Reading Time: 3 minutes

উঁচু ভবন আমাদের বর্তমান নগর জীবনের অতি পরিচিত বিষয়। অথচ আমাদের পূর্ব-পুরুষদের কাছে এমন বিশাল ভবনে বসবাসের ব্যাপারটি ছিলো রীতিমতো অবাস্তব! প্রাচীনকালে বেশিরভাগ বাড়ি তৈরি হতো কাদা, মাটি দিয়ে; আর এখন আমরা বাড়ি তৈরির উপাদান হিসেবে বেছে নিচ্ছি ইট-সিমেন্ট-কংক্রিট। প্রকৃতিকে বশে আনার জন্য মানুষের হাজার হাজার বছরের চেষ্টা থেকে এসেছে দুর্দান্ত ফলাফল, হয়েছে দারুণ কিছু উদ্ভাবন। আর তার মধ্যে সুউচ্চ   ভবন নির্মাণের ক্ষমতা নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য। শুধু যে মানুষের উন্নত জীবন গঠনে সুউচ্চ   ভবনের প্রভাব আছে তা কিন্তু নয়, যেকোনো দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নেও এর ভূমিকা অপরিসীম। 

‘সুউচ্চ ভবন’ মানে কী? 

সুউচ্চ ভবন
সুউচ্চ ভবন তকমা পেতে এ ভবন গুলোকে উচ্চতায় অন্তত ৭৫ ফিট হতে হবে

সুউচ্চ ভবন বলতে আমরা সাধারণত যেকোনো বহুতলা বিশিষ্ট উঁচু ভবনকেই বুঝি। আমাদের শহুরে দিগন্তের প্রায় পুরোটাই আজকাল এমন স্থাপনায় ঢেকে গেছে, তবে এর সংজ্ঞায়নে রয়ে গিয়েছে কিছু ভুল বোঝাবুঝি। সব ভবনই সুুউচ্চ ভবন না, আবার সব সুউচ্চ ভবনই আকাশছোঁয়া স্কাইস্ক্রেপার না।

বহুতল ভবনে যখন ‘মেকানিকাল ভার্টিক্যাল ট্রান্সপোর্টেশন’ অর্থাৎ মেশিনের সাহায্যে ওপরে ওঠা-নামার ব্যবস্থা যেমন লিফট, এলিভেটর ইত্যাদি থাকে, তখন একে বলা হয় সুউচ্চ ভবন। সুউচ্চ ভবন তকমা পেতে এ ভবন গুলোকে উচ্চতায় অন্তত ৭৫ ফিট হতে হবে। অন্যদিকে, স্কাইস্ক্রেপার হতে ভবনটির উচ্চতা অন্তত ৪৯০ ফিট হতে হবে। তাই বেশিরভাগ শহরে সুউচ্চ ভবন থাকলেও স্কাইস্ক্রেপার তেমন হরহামেশা দেখা যায় না।  

সুউচ্চ ভবনের গুরুত্ব 

জনসংখ্যা
ক্রমবৃদ্ধিমান জনসংখ্যার আবাসন সমস্যা এখন এক বড় ব্যাপার

১৮০০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ছিলো মাত্র ১ বিলিয়ন, যা এখন হয়েছে ৭.৭ বিলিয়ন। কোনো কোনো দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার রীতিমতো আশংকাজনক। আর এ ক্রমবৃদ্ধিমান জনসংখ্যার আবাসন সমস্যা মেটাতে ভার্টিকাল বা উল্লম্ব দিকে যাওয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই। সেদিকেই এগোচ্ছে উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশগুলো। 

সুউচ্চ ভবনের প্রভাব 

নির্মাণ কাজ
সুউচ্চ ভবন নির্মাণ মোটেও সহজ নয়

শহরের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সুউচ্চ ভবনের গুরুত্ব অনেক বেশি। আর অবকাঠামোগত উন্নয়ন এখন দেশের সার্বিক উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক। শহরের রূপ, এর ভবিষ্যত লক্ষ্য এবং উদ্ভাবনী শক্তির ওপর সুউচ্চ ভবনের প্রভাব অনেক। 

উন্নয়নমূলক লক্ষ্য নির্ধারনে সহায়ক 

দেশ মানেই উন্নয়নের লক্ষ্যে এগোতে থাকা সমমনা মানুষের সমষ্টি। সব জাতিই তো চায় নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে। কারণ দিনশেষে সবাই ‘উন্নত জাতি’ হতে চায়। আর সেটি করতে হলে থাকতে হবে পর্যাপ্ত অবকাঠামো, যেখানে উন্নয়নমূলক লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করা হবে। তাই প্রতিটি সুউচ্চ ভবন নির্মাণের অর্থ সেই লক্ষ্যের দিকে একটু করে এগিয়ে যাওয়া। সুউচ্চ ভবন নির্মাণের এ ধারা অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সামাজিক উন্নয়নের রূপরেখা ঠিক করে দেয়।   

নগর পরিকল্পনায় ভূমিকা 

আধুনিক শহরের অন্যতম অনুষঙ্গ সুউচ্চ ভবন। নগর পরিকল্পনায় তাই এটি এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর পরিকল্পনা করার সময় অবশ্যই সুউচ্চ ভবনের বর্তমান ও ভবিষ্যত পরিবর্তনের দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। সেটি না করলে তা অনেক সময় প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

উদ্ভাবনের জয়যাত্রা 

সুউচ্চ ভবন নির্মাণ মোটেও সহজ নয়। বছরের পর বছর ধরে শ্রম ও উদ্ভাবনের জোরে গড়ে তোলা হয় একেকটি সুউচ্চ ভবন। বহুতল ভবন তো অনেক আগে থেকেই ছিলো, তবে লিফট উদ্ভাবনের আগে ছিলো না কোনো সুউচ্চ ভবন। মানুষ যেহেতু প্রকৃতিগতভাবেই সবসময় আরো উন্নয়নের দিকে ধাবিত হয়, বাড়তে থাকে আমাদের চাহিদা। তাই সুউচ্চ ভবনের নানা দিক উন্নয়নের লক্ষ্যেও মানুষ হাজারো নিরীক্ষা করছে এখনো। 

আমাদের সমাজে, নাগরিক উন্নয়নে সুউচ্চ ভবন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমাদের উদ্ভাবনী শক্তির উন্নয়নে, আধুনিক শহরের রূপরেখা গঠনেও এর প্রভাব রয়েছে। আরো ওপরে ওঠার, আরো দূরে যাওয়ার অর্থাৎ আরো উন্নয়নের লক্ষ্যে মানুষের অহর্নিশ ছুটে চলার তাড়নাকে অনেকটাই চরিতার্থ করেছে সুউচ্চ ভবন। কে জানে আসলেই আকাশ ছুঁতে পারবো কিনা আমরা!

Write A Comment