Reading Time: 3 minutes

বন্ধুদের আড্ডা দেয়ার অন্যতম পছন্দের জায়গা হচ্ছে বনানী ১১। মজার মজার খাবারের ভান্ডার সেখানে। আরও অনেক জমজমাট এলাকা থাকলেও সবার বনানীর প্রতি টান যেন একটু অন্যরকমই। কেনাকাটা হোক কিংবা সন্ধ্যার আড্ডা যাওয়া চাই বনানীতে, আর কম বেশি এটা যেন আমাদের সবারই গল্প। গল্পে আড্ডায় অনেক আগে থেকেই বনানী এলাকাটি সবার কাছে একটি বিশেষ স্থান ধরে রেখেছে।  বনানী ১১ এর রাস্তাটি কেবল রাস্তা নয় আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে সেই শুরু থেকে কিন্তু, বনানী ১১ আজকের মত এত গুঞ্জনপূর্ণ ব্যস্ত এলাকা ছিল না। আজকের বিখ্যাত “বিএফসি বিল্ডিং” এক সময় বাচ্চাদের হাসিতে ভরা একটি সুন্দর বাড়ি ছিল। আইকনিক রোড ১১ কে কিন্তু, বনানীর আবাসিক এলাকা হিসাবে বাস্তবায়িত করার পরিকল্পনা ছিল। তবে আবাসিক এলাকার অংশ হিসেবে বনানী ১১ তেমন একটা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি। সময়ের সাথে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছিল বনানী ১১ তে। সেই পরিবর্তনগুলো কি চলুন জানা যাক!

৯০’র দশকে

দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তাটি লেকের কাছে গিয়ে সমাপ্ত হয়েছে যা মূলত গুলশান আর বনানীকে দুটি আলাদা আলাদা এলাকা হিসেবে বিভক্ত করেছে। ১৯৯০ সালে বনানী ১১ কিন্তু বিকেলের চা নাস্তা উপভোগ ও হাঁটাহাঁটির স্থান হিসেবে বেশি পরিচিত ছিল। সেখানে কমিউনিটি লাইফের একটা আভাস পাওয়া যেত, সবার মাঝে কাজ করতো কমিউনিটি লাইফ নিতে দৃঢ় অনুভূতি, যেখানে রাস্তায় প্রায় সবাই একে অপরকে চিনতেন, খবরাখবর রাখতেন বিরাজ করতো ভ্রাত্রিত্ত। প্রতিটি বিল্ডিং থেকে বাসিন্দারা নেমে জড়ো হতেন, উদযাপন করতেন বিশেষ যেকোন উপলক্ষ্য। আবার কখনো সময় কাটাতেন গল্প গুঁজব করে। সেই সময় কমিউনিটি লাইফটা ছিল এমনই ঘনিষ্ঠ। 

এলাকার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা রিনা মুবিনের কথায়, ১১ নম্বর রোড নাকি ধীরে ধীরে সেই আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেছে যা একসময় কমিউনিটি হিসেবে ছিল। তিনি বলেন “যখন আমার বাচ্চারা এলাকায় বড় হচ্ছিল, তখন বনানী ১১ ছিল এমন একটি জায়গা যেখানে তাদের সমস্ত বন্ধুরা দেখা করতো, খেলাধুলা করতো এমনকি সন্ধ্যার সময়ও হাঁটতে যেত। এখন বনানীর প্রতিটি কোণে থাকে প্রচন্ড ট্রাফিক সেই সাথে প্রতিযোগিতামূলক ভাবে বেড়ে উঠছে নতুন নতুন সব রেস্তোরাঁ। আমার মনে হয় না কারও মনেও আছে কিনা যে এই এলাকাটিকে মূলত আবাসিক এলাকা হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল। আহা, সময় কেমন দ্রুত পার হয়ে যায়!”

বনানী ১১ নং ব্রিজ
বনানী ১১ এর ব্রিজ

বর্ণিল বনানী ১১’র শুরু 

বনানী ১১, ২০০৮ সালে একটি অপ্রত্যাশিত পরিবর্তনের সম্মুখীন হয়। দুটি এলাকার সংযোগকারী গুলশান লেকের উপর একটি সেতু নির্মিত হয়। এই ঘটনাগুলোই বনানীকে আবাসিক এলাকা থেকে বাণিজ্যিক এলাকায় রূপান্তরিত করেছে। অনেকেই শান্ত নিরিবিলি কম জনাকীর্ণ এলাকায় স্থানান্তরিত হতে শুরু করেন আর অন্যরা তাদের আবাসিক বিল্ডিংয়ের স্পেস ছোট ছোট ব্যবসার জন্য ভাড়া দিতে শুরু করেন। সেই থেকে আস্তে আস্তে বনানী ১১ তে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। বনানী প্রায় সব রেস্টুরেন্টের হটস্পট হিসেবে পরিচিত। এই সড়কে অনেক রেস্টুরেন্টই তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেছে আর সবাই এখন সফল ফ্র্যাঞ্চাইজিতে পরিণত হয়েছে। ইয়াম চা ডিসট্রিক্ট তার একটি আদর্শ উদাহরণ। ব্যবসার দিকটি মাথায় রেখে, জনপ্রিয় প্যান-এশিয়ান রেস্তোরাঁ ইয়াম চা ডিসট্রিক্ট এই আইকনিক রোড থেকেই তাদের প্রথম ব্রাঞ্চের যাত্রা শুরু করেছিল। এই রাস্তা বেঁছে নেওয়ার পেছনের উদ্যেশ্যে ব্যাখ্যা করলে রেস্টুরেন্টের একজন পার্টনার আদনান খান বলেন, পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সাথে আমরা যে রেস্তোরাঁটি অফার করছি তা কেবল বনানী ১১ তে আমাদের ব্যবসা শুরু করার উপযুক্ত জায়গা হবে কেননা, কমবেশি পুরো শহর থেকে সবাই এই এলাকাতে ঘুরতে কিংবা অফিসের জন্য আসে। যেহেতু, আমরা এখন ৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যবসা করছি এবং পুরো শহরে ব্যবসা সম্প্রসারিত করেছি, তাই আপনি বলতে পারেন এটি আমাদের দিক থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল।” 

বনানী ১১
আস্তে আস্তে বনানী ১১ তে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে

শুধু এলাকাবাসী বা ব্যবসায়ী নয়, বনানী ১১ অনেক মানুষের হৃদয়ে বিশেষ একটি স্থান দখল করে রেখেছে যারা কিনা কেবল ঘুরতে বা খাবার খেতে আসেন এই এলাকায়।  

ফারদিন ফাহাদ একজন তরুণ পেশাদার যিনি কিনা এই এলাকায় প্রায়ই ঘুরতে আসেন। তার মতে, বনানীর সবচেয়ে আইকনিক স্ট্রিটটি আরও বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছে কারণ, এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের লাইফস্টাইল স্টোর। তিনি বলেন, “যখন আমি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলাম, তখন ক্লাসের মাঝামাঝি বা সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও বনানী ১১ ছিল আমাদের আড্ডাস্থল। যদিও আমি এখন পেশাগতভাবে কাজ করছি এবং আমার অফিস গুলশানে আমি এখনো বনানী ১১’র মায়া কাটিয়ে উঠতে পারিনি। প্রায় প্রতি দিন সন্ধ্যা ৬.৩০ টার পর আপনি আমাকে বন্ধুদের সাথে বনানী ক্রিমসন কাপে চিল করতে দেখতে পাবেন।” 

বর্তমান সময়ে স্থানীয়রা যেভাবে বনানী ১১ কে মনে রেখেছে সেটার সাথে এখনকার বনানীর আসলেই তেমন মিল নেই। কিন্তু, নতুন রূপে পাওয়া বনানী সবার কাছে এখন ততোটাই প্রিয়। 

Write A Comment