Reading Time: 3 minutes

নগরের যান্ত্রিকতা থেকে বেরিয়ে প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটাতে চান যারা তাদের জন্য ক্যাম্পিং একদম আদর্শ! তবে থাকতে হবে অ্যাডভেঞ্চারের মানসিকতাও। আর তাহলেই নিখাদ আনন্দের হয়ে ওঠে তাঁবুতে রাত্রিযাপনের অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশে বেশ কয়েক বছর আগেও তেমন কোনো ক্যাম্পিং স্পট ছিলো না। তবে এখন বদলে গেছে দৃশ্যপট। ইউরোপ-আমেরিকার মত নির্জন-নিরুপদ্রব স্থান খুঁজে পাওয়া মুশকিল, তবে দলবেঁধে ভ্রমণ করলে তা উপভোগ্যই মনে হবে। শীতকাল যেহেতু ক্যাম্পিংয়ের জন্য সবচেয়ে উপযোগী সময়, তাই এবার আপনাদের জানাচ্ছি বাংলাদেশের জনপ্রিয় ক্যাম্পিং স্পট কোনগুলো!  

১ । সেন্ট মার্টিন ও ছেঁড়া দ্বীপ, কক্সবাজার

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পশ্চিম সৈকত ও ছেঁড়া দ্বীপের পুরোটাই ক্যাম্পিং করার জন্য আদর্শ জায়গা

বালুকাবেলায় ক্যাম্পিং করতে চাইলে সেন্ট মার্টিন ও ছেঁড়া দ্বীপ হতে পারে দুর্দান্ত গন্তব্য। নীল জলরাশি আর সমুদ্রের লোনা হাওয়া আপনার ক্যাম্পিং করার আনন্দকে পূর্ণতা দেবে নিশ্চিত। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পশ্চিম সৈকত ও ছেঁড়া দ্বীপের পুরোটাই ক্যাম্পিং করার জন্য আদর্শ জায়গা। তবে সম্প্রতি সেন্ট মার্টিনে ভ্রমণকারীদের অবাধ বিচরণে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। তাই এখানে ক্যাম্পিং করতে গেলে খোঁজখবর নিয়ে যাবেন। এ কথা এখন নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, নিরাপত্তা ও সৌন্দর্যের বিবেচনায় বাংলাদেশের জনপ্রিয় ক্যাম্পিং স্পট গুলোর তালিকায় থাকবে এ দ্বীপগুলো। 

২। ইনানী সৈকত, কক্সবাজার

বাংলাদেশের জনপ্রিয় ক্যাম্পিং স্পট গুলোর মধ্যে ইনানী অন্যতম। কক্সবাজার থেকে খুব বেশি দূরে যারা ক্যাম্পিং করতে চান না, তাদের জন্য সবচেয়ে ভাল জায়গা ইনানী সৈকত। ঝাউবনের গহীনতা, জেলে পাড়ার জীবনাচরণ আর সাগরের সুবিশালতা নিমেষেই মুগ্ধ করবে আপনাকে । এখানেই ঝাউবনের কাছে নিশ্চিন্তে ক্যাম্পিং করতে পারেন আপনি। এ ছাড়াও পুরো মেরিন ড্রাইভজুড়েই ক্যাম্পিং করা যায়। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও রোহিঙ্গা পরিস্থিতির কারণে মেরিন ড্রাইভে ক্যাম্পিং করা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এ এলাকায় ক্যাম্পিং করতে চাইলে আগেই পুলিশকে অবগত করে রাখুন। 

৩। শাহপরীর দ্বীপ, কক্সবাজার

বাংলাদেশের জনপ্রিয় ক্যাম্পিং স্পট এর তালিকা করলে শাহপরীর দ্বীপ এর কথা বলতেই হবে। শাহপরীর দ্বীপ বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের অবিচ্ছিন্ন স্থলভাগ। প্রতি বছর শীতকালে দলবেঁধে ক্যাম্পাররা এখানে আসেন ক্যাম্পিং করতে। শাহপরীর দ্বীপের জেটির আশেপাশে ও পশ্চিম সৈকত ক্যাম্পিং করার জন্য উপযুক্ত স্থান। 

৪। নিঝুম দ্বীপ, নোয়াখালী

নিঝুম দ্বীপ মূলত ম্যানগ্রোভ বন আর হরিণের অভয়ারণ্যের জন্য বিখ্যাত। তবে প্রতি বছর শীতে অতিথি পাখি দেখার জন্যও বহু পর্যটক এখানে ক্যাম্পিং করেন। বনের কোল ঘেঁষে যারা তাঁবুতে রাত্রিযাপন করতে চান, তাদের জন্য বাংলাদেশের জনপ্রিয় ক্যাম্পিং স্পট গুলোর মধ্যে অন্যতম নিঝুম দ্বীপ। এখানকার আবাসন ব্যবস্থা এখন তেমন উন্নত না হওয়ায় ভ্রমণকারীরা তাবু নিয়ে নিঝুম দ্বীপে রাত কাটাতে ভালবাসেন। নিঝুম দ্বীপের নামার বাজার এলাকা থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায় বলে এ স্থানটিই ক্যাম্পিং করার জন্য আদর্শ। 

৫। থানচি, বান্দরবান

যারা নির্জন পাহাড়ে বা ঝিরি-ঝর্ণার কাছে ক্যাম্পিং করতে চান তারা চলে যেতে পারেন বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলায়। থানচির রেমাক্রি, তিন্দু, নাফাখুমসহ বহু স্থান আছে যেখানে ভ্রমণকারীরা দলবেঁধে ট্রেকিং ও ক্যাম্পিং করতে যান। রেমাক্রি খালের তীরে অনেক উপযুক্ত স্থান আছে যেখানে ক্যাম্পিং করা যায়। তবে এসব পাহাড়ে ক্যাম্পিং করতে চাইলে স্থানীয় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। এছাড়া সাথে একজন স্থানীয় গাইডও রাখার নিয়ম আছে। 

৬। মারায়ন তং, বান্দরবান

সম্প্রতি মারায়ন তং ভ্রমণকারীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষত ক্যাম্পিং করার জন্য অনেকেই মারায়ন তং-কে বেছে নিচ্ছেন। আলীকদমের মিরিঞ্জা রেঞ্জের চূড়ায় অবস্থিত এই স্পটে ক্যাম্পিং করার জন্য বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। শরতে মারায়ন তং-এর গাছের নিচের তাঁবুতে বসে দেখতে পারেন মেঘ-বাতাসের লুকোচুরি। 

৭। রাতারগুল জলাবন ও বিছানাকান্দি, সিলেট

বাংলাদেশের জনপ্রিয় ক্যাম্পিং স্পট গুলোর মধ্যে এ দুটো স্পট বেশ আলাদা। বর্ষায় না নামা গেলেও শীতে সিলেটের রাতারগুল জলাবনের প্রায় পুরোটাই শুকিয়ে যায়। তখন বনের ভেতরেই ক্যাম্পিং করতে পারেন। ফলে জল-হাওয়ার এক অনন্য রূপ পাবেন সেখানে। এছাড়াও সিলেটের বিছানাকান্দিতে ঝিরির আশেপাশে ক্যাম্পিং করার স্থান আছে। এসব স্থানে বর্ষায় ক্যাম্পিং করতে পারবেন না। তবে ভাল তাবু ও অন্যান্য সরঞ্জাম থাকলে বর্ষাকালে নৌকায়ও ক্যাম্পিং করতে পারেন।  

৮। মহামায়া লেক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের মহামায়া লেকে কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় ক্যাম্পিং করার সুযোগ রয়েছে। যারা সবেমাত্র ক্যাম্পিং শুরু করতে চান কিংবা যারা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে ক্যাম্পিং করতে চাইছেন না, তারা মহামায়া লেক বেছে নিতে পারেন। নির্দিষ্ট ফি দিয়ে লেকের চারপাশে ক্যাম্পিং করার সুযোগ দেয় লেক কর্তৃপক্ষ। ক্যাম্পিং করার জন্য তাবুসহ অন্যান্য সবকিছু এখানে ভাড়া পাওয়া যায়। নিরাপত্তার বিবেচনায় এটি তাই বাংলাদেশের জনপ্রিয় ক্যাম্পিং স্পট গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। 

৯। রেমা কালেঙ্গা অভয়ারণ্য, হবিগঞ্জ

হবিগঞ্জের চুরুনঘাট উপজেলায় অবস্থিত রেমা কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য দেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ অভয়ারণ্যগুলোর একটি। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে এখানে বনের ধারে ক্যাম্পিং করার সুযোগ আছে। সত্যিকার জঙ্গলে ক্যাম্পিং করার স্বাদ নিতে চাইলে এখানে চলে আসতে পারেন।

১০। চর কুকরি মুকরি, ভোলা

ভোলা জেলার সর্বদক্ষিণে মেঘনার মোহনায় অবস্থিত কুকরি মুকরি একটি শান্ত চর। শীতে এখানে হাজার হাজার পাখির আগমন ঘটে। সেজন্য এখানে প্রতি বছর শীতকালে প্রচুর ভ্রমণকারী আসেন পাখি দেখতে। চরের চারদিকেই ক্যাম্পিং করা যায়। তবে দক্ষিণ অংশ ক্যাম্পিং করার জন্য বেশি উপযুক্ত। যাতায়াত ব্যবস্থা ভাল না হওয়ায় সাধারন ভ্রমণকারীরা এখানে তেমন আসেন না। তাই নিরিবিলি ক্যাম্পিং করতে চাইলে এখানে চলে আসতে পারেন।

ধীরে ধীরে বাংলাদেশে জনপ্রিয় হচ্ছে ভ্রমণে তাঁবুবাসের রীতি। সেইসাথে ক্যাম্পিং স্পটগুলোও হয়ে উঠছে সমৃদ্ধ। এ নিয়ে যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে, তবে তা জানিয়ে দিন আমাদের কমেন্টস বক্সে! 

Write A Comment