Reading Time: 3 minutes

২০০৮ এ ঘটে যাওয়া বৈশ্বিক আবাসন সমস্যার প্রভাব মানুষ এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের এই রিপোর্ট অনুসারে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের শতকরা ৩০ ভাগেরও বেশি মানুষকে (প্রায় আড়াইশ কোটি মানুষ) বাস করতে হবে এমন বাড়িতে যা মান সীমার অনেক নিচে। এমন আবাসন সংকট মানুষের জীবনযাত্রার মানদণ্ডকে নামিয়ে দেয় অনেক নিচে। তাই, এমন আবাসন সংকটের সময়ে, মানসম্মত বাসা খুঁজে পাওয়া যখন হয়ে উঠছে দুষ্প্রাপ্য, তখন একটি বিকল্প সমাধান হতে পারে ক্ষুদ্র আকারের বাসা যা মাইক্রো হোম নামেই বেশি পরিচিত। মাইক্রো হোম এর আছে নানাবিধ সুযোগ সুবিধা কিন্তু তা কি আসলেই হতে পারে এই আবাসন সংকটের উত্তর? এ লেখায় আমরা সে প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজতে চেষ্টা করেছি।   

মাইক্রো হোম কী?.

মাইক্রো ক্রেডিট, মাইক্রোবাস, মাইক্রো সিম। মাইক্রো শব্দটার সাথে কমবেশি আমরা সবাই পরিচিত, এর অর্থ ক্ষুদ্র বা অনেক ছোট। তাই মাইক্রো হোমও ভিন্ন কিছু নয়। মাইক্রো হোম বলতে বুঝায় খুবই ছোট স্পেসে বসবাসের জন্য সব ধরণের সুযোগ সুবিধা নিয়ে একটি বাসা বা ফ্ল্যাট। অনেকে ৪০০ বর্গফুটের নিচে বাসাকেই মাইক্রো হোম বলেন। তবে মোটামুটি ৫০০ বর্গ ফুট পর্যন্ত বাসাকে মাইক্রো হোম বলা যায়। শোবার জায়গা, টয়লেট এমনকি রান্না করার জায়গাও এমন ছোট্ট একটি জায়গায় ভেতরেই বানানো হয়।   

মাইক্রো হোম এর নানাবিধ সুবিধাসমূহ

মাইক্রো হোম ইন্টেরিয়র
একটি মাইক্রো হোম স্পেসের প্রায় সম্পূর্ণই ব্যবহার করে তৈরি হয়

নানাধরনের সুযোগ এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটের সাথে খাপ খাইয়ে নেবার সামর্থ্যের কারণেই অর্থনীতিবিদেরা আবাসন সমস্যা সমাধানের সম্ভাব্য উপায় হিসেবে মাইক্রো হোমকে বিবেচনা করছেন। প্রতিনিয়ত আবাসন চাহিদা এবং তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাসাবাড়ির মূল্য বৃদ্ধির এই সময়ে মাইক্রো হোম আসলেই বেশ সম্ভাবনাময়।  

  • তুলনামূলক কম মূল্য

বর্তমানে এই আবাসন সমস্যার একটি প্রধান কারণ হল প্রপার্টি মূল্যের আকাশছোঁয়া উর্ধ্বগতি। হোক তা ক্রয়, নির্মাণ বা ভাড়া, মধ্যবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্তসহ সবার জন্যই প্রপার্টি নিয়ে চিন্তা করাই যেন বিলাসিতা। সব ধরণের সম্ভাবনা থাকার পরেও থ্রিডি প্রিন্টেড বাসাও এখনো সেই অর্থে অ্যাভেইলেবল হয় নি। অন্যদিকে মাইক্রো হোম খুবই ইকোনোমিক্যাল একটি সল্যুশন। এটি বানাতে বা ভাড়া করতে সাধারণ বাসার তুলনায় তেমন কোন খরচই হয় না।

  • দরকার পরে সামান্য জায়গা

নামেই তো বলে দেয়, মাইক্রো হোম বানাতে জায়গা লাগে খুবই সামান্য। আর এই বৈশিষ্ট্যই মাইক্রো হোমকে করে তোলে সাধারণ বাসা থেকে আলাদা। নগর এলাকায় সবচাইতে দামী যে জিনিস তার নাম জমি। কথায় আছে পৃথিবীতে সবকিছুর দাম কমে গেলেও জমির দাম কখনো কমবে না! তাই, খুব অল্প জায়গা যখন চমৎকার বাসযোগ্য জায়গায় রুপান্তর করা যায় তখন তার ডিমান্ড থাকবেই। এমনকি মাত্র ১৩ স্কয়ার ফিটেও বাচার জন্য ব্যাসিক উপকরণ দিয়ে থাকার জায়গা বানানো হয়েছে!

  • ইউনিক ডিজাইন

ক্ষুদ্র বাসা আন্দোলন বা Tiny House Movement আবাসন শিল্পের সংজ্ঞা বদলে দিতে চলেছে। আর্কিটেক্ট, ইঞ্জিনিয়ার বা ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের জন্য আউটসাইড দ্যা বক্স চিন্তা করার সুযোগ করে দিচ্ছে এই মাইক্রো হোম। অত্যন্ত সুন্দর এবং ইউনিক ডিজাইনের সব বাসা দেখতে পাচ্ছি এখন আমরা। যেন এক অলিখিত প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছে, কে কার চেয়ে বেশি সুন্দর এবং কার্যকরী বাসা তৈরী করতে পারে তা নিয়ে।

  • মেইন্টেইন করা সহজ

জায়গা যেহেতু স্বল্প, তাতে আসবাবও থাকবে খুবই কম। আর কম আসবাব মানে হল ডেকোরেশন অথবা পরিষ্কার পরিচ্ছনতার পেছনে কম সময় এবং শ্রমের খরচ। সাধারণ সাইজের একটি বাসা পরিষ্কার করতে যেখানে এক ঘণ্টা লাগবে একটি মাইক্রো হোম পরিষ্কার করতে হয়ত পনের মিনিটও লাগবে না। একটি ছোট জাগ্যা সাজিয়ে রাখতে আসলে খুব বেশি শ্রমের দরকার নেই।

  • পরিবেশবান্ধব

মাইক্রো হোমের যে সুবিধাটি নিয়ে সবচেয়ে কম কথা হয় সেটি হল এর প্রবেশবান্ধব দিক। আমাদের জীবনযাপনের স্টাইলই এমন হয়ে গিয়েছে যে আমরা প্রতিনিয়ত পরিবেশের উপরে চাপ বাড়িয়ে চলেছি। বড় বা সাধারণ সাইজের একটি বাসার তুলনায় খুবই কম এনার্জি, হোক তা পানি, বিদ্যুৎ বা গ্যাস, খরছ ক্রএ এই মাইক্রো হোম। প্রাইভেট কার আর ট্রাক চলতে তো আর সমান ফুল্যেল লাগে না! এছাড়া, আয়তন যেহেতু ছোট, বানাতে ম্যাটেরিয়ালও লাগে খুব অল্প। তাই এই ধরণের বাসা খুবই পরিবেশবান্ধব। পরিবেশে কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানোর জন্য এমন বাড়ির বিকল্প আসলে নেই।

সুতরাং, এরকম নানা সুযোগসুবিধা দেখার পর আপনার কী মনে হয় যে এমন মাইক্রো হোমই পারে আগামীর আবাসন সংকট নিরসন করতে? স্বল্পমূল্যে মানুষের জন্য ভাল মানের আবাসন ব্যবস্থার জন্য মাইক্রো হোম হতে পারে যুগান্তকারী সমাধান।

Write A Comment