Reading Time: 3 minutes

ফাগুন, হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান-
তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান-
আমার আপনহারা প্রাণ; আমার বাঁধন-ছেঁড়া প্রাণ।
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

কবি গুরুর কবিতার সুরে যদি কথা বলি তবে, নিজের প্রাণ যা কিনা কখনো আপনহারা আবার কখনো বাঁধন ছেঁড়া! যেমনই হোক না কেন তা দান করতে রাজি আছেন সে! কবির লেখা প্রতি শব্দ আহ্বান জানাচ্ছে অতীতকে ভুলে আগামীকে নতুন রঙে বরণ করতে। এবং বসন্তের মত রঙিন সময়কে বরণ করতে কে না চাইবে? শীতের আমেজ কাটিয়ে বসন্তকে কাছে আনার এই মৌসুম আমরা সকলেই অনেক বেশি উপভোগ করি। 

প্রকৃতির বর্ণিল সাজ 

ফুল
ডালে ডালে ফুল ফুটেছে

প্রকৃতির দক্ষিণের উঠানে বইছে যেন ফাগুনের হাওয়া। মনের অজান্তে উড়ে যাওয়া আঁচলকে টেনে ধরে নেওয়ার মাঝেই মনে পরে যায় এই তো বসন্ত এসে গেছে! গাছে গাছে ফুটেছে পলাশ আর শিমুলের লালের মায়া। প্রকৃতি আজ জানান দিচ্ছে এই তো পহেলা ফাল্গুন! ফাল্গুন আমাদের কাছে প্রিয়। কেন জানেন? ঋতুরাজ বসন্তের আগমন এই মাসের হাত ধরেই হয়ে থাকে তাই। ঋতুরাজ বসন্তকে স্বাগত জানাতে প্রকৃতির সাথে আমাদেরও বর্ণিল সাজ। প্রকৃতি সেজে উঠে নববধুর সাঁজে। পেছনকে আরও পেছনে ফেলে, নতুনকে নিজের করে দিতে বসন্তের এগিয়ে আসা। আমরা বসন্তের প্রেমে এতটাই মশগুল যে, কবির কবিতায় আমরা জেনে গেছি! ফুল ফুটুক আর নাইবা ফুটুক আজ ই তো বসন্ত। ফুল যদি নাইবা ফোটে তাতেও কোন ক্ষতি নেই বসন্তকে নিজের করে নিতে। বসন্তের শুরুতে চারদিক লালে ছেয়ে না গেলেও একটু একটু করে বসন্ত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে ফাল্গুনের সাঁজে ঘর সাজিয়ে নিতে পারেন নানা সাঁজে। 

বসন্ত ও ভালোবাসা 

প্লেটে বেলি ফুল রাখা
বসন্ত ও ভালোবাসা

প্রতি বছর আমরা উদযাপন করি ১৩ ই ফেব্রুয়ারি বসন্ত উৎসব এবং ১৪ ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এবার যেনো উৎসব দ্বিগুণ। কেননা এবার একই দিনে হবে বসন্ত বরণ এবং ভালবাসা দিবস। আমরা ভালোবাসা দিয়ে বসন্ত বরণ করে নিব। শহর জুড়ে চলতে থাকে নানা আয়োজন। সব বয়সের মানুষের মধ্যে বিরাজ করে উৎসব আনন্দ। নানা রঙে ঢঙে সবাইকে দেখা যায়। কেউ হয়তো রিকশা করে ঘুরছেন আবার কেউ হয়তো, পরিবার নিয়ে ভালোমন্দ খাচ্ছেন। ভালোবাসার গোলাপের ছড়াছড়ি হয় পথ জুড়ে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসতে শুরু করে ফুলের দোকান। চারিদিকে শুধু ফুল আর ফুল। লাল হলুদ রঙের ফুলগুলো দেখা যায় বেশি! বসন্তে ফোটা ফুলগুলো দেখতে এতটাই প্রাণবন্ত যে অল্পতেই আপনার মন হারিয়ে যাবে। এই দুই উৎসবকে ঘিরে মনে লেগেছে আনন্দের ঢেউ   

বৃদ্ধ থেকে শুরু করে তরুণ তরুণী সকলেই কিন্তু এই দিনের জন্য করে থাকে নানান প্ল্যান।  কি পরবে? কই যাবে? এইসব নিয়ে কত শত চিন্তা! শীতকে বিদায় জানানোর মধ্য দিয়েই বসন্ত বরণে চলবে ধুম আয়োজন। শীত চলে যাবে রিক্ত হস্তে, আর বসন্ত আসবে ফুলের ডালা সাজিয়ে। বসন্তকে সামনে রেখে শুরু হতে যাচ্ছে নানা আয়োজন। যেখানে থাকবে চুড়ির মেলা, বসন্ত বরণ অনুষ্ঠান, পিঠাপুলির মেলা আরও কত কী? মন থেকে শুরু করে পোশাক সবকিছুতেই লাগবে বসন্তের ছোঁয়া।

বসন্ত নিয়ে আয়োজন 

ডালিয়া ফুল
বসন্তের সাজে সাজুক ঘর

বসন্ত নিয়ে লেখা আছে অনেক গান, অনেক কবিতা। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ভাষায় বসন্তের রূপ এমন- ‘ফুল ফুটুক, আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত’। বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের ‘বসন্ত বাতাস’ নিয়ে জনপ্রিয় একটি গান আছে। গানের শুরুটা ঠিক এ রকম- ‘বসন্ত বাতাসে সই গো বসন্ত বাতাসে, বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে সই গো, বসন্ত বাতাসে’। বসন্ত যেমন আমাদের খুশির ঋতু; তেমনি বেদনারও বটে। ফাগুনে শিমুল আর কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙ মনে করিয়ে দেয় বায়ান্নর ফাগুনের শহীদদের কথা। ফাল্গুন মনে করিয়ে দেয় ভাষা শহীদের রক্তের ইতিহাস। 

বসন্ত নেই এমন কোন ঠিকানা নেই

বসন্ত এস গেছে এমন কথা মনে তখনই উঁকি দিবে যখন শহরে ফাল্গুনের আয়োজন শুরু হয়ে যাবে। শহরের বসন্তে তারুণ্য মেতে ওঠে সকল বসন্ত উৎসবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি হয়ে সেই আনন্দের সুবাস ছড়িয়ে পড়ে শাহবাগ, রমনা বটমূল, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে রাজধানীর পুরোটা জুড়ে; শহরের কোলাহল ছাড়িয়ে নিভৃত পল্লীর ধুলোমাখা পথেও।

Write A Comment