প্রায় এক যুগ আগেও ফলস বা কৃত্রিম সিলিং এর ধারণাটা বেশ অপ্রচলিত ছিল বাংলাদেশে। কিন্তু যতই দিন গিয়েছে, মানুষ তত বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে তার প্রিয় ঘরটিকে আধুনিক থেকে আধুনিকতর করে নিতে। আরও বেশি মনোযগী হয়ে উঠেছে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে। আর এ কারণেই বর্তমানে ঘরের নান্দনিকতায় বাকি সব কিছুর সাথে যুক্ত হয়েছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ, যার নাম ফলস সিলিং। মূলত মূল সিলিং-এর উপর সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য আরও একটা অতিরিক্ত সিলিং তৈরি করাকেই বলা হয় ফলস সিলিং৷ কিন্তু কেবল ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যই কী ফলস সিলিং করা হয়? নাকি এর আরও বেশ কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে? আপনি কেন আপনার প্রিয় ঘরটিতে ফলস সিলিং করবেন? আসুন জেনে নেই আজকের লেখায়।
সিলিং-এর উপর উন্মুক্ত বিমগুলো আড়াল করতে
অনেকের ঘরেই ছাদের স্ল্যাব বরাবর উন্মুক্ত বিম দেখা যায়। যা খুবই দৃষ্টিকটু লাগে। এক্ষেত্রে উন্মুক্ত বিমগুলোকে আড়াল করার সহজ উপায় হতে পারে ফলস সিলিং। এটি উন্মুক্ত বিমগুলোকে আড়াল করে একটি স্লিক লুক নিয়ে আসে।
বৈদ্যুতিক তার ও পাইপ আড়াল করতে
অনেকেই তার ফ্ল্যাটটিতে বিভিন্ন রকম ডেকোরেটিভ লাইট, স্মার্ট হোম টেকনোলজি কিংবা চ্যানেল মিউজিক সহ নতুন নতুন ফাংশন যুক্ত করতে চান। কিন্তু এসব প্রযুক্তি ইনস্টল করতে যে বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করা হয় তা যদি সিলিং জুড়ে দৃশ্যমান থাকে, তাহলে ঘরের পুরো সৌন্দর্যই বিঘ্নিত হয়। এক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক এসব তার আড়াল করার সব থেকে ভালো উপায় হচ্ছে কৃত্রিম সিলিং করে নেয়া। এছাড়াও, পাইপ, ডাক ওয়ার্ক, ইনসুলেশন কিংবা ছাদের স্ল্যাবের ত্রুটিযুক্ত নির্মাণ অংশকে ঢেকে রাখতেও এর প্রয়োজন হয়।
সাউন্ডপ্রুফ রুম তৈরিতে
ফলস সিলিং সাউন্ডপ্রুফ রুম তৈরিতে ভীষণ কার্যকর। এ কারণেই, অফিস বা শপিংমল কিংবা ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এই সিলিং এর ব্যবহার এত বেশি। কিন্তু কেবল অফিস বা শপিং মলই নয়, ঢাকার মত কোলাহলপূর্ণ শহরে অনেকেই চান এমন একটি ঘর তৈরি করতে যা হবে শব্দ নিরোধক। আর এই শব্দ নিরোধক বা সাউন্ডপ্রুফ ঘর তৈরির জন্যও ফলস সিলিং এর রয়েছে বাড়তি জনপ্রিয়তা। তবে, এর জন্য উপকরণগুলো বেছে নিতে হবে সতর্কভাবে। মিনারেল বোর্ড তাপ ও শব্দ- দুটিই শোষণ করে। তাই যদি ঘর তাপ ও শব্দ নিরোধক করতে চান, তাহলে ফলস সিলিংয়ে জিপসাম বোর্ড এর পরিবর্তে ব্যবহার করুন মিনারেল বোর্ড।
তাপ নিরোধক হিসেবে
ফলস সিলিং থাকলে থার্মাল ইনসুলেশন হয়। এর ফলে গ্রীষ্মকালে ঘর তুলনামূলক কম উষ্ণ হয়, আবার শীতকালেও ঠাণ্ডার প্রকোপ কম থাকে। সেদিক থেকে বিচার করলে, ফলস সিলিং যেহেতু তাপ নিরোধক হিসেবে কাজ করছে, ফলে, স্বাভাবিকভাবেই আপনার ঘরে এয়ারকন্ডিশনার এর ব্যবহার কম হবে। যা কিছুটা হলেও আপনার বিদ্যুৎ বিল হ্রাস করতে সাহয্য করে।
ঘরের আলোকসজ্জায়
ঘরকে কৃত্রিমআলোয় আলোকিত এবং উজ্জ্বল করার একটি অন্যতম উপায় হল এই ফলস সিলিং। এর একটি বড় সুবিধা হল,আপনি আপনার ঘরের মধ্যে এক বা একাধিক টিউব লাইট লাগানোর পরিবর্তে উচ্চমানের এলইডি লাইট ব্যবহার করতে পারবেন যা বিদ্যুৎসাশ্রয়ী এবং কম শক্তি গ্রহণ করে এবং বহু বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এছাড়াও, এর খাঁজে বাহারি লাইট দিয়ে ঘরে গর্জিয়াস লুক আনতে পারেন। হিডেন লাইট, স্পটলাইট, টিউব লাইট বা ফলস লাইট নকশা করা ফলস সিলিং এ নিয়ে আসবে বাড়তি জৌলুস।
স্টোরেজ তৈরিতে
বাথরুমের মূল সিলিং থেকে ফলস সিলিংয়ের মধ্যে বেশ খানিকটা জায়গা পাওয়া যায়। এ জায়গাটুকু অনায়াসে ব্যবহার করতে পারেন স্টোরেজ হিসেবে। বাথরুমের সিলিংয়ে কাঠের দরজা ব্যবহার করাটাই ভালো । তবে, দরজাটা যেনো খাঁজকাটা হয়। এতে স্টোর করা জিনিসপত্র নষ্ট হবেনা । আর যদি সম্ভব হয় তাহলে ফলস সিলিংয়ের ওপরের স্টোরেজে এগজস্ট ফ্যান ব্যবহার করতে হবে। এবং অবশ্যই আলোর ব্যবস্থা থাকতে হবে। এতে করে জিনিসপত্র রাখতে ও বের করতে সুবিধা হবে।
পুরনো দিনের হোম ডেকোরে ফলস সিলিং খুব একটা দেখা যেত না। কারণ সে সময় ঘরগুলোতে সিলিং হত অনেক উঁচু৷ বিশাল বিশাল জানলা থাকায় ক্রস ভেন্টিলেশন এর সুবিধা ছিল। তাই, সিলিং নিয়ে সেভাবে কেউ চিন্তা করতেন না৷ কিন্তু যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এখন প্রত্যেকেই চায় ঘরের মাঝে একটি আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করতে, তবে তার বদলে ঘরের সৌন্দর্যকেও মলিন হতে দেওয়া যাবে না এতটুকু। ঠিক এই জায়গাতেই ফলস সিলিং এর এত বেশি জনপ্রিয়তা। বাহারি রঙ আর ডিজাইনের বিভিন্ন রকম সিলিং আপনার ঘরের সৌন্দর্যকে যেমন বহুগুণে বাড়িয়ে দেয় সেইসাথে আরামদায়ক একটি পরিবেশ তৈরিতেও সাহায্য করে নানাভাবে। চাই শুধু, প্রয়োজন বুঝে সঠিক ফলস সিলিং এর জন্য সঠিক পরিকল্পনা। আপনি কেন আপনার ঘরে ফলস সিলিং ব্যবহার করতে চান,আমাদেরকে জানিয়ে দিন কমেন্টে।