Reading Time: 4 minutes

আপনি যখন একটি এলাকায় প্রপার্টি ক্রয় করেন তখন শুধু প্রপার্টি ক্রয় করেন তা কিন্তু নয়। আপনি একটি লাইফস্টাইলের অংশ হয়ে যান, একটি এলাকার বাসিন্দা হয়ে যান। এলাকা বা মহল্লার প্রভাব আমাদের জীবনে অনেক। আপনার জীবনের পুরোটাই নির্ভর করে আপনি কেমন এলাকায় আছেন! এলাকার মানুষজন কেমন, এলাকায় কী কী স্থাপনা রয়েছে, স্কুল কলেজের দূরত্ব কেমন? বা হাসপাতালের অবস্থান কোথায় ইত্যাদি বিষয় যাচাই বাছাই করেই কিন্তু বসবাসের জন্য একটি এলাকা আমরা বেছে নেই। এছাড়া, মানুষ কি একা বসবাস করতে পারে? একদমই না। প্রতিবেশী যদি মানানসই না হয় এক্ষেত্রে খাপ খাইয়ে নেওয়া বেশ মুশকিল। সুতরাং, সঠিক এলাকা নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। মার্জিত প্রতিবেশী ছাড়াও প্রয়োজন যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, দোকান পাটের সুবিধা ইত্যাদিও যাচাই করার বিষয়। ঢাকার পরিকল্পিত কিছু এলাকা রয়েছে যেখানে আপনি এই সকল বিষয়গুলো অনায়াসে খুঁজে পাবেন। চলুন জানা যাক কোন সেই এলাকাগুলো! 

বারিধারা

serene Baridhara

ঢাকার পরিকল্পিত কিছু এলাকা নিয়ে আলাপ করতে হলে অবশ্যই বারিধারা এলাকাটির কথা প্রথমেই উঠে আসবে। এই এলাকার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে হল কূটনৈতিক অঞ্চল যেখানে রয়েছে অসংখ্য বিদেশী দূতাবাস আর উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত বারিধারা ডিওএইচএস এলাকাটি। এই এলাকার রাস্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থাপনা সবকিছুই এই এলাকার নিরাপত্তা ও সুরক্ষার কথা ভেবে তৈরি করা হয়েছে। তাই এই এলাকার সুরক্ষা ব্যবস্থাও বেশ শক্তিশালী। বারিধারার আশেপাশে স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনও অভাব নেই। এই এলাকার সাথে শহরের অন্যান্য এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ সহজ। সুন্দরভাবে নির্মিত রাস্তাগুলো বেশ প্রশস্ত এবং বহুমুখী যার ফলে শহরের যেকোন পয়েন্টে সহজেই যাতায়াত করা যায়। বারিধারা, গুলশান ও বনানীর মতো বাণিজ্যিক এলাকা থেকেও কিছুটা দূরে তাই নিরিবিলি একটা পরিবেশ পাওয়া যায়। নিরিবিলি সুরক্ষিত কোন এলাকায় থাকার ইচ্ছা থাকলে আপনি বেছে নিতে পারেন বারিধারাকে। 

উত্তরা 

Aarong Uttara

ঢাকা শহরের পরিকল্পিত আবাসিক এলাকার কথা উঠলে সেখানে বাধ্যতামূলকভাবে আসবে উত্তরার কথা। শুধু ঢাকা তো বটেই, বরং সারাদেশেই এমন চমৎকারভাবে পরিকল্পনা করে গড়ে উঠা প্ল্যানড এরিয়া মোটামুটি হাতে গোণা। চমৎকার সব ডুপ্লেক্স, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট কিংবা চমৎকার সাজানো গোছানো রাস্তাঘাট এবং এভিনিউ থেকে শুরু করে চিত্তবিনোদনের জন্য পার্ক বা বাচ্চাদের খেলার জায়গা, কী নেই এই এলাকায়? আবার সময় কাটানোর বা ঘুরতে যাবার জন্য জন্য সেক্টরের ভেতরে এবং উত্তরার আশেপাশের বিভিন্ন স্থান আছে। আর এজন্যই উত্তরাবাসী যেমন সুযোগসুবিধা উপভোগ করেন, উত্তরার আশেপাশের এলাকায় বসবাসকারী লক্ষাধিক মানুষও প্রায় একই ধরনের সুবিধা উপভোগ করেন।

আবাসিক এবং বাণিজ্যিক সুবিধার কথা মাথায় রেখেই উত্তরা এলাকাটি খুব সুপরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছে। যা আবাসিক এবং বাণিজ্যিক দুটি সুবিধার মধ্যে নিখুঁত ভারসাম্য বজায় রাখে। উত্তরার এলাকাটি বিভিন্ন সেক্টরে বিভক্ত এবং প্রতিটি সেক্টরে সুযোগ-সুবিধা একইভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে। স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখতে এলাকার আশেপাশে একাধিক পার্ক এবং বিনোদন কেন্দ্র রাখা হয়েছে। উত্তরায় আধুনিক শপিংমল, রেস্তোঁরা, স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা এবং বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়াও, এই অঞ্চলের রাস্তাগুলো বেশ প্রশস্তভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। 

বসুন্ধরা আর/এ

Wide road in Bashundhara R/A

বসুন্ধরা গ্রুপের তৈরি করা এটি একটি বেসরকারি আবাসিক এলাকা। প্রকল্পটি ১৯৮০ সালে শুরু হয়েছিল। তারপর থেকে এই অঞ্চলটিকে কাঠামোগত দিক থেকে আরও উন্নত করা হয়েছে। ও শহরের অন্যান্য অংশের সাথে সংযুক্ত রাখতে চালু করা হয়েছে অসংখ্য উন্নয়ন প্রকল্প হয়েছে। যা বর্তমানে ঢাকার অন্যতম সুপরিকল্পিত এলাকা হয়ে উঠেছে। সুপ্রশস্ত রাস্তাঘাট, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, নির্মিত স্থাপনাগুলো এই পুরো এলাকাটিকে শহরের অন্যান্য অংশের সাথে বেশ সুন্দর করেই সংযুক্ত করে রেখেছে।

বসুন্ধরা আর / এ অসংখ্য ব্লকে বিভক্ত।  আবাসিক এবং বাণিজ্যিক দুটি প্রতিষ্ঠানের জন্যই বেশ উপযুক্ত একটি এলাকা এটি। এই এলাকার সঠিক নিষ্কাশন ব্যবস্থার ফলে বসুন্ধরা আর / এ ঢাকার অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় খুব পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি। এলাকাটি অনেক বিশাল এবং এলাকার উন্নয়ন কার্যক্রম ও বিস্তৃতি এখনও চলছে। এখানে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার কোনও অভাব নেই।  অ্যাপোলো হাসপাতাল, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি এবং আইইউবির মতো বিশিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহ শহরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এখানে রয়েছে। সর্বোপরি পুরো এলাকাটি খুব নিরাপদ ও সুরক্ষিত। 

বনানী

banani

বারিধারার মতো বনানীতেও কর্পোরেট অফিস, রেস্তোঁরা, আবাসিক স্থাপনা এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদর দফতরে ঘেরা একটি কূটনৈতিক এলাকা। অন্য কথায়, এই এলাকাটি নগরের অন্যতম ব্যস্ত এবং সর্বাধিক উন্নত এরিয়া। পুরো এলাকাটি খুব গোছানো ও সুসজ্জিত। অন্যান্য এলাকার তুলনায় রাস্তাগুলো ভালভাবে নির্মিত। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক পরিবহন এলাকায় যাতায়াত করে। কেউ আসে কর্মক্ষেত্রে আবার কেউ আসে ঘুরতে। চলাচলের জন্য এই এলাকাটি বেশ সুবিধার। রাস্তার উভয় পাশে পথচারীদের জন্য ওয়াকওয়ে রয়েছে। ঢাকার পরিকল্পিত কিছু এলাকার নাম বললে অবশ্যই বনানীর নাম প্রথমে বলতেই হবে। এলাকাটি এতটাই চমৎকার বসবাস বা ঘুরতে আসার জন্য। 

বনানীতে দেশের বেশ কয়েকটি নামিদামি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা রয়েছে। এছাড়াও, প্রতিটি ধর্মের ভক্তদের জন্যই রয়েছে পর্যাপ্ত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। তাই এখানের বাসিন্দারা কোনরকম অসুবিধায় পড়বে না। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিশ্চিত করতে বনানীর আশেপাশে বেশ কয়েকটি সুন্দর পার্ক এবং বিনোদন কেন্দ্রও নির্মাণ করা রয়েছে। এই সমস্ত বিষয়গুলোই বনানীকে অন্যতম পরিকল্পিত এলাকা হিসেবে আখ্যা দেয়।

বনশ্রী

Banasree

বনশ্রী অন্যান্য এলাকার মত তেমন উন্নত নয় কিন্তু, সর্বাধিক যত্ন সহকারে তৈরি করা একটি এলাকা এটি। বনশ্রী অত্যন্ত সাজানো গোছানো এবং বেশ পরিপাটি। সুপরিকল্পিতভাবে একেকটি ব্লক এখানে সাজানো রয়েছে যা নাগরিক জীবনের প্রতিটি চাহিদাকে পূরণ করে। অন্যান্য এলাকার তুলনায় বনশ্রীর ভবন এবং স্থাপনাগুলো তুলনামূলক নতুন এবং আধুনিক। এই এলাকা সঠিভাবে দেখভালের জন্য গঠন করা হয়েছে উন্নয়ন সমিতি যা অর্থায়িত হয় এলাকার সদস্যদের দ্বারা। বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থাসহ এলাকাটি শতভাগ সুরক্ষিত। বনশ্রীর ভেতরে রাস্তা বেশ সুগঠিত এবং প্রশস্ত। এখানে, অসংখ্য শিক্ষা ও চিকিত্সা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শহরের যেকোন এলাকার সাথে এর সম্পৃক্ততা বেশ সহজ। রয়েছে শপিং সেন্টার এবং রেস্তোঁরা। 

এগুলো ছাড়াও, মিরপুর ডিওএইচএস (প্রতিরক্ষা অফিসার্স হাউজিং সোসাইটি), মহাখালী ডিওএইচএস এবং বনানী ডিওএইচএসসহ ঢাকার অন্যান্য এলাকাও  সুপরিকল্পিত। সুরক্ষা প্রটোকলসহ এই এলাকাগুলো বসবাসের জন্য একদম উপযুক্ত। এই ছিল ঢাকার পরিকল্পিত কিছু এলাকা নিয়ে আমাদের আজকের ব্লগ।

Write A Comment