Reading Time: 4 minutes

‘বাইরে খেতে যাওয়া’ ব্যাপারটি আমাদের সবারই কমবেশি পছন্দ। তবে কোন রেস্টুরেন্টে যাবো সেটি ঠিক করার সময় অনেকে খাবারের স্বাদকে অগ্রাধিকার দেন, আবার অনেক ভাবেন পরিবেশের কথা। আর মাঝেমাঝে এই ‘বাইরে খেতে যাওয়া’র ব্যাপারটিকে সম্পূর্ণ অন্যরকম করে তুলতে আমরা বেছে নেই বিচিত্র থিম নির্ভর অদ্ভুত রেস্টুরেন্ট। ভৌতিক আবহে বার্গারে কামড় দিতে উৎসাহী হয় কেউ; আবার কারো আগ্রহ হাসপাতাল থিমের রেস্টুরেন্টটি একবার ঘুরে আসা। বেশ অদ্ভুত থিম হলেও বিশ্বব্যাপী, এমনকি বাংলাদেশেও এ ধরনের রেস্টুরেন্ট আছে। কিন্তু সাগরের নিচে রেস্টুরেন্টের কথা কি আপনি ভাবতে পারেন? কিংবা দুটো বানর এসে আপনার খাবার পরিবেশন করলে কেমন অবাক হবেন একবার ভাবুন তো! আজকের ব্লগে এমন অবাক করা ৫টি অদ্ভুত রেস্টুরেন্ট এর কথাই জানাচ্ছি। 

ইথা রেস্টুরেন্ট, মালদ্বীপ 

সাগরতলের জীবন
খাবার খেতে খেতে অতিথিরা দেখতে পান সাগরের অতলে ভেসে বেড়ানো মাছের ঝাঁক, সবুজ কোরালের অসাধারণ সৌন্দর্য

কনর‍্যাড মালদ্বীপে অবস্থিত রাঙ্গালি রিসোর্টের ইথা রেস্টুরেন্টটির খাবার অন্যান্য ফিউশন রেস্টুরেন্টের মতোই। তবে সেই খাবার খেতে হবে সমুদ্রের ১৬ ফিট গভীরে যেয়ে! ছাদ ও দেয়াল হিসেবে সাগরতলের এ রেস্টুরেন্টে ব্যবহৃত হয়েছে কাঁচ। তাই খাবার খেতে খেতে অতিথিরা দেখতে পান সাগরের অতলে ভেসে বেড়ানো মাছের ঝাঁক, সবুজ কোরালের অসাধারণ সৌন্দর্য। তবে সেইসাথে ইথা রেস্টুরেন্টে আপনি মুখরোচক খাবার ও ভালো সার্ভিসও পাবেন। পানির নিচে খাবার খাওয়ার দারুণ এ অভিজ্ঞতা নেয়ার সুযোগ করে দেয়ায় এটি এখন পৃথিবীর সবচেয়ে অদ্ভুত রেস্টুরেন্ট গুলোর তালিকায় নাম লিখিয়েছে। 

বার্ড’স নেস্ট রেস্টুরেন্ট, থাইল্যান্ড 

গাছের মগডালে খাবার খাওয়া
পাখির নীড়ে বসে খাবারের স্বাদ নেয়ার অভিনব এক অভিজ্ঞতা হবে থাইল্যান্ডের এ রেস্টুরেন্টটিতে

থাইল্যান্ডের সোনেভা কিরি ইকো রিসোর্টে অবস্থিত এ রেস্টুরেন্টটিতে খাওয়ার অভিজ্ঞতা নাকি সারা জীবনে ভোলা যায় না! নাম দেখেই নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, রেস্টুরেন্টটি পাখির সাথে সম্পর্কিত। সত্যিই তাই! বার্ড’স নেস্ট রেস্টুরেন্টটি গাছের ওপর পাখির বাসার আদলে তৈরি এবং এখান থেকে চারপাশের একটি ‘বার্ড’স আই’ ভিউও পাওয়া যায়। এখানে গোর্মে মিলগুলো পরিবেশন করতে যারা আসবেন, তারা ছুটে আসবেন জিপলাইনে চড়ে। সব মিলিয়ে, পাখির নীড়ে বসে খাবারের স্বাদ নেয়ার অভিনব এক অভিজ্ঞতা হবে থাইল্যান্ডের এ রেস্টুরেন্টটিতে। 

কায়াবুকিয়া ট্যাভার্ন, জাপান

আয়না দেখছে বানর
সারা রেস্টুরেন্টময় ছুটে বেড়িয়ে খাবার পরিবেশন করছে দুটো বানর – এমন উদ্ভট দৃশ্য দেখতে চাইলে তাই একবার যেতেই হবে কায়াবুকিয়া ট্যাভার্নে

প্রথম দেখায় কায়াবুকিয়া ট্যাভার্নকে পুরোনো ধাঁচের জাপানি রেস্টুরেন্টের চাইতে ভিন্ন কিছু মনে হবে না। তবে এর মতো বিচিত্র রেস্টুরেন্ট বিশ্বে কমই আছে। টোকিওর উত্তরের শহর উতসুনোমিয়ায় অবস্থিত এ রেস্টুরেন্টটির মূল আকর্ষণ হলো দুটো বানর। হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন, বানর! এখানে খাবার পরিবেশনের দায়িত্ব রেস্তোরাঁর মালিকের পোষা বানরদ্বয়ের ওপরই দেয়া। প্রথমে মালিকের উদ্দেশ্য ছিলো বানর দুটোকে রেস্টুরেন্টের টুকটাক কাজ শিখিয়ে অতিথিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। ধীরে ধীরে অতিথিদের খাবারের অর্ডার নেয়া ও পরিবেশনে দক্ষ হয়ে ওঠায়, এখন এদের ওপরই এ দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এখানে অতিথি সমাগম হয় এদের টানেই, আর মোটা অংকের টিপসও রোজগার হয় বানর দুটোর। কিন্তু টিপস হিসেবে টাকা নেয় না অদ্ভুত এই ওয়েটারেরা। সিদ্ধ সয়াবিন হলো এদের টিপস! সারা রেস্টুরেন্টময় ছুটে বেড়িয়ে খাবার পরিবেশন করছে দুটো বানর – এমন উদ্ভট দৃশ্য দেখতে চাইলে তাই একবার যেতেই হবে কায়াবুকিয়া ট্যাভার্নে। 

চিলআউট আইস লাউঞ্জ, দুবাই 

তুষারে ঢাকা রেস্টুরেন্ট
শুভ্র তুষার আর স্নিগ্ধ আলোকসজ্জার চিলআউট আইস লাউঞ্জ যেন মূহুর্তেই ভিন্ন জগতে পৌছে দেয়

রুক্ষ-শুষ্ক আবহাওয়ার জন্য বিখ্যাত দুবাই শহর। কিন্তু, এখানেই চারপাশের পরিবেশ ভুলে গিয়ে গড়ে উঠেছে বরফের তৈরি এক আস্ত রেস্তোরাঁ। এ অদ্ভুত রেস্টুরেন্টে প্রবেশের সময় অতিথিদের দেয়া হয় জ্যাকেট, হাতমোজা, জুতা ও টুপি। কারণ, ভেতরে যে হাড় কাঁপানো শীত! ভেতরের সবকিছু বরফের তৈরি, এমনকি চেয়ার-টেবিলও! শুভ্র তুষার আর স্নিগ্ধ আলোকসজ্জার চিলআউট আইস লাউঞ্জ যেন মূহুর্তেই ভিন্ন জগতে পৌছে দেয়। 

জিরাফ ম্যানর, কেনিয়া 

জিরাফ
ডাইনিং হলে প্রায়ই দেখা যায় খাবারের সন্ধানে জানালা দিয়ে মাথা গলিয়ে দিয়েছে বুনো জিরাফ

নাইরোবির জিরাফ সংরক্ষণশালার পাশেই এটি অবস্থিত। আদতে এটি একটি অভিজাত বুটিক হোটেল, তবে এর ডাইনিং হলে ব্রেকফাস্ট-লাঞ্চ-ডিনারের অভিজ্ঞতা হতে পারে ভীষণ রকম অদ্ভুত! ১৯৩২ সালে নির্মিত এ স্কটিশ হান্টিং লজটি রথশিল্ড জিরাফের অভয়ারণ্য তৈরির উদ্দেশ্যে কিনে নেন অ্যামেরিকান কনজারভেসনিস্ট (সংরক্ষণবাদী) বেটি লেজলি-মেলভিল। পরবর্তীতে তার ছেলে এটিকে বুটিক হোটেলে রুপান্তরিত করেন। এ হোটেলের ডাইনিং হলে প্রায়ই দেখা যায় খাবারের সন্ধানে জানালা দিয়ে মাথা গলিয়ে দিয়েছে বুনো জিরাফ। অদ্ভুত সুন্দর এ দৃশ্যটি মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতোই! 

কোথাও খাবারের স্বাদ নেয়া যায় সাগরের তলদেশে বসে, আবার কোথাও সে সুযোগ হয় গাছের উঁচু ডালে। কোথাও রেস্তোরাঁয় ঘুরে বেড়াচ্ছে ওয়েটার রূপী বানর, আবার কোথাও এসে উঁকি দিয়ে যায় বুনো জিরাফের দল। এমন সব অদ্ভুত রেস্টুরেন্ট এর কথা জানাতেই আমাদের আজকের ব্লগ। কমেন্টে জানিয়ে দিন কেমন লাগলো এ আয়োজন। 

Write A Comment