“গো গ্রিন”, বর্তমান সময়ের খুব কমন এক জোড়া শব্দ। বড় বড় কোম্পানি থেকে শুরু করে বিখ্যাত সব মানুষ বা সেলেব্রেটিরা, সবাই এই “গ্রিন প্র্যাক্টিস” বা সবুজায়ন নিয়ে উচ্চকন্ঠ। গ্লোবাল ওয়ার্মিং থেকে শুরু করে অন্য সব বিষয়, আমাদের এই গ্রহে সবুজায়নের প্রয়োজন এর চেয়ে বেশি কখনই ছিল না। আর এজন্যই অন্যান্য দিবসের সাথে সাথে প্রতি বছর ৫ই জুন ওয়ার্ল্ড এনভায়রনমেন্ট ডে বা বিশ্ব পরিবেশ দিবস অনেক গুরুত্ব সহকারে পালিত হয় সারা বিশ্বেই। তাই চলুন জেনে নিন বিশ্ব পরিবেশ দিবস সম্পর্কে।
ইতিহাস
জাতিসংঘ ১৯৭২ সালের অধিবেশনে সর্বপ্রথম বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপনের উদ্যোগ নেয়। তবে প্রথম পরিবেশ দিবস উদযাপিত হয় দুবছর পর ১৯৭৪ সালে। অর্থ্যাৎ পরিবেশ নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা শুরু হয় কয়েক যুগ আগেই। তখন থেকেই এটি পরিবেশ নিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আয়োজন হিসাবে পালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে পৃথিবীর ১০০টিরও বেশি দেশ যথাযথ উপায়ে এই দিনটি পালন করে। প্রতি বছর ৫ই জুন পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই দিনটি পালন করা হয়।
ঢাকা এবং বিশ্বের পরিবেশ নিয়ে কিছু তথ্য
দুঃখজনক হলেও সত্য যে পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত কয়েকটি শহরের মধ্যে একদম প্রথম দিকে আছে আমাদের ঢাকা। ঘর থেকে বের হলেই মুখোমুখি হতে হয় দূষিত এবং স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর পরিবেশের সাথে। পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা, এর উন্নয়নের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি এখনই। কিন্তু পরিবেশ এমনই একটি বিষয় যার পরিবর্তন রাতারাতি আসে না, আনা সম্ভবও নয়।
বাংলাদেশ থেকে চোখ সরিয়ে আমরা যদি বিশ্বের দিকে তাকাই, জাতিসংঘের পরিবেশ প্রোগ্রামের হিসাব মতে, পৃথিবীর ৯২ শতাংশ মানুষ দূষিত বাতাসে শ্বাস নেয়। বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হয় এই অবস্থার উন্নতিতে। পরিবেশবিদদের মতে ২০৩০ সাল নাগাদ গ্রাউন্ড লেভেলে ওজোন দূষণের কারণে শস্যের পরিমাণ কমে যাবে ২৬% যা উদ্বেগজনক।
তবে, আমাদের উদ্যোগ নেবার সময় এখনই। বড় মাপের উদ্যোগ বা ব্যক্তিগত পর্যায়ে ছোট ছোট পরিবর্তন, উভয়ই দরকার একটি পজেটিভ উন্নয়নের জন্য। আজকে পরিবেশের জন্য নেয়া ভাল কোন উদ্যোগ আমাদের ভবিষ্যতকেই আরো সুরক্ষিত করবে।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন
এন জি ও, সেলিব্রেটি থেকে শুরু করে, স্থানীয় পর্যায়ে সবাই অংশ নেয় বিশ্ব পরিবেশ দিবস সার্থক করতে। এদিনে সাধারণত পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশের প্রধান প্রধান সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়।
এছাড়া অন্যান্য উপায়েও বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়। এর মধ্যে কোন একটি নির্দিষ্ট স্থানের বা টুরিস্ট স্পটের ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করা নিয়ে ক্যাম্পেইন বেশ জনপ্রিয়। এছাড়াও সচেতনতা বৃদ্ধিতে কনসার্ট, সেমিনার, বৃক্ষরোপণ অনুষ্ঠান আয়োজন ইত্যাদি তো আছেই। ইদানিংকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষ বিভিন্ন মজার মজার চ্যালেঞ্জ নিয়েও হাজির হচ্ছে যা পরিবেশের উন্নয়নকল্পেই শুরু করা হয়ে থাকে।
প্রতিবছর কোন একটি দেশ এবং একটি থিম নির্দিষ্ট করা হয় এই দিবসটি উদযাপনে। যেমন গত বছর এটি উদযাপন করে ভারত এবং তাঁদের থিম ছিল, “প্লাস্টিক দূষণ রোধ” (Beat Plastic Pollution)। প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য এক বিশাল মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বেশ অনেকদিন হল। এর আগে কানাডা এই দিবসটি পালন করে যার মূলমন্ত্র ছিল “মানুষ এবং প্রকৃতির মাঝে সেতুবন্ধন তৈরি” (Connecting People and Nature)। ২০১৯ সালে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করবে চায়না এবং তাঁদের থিম হল “বায়ু দূষণ”। চায়না তাদেরকে সবুজ দেশ হিসেবে দেখাতে চায় এবং এই পরিবেশ দিবস তাঁদের কাছে একটি বড় সুযোগ সেটিকে প্রমাণ করে দেখানোর জন্য।
প্রতিটি ছোট ছোট উদ্যোগ, পরিবর্তন বা আইডিয়া নিয়ে আসতে পারে বড় পরিবর্তন। বর্তমানে আপনি কি কোন সবুজায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট আছেন? অথবা এমন কোন উদ্যোগের সাথে যা পরিবেশকে করে তুলছে আরও বাসযোগ্য? আমাদের জানিয়ে দিন কমেন্ট সেকশনে! পরিবেশ নিয়ে আরও নতুন নতুন লেখা পড়তে চাইলে ঘুরে আসুন বিপ্রপার্টি ব্লগে।