Reading Time: 4 minutes

ধরুন একদিন আপনি ঘুম থেকে উঠে টেলিভিশন অন করলেন অথবা খবর দেখবেন বলে ফোনটা হাতে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে ঢুকলেন। স্ক্রিনের শিরোনামে আপনি লেখা দেখলেন, প্রপার্টির বর্তমান বাজারে ক্রেতারা আধিপত্য বিস্তার করছে এবং রিয়েল এস্টেটে ক্রেতা প্রধান বাজারই থাকছে”। অথবা ভিন্নভাবে বলতে গেলে, খবরের শিরোনামটি এমন হতে পারে, “আপনি যদি একজন রিয়েল এস্টেট বিক্রেতা হয়ে থাকেন তবে আপনার জন্য সুখবর হল, বর্তমান রিয়েল এস্টেট বাজার বিক্রেতা প্রধান বাজারে রূপান্তরিত হয়েছে”। তবে এই পয়েন্টে এসে আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, “রিয়েল এস্টেটে ক্রেতা প্রধান বাজার ও বিক্রেতা প্রধান বাজার” বলতে আসলে কী বোঝায়? অথবা আপনি আবার রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ এর কোন সুযোগ মিস করছেন কিনা! আর তাই ক্রেতা এবং বিক্রেতা বাজার সম্পর্কে আপনার যদি আগে থেকেই ধারণা থাকে, তবে সে অনুযায়ী আপনি নিজেকে আগেভাগেই প্রস্তুত রাখতে পারবেন।  আপনার জন্য কাজটা আরও সহজ করতে চলুন আজকের ব্লগ থেকে রিয়েল এস্টেটে ক্রেতা প্রধান বাজার ও বিক্রেতা প্রধান বাজার বলতে আসলে কী বোঝায়, সে সম্পর্কে জেনে আসা যাক।  

ক্রেতা প্রধান বাজার এর মানে কী? 

রিয়েল এস্টেটে ক্রেতা প্রধান বাজার
রিয়েল এস্টেটে ক্রেতা প্রধান বাজার হওয়া বেশ বিরল এক ঘটনাই বলা যায়

খুব সহজ কথায় যদি বলি, রিয়েল এস্টেটে ক্রেতা প্রধান বাজার এর মানে হল যখন প্রপার্টি বিক্রেতার থেকে প্রপার্টি ক্রেতা সুবিধাজনক কোন অবস্থানে থাকেন। এক্ষেত্রে প্রপার্টি বিক্রেতার উপর ক্রেতার আধিপত্য থাকে এবং প্রপার্টি বিষয়ক লেনদেনের শর্তাবলী সমূহ ক্রেতার অনুকূলে থাকে। অর্থাৎ, আরও সহজ করে যদি বলতে চাই, প্রপার্টি বিক্রেতা সম্ভাব্য ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য যখন বিভিন্ন ধরনের অফার, ডিস্কাউন্ট, সুলভ মূল্য অথবা বাড়তি অন্যান্য আরও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকেন। 

তবে চলুন রিয়েল এস্টেটে ক্রেতা প্রধান বাজার আসলে কেমন হয় সে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেয়া যাক-     

  • বাজারে পণ্য বৃদ্ধি: অর্থনীতির মৌলিক ধারা অনুযায়ী, যখন কোন পণ্যের সরবরাহ কম থাকে এবং এর চাহিদা বাজারে বেশি থাকে, তখন এর দাম বাড়বে। আবার অন্যদিকে যখন সরবরাহ হবে বেশি এবং পণ্যের চাহিদা থাকবে কম, তখন এর দাম কমে যাবে। রিয়েল এস্টেটে ক্রেতা প্রধান বাজার এবং বিক্রেতা প্রধান বাজারের নীতিও একই ধরনের। রিয়েল এস্টেটে ক্রেতা প্রধান বাজারেও চাহিদার তুলনায় বিক্রয়ের জন্য প্রচুর প্রপার্টির সরবরাহ থাকে। তবে এখানে অতিরিক্ত সরবরাহের প্রয়োজন নেই। আর তাই বাজারে যদি রিয়েল এস্টেটের পরিমাণ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি থাকে, তবে তা ক্রেতার পক্ষে চলে যায়। 
  • চাহিদা হ্রাস পাওয়া: ক্রমবর্ধমান জিডিপি হ্রাস পাওয়া, মন্দা কিংবা রুচির পরিবর্তন, রিয়েল এস্টেটে ক্রেতা প্রধান বাজারে প্রপার্টির চাহিদা সাধারণত কমই থাকে। খুব কম সংখ্যক মানুষই  সক্রিয়ভাবে প্রপার্টি কেনার কথা বিবেচনা করবে। অন্যদিকে এর চেয়েও কম সংখ্যক মানুষ সত্যিকার অর্থে বিনিয়োগ করবে। অর্থাৎ, এর মানেই হচ্ছে প্রপার্টি কেনার বাজারে প্রতিযোগিতাও হবে কম। এমনকি খুব কম সংখ্যক মানুষকেই প্রপার্টি কেনার কথা বলতে শোনা যাবে।   
  • দীর্ঘ সময় ধরে প্রপার্টি পড়ে থাকা: চাহিদার তুলনায় প্রপার্টির অধিক যোগানের ফলে অনেক সময়ই মার্কেটে প্রপার্টি দীর্ঘ সময় ধরে পড়ে থাকে। এরকম ক্ষেত্রে প্রপার্টি বিক্রির জন্য ক্রেতা খুঁজে বের করা বেশ কঠিনই হয়ে যায়। তবে শুধু ক্রেতা খুঁজে পেলেই যে হবে না, নির্ধারিত মূল্যে প্রপার্টি কেনার ব্যাপারেও যে তাকে রাজি হতে হবে। 
  • মূল্য হ্রাস: পূর্ববর্তী সকল কারণের পরিপ্রেক্ষিতে, বিক্রেতা তার প্রপার্টির জন্য একজন ক্রেতা খুঁজে পাবার আশায় খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রপার্টির দাম কমিয়ে দেবে। ২০১২ থেকে ২০১৮ সালের দিকে বাংলাদেশে এমনটাই দেখা গিয়েছে যে অনেক ডেভেলপারই লোকসানের ভার এড়াতে কম দামে প্রপার্টি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। এ সময় ঢাকায় অ্যাপার্টমেন্টের দাম কমেছে প্রায় ৩০%।

রিয়েল এস্টেটে বিক্রেতা প্রধান বাজার এর মানে কী? 

রিয়েল এস্টেটে বিক্রেতা প্রধান বাজার
রিয়েল এস্টেটে বর্তমানে ক্রেতা প্রধান বাজারই বিদ্যমান রয়েছে

“ক্রেতা প্রধান বাজার” এর মতো রিয়েল এস্টেটে বিদ্যমান আরেকটি বাজার হল বিক্রেতা প্রধান বাজার, যেখানে বিক্রেতারা থাকেন বাজার পরিচালনার মূলে। প্রপার্টি ক্রয়ে ক্রেতাদের লেনদেনের চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও, চাহিদার তুলনায় সরবরাহের ঘাটতি থাকে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, একজন বিক্রেতা প্রপার্টির মূল্য নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, যা চলমান হারের চেয়ে অনেক বেশি হয়। কিন্তু তারপরেও ক্রেতাদের মধ্যে আগ্রহ দেখা যায়, এমন একাধিক সম্ভাব্য ক্রেতাও খুঁজে পাওয়া যায় যারা লেনদেনে আগ্রহী থাকেন। তবে চলুন রিয়েল এস্টেটে বিক্রেতা প্রধান বাজার আসলে কেমন হয় সে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেয়া যাক-    

  • চাহিদার আধিক্য: রিয়েল এস্টেটে বিক্রেতা প্রধান বাজারের প্রথম বৈশিষ্ট্যই হল সরবরাহের তুলনায় উল্লেখযোগ্য প্রপার্টির চাহিদার উপস্থিতি। ফলে দেখা যাবে নির্দিষ্ট একটি প্রপার্টি ক্রয়ের জন্য চার থেকে পাঁচজন ক্রেতা অপেক্ষমান রয়েছেন।
  • সরবরাহের ঘাটতি: এমন অনেক প্রপার্টি রয়েছে যা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তৈরি করা যেতে পারে। তবে যদি চাহিদা সরবরাহের চেয়ে বেশি হয় এবং একটি নির্দিষ্ট প্রপার্টির জন্য আরও বেশি প্রতিযোগী ক্রেতা থাকেন, তখনই চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম দেখা দেয়। রিয়েল এস্টেটে বিক্রেতা প্রধান বাজারে, এ ধরনের প্রপার্টির সরবরাহ, তা পুরো অঞ্চলের জন্যই হোক বা একটি নির্দিষ্ট এলাকার জন্যই হোক, তা সীমিত করা থাকবে। কেননা কখন এবং কী দামে বাড়ি বিক্রি হবে তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সব ক্ষমতা থাকবে বিক্রেতার উপর।
  • প্রপার্টির অধিক মূল্য: যেহেতু বাজারে বিক্রেতার হাতে প্রপার্টি বিক্রয়ের সকল ক্ষমতা থাকে, সেখানে ক্রেতারা কার্যত সম্পত্তির জন্য দর কষাকষিতে জড়িত থাকেন। ফলে বিক্রেতার কাছে পছন্দ অনুসারে একটি মূল্য নির্ধারণ করার সুযোগ থাকে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সময় ধরে এমনটাই হতে দেখা যাচ্ছে,  যেখানে সম্পত্তির দাম এক কোয়ার্টার থেকে পরের কোয়ার্টারে বেড়ে যায়।
  • প্রপার্টি দ্রুত বিক্রয়: প্রত্যাশিত গড় হারের চেয়ে প্রপার্টির উচ্চ মূল্য হওয়া সত্ত্বেও, প্রপার্টি সমূহ দীর্ঘ সময় ধরে বিক্রির জন্য পড়ে থাকে না। বরং, অতি দ্রুত সময়ে কিছু সম্পত্তি বিক্রি হয়ে যায় এবং ক্রেতারা বড় ধরনের লাভের আশায় তা কিনে নেয়।  

আর তাই উপরে উল্লেখিত বিষয় সমূহ রিয়েল এস্টেটে ক্রেতা বা বিক্রেতা প্রধান বাজার এর লক্ষণ এবং বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারনা দেয়। যদিও রিয়েল এস্টেটে এক ধরনের বাজার অবস্থা থেকে অন্য বাজারে স্থানান্তরে সময় লেগে যায় অনেক। ফলে দুই ধরনের বাজার ব্যবস্থা সম্পর্কে আগে থেকেই ধারণা থাকা প্রয়োজন। 

Write A Comment

Author