Reading Time: 3 minutes

নারী! একটি শব্দে বাঁধা হাজারো রূপ। কখনো মা কখনো প্রেয়সী আবার কখনো বোন। সবকয়টি রূপেই যে নিজেকে সেরা হিসেবে গড়ে নেন তিনিই একজন নারী। আজকের এই পর্বে যার গল্প বলা হবে সে একজন অনন্য নারী, তিনি নাজমা আমিন। ব্যাক্তি জীবন থেকে শুরু করে কর্ম জীবন প্রায় সব ক্ষেত্রেই যে নিজের সাফল্যের দ্যুতি ছড়িয়েছেন। এখনকার সময়ে কর্মক্ষেত্র বেছে নেওয়া যতটা সহজ ছিল, বেশ কয়েক বছর আগেও দৃশ্যপট ছিল কিছুটা ভিন্ন। পরিচালক, সিইও কিংবা উদ্যোক্তা কোন পথ বেছে নেওয়াই ছিল কঠিন এক পরীক্ষা। কিন্তু, এই কঠিন পরীক্ষায় যে কিনা স্টার মার্ক পেয়ে পাশ করেছেন, তিনি আর কেউ না, বিপ্রপার্টি বাইটসের নাজমা আমিন। চলুন তাহলে শুনে নেই তার জিবনের গল্পটা।  

জিবনের শুরুতে

দেশে এমন একটা সময় ছিল যখন কিনা, মেয়েদের তাদের প্রাপ্ত বয়সের আগেই বিয়ে দিয়ে দাওয়া হতো। যারা প্রাপ্ত বয়স্ক হতেন তাদের জন্যও পড়ালেখা করা, নিজের পায়ে দাঁড়ানো সবকিছুই ছিল অনেকটা কঠিন। মেয়েদের এমনও পেশা হতে পারে তা অনেকের কাছেই গ্রহণ যোগ্য ছিল না। নাজমা আমিনের বেলায়ও এমনটাই ঘটেছিল। তার বাবা মা চাচ্ছিলেন স্কুল থেকে কলেজে উঠার সময়ই যেন তিনি বিয়ে করে ফেলেন। যেই আদেশ, সেই কাজ। কিন্তু, তার স্বপ্ন ছিল, পড়ালেখা করে নিজের একটা পরিচয় গড়ে তোলা। বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হবার পর, তিনি ধরেই নিয়েছিলেন তার স্বপ্ন হয়তো আর পূরণ হবার আলো পাবে না। কিন্তু, তার বরের বাড়ির দিকের মানুষের চিন্তা ভাবনা তাকে নিয়ে ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। তার যে স্বপ্ন বিয়ের আয়োজনে, ঢাকা পরতে নিচ্ছিল সেই সব স্বপ্ন এখন সত্য হবার দৌরগোরায়। 

আলোর দিশারী খুঁজে পাওয়া

নাজমা আমিনের মুখ
কৃতজ্ঞতায় কাটে সাফল্যের প্রতিটি দিন

বিপ্রপার্টি বাইটস টিমের সাথে গল্পে গল্পে নাজমা আমিন বারে বার ফিরে যাচ্ছিলেন, সেই সব দিনগুলোতে যেখানে বিয়ের জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে গিয়ে লেখাপড়ার গন্ডি থেকে বেড় হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু, কিছু আপন জনেরা তাকে কখনই হারাতে দেননি। কারা তারা? এমন প্রশ্নের উত্তরে হেসে আর চোখে আনন্দ নিয়ে যাদের কথা বলেছিলেন তারা তার স্বামী এবং শাশুড়ি। তিনি আরও বলেন তার স্বামী নাকি তাকে লেখাপড়ায় এতটাই অনুপ্রাণিত করতেন যে কাজ শেষে বাড়ি ফিরে তাকে পড়াতে বসতেন। আবার অন্যদিকে শাশুড়ি মন দিয়ে তাকে বোঝাতেন যে সংসারের ভারে লেখাপড়াকে ভুললে চলবে না। তাই হয়তো, বিয়ের পর খেলাপড়া চালিয়ে গিয়েছিলেন পুরোদমে। এমনকি কোল আলো করা বাচ্চাগুলোকে সামলিয়েও পড়ে গেছেন মন দিয়ে। তাই তার বরের বাড়ির লোকেদের অবদান তার জীবনে অনেক, তার বরের বোনের কথা বলতে গিয়ে হয়েছেন কিছুটা আবেগী। তার পড়ার সময়গুলোতে বাচ্চাগুলোকে দেখেছেন, তাদের যত্ন নিয়েছেন বলেই তিনি লেখাপড়াটা শেষ করতে পেরেছেন। সেই কৃতজ্ঞতায় তিনি কাটিয়ে যাচ্ছেন সাফল্যের প্রতিটি দিন।  

সময় যেখানে বাঁধা হইনি 

সংসারে সময় দেয়ার সাথে সাথে, বাচ্চাগুলো যখন বড় হতে লাগলো। নাজমা আমিন নিজেকে আরও যোগ্য এবং আরও পারদর্শী করার কাজ শুরু করতে চাইলেন। তিনিও সংসারে তার অবদান রাখতে চাচ্ছিলেন। তার প্রথম চাকরি ছিল এনজিওতে । চাকরি পাবার চিঠিটা হাতে নিয়ে যে আনন্দ সে আর তার পরিবার পেয়েছিলেন সেটার কথা ভাবতে আজও তার চোখে পানি চলে আসে। কিন্তু তার স্বামীর ইন্তেকাল তাকে যতটুকু যন্ত্রণা দিয়েছিল ঠিক ততটুকু শক্তিও দিয়েছিল। সেই থেকে তিনি তার পরিবারকে মানসিক এবং অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা করে আসছেন। তিনি হয়ে উঠেছেন তার পরিবারের এক অন্যতম আস্থার ঠিকানা।

সাফল্য যেখানে বাঁধভাঙ্গা 

নাজমা আমিনের বাচ্চার ছবি
জিবনের প্রাপ্তিগুলো তাকে শক্তি দেয়

মিডিয়া জগতের অন্যতম একজন ব্যক্তিত্ব তিনি। জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল এ,টি,এন বাংলার অন্যতম প্রোডিউসার তিনি। বিপ্রপার্টি বাইটস যখন তাকে জিজ্ঞেস করল, আপনার কাছে সফলতা কি? তিনি তার সন্তানের কথা বলেছিলেন। তার কাছে তার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি তার সন্তান। সন্তানদের বড় করতে গিয়ে একাট চ্যালেঞ্জিং ক্যারিয়ার ধরে রাখার মত কষ্টসাধ্য কোন কাজই নেই। তিনি তার পরিবার আর তার অদম্য ইচ্ছাকেই তার সাফল্যের মূল মন্ত্র হিসেবে মানেন। তার প্রতিটি দিন কেটে যায় তার জিবনের প্রাপ্তিগুলোর কথা ভেবে। 

অন্য ভাবনা 

সময়ের সাথে যে পেশার ক্ষেত্রে যেমন এসেছে পরিবর্তন তেমনি কর্মক্ষেত্রেও এসেছে পরিবর্তন। এই পরিবর্তনের জন্য নারীরা এগিয়ে গেছে আরও অনেক ধাপ। নারীরা বেঁছে নিচ্ছে নানাধরনের সাহসী সব পেশা। এমনকি আধুনিক সময়ের বাবামারাও হয়েছেন আরও উদার মনের। তারা তাদের সন্তানদের এগিয়ে নিতে এক মুহূর্তও পিছপা হন না। কারন, সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা তারা ভালোমত বোঝে বলেই তারাও একত্র ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। নাজমা আমিন মনে করেন তার সকল প্রাপ্তির মূলে আছেন তার পরিবার। তার পরিবার ছাড়া তিনি কখনই এই পর্যায় পোঁছাতে পারতেন না। তিনি প্রতিদিন এই অনুপ্রেরণা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন অজয়কে জয় করার লক্ষ্যে।

নাজমা আমিনের মত নারীরাই পারে নিজের জন্য একটি আলাদা পৃথিবী গড়তে। নিজের এক অনন্য পরিচয় খুঁজে পেতে যারা জিবনের সবকটা মুহূর্তই কাজে লাগিয়েছেন তারাই হয়েছেন বিজয়ী। অসম্ভব শক্তিশালী এই নারীদের বিপ্রপার্টি বাইটস জানায়, শুভকামনা! তাদের এগিয়ে আসায় লুকিয়ে থাকে আমাদের জয়। নাজমা আমিনের মত নারীরাই আমাদের অনুপ্রাণিত করেন নতুনের দিকে এগিয়ে যেতে।

Write A Comment