বিনিয়োগের জন্য একটা সময় স্টক, বন্ড এবং মিউচুয়াল ফান্ডের গুরুত্বই ছিল সবচেয়ে বেশি। যদিও এখনও বিনিয়োগের জন্য এই মাধ্যমগুলো বেশ পরিচিত। তবে বর্তমান সময়ের মার্কেট পরিচালনা করলে দেখা যাচ্ছে যে বিনিয়োগের জন্য প্রচলিত এই মাধ্যমগুলোর পাশাপাশি অন্যান্য লাভজনক মাধ্যমও বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এর প্রভাব লক্ষণীয়। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য একটি মাধ্যম হচ্ছে রিয়েল এস্টেট সেক্টরে বিনিয়োগ। তবে যখনই তরুণ প্রপার্টি বিনিয়োগকারীদের কথা উঠে আসে, তখন দেখা যায় ভিন্ন একটা চিত্র। কেননা তরুণদের ক্ষেত্রে রিয়েল এস্টেট সেক্টরে বিনিয়োগ পূর্বে অতটা জনপ্রিয় হয়ে না উঠলেও, সাম্প্রতিক সময়ে আগের চেয়ে ভিন্ন চিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তরুণদের মধ্যে বিনিয়োগের আগ্রহ বাড়লেও, অনেকেই হয়তো জানেন না শুরুটা কীভাবে করবেন। আর তাই আজকের ব্লগে তরুণ প্রপার্টি বিনিয়োগকারীদের জন্য টিপস দেয়া হলও, যা তাদের বিনিয়োগের সিদ্ধান্তকে আরও সহজ করে তুলবে।
মার্কেট রিসার্চ

রিয়েল এস্টেট সেক্টরে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সবার প্রথম ধাপই হচ্ছে মার্কেট রিসার্চ। বাজার সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা এবং জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমেই বিনিয়োগের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভবপর হয়ে উঠে। রিয়েল এস্টেট একটি লাভজনক বাজার হওয়ার কারণেই যে, আপনি এখানে বিনিয়োগ করবেন, এমন ভাবনা থেকে বিনিয়োগ এর সিদ্ধান্ত নেয়া কখনোই বুদ্ধিমানের মতো কাজ নয়। আর তাই কোন ধরনের প্রজেক্টে বিনিয়োগের ফলে আপনার জন্য বিনিয়োগের রিটার্ন আসবে সর্বোচ্চ তা নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন। মার্কেট ট্রেন্ড, মার্কেটের উত্থান-পতন এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনা সম্পর্কে তাই ভালোভাবে জেনে তবেই সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। আর একারণেই তরুণ প্রপার্টি বিনিয়োগকারীদের জন্য টিপস গুলো সম্পর্কে জানা প্রয়োজন।
আগাম পরিকল্পনা

প্রতিটি ব্যবসায়ের জন্যই পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আর রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগও এর ঊর্ধ্বে নয়। রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ বেশ জটিল এবং চাহিদা সম্পন্ন মনে হতেই পারে। তবে কঠিন এই কাজটি পরিচালনার জন্য করা সুসংগঠিত পরিকল্পনা তরুণ প্রপার্টি বিনিয়োগকারীদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বেশ সহায়ক হবে। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত ধারণা পেতে নিজেরই নিজেকে কিছু প্রশ্ন করা প্রয়োজন। যেমন ধরুন- আপনার বর্তমান আয়ের টাকা সঞ্চয় করার মাধ্যমে আপনি কি আপনার বাড়ির প্রথম ডাউন পেমেন্ট পরিশোধ করতে পারবেন? আপনি কি বর্তমান আয়ের টাকায় হোম লোনের জন্য আবেদন করার যোগ্যতা সম্পন্ন? হঠাৎ যদি কোন আর্থিক সংকট দেখা দেয়, সে সময় আপনার সঙ্গী কি আপনাকে সাহায্য করতে সক্ষম হবে? বাজারে যদি হঠাৎ মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয় সে সময় আপনার ব্যাকআপ অপশনগুলো কী কী হবে? বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে এ সকল প্রশ্নের উত্তর নিয়ে ভাবা অত্যন্ত প্রয়োজন।
আর এজন্য বলতেই হয় বিনিয়োগের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আগে প্রয়োজন আগাম পরিকল্পনা করা এবং তরুণ প্রপার্টি বিনিয়োগকারীদের জন্য টিপস গুলো সম্পর্কে জেনে সেখান থেকে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্নগুলো।
লক্ষ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হোন

তরুণদের ক্ষেত্রে একটা কথার প্রচলন রয়েছে যে তারা জানে না তারা আসলে কী করতে চায়। এ কারণে যেকোনো ক্ষেত্রেই সঠিকভাবে পরিকল্পনা করে, লক্ষ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তবে আগানো উচিত। রিয়েল এস্টেট সেক্টরের বিভিন্ন ধারা রয়েছে। আর এসবের মধ্যে আপনার জন্য কোনটি উপযোগী তা আপনাকেই নির্ধারণ করতে হবে। আপনি কি কোন ফ্লিপার হাউজে বিনিয়োগ করতে চান? অথবা আপনি কি আপনার পরবর্তী প্রজন্মের জন্য প্রপার্টি রেখে যেতে চান? নাকি আপনি জমির মালিক হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী? বা আপনি কি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া দিয়ে, সেখান থেকে নিজের জন্য একটি স্থির আয়ের পথ তৈরি করার কথা ভাবছেন?
এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর থেকে যখন আপনি আপনার জন্য সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারবেন, ঠিক তখনই আপনার বিনিয়োগের সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে এবং আপনি আপনার ব্যবসার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবেন।
সঞ্চয়কৃত অর্থ

প্রপার্টিতে বিনিয়োগ করার বিষয়ে যারা বেশ আগ্রহী, তাদের ক্ষেত্রে সঞ্চয় হবে বিপদের বন্ধুর মতো। তবে এক্ষেত্রে আপনি যদি অন্যান্য ফান্ডের উপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে থাকেন, তবে বিনিয়োগের স্বপ্নে বাধা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা বিনিয়োগের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সঞ্চয় করে রাখা অর্থ।।
অর্থ উপার্জনের জন্য আপনি যদি পে-চেকের উপর নির্ভরশীল থাকেন, তবে মূল কাজের পাশাপাশি অন্যান্য আরও কাজ আপনার জন্য এগিয়ে যাওয়ার পথটা আরও সুসংঘটিত করবে। আর এ যাত্রায় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম সমূহ যেমন- আপওয়ার্ক, ফাইবার ইত্যাদি অন্যান্য মাধ্যম গুলো আপনাকে কিছু বাড়তি অর্থ উপার্জনের জন্য দুর্দান্ত সুযোগ করে দেবে। এছাড়া আরেকটি উপায় হল ভাড়ার টাকা কীভাবে কমানো যায় সে বিষয়ে চিন্তা করা।যার মাধ্যমে আপনি কিছু অতিরিক্ত নগদ অর্থ সঞ্চয়ও করতে পারবেন। যদি সম্ভব হয় আপনার বাবা -মায়ের সাথে থাকার চেষ্টা করুন। এতে করে ভবিষ্যতের জন্য বাড়িভাড়া সহ অন্যান্য খরচের টাকা সঞ্চয় করে রাখতে পারবেন। এছাড়া বসবাসের জন্য বেছে নিতে পারেন সাশ্রয়ী মূল্যের এলাকা সমূহ, এতে করে বাড়ি ভাড়ার অর্থ কিছুটা হলেও সঞ্চয় করা সম্ভব হবে। এমনকি এতে করে আপনার কত টাকা সঞ্চয় হচ্ছে তা দেখলে আপনি নিজেই অবাক হয়ে যেতে পারেন!
নিয়মনীতির পরিবর্তনকে কাজে লাগাতে হবে

রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করা মানেই হল সাম্প্রতিক সময়ের মার্কেট সম্পর্কে নিজেকে আপডেটেড রাখা। কেননা রিয়েল এস্টেট মার্কেট এর একটি ছোট পরিবর্তন আপনার বিনিয়োগের সম্ভাবনা একদিকে যেমন তৈরিও করতে পারে, অন্যদিকে ভেঙেও দিতে পারে। আর তাই তরুণ প্রপার্টি বিনিয়োগকারীদের জন্য টিপস হল নিয়মনীতির পরিবর্তনকে কাজে লাগাতে হবে। ইন্টারেস্ট রেট, ট্যাক্স ব্রেক অথবা রিয়েল এস্টেট সেক্টর এর ট্রেন্ড এ কোন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসছে কিনা সেদিকে নজর রাখতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে দেশের ব্যাংকগুলো সরকারের নির্দেশনার সাথে সম্মতি রেখে সকল প্রকার লোনের ক্ষেত্রে (ক্রেডিট কার্ড ছাড়া) একক অংকে (৯%) সুদের হার বাস্তবায়ন করা শুরু করে, যা কিনা পূর্বে ১৩% এর বেশি ছিল। আর তাই যারা এই সুযোগ কাজে লাগাতে পেরেছেন, তারা দীর্ঘমেয়াদের জন্য বেশ লাভবান হয়েছেন। কেননা এই রেট কমানোর প্রভাব পড়বে তাদের চূড়ান্তভাবে পরিশোধযোগ্য লোনের টাকার উপর।
দূর থেকে দেখতে যতটাই আকর্ষণীয় মনে হোক না কেন, একজন সফল তরুণ প্রপার্টি বিনিয়োগকারী হওয়া কিন্তু বেশ চ্যালেঞ্জিং একটা কাজ। তবে, উপরে উল্লেখিত তরুণ প্রপার্টি বিনিয়োগকারীদের জন্য টিপস গুলো সম্পর্কে আগে থেকেই ধারণা থাকলে কঠিন এই কাজটাও সহজ হয়ে যাবে, এবং আপনি একজন সফল রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগকারী হওয়ার লক্ষ্যে এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারবেন।