনা প্রযুক্তিগত অপ্টিমাইজেশন দ্বারা হয়ে থাকে। মাটির পরীক্ষা, রডের কাঠামো, পাইপ টেস্টিং বা পেট্রোল টেস্টিং, আধুনিক সরঞ্জাম এবং মেশিনগুলি আনুমানিক ফলাফলের চেয়ে একদম সঠিক এবং নির্দিষ্ট ফলাফল পাওয়া বেশ জরুরি। যেকোন প্রকল্পের প্রকৃতি কেমন তার বোঝা একজন পরিচালকের জন্য বেশ জরুরী তা নাহলে সঠিক পরিকল্পনা হবে কিভাবে। অটোমেটেড যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে কারিগরদের কাজ ভাগ করা সহজ হয়ে উঠে। পরিচালকরা এই সকল উপায়ে সহজেই কাজ সম্পন্ন করতে পারেন।
- ডেটা, রিপোর্ট এবং ডকুমেন্টেশনের অ্যাক্সেস করা
- গোপনীয় তথ্যের সহজ এনক্রিপশন
- স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা বৃদ্ধি
- উৎদনশীলতা বৃদ্ধি
- শ্রমের সহজ বিভাজন
- মেশিনারিজ ব্যবহার যেমন, ইট মিশ্রণকারী, আর্টিকুলেটেড ট্রাক, কোল্ড প্ল্যানার, কমপ্যাক্টর, কমপ্যাক্ট ট্রাক এবং মাল্টি টেরেন লোডার। এছাড়া, বৈদ্যুতিক দড়ি বেলচা, ড্রিলস, খননকারী,মোটর গ্রেডার, হাইওয়ে ট্র্যাক, জলবাহী খনির শাওয়ার, ড্রাগগলাইন ইত্যাদি।
শক্তি সংরক্ষণ ও সম্পদ ব্যবহার

বিল্ডিং অটোমেশন সিস্টেম (বিএএস) ইকোফ্রেন্ডলি ভবিষ্যতের গড়ার জন্য জনপ্রিয় হয়েছে। এটি একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্যানেল যা কিনা বিল্ডিংয়ের বহুমুখী কার্যকারিতাকে নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করে। এর মধ্যে এইচভিএসি আই হিটিং, ভেন্টিলেশন এবং এআইআর-কন্ডিশনিং অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার মধ্যে রয়েছে অটোমেটেড লাইটিং সিস্টেম। এর পাশাপাশি আগুনের ঝুঁকি, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট এবং গ্যাসের লিকেজ থেকে সুরক্ষা। বেশীরভাগ পুরানো বিল্ডিংগুলোতে, এই সিস্টেমগুলোর কোনও ধরণের আন্তঃসংযোগতা নেই, যার ফলে, বেশিরভাগ সময়ই এই শক্তিগুলো নষ্ট হতে থাকে। এগুলো স্থাপন ও বজায় রাখতে অনেক ঠিকাদার এবং প্রকল্প পরিচালকরা একে অপরকে সহযোগিতা করছেন। যার ফলে নির্মাণ কাজে আসছে অগ্রগতি এবং একঘেয়ে ভাব কমে আসছে।
বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট সেক্টরগুলো এই ধরণের যুক্তিগত অগ্রযাত্রায় নিজেদেরকে সমানভাবে উন্নত করছেন। যেমন বিপ্রপার্টি অনলাইন রিয়েল এস্টেট মার্কেটপ্লেস চালু করার পর থেকে বাংলাদেশে এক ধরণের বিপ্লব এনেছে যার এই সেক্টরে আরও অনেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে।