ইদানিং অনেকেই ছোট সাইজের অ্যাপার্টমেন্ট বা স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট এ বসবাসের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ছিমছাম ভাবে বসবাসের জন্য মানাসই ছোট অ্যাপার্টমেন্টের জনপ্রিয়তা যেমন বেশি তেমনি স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টের সুবিধাও রয়েছে অনেক। তবে অল্প পরিসরের অ্যাপার্টমেন্টে আসবাবপত্র গুছিয়ে রাখা অনেক সময়ই কঠিন হয়ে যায়। ফাংশানালিটি এবং স্টাইলিশ ভাবে ঘর সাজানোর জন্য বড় সাইজের অ্যাপার্টমেন্টে জায়গাও যেমন থাকে বেশি, তেমনি অপশনও থাকে অনেক। তবে আপনার যদি কোন ছোট সাইজের অ্যাপার্টমেন্টে বসবাসের অভিজ্ঞতা থাকে, তবে তো বুঝতেই পারছেন কতটা পরিকল্পনা করেই না ঘর সাজাতে হয়। অ্যাপার্টমেন্টের ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং কীভাবে করা উচিৎ সে বিষয়ে আমরা অনেক ধরনের টিপসই দেখে থাকি, তবে কী কী করা উচিৎ নয়, তা কি আমরা জানি? বিশেষ করে ছোট অ্যাপার্টমেন্ট সাজানোতে করা ভুল গুলো সম্পর্কে আগেভাগেই ধারণা থাকলে, ঘর সাজানোর কাজটা হবে আরও সহজে। তবে চলুন ছোট অ্যাপার্টমেন্ট সাজানোতে করা ভুল গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক!
অতিরিক্ত আসবাবপত্রের ব্যবহার
ঘরে আসবাবপত্রের প্রয়োজন হবেই। তবে আসবাবপত্র দিয়ে ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে আপনি যদি স্মার্টলি চিন্তাভাবনা না করেন, তবে খানিকটা ঝামেলায় পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যদি আপনার ঘরের স্পেস খুব একটা বড় না হয়। ছোট অ্যাপার্টমেন্ট সাজানোতে করা ভুল গুলোর মধ্যে একটি ভুল হল ঘরে অতিরিক্ত আসবাবের ব্যবহার। ঘরে আসবাব বুঝেশুনে না রাখলে ছোট অ্যাপার্টমেন্ট দেখতে আরও ছোট মনে হতে পারে। তাই যেই আসবাব গুলো না হলেই হয়, শুধুমাত্র সেগুলোই রাখুন। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, বিছানা কেনার সময় এমন একটি বিছানাই কেনার পরিকল্পনা করুন, যা কিনা আপনি প্রয়োজন অনুযায়ী সোফায় রূপান্তর করতে পারবেন। অর্থাৎ, অযথা স্পেস নষ্ট না করে, যখন প্রয়োজন হবে না তখন বিছানাটাকেই যেন ছোটো একটা সোফার আকারে ভাঁজ করা যায়। এতে করে ঘরের স্পেস বাঁচবে, অতিরিক্ত আসবাবের প্রয়োজনও হবে না।
প্রাকৃতিক আলোর সঠিক ব্যবহার না করা
ইন্টেরিয়র ডিজাইনের অন্যতম প্রধান বিষয় হল ঘরে প্রাকৃতিক আলো প্রবেশের সুব্যবস্থা রাখা। ছোট অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে যেহেতু ঘরের ভেতরে স্পেস কম থাকবে, তাই আসবাবপত্রও রাখার ক্ষেত্রে আলো-বাতাস যেন ঠিকমতো ঘরে প্রবেশ করতে পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে ঘর সাজাতে ব্যবহার করতে পারেন আয়না। আয়নায় প্রাকৃতিক আলো পড়ার মাধ্যমে তা প্রতিফলিত হয়ে ঘরের ভেতরটা আলোকিত করে তুলবে। যেহেতু ছোট অ্যাপার্টমেন্টে জায়গা থাকে কম, তাই আলাদা করে আয়না রাখার ব্যবস্থা না থাকলে ঘর সাজানোর জন্য এমন আসবাব বেছে নিন, যার উপরে আয়না বসানো যাবে। এবার আলোর বিপরীতে আসবাবটি রেখে দিন, যেন আয়নায় পড়া আলো বাউন্স হয়ে ঘরের ভেতরে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া আরেকটি উপায় হল ঘরের জন্য পর্দা বাছাই করা। হালকা রঙ এবং ফেব্রিকের পর্দার ব্যবহারে ঘরের ভেতর প্রাকৃতিক আলো তো ঢুকবেই, সাথে আপনার সকালের ঘুম ভাঙতেও সাহায্য করবে।
ভুল রঙ বাছাই করা
ঘরের দেয়াল রাঙাতে আমরা কে না পছন্দ করি। তবে আপনি যদি কোন ছোট অ্যাপার্টমেন্ট এর বাসায় থাকেন, সেক্ষেত্রে ঘরের জন্য রঙ বাছাই এ থাকতে হবে আরও সতর্ক। ছোট অ্যাপার্টমেন্ট সাজানোতে করা ভুলগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হল দেয়ালে বোল্ড বা গাঢ় রঙ ব্যবহার করা। এতে করে ঘরের ভেতরের স্পেস আরও ছোট মনে হবে। আর তাই এর সমাধান হিসেবে বরং সাদা, অফ হোয়াইট, বেবি পিঙ্ক, হালকা নীল বেছে নিতে পারেন দেয়ালের জন্য। এর ফলে ঘরের ভেতরের স্পেসটা আরও বড় মনে হবে। অন্যদিকে কালো, লাল, রয়েল ব্লু রঙ গুলোকে এড়িয়ে যেতে হবে।
শেলফ বা তাক ব্যবহার না করা
স্টোরেজ বা জিনিসপত্র রাখার জন্য আমাদের প্রয়োজন হয় বেশ কিছু স্পেস। তবে অ্যাপার্টমেন্টে যদি এই স্পেসটুকুই কম থাকে, তখন কী করার? ভাবতে হবে ভিন্ন কিছু করার কথা। যেমন ধরুন শেলফ বা তাক এর ব্যবহার। তাক বানানোর জন্য আপনার যে বাড়তি অনেক জায়গার প্রয়োজন হবে তা কিন্তু নয়। বরং ফ্লোর থেকে সিলিং পর্যন্ত এমন অনেক জায়গাই আপনি খুঁজে পাবেন, যা আপনি তাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। যেমন ধরুন জানালার ফ্রেমের উপরের জায়গা, দেয়ালের সাথে বিছানার উপরের অংশ এবং রান্নাঘরে সিংকের উপরের অংশে কাঠের পাটাতন বা তাক বসিয়ে সেখানেই রাখতে পারেন প্রয়োজনীয় যেকোনো কিছু। এতে করে নান্দনিকতার পাশাপাশি স্পেসের ব্যবস্থাও করাও যাবে। ফলে ছোট অ্যাপার্টমেন্ট সাজানোতে করা ভুল ও এড়ানো যাবে।
অ্যাপার্টমেন্টের ভেতরটা গুছিয়ে না রাখা
ছোট অ্যাপার্টমেন্ট সাজানোতে করা ভুল গুলোর মধ্যে আরেকটি হল অ্যাপার্টমেন্টের ভেতরের জায়গাটি বিশৃঙ্খলভাবে রাখা। ঘরের ভেতরের জায়গা যদি আপনার কাছে আঁটসাঁট বা গ্যাঞ্জাম বলে মনে হয়, তাহলে এর পেছনের কারণ হল একে তো জায়গাটি সংকীর্ণ, তার উপর জিনিসপত্র অগোছালো করে রাখা। আর তাই প্রয়োজন অ্যাপার্টমেন্টের ভেতরটা সঠিকভাবে গুছিয়ে রাখা, যা অ্যাপার্টমেন্টের ভেতরটা দেখতে আরও পরিপাটি দেখাবে। একদিনে পুরো অ্যাপার্টমেন্ট এরিয়া গোছানো সম্ভব নাও হতে পারে, তাই প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় বের করে একেকদিন ঘরের একেক স্পেস গুছিয়ে নিন। একবার অতিরিক্ত জিনিসগুলো সরিয়ে ফেলার পর দেখবেন অ্যাপার্টমেন্টের ভেতর জায়গা তৈরি তো হচ্ছেই, সাথে আপনিও নিঃশ্বাস নেয়ার মতো স্পেস পাচ্ছেন। যেখানে চাইলে আপনি ইনডোর প্ল্যান্টস এর জন্য একটা কর্নারও করতে পারেন।
ছোট অ্যাপার্টমেন্ট সাজানোতে করা ভুল অনেক ধরনেরই হতে পারে। তবে উপরে উল্লেখিত ভুলগুলোই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে করা হয়। যা আমরা চাইলেই এড়িয়ে চলতে পারি এবং আমাদের অ্যাপার্টমেন্টের ছোট স্পেসটাকে আরও পরিপাটি এবং ছিমছামভাবে রাখতে পারি। আর তাই পরবর্তীতে ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে ছোট অ্যাপার্টমেন্ট সাজানোতে করা ভুল গুলো অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে এবং সে অনুযায়ী টিপস গুলো অনুসরণ করে তবেই ইন্টেরিয়র ডেকোর করা উচিৎ।
কমপ্লিট প্রপার্টি সল্যুশন খুঁজছেন? এখনই ডাউনলোড করুন বিপ্রপার্টি অ্যাপ
অ্যান্ড্রয়েড এর জন্য: www.tinyurl.com/bpropertyapp
আইওএস এর জন্য: www.tinyurl.com/57kj4dnw