Reading Time: 4 minutes

ধারণা করা হয়, স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়ের ব্যাপারটি খুব কঠিন। এ কথা খানিকটা সত্যিও। কেননা দাম নির্ধারণ থেকে শুরু করে আইনি কাগজপত্র তৈরি- প্রতি ধাপেই আছে হাজারো জটিলতা। উদাহরণ দিয়ে বললে ব্যাপারটি বুঝতে সুবিধা হবে। যেমন, জমি কেনার সময় এর লোকেশন একটি জরুরি বিষয়; এর ওপর নির্ভর করে বাড়ির মূল্য, ইউটিলিটি সুবিধা থেকে শুরু করে আইন ও নীতিমালা প্রণয়নের খুঁটিনাটিও। তাই লোকেশনের মতো এমন জরুরি বিষয়গুলো জানা না থাকলে জমি ক্রয়ের সময় বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন আপনি। জমি কেনার আগে জরুরি প্রশ্নগুলো করে নেয়া তাই আবশ্যক। 

কোন সাইজের প্রপার্টি নির্মাণ করতে পারবেন? 

প্রপার্টি নির্মাণ
কোন সাইজের প্রপার্টি নির্মাণ করতে পারবেন তা জানতে হলে জমির আয়তন, জমির চারপাশের রাস্তার প্রস্থ, এফএআর মেজারমেন্ট জানা জরুরি

কোন সাইজের প্রপার্টি নির্মাণ করতে পারবেন তা জানতে হলে জমির আয়তন, জমির চারপাশের রাস্তার প্রস্থ, এফএআর মেজারমেন্ট জানা জরুরি। এফএআর মেজারমেন্ট জানতে হলে অবশ্য আপনি কোন ধরনের প্রপার্টি নির্মাণ করবেন সেটি আগে ঠিক করা জরুরি। এফএআর হলো ফ্লোর এরিয়া রেশিও, অর্থাৎ সব ফ্লোরের মোট আয়তনকে জমির মোট আয়তন দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যাবে এফএআর। এ কথা মনে রাখা জরুরি যে, একই আয়তনের জমিতে রেসিডেনসিয়াল প্রপার্টির এফএআর যত হবে, হোটেলের জন্য সে জমিতে এফএআর কিন্তু একই হবে না। কেননা হোটেল আর রেসিডেনসিয়াল বিল্ডিং কখনোই একই নকশার, একই সংখ্যক কক্ষবিশিষ্ট হবে না।  

তাছাড়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বা চিকিৎসাকেন্দ্র নির্মাণের জন্য অন্তত ৫ কাঠা জমি থাকতে হবে। তাই জমি কেনার আগে জরুরি প্রশ্ন গুলোর মধ্যে এটি একটি।

জমিটি কি নির্মাণ কাজের উপযোগী? 

জমি
নির্মাণ কাজের জন্য উপযোগী জমি মানে সেখানে পানি, জলাভূমি, রেস্ট্রিক্টেড অংশ, রাস্তা ইত্যাদি বাধাদায়ক কিছু থাকবে না

নির্মাণ কাজের জন্য উপযোগী জমি মানে সেখানে পানি, জলাভূমি, রেস্ট্রিক্টেড অংশ, রাস্তা ইত্যাদি বাধাদায়ক কিছু থাকবে না। এছাড়া বৃষ্টি হলে যদি সেখানে পানি জমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বা জায়গাটি যদি সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়, তবে সেখানে নির্মাণ কাজ করা যাবে না। যেমন, কোনো জমি যদি ৪৫ ডিগ্রি ঢালু থাকে, তবে সেখানেও আবাসিক ভবন নির্মাণ করা যাবে না। সেক্ষেত্রে জমিটি আগে প্রস্তুত করেনিতে হবে। চাষযোগ্য ভূমিতেও নির্মাণকাজ করা ঠিক নয়। তাই জমি কেনার আগে জরুরি প্রশ্ন গুলোর মাঝে এটিও একটি। 

এরিয়াটি কতটা উন্নত? 

পরিকল্পিত এরিয়া
যেকোনো স্থাবর সম্পত্তির ভ্যালুয়েশনের সময় এর লোকেশন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে

যেকোনো স্থাবর সম্পত্তির ভ্যালুয়েশনের সময় এর লোকেশন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। লোকেশনের ভবিষ্যত সম্ভাবনা, ডেভেলপমেন্টের ধরন ও গতি, আশেপাশের স্থাপনা, রাস্তাঘাট এসবের ওপর নির্ভর করে জমির দাম রাতারাতি বেড়ে যেতে পারে। কেননা এগুলো সবই উন্নত ও পরিকল্পিত নগরায়নের বৈশিষ্ট্য। তাই জমি কেনার আগে জরুরি প্রশ্ন গুলো করার সময় এরিয়াটি কতটা উন্নত তা জেনে নিতে ভুলবেন না। 

প্রপার্টির সর্বমোট মূল্য কত? 

অ্যাসেটের মূল্য ছাড়াও জমির মূল্য নির্ধারণে আরো অনেক বিষয় জড়িত থাকে। যদি আপনি কোনো ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি থেকে জমি কিনতে চান, তবে আপনাকে বেশ কিছু লিগ্যাল ফি এবং হিডেন ফি গুনতে হবে। যেমন, বাংলাদেশে জমি কেনার সময় স্ট্যাম্প ডিউটি বাবদ দিতে হয় অ্যাসেটের মূল্যের ১.৫%, রেজিস্ট্রেশন ফি ১%, স্থানীয় কর ২-৩% (যা আপনার জমির লোকেশনের ওপর নির্ভর করে), গেইন ট্যাক্স ৪%, অতিরিক্ত ইনকাম ট্যাক্স ৫%। অর্থাৎ জমির মূল দামের বাইরেও আরো অনেক খরচ এতে যুক্ত হয়। তবে ব্যক্তির কাছ থেকে কিনতে গেলে ভ্যাট, গেইন ট্যাক্স, অতিরিক্ত ইনকাম ট্যাক্স দিতে হবে না। 

জমির দলিল-দস্তাবেজ আইনত সিদ্ধ ও সঠিক কি? 

দলিল
সব দলিল-দস্তাবেজ দেখে নেয়া ও তার সত্যতা যাচাই করা আপনারই দায়িত্ব

জমি কেনার আগে জরুরি প্রশ্ন গুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সব দলিল-দস্তাবেজ দেখে নেয়া ও তার সত্যতা যাচাই করা আপনারই দায়িত্ব। অনেক সময় অর্থ প্রদানের পর জানা যায় যে, জমির দলিল সঠিক নয়। এছাড়া আমাদের দেশে রিয়েল এস্টেট সেক্টরে স্ক্যাম বা প্রতারণা নতুন নয় এবং এ সংক্রান্ত মামলার মীমাংসা হতেও বছরের পর বছর লেগে যায়। তাই এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে অবশ্যই সর্বোচ্চ সতর্কতা নিতে ভুলবেন না। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়তে পারেন প্রপার্টির মালিকানা ভ্যালিডেট বা যাচাই করা বিষয়ক আমাদের ব্লগ। এছাড়া বিপ্রপার্টির লিগ্যাল টিম আপনাকে এ ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করতে সর্বদা প্রস্তুত। 

কোন সুবিধাগুলো পাবেন? 

জমি কেনার আগে জরুরি প্রশ্ন গুলো করার সময় অবশ্যই কোন সুবিধাগুলো পাবেন সে সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য জেনে নিন। তাছাড়া অযথাই ঝামেলায় পড়তে হবে আপনাকে। যেমন, ঢাকা মেট্রোপলিটন এরিয়ায় যদি আপনি নতুন জমি কেনেন তবে সেখানে কোনো গ্যাসের লাইন পাবেন না, তবে পুরোনো জমিতে আবার গ্যাসের লাইন রয়েছে। এছাড়া, যদি আপনার জমিতে পানির লাইন বা স্যুয়ারেজ লাইন না থাকে, তবে সেখানে সেপ্টিক সিস্টেম তৈরি করতে হবে। 

জমি কেনার পুরো প্রক্রিয়াটি আপনার কাছে দীর্ঘ ও জটিল মনে হতেই পারে। তবে বিপ্রপার্টি যখন রয়েছে আপনার পাশে, তখন আর ভাবনা কী! আমাদের বিশেষজ্ঞ টিমের সাহায্যে জমি ক্রয়ের সব জটিলতার সমাধান আপনি করতে পারবেন একদম সহজে ও কম সময়ে। 

জমি কেনা নিয়ে যদি আপনার আরো কোনো প্রশ্ন থাকে তা কিন্তু কমেন্টস বক্সে লিখে আমাদের জানাতে ভুলবেন না! আপনার প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো আমরা।

Write A Comment