Reading Time: 4 minutes

প্রযুক্তিগত উন্নয়ন আমাদের সাহায্য করে পুরাতন সমস্যাগুলোকে নতুনভাবে, নতুন আঙ্গিকে, আরও সহজ ও কার্যকরভাবে সমাধানের। অন্যান্য সেক্টরের তুলনায় কিন্তু রিয়েল এস্টেট সেক্টর প্রযুক্তিগত পরিবর্তনকে অত সহজে গ্রহণ করতে পারেনি। অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় অন্য সেক্টর প্রযুক্তির দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে গেলেও রিয়েল এস্টেট সেক্টরে নতুন প্রযুক্তি কেবলই আরম্ভ হচ্ছে। তবে যেখানে সারাবিশ্ব প্রযুক্তিকে আলিঙ্গন করছে সেখানে শত হাজার কোটি টাকার বৈশ্বিক এই শিল্প (এক হিসেব মতে সারা বিশ্বে সামগ্রিকভাবে রিয়েল এস্টেট সেক্টরের মূল্য ৫৪ হাজার কোটি ডলার প্রায়) পিছিয়ে থাকবে তা হয় না। বরং যারা দ্রুত এই প্রযুক্তির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে, সফল হবে তারাই।

আজ আমরা এমন ৫টি প্রযুক্তিগত আবিষ্কার নিয়ে কথা বলব যারা রিয়েল এস্টেট সেক্টরের উন্নয়নে অপরিসীম ভূমিকা রাখতে পারে।

আই-ও-টি বা ইন্টারনেট অফ থিংস

Home Security, Smart Gadgets, locks
আই-ও-টি হয়ে উঠছে জনপ্রিয়

রিয়েলে এস্টেট সেক্টর তো বটেই, আই ও টি বা ইন্টারনেট অফ থিংস-এর উল্লেখ না করে খুব কম প্রযুক্তিগত উন্নয়নের আলাপই শুরু করা সম্ভব। প্রযুক্তিবিদদের মতে আই ও টি-ই হল ভবিষ্যৎ। সহজ ভাষায় আই ও টি হল আধুনিক স্মার্ট সেন্সর ও ডিভাইসের সমষ্টিতে বানানো একটি ক্লাউড-বেজড সিস্টেম। যে সিস্টেম সম্পূর্ণ অটোমেটিক এবং প্রয়োজনমাফিক কোন ম্যানুয়াল ইনপুট ছাড়া নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে এবং কোন ব্যাসিক কাজ শুরু করে দিতে পারে। আধুনিক যত স্থাপনা হচ্ছে তা অনেকাংশেই আই-ও-টি নির্ভর। এই সিস্টেম কোন বিল্ডিং নিয়ে আমাদের সামগ্রিক আইডিয়াই বদলে দিতে পারে। যে কোন কিছু বদলানো, মনিটর করা, সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে উঠবে আগের থেকে অনেক সহজ।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা বিশ্লেষণ

সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করেই বুদ্ধিমান মানুষ বিনিয়োগ করে

যে কোন ব্যবসায়ীর জন্য ভবিষ্যৎ জানা মোটামুটি একটি স্বপ্নের মত ব্যাপার। শুধু ব্যবসায়ী কেন, ভবিষ্যৎ জানার চেষ্টা মানুষ করে আসছে সেই প্রাচীনকাল থেকেই। আর প্রযুক্তির উন্নয়নের দরুন ভবিষ্যৎ জানা এখন অনেকাংশেই সম্ভব। হয়তো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রতিটা ডিটেইলস জানা সম্ভব না তবে হাতে থাকা তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষণ করে (ডাটা এনালাইসিস) অনেকক্ষেত্রেই ধারণা করা সম্ভব সামনে কি হতে পারে। আর এই আইডিয়াই বদলে দিচ্ছে সমগ্র রিয়েল এস্টেট সেক্টরকে। রিয়েলে এস্টেট এমন একটি খাত যা রাতারাতি পাল্টে ফেলা সম্ভব হয় না। একটি ইমারত নির্মাণের লক্ষ্যই থাকে অনেক বছর ধরে তা ব্যবহারের। তাই যা করার বিল্ডিং নির্মাণের আগেই করতে হয়। এক্ষেত্রে কোন একজন এনালিস্ট খুব সহজেই ডাটা বিশ্লেষণ করে কোন স্থাপনা নির্মাণ করার কোন রিয়েল এস্টেট কোম্পানীর জন্য আসলেই লাভজনক হবে কিনা তা নির্ণয় করতে পারেন। প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে এই প্রেডিকশন আরও নির্ভুল হয়ে উঠছে। আবার একজন ক্রেতা যিনি কোন বাণিজ্যিক স্থাপনা বা অফিসস্পেস নিয়ে ভাবছেন, তিনি সম্মক ধারণা পেতে পারেন কোন এলাকার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা এবং ভাড়া নিয়ে।

সার্বক্ষণিক মার্কেট মনিটরিং

মার্কেট মনিটর করে পেতে পারেন কাঙ্খিত ফলাফল

অন্য যে কোন মার্কেটের মতই রিয়েল এস্টেট খাতও বেশ কিছু ভিন্ন খাতের উপর নির্ভরশীল। যদিও অন্যান্য খাতের মত রিয়েল এস্টেট খাতে দ্রুত বা নাটকীয় পরিবর্তন হয় না বললেই চলে, তারপরেও রিয়েল টাইম ডাটা হতে পারে সে কোন খাতের জন্য অমূল্য সম্পদ। আর কমার্শিয়াল রিয়েল এস্টেটের জন্য এমন রিয়েল টাইম ডাটা প্রোভাইড করে কম্পস্ট্যাক (CompStack) এর মত বিখ্যাত কোম্পানি। বিনিয়োগকারীরা খুব সহজেই বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ডাটা যেমন, তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীরা কেমন অবস্থায় আছে, কোথায় আন্ডার ভ্যালুড এসেট আছে, কোথায় অধিগ্রহণের সম্ভাবনা আছে ইত্যাদি এনালাইসিস করতে পারেন এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি মডেল দাড় করাতে পারেন।

অফিসস্পেসে নতুন প্রযুক্তি, নেটওয়ার্কিং এর ব্যবহার

সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে নেটওয়ার্কিং এর ব্যবহার

অফিস স্পেস নিয়ে সংকটের ব্যাপারটি অনেক পুরোন। তবে প্রযুক্তির উন্নয়ের সাথে সাথে নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার হচ্ছে যা অসংখ্য মানুষকে একত্রে কানেক্ট করতে পারে। এই সেক্টরের লিডিং সার্ভিস প্রোভাইডারেরা নানা সুযোগ সুবিধা সম্বলিত কর্পোরেট লিজ সার্ভিস দিতে পারে নেটওয়ার্কের ব্যবহার করেই। এতে একদিকে যেমন খরচ কমে অন্যদিকে জায়গার সঠিক ব্যবহারও নিশ্চিত হয়। তাই এমন ফেক্সিবল এবং স্বল্পমূল্যের অফিসস্পেসের চাহিদা দিনকে দিন বাড়ছেই আর বিপ্রপার্টি ডট কম এর মত সার্ভিস প্রোভাইডারের শরণাপন্ন হচ্ছে মানুষ।

মেশিন লার্নিং

মেশিন লার্নিং
মেশিন লার্নিং, বদলে দিতে পারে পুরো পৃথিবীকে

ডিপ লার্নিং বা মেশিন লার্নিং হল আগামীর নিয়ন্ত্রক। শুধু রিয়েল এস্টেট নয় বরং সারা পৃথিবী বদলে দিতে যাচ্ছে মেশিন লার্নিং। ডিপ লার্নিং এর মাধ্যমে এখন প্রসেস অটোমেশন হয়ে উঠছে আরও স্মুথ। এ আই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স) এখন সেলস প্রসেসের প্রতিটি ধাপে অবদান রাখছে। একজন মানুষের যা শিখতে সারাজীবন লেগে যাবে কোন মেশিন তা শিখে নিতে পারে অসম্ভব দ্রুততায়। যদিও মানুষের হাতের ছোঁয়ায় সব জিনিসই পরিপূর্ণতা পায় তবে অনেক কিছুই আছে যাতে হাতের ছোয়ার চেয়ে দ্রুততা বেশি দরকারী। তাই একজন এজেন্টের জন্য এই নতুন প্রযুক্তি, মেশিন লার্নিং হতে পারে আশির্বাদ। তার কয়েকদিন বা মাসের কাজ হয়ে যেতে পারে কয়েক মিনিটেই।

প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তি পরিবর্তিত ও উন্নত হচ্ছে। আজ যা কল্পনা করাও অসম্ভব হয়ত কিছুদিন পরেই তা হয়ে যাবে হাতের উল্টো পিঠের মত চেনা। উপরে উল্লেখ করা প্রযুক্তির সাহায্যে বাণিজ্যিক রিয়েল এস্টেট সেক্টরে অর্জন করা যেতে পারে বহু সাফল্য। আমরা আগ্রহভরে অপেক্ষা করছি ভবিষ্যতের প্রযুক্তি নির্ভর রিয়েল এস্টেট কেমন হবে তা দেখতে!

Write A Comment