Reading Time: 6 minutes

কাঠের আসবাবের রয়েছে আলাদা ঐতিহ্য। কাঠের আসবাবের সঠিক উপায়ে যত্ন নিলে বহুদিন সহজেই টিকে যায়। সময়ের সাথে এবং প্রতিদিনের ব্যবহারের ফলে কাঠের আসবাবে দাগ পড়ে যায় বা রঙ উঠে যায়। অনেক সময় ছোপ ছোপ দাগের কারণে নতুন আসবাব দেখতে বেশি পুরনো মনে হয়। কিন্তু, কাঠের এই একেকটি আসবাব তৈরি করতে যেমন সময়, শ্রম আর অর্থ লেগে যায়, তেমনি অনেকেই কাঠের আসবাবকে সহজে বাতিল করতে চায় না। তখনই দেখা যায় নতুন করে রঙ বা স্টেইন করিয়ে নেয়ার প্রয়োজন হয়। কাঠের এই আসবাবে ফিনিশিং দিতে বার্নিশ, তেল আর মোমের ব্যবহার হচ্ছে বহু আগে থেকেই। একটু রঙ বা স্টেইন দিলেই আসবাব হয়ে ওঠে চকচকে। কাঠের আসবাবে নতুনত্ব যোগ করতে স্টেইন বা কালার করার যেন কোন জুড়ি নেই। 

কাঠের এই আসবাবগুলো বেশ দামী। একবার কিনলে সবারই উদ্দেশ্য থাকে অনেকদিন ব্যবহার করার। কিন্তু, সময়ের সাথে ইন্টেরিয়রে যোগ হতে থাকে একেক রকম ট্রেন্ড আর স্টাইল। তখন কিন্তু সময়ের সাথে তাল মেলাতে ইচ্ছা করে ভীষণ। এমন অবস্থায় যাদের আসবাব কাঠের তাদের জন্যই আজকের এই আর্টিকেল। কাঠের আসবাবের চেহারা পুরোটা বদলে দিতে পারে স্টেইন বা কালার। এখন যেমন রঙিন আসবাবের ট্রেন্ড চলছে, আপনি চাইলে বাসার যেকোনো আসবাব কালার বা স্টেইন করে নিতে পারবেন। পুরনো আসবাবে নতুনের ছোঁয়া আনার এই উপায়টি খুব কাজের। আর এই স্টেইন বা কালারের কাজটা আপনি চাইলে নিজেই করতে পারছেন। কীভাবে করবেন সেই উপায় বলছি। আসুন দেখে নেয়া যাক কাঠের আসবাব স্টেইন বা কালার করার উপায় সমূহ কী রকম! 

শুরু করার আগে কিছু কথা

কাঠের আসবাব স্টেইন বা কালার করার উপায়
প্রস্তুতি নিতে হবে ভালো করে

আসবাব কালার বা স্টেইন করাটা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে পুরো প্রস্তুতিটি আসলে আপনি সঠিকভাবে নিচ্ছেন কিনা। কাঠের আসবাবকে ঘষে মেজে পরিষ্কার করে তৈরি করতে হয় তবেই এর উপর কালার বা স্টেইন বসবে। যদি আসবাবের গায়ে পূর্ববর্তী কোন রঙ বা দাগ লেগে থাকে তাহলে তা নতুন করে কালার বা স্টেইন করলে ফলাফল একদমই আশানুরূপ হবে না। সুতরাং, আপনি আসবাবটাকে কতটা প্রস্তুত করছেন এর উপরই নির্ভর করছে এর চূড়ান্ত ফলাফল। আসবাবের ফাইনাল লুক। 

সতর্ক বার্তা

আসবাব স্টেইন বা কালার করার জন্য জায়গাটা বেছে নিতে হবে বেশ ভেবে চিন্তে। সর্ব প্রথম ভ্যান্টিলেটেড একটি জায়গা বেছে নিতে হবে এবং স্টেইন করার সময় অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে। স্কিন থেকে স্টেইন এর দাগ সহজে উঠে না তাই গ্লাভসও পরিধান করতে হবে। সেই সাথে চোখে চশমা রাখা অত্যন্ত জরুরী। এই সব সতর্কতা অবলম্বন না করলে স্টেইন বা কালার করার এই প্রক্রিয়াটা আপনাকে শারীরিকভাবে অসুস্থ করতে পারে।

কাঠের আসবাব স্টেইন বা কালার করার উপায়
সরঞ্জাম সংগ্রহ করুন

আপনার যা যা প্রয়োজন

সরঞ্জাম

সিরিজ কাগজ
সিরিজ ফোম বা সিরিজ ব্লক
ব্রাশ
মাইক্রো ফাইবার স্টেইনিং প্যাড
ভ্যাকিউম ক্লিনার মেশিন
মাইক্রো ফাইবার কাপড়
ট্যাক ক্লথ
কনট্রাকটর মাস্কিং পেপার
খালি কালার ক্যান 

ম্যাটেরিয়াল 

স্টেইন
কালার কোটিং
সিরিজ পেপার

যেভাবে আসবাব স্টেইন বা কালার করবেন 

কাঠের আসবাব স্টেইন বা কালার করার প্রক্রিয়াটি বেশ সহজ। আপনি চাইলে নিজেই এই কাজটি করতে পারবেন। শুধু দরকার সময় আর কিছু প্রয়োজনীয় উপকরণের। 

কাজের জায়গা প্রস্তুত করুন

কাঠের আসবাব স্টেইন বা কালার করার উপায়
কাজের জায়গা তৈরি করুন

প্রথমত একটি ভ্যান্টিলেটেড জায়গা বেছে নিন। হতে পারে আপনার বাসার বাইরে খোলা মেলা কোন জায়গা কিংবা কোন গ্যারেজ যার দরজা খোলা থাকবে কিংবা কোন ভ্যান্টিলেটর যুক্ত কোন দোকান। বাতাস যেখানে বেশি এমন কোন জায়গা অবশ্যই এড়িয়ে যাবেন। কেননা, কাঠ থেকে যে গুঁড়ো গুলো বেরিয়ে আসবে সেগুলো বাতাসের কারণে ঘরের অন্যত্র দ্রুত ছড়িয়ে যেতে পারে। সুতরাং, এমন বাতাস যুক্ত জায়গা কোনভাবেই বেছে নেওয়া যাবে না। প্লাস্টিক শিট ফ্লোরে বিছিয়ে নিতে হবে যাতে করে সমস্ত ধুলো প্লাস্টিক শিটে জমা হয়। এতে করে ফ্লোর পরিষ্কার করতে আপনার অসুবিধা হবে না।

বাড়তি জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলুন  

আসবাব থেকে সমস্ত বাড়তি জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলুন। যেগুলো সিরিজ কাগজ দিয়ে ঘোষার প্রয়োজন নেই। যেমন, কবজা, নবস এবং অন্যান্য ডেকোরেটিভ জিনিসপত্র ফোম ইত্যাদি সরিয়ে ফেলুন। আসবাব ঘষার সময় এই জিনিসপত্র গুলো সরিয়ে ফেলা খুব জরুরী।

আসবাব সিরিজ কাগজ দিয়ে ঘষে নিন

সাবধানতার সাথে সিরিজ কাগজ দিয়ে পুরো আসবাব ঘষে নিন। গাঢ় কোন দাগ বা বার্নিশ তুলতে সিরিজ ফোম ব্যবহার করুন। শক্তিশালী এই সিরিজ ফোমগুলো যেকোন দাগ বা বার্নিশ সহজে তুলতে পারে। আসবাবের আনাচে কানাচে সিরিজ কাগজ দিয়ে ভালো করে ঘষতে হবে। অনেক সময় আসবাবের আনাচে কানাচে রঙ বা বার্নিশ থেকে যায়। তখন কালার বা স্টেইন করলে দেখা যায় রঙ বসতে চাইছে না। এক্ষেত্রে ভালো করে ঘষে কাঠের গা থেকে সমস্ত রঙ আর বার্নিশ তুলে ফেলতে হবে।   

ধলোবালি ঝেড়ে ফেলুন

কাঠের আসবাব স্টেইন বা কালার করার উপায়
পছন্দসই রঙ বেছে নিন

সমস্ত রঙ ঘষে তোলার পর ভ্যাকিউম ক্লিনার দিয়ে পুরো আসবাবটি ঝেড়ে ফেলুন। কোথাও যেন বিন্দু পরিমাণও ধুলোবালি না লেগে থাকে। ব্রাশ দিয়ে পুরো আসবাব পরিষ্কার করে নিতে হবে। সব ধুলো ময়লা ঝেড়ে পরিষ্কার করতে হবে। পরিষ্কার এবং সাদা মাইক্রো ফাইবার কাপড় দিয়ে পুরো আসবাব মুছে নিতে হবে। যাতে করে বিন্দু পরিমাণ ধুলোও যেন আসবাবের গায়ে না থাকে। আসবাবে যেকোনো কিছু লেগে থাকা মানেই কালার বা স্টেইন আসবাবে নিখুঁতভাবে বসবে না। 

স্টেইন বা কালার করার জন্য জায়গা প্রস্তুত করুন

আসবাবটি সরিয়ে নিন। প্লাস্টিক শিটটি আলতো করে সরিয়ে নিন খেয়াল রাখবেন ধুলো যেন ছড়িয়ে না যায়। প্লাস্টিক শিটটা সরিয়ে কাপড় বিছিয়ে নিন এবং কাপড়ের উপর বড় কাগজ বা খবরের কাগজ বিছিয়ে নিন। এরপর আসবাবটিকে সেটার উপর রাখুন। যাতে করে স্টেইন বা কালার করার সময় কাপড়টা যেন সরাসরি আসবাবের গায়ে না লেগে যায়। কাগজ যেহেতু বিছানো রয়েছে এক্ষেত্রে স্টেইন বা কালার কাগজে লাগলেও সেটা উঠিয়ে ফেলা আরও সহজ। তাই কাগজ বিছিয়ে রাখাটা অত্যন্ত জরুরী। 

স্টেইন বা রঙ মিক্স করুন

কাঠের আসবাব স্টেইন বা কালার করার উপায়
রঙ মিক্স করে নিন

হাতে গ্লাভস পরে নিন। হাতে গ্লাভস পরে স্টেইন বা কালার ক্যান ওপেন করুন। ওপেনিং কোন টুল বা স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে ক্যানটি খুলুন। এরপর কাঠের কোন স্টীক বা কাঠি দিয়ে রঙটি নাড়ুন। ভালো করে রঙ মিক্স করে নিন। একবার মিক্স করে নিলে ক্যানটিকে কোন ভাবেই নাড়াচাড়া করা যাবে না। প্রয়োজন হলে পরিমাণমত অন্য একটি খালি কালার ক্যানে প্রয়োজন অনুযায়ী রঙটি ঢেলে নিন। 

আসবাবে স্টেইন করা শুরু করুন

মাইক্রো ফাইবার স্টেইনিং প্যাড অথবা ব্রাশ দিয়ে আসবাব স্টেইন বা কালার করা শুরু করতে পারেন। স্টেইন ক্যানে প্যাড ডুবিয়ে নিন, এরপর বাড়তি পরিমাণ চেপে ঝড়িয়ে নিন। এরপর, এই প্যাড দিয়ে পুরো আসবাব স্টেইন করে নিন। আসবাবের যে জায়গাগুলো সহজেই দেখা যায় সেই স্থানগুলো আগে স্টেইন করতে পারেন, এরপর এই অংশ শুকিয়ে গেলে আড়ালে থাকা বা একটু ভেতরের স্থানগুলো রঙ করুন।

বাড়তি অংশে লেগে থাকা স্টেইন মুছে নিন 

কাঠের আসবাব স্টেইন বা কালার করার উপায়
বাড়তি অংশে লেগে থাকা রঙ মুছে নিন

আসবাব রঙ করতে গিয়ে সব সময় এমন হয় যে আসবাবের বাড়তি বা বাইরের অংশে রঙ লেগে যায়। সেগুলো মুছে ফেলা খুব জরুরি। সেগুলো সাবধানে না মুছলে আসবাবের নকশা ও সৌন্দর্য নষ্ট হবার সম্ভাবনা থাকে। তাই রঙ একটু কাঁচা থাকতেই বাড়তি রঙগুলো মুছে নিন নাহলে, রঙ একবার শুকিয়ে গেলে এই রঙ মুছে ফেলা কঠিন হতে পারে। 

স্টেইন বা রঙ শুকিয়ে নিন

কাঠের রঙ বা স্টেইন শুকাতে বেশ একটা সময় লাগে না। আপনি চাইলে ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে আসবাবটি সরিয়ে যথাযথ স্থানে রাখতে পারবেন। ধুলো উড়তে পারে এমন জায়গায় কখনোই আসবাবের রঙ শুকাতে দেয়া যাবে না। যেখানে ধুলোবালি একদম নেই এমন একটি জায়গা বেছে নিতে হবে। নতুবা রঙের উপর পড়তে পারে ধুলোর স্তর যা আপনার পুরো পরিশ্রমটাকেই করতে পারে পন্ড। 

প্রোটেক্টিভ কোটিং করুন  

কাঠের আসবাব স্টেইন বা কালার করার উপায়
প্রোটেক্টিভ কোটিং করে আসবাবে চকচকে ভাব আনুন

রঙ বা স্টেইন শেষ হলে একটি উন্নতমানের প্রোটেক্টিভ কোটিং ব্যবহার করুন। তবে রঙ বা স্টেইন শুকিয়েছে কিনা সেটা নিশ্চিত হয়ে তবেই কোটিং করুন। কাঠের আসবাবকে সুরক্ষিত রাখতে এই কোটিং অনেক আগে থেকেই ব্যবহার করা হয়। এই কোটিংগুলো স্বচ্ছ হওয়াতে এটা ব্যবহার করলেও আসবাবের মূল রঙ বা টেক্সচার পরিবর্তন করে না বরং আসবাবের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে বহুগুণে।

এক্সপার্টের শরণাপন্ন কখন হওয়া উচিত

কিছু কিছু কাঠের আসবাবের নকশা বা আকৃতি অনেক জটিল থাকে। জটিল নকশা বা আকৃতিগুলোতে সিরিজ কাগজ দিয়ে ঘষতেও  যেমন কষ্ট হয় তেমনি ফিনিশিংটাও ভালো আসে না। এক্ষেত্রে নিজে চেষ্টা না করাই শ্রেয় এবং এক্সপার্টের শরণাপন্ন হওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

 যুগ যুগ ধরে আসবাবে কাঠের ব্যবহার দেখা গিয়েছে। সময়ের সাথে কত রকমের ম্যাটেরিয়াল এসেছে বাজারে কিন্তু, কাঠ সেই আগের মতই তার স্থান ধরে রেখেছে। ঘরের আসবাব কেনার ক্ষেত্রেও কাঠের চাহিদা যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। যদিও আসবাব কেনার আগে বেশ কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখা উচিত। নতুবা আসবাব কিনে পড়তে হবে বিপাকে। এত যত্নে করা আসবাব যেন হারিয়ে না যায় তার জন্যই আজকের এই ব্লগ লেখা। পুরোনো আসবাবকে নতুন রূপে ফিরে পাবার এটা হতে পারে চমৎকার একটি উপায়। কাঠের আসবাব স্টেইন বা কালার করার উপায় গুলো খুবই সহজ। আজই পরিকল্পনা করে ফেলুন কবে আপনার আসবাবটি রঙ বা স্টেইন করছেন! কোন মন্তব্য থাকলে জানাতে পারেন কমেন্টে! 

Write A Comment