Reading Time: 4 minutes

মসজিদের শহর ঢাকা তে রয়েছে ইতিহাস এবং ঐতিহ্য ধারণ করে থাকা  শত বছরের পুরনো অনেক মসজিদ। অসাধারণ ডিজাইন এবং সুনিপুণ স্থাপত্যের পরিচয় ধারণ করে থাকা এই মসজিদগুলো অবস্থিত রয়েছে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়। যার মধ্যে পুরান ঢাকাতে রয়েছে বেশ কিছু মসজিদ। সময়ের সাথে সাথে কোন কোনটির যেমন প্রয়োজন হয়েছে সংস্কার, তেমনি কোনটি আবার অযত্নের ফলে হারাতে বসেছে এর শত বছরের সৌন্দর্য। তবে এর সাথে যোগ হয়েছে নতুন কিছু মসজিদও। তবে চলুন আজকের ব্লগে ঢাকার কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।      

বাবু বাজার ঘাট মসজিদ, পুরান ঢাকা

ঢাকার কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ এর মধ্যে প্রাচীন একটি মসজিদ বাবু বাজার এলাকার ঘাট জামে মসজিদ। এই মসজিদটি অবশ্য আমীর উদ্দিন দারোগা মসজিদ নামেও স্থানীয়ভাবে পরিচিত। ১৮৪০ সালের দিকে আমীর উদ্দিন নামে একজন বিত্তবান দারোগা এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। তার উপার্জিত অর্থের একটি অংশ দিয়ে তিনি সেসময় এই মসজিদটি নির্মাণ করেন, সাথে ছিল একটি বাড়িও। যদিও বাড়িটির দেখা এখন না পাওয়া গেলেও, দেড়শ বছর পুরনো এই মসজিদ আজও আছে আগের মতো করে। 

 মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করলে চোখে পড়বে শ্বেত পাথরের দেয়াল। মুঘল আমলের নকশায় নির্মিত এই মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য আসেন বুড়িগঙ্গার আশেপাশে বসবাসরত মানুষজন। পরবর্তী সময়ে এই মসজিদের ঠিক পাশেই একটা মাদ্রাসা নির্মাণ করা হয়েছে। শত বছরের  পুরনো ঐতিহ্য ধারণ করা এই মসজিদ দেখতে তাই যেকোনো সময় চলে যেতে পারেন বুড়িগঙ্গার তীরে।   

বায়তুল মোকাররম মসজিদ 

বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ হিসেবে পরিচিত বায়তুল মোকাররম মসজিদ অবস্থিত রাজধানী ঢাকার পল্টন এলাকায়। এ মসজিদে একইসাথে ৪০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।  ঢাকার কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ এর মধ্যে মুঘল স্থাপত্যশৈলীর আদলে নির্মাণ করা এই মসজিদের রয়েছে বহু বছর পুরানো ঐতিহ্য। মসজিদের শহর ঢাকা-তে ১৯৬৮ সালে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়া এই মসজিদটির কাঠামো বেশ মজবুতভাবে করা। আট তলা বিশিষ্ট এই মসজিদের অভ্যন্তরে বিশাল জায়গা রয়েছে। পবিত্র মক্কায় অবস্থিত কাবা শরিফের আদলে নির্মাণ করা এই মসজিদটি তাই অন্যান্য মসজিদের নকশা থেকে বেশ আলাদা।

বায়তুল মোকাররম মসজিদের নিচতলায় রয়েছে বেশ জায়গা নিয়ে বিস্তৃত বিশাল মার্কেট কমপ্লেক্স। জাতীয় এই মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। যেখানে দোতলা থেকে ছয় তলা পর্যন্ত প্রতি তলায় রয়েছে নামাজ পড়ার সুন্দর ব্যবস্থা। প্রতি ঈদের নামাজ আদায়ে এই মসজিদে জমায়েত হন হাজার হাজার মুসল্লি।       

সাউথ টাউন জামে মসজিদ, কেরানীগঞ্জ

ঢাকার খুব কাছেই কেরানীগঞ্জ সাউথ টাউন আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে সাউথ টাউন জামে মসজিদ। সবুজে ঘেরা অসাধারণ স্থাপত্যশৈলীতে বানানো শ্বেতশুভ্র এই মসজিদটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছে প্রায় ২ বছর। এ মসজিদে একই সাথে প্রায় ৬০০ মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন। এই মসজিদে মোট ৩টি প্রধান কাঠের ফটক রয়েছে। আর এর আশেপাশে নেই কোন বাড়িঘর, কোন কোলাহল। এই মসজিদটির ভেতর নেই কোন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা। সারি সারি জানালা দিয়ে প্রকৃতির আলো-বাতাসই মসজিদের ভেতরটিকে করে তুলেছে প্রশান্তির এক অনন্য জায়গা।

অদ্ভুত সুন্দর এই অবকাঠামোটি দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন এক রাজপ্রাসাদ। আর এই প্রাসাদের গম্বুজগুলো যেন ছুঁয়ে দিচ্ছে বিশাল এই আকাশটাকে। মসজিদের শহর ঢাকাতে অসাধারণ স্থাপত্য ডিজাইনে নির্মাণ করা এই মসজিদটি তাই অনেকেরই নজর কেড়েছে। তাই প্রার্থনা শেষে দারুণ সুন্দর এই পরিবেশে মসজিদের আশেপাশে ঘুরে শান্তি পান অনেকেই।      

চকবাজার শাহী মসজিদ

ঢাকার কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ এর মধ্যে পুরান ঢাকা এলাকার চকবাজারে অবস্থিত বেশ পুরনো এই মসজিদটির নাম চকবাজার শাহী মসজিদ। মুঘল সুবেদার শায়েস্তা খান এই মসজিদটি ১৬৭৬ সালে নির্মাণ করেন। মসজিদটির কাঠামো শুরুর দিকে ছিল এমন যে এতে তিনটি গম্বুজ ছিল। যদিও কয়েকদফা সংস্কার কাজ চলার পর এর অবস্থা এখন আর আগের মতো নেই। মসজিদের ভিতরকার নকশাতে মাঝখানের দিকটি ছিল বর্গাকার, দুপাশে আয়তাকার। আর উপরের দিকটি আচ্ছাদিত ছিল গম্বুজ দিয়ে।

উঁচু প্লাটফর্মের উপর নির্মিত প্রাচীনতম ইমারত-স্থাপনার মধ্যে মসজিদের শহর ঢাকাতে এটি অন্যতম। প্লাটফর্মটির নিচে ভল্ট দিয়ে বেশ কতগুলো বর্গাকৃতি ও আয়তাকৃতি কক্ষ আছে। ধারণা করা হয়, এই মসজিদের প্লাটফর্মের নিচের কক্ষগুলোতে মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের আবাসন ছিল, তাই এ ভবনগুলোকে আবসিক মাদ্রাসা মসজিদও বলা হয়ে থাকে।

খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ, লালবাগ

চকবাজার শাহী মসজিদের মতো, খান মোহম্মদ মৃর্ধা মসজিদটিও অবস্থিত পুরান ঢাকা এলাকার আতশখানায়। লালবাগ কেল্লার ঠিক পাশেই অবস্থিত প্রাচীন এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল ১৭০৫ সালের দিকে। ঢাকার প্রধান কাজী ইবাদুল্লাহের আদেশে খান মোহম্মদ মৃধা মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। মসজিদটির সাথেই রয়েছে সবুজ ঘেরা সুন্দর একটি বাগান। দোতলা এই মসজিদের উপরের তলায় রয়েছে নামাজ আদায় করার জায়গা। ঢাকার কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ এর মধ্যে এই মসজিদটি বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ রক্ষণাবেক্ষণ করছে। 

তারা মসজিদ

মসজিদের শহর ঢাকা এর পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় আবুল খয়রাত সড়কে গেলে দেখা মিলবে সুন্দর একটি মসজিদ। মসজিদটির সাদা মার্বেলের উপর যেন এঁকে দেয়া হয়েছে নীল রঙের অসংখ্য তারা। আর তাই তো এই মসজিদটি তারা মসজিদ নামেই পরিচিত। আঠারো শতকের দিকে মির্জা গোলাম পীর নামের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে ১৯২৬ সালে ঢাকার স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী আলী জান বেপারী মসজিদটির সংস্কার করেন। সে সময় জাপানের রঙিন চিনি-টিকরি পদার্থ ব্যবহার করা হয় এই মসজিদটির মোজাইকের কারুকাজে। পাঁচ গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদের দৈর্ঘ্য ৭০ ফুট এবং প্রস্থ ২৬ ফুট। 

হযরত হাজী খাজা শাহবাজ জামে মসজিদ

রাজধানী ঢাকার সুপরিচিত এলাকা রমনায় ১৬৭৯ সালে নির্মিত হয় ঢাকার কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ এর মধ্যে প্রাচীন এই মসজিদটি। মসজিদের শহর ঢাকা এর আধুনিক অট্টালিকা এবং নির্মাণশৈলীর ভিড়ে প্রাচীন এই স্থাপত্যগুলো যেন দাঁড়িয়ে আছে একেকটি গল্প হয়ে। মুঘল আমলে নির্মিত এই মসজিদ ৬৮ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ২৬ ফুট প্রস্থ এবং এতে রয়েছে তিনটি গম্বুজ। চৌকাঠে রয়েছে কালো পাথরের কারুকাজ। তিনশো বছরেরও পুরনো এই মসজিদটি নির্মাণ করেন ঢাকার ধনাঢ্য বণিক ও সুফি শাহজাদা খাজা শাহবাজ। মসজিদটির ভেতরের কারুকাজ এবং নকশা বর্তমানে আর আগের মতো নেই, দেয়াল রঙও নষ্ট হয়ে গিয়েছে, এমনকি ফাটলও ধরেছে অনেক অংশে। তবে শত বছরের পুরনো এই মসজিদের প্রতিটি ইমারতই যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে অতিবাহিত সে সময়ের কথা। 

তাই আপনিও চাইলে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকায় এবং এর আশেপাশের এলাকায় অবস্থিত নতুন এবং শত বছরের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন এই মসজিদগুলো থেকে। এছাড়া ঢাকার আশেপাশে একদিনের মধ্যেই ঘুরে আসা সম্ভব এমন কিছু জায়গা নিয়ে জানতে ক্লিক করুন এই লিংকে। 

Write A Comment

Author