১৯৬০ সালের অধুনাপরবর্তী স্থাপত্য আন্দোলনের পর থেকেই নগরায়নের পরিবর্তনের ধরণ বদলে যায়। এই ধারণা পূর্ণতা পায় ১৯৯০ সালের পরে এসে। এরপর থেকেই অতায়ধুনিক সব প্রযুক্তির ব্যবহারে আমরা পেতে শুরু করি আকাশছোঁয়া নজরকারা বিভিন্ন স্থাপত্য। ফলে এমন কিছু স্থাপত্য শৈলী কিংবা ভবনের দেখা মেলে যাদেরকে আধুনিক যুগের স্থাপত্য-আশ্চর্য বললে ভুল করা হবে না কোনভাবেই। বিভিন্ন ক্ষেত্রেই এগুলো স্ব স্ব দেশ ও জাতির সৌর্য, বীর্য এবং শক্তিমত্তার প্রদর্শক। মনোমুগ্ধকর এসব স্থাপনার খরচের কথা শুনলে চমকে উঠতে হয়। পরিকল্পনা থেকে শুরু করে নির্মাণ, এসব ভবনের পেছনে খরচ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায় প্রায়ই। প্রসঙ্গতই প্রশ্ন উঠে, পৃথিবীর সবচেয়ে দামী ভবন কোনটি? সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই আজ আমরা দেখে নেব এমন ৭ নজরকারা ভবন সম্পর্কে।
ওয়েন রিসোর্ট
লাস ভেগাস, যুক্তরাষ্ট্র
বানানোর খরচঃ ২.৭০ বিলিয়ন ডলার (২২ ,৮৭২ কোটি টাকা প্রায়)
প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার খরচায় বানানো এই বিল্ডিং বা স্থাপনাটি আসলে একটি রিসোর্ট ও ক্যাসিনো, এবং তা লাস ভেগাসের অন্যতম বলা যায়। ক্যাসিনোর জায়ান্ট স্টিভ ওয়েনের নামেই এর নাম এবং এটি ওয়েন রিসোর্টের ফ্ল্যাগশিপ একটি প্রপার্টি। ২১৫ একর জায়গা জুড়ে থাকা এই স্থাপনাটি বিশ্বের ৬ নম্বর বৃহৎ হোটেল ও ক্যাসিনো। ত্রিপল এ ফাইভ ডায়মন্ড, মোবিল ৫ স্টার, ফোর্বস ৫ স্টার এবং মিশলেন ৫ স্টারের মত সম্মানজনক অ্যাওয়ার্ড আছে এর ঝুলিতে। ২০২০ সাল নাগাদ এর আয়তন আরও ৩৫ একর বাড়বে।
ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার
নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
বানানোর খরচঃ ৩.৮০ বিলিয়ন ডলার (৩২১৯০ কোটি টাকা প্রায়)
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ঘটে যাওয়া টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার কথা আমরা কে না জানি। সেই টুইন টাওয়ারের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারকে স্বরণে রেখে তার পরিবর্তে তৈরি করা হয়েছে এই ওয়ান ওয়ার্ল্ড সেন্টার। ২০১৩তে কাজ শেষ হবার পর এটি পৃথিবীর সবচেয়ে দামী ভবন কয়েকটির একটি। ৫৪১ মিটার উচু এই ভবনটির অন্য নাম ফ্রিডম টাওয়ার এবং এটি পৃথিবীর ৭তম উচু ভবনও বটে। এটি একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব হিসাবেও কাজ করে। এই ভবনে মোট অফিসের ফ্লোর আছে ৭১টি। নিউওয়ার্কের ৪টি সাবওয়ের মিলন্সথল এটি। স্থপতি ডেভিড চাইল্ডসের নকশায় তৈরি এই ভবনে এগারোই সেপ্টেম্বরের কথা স্বরণে আছে একটি যাদুঘরও।
কসমোপলিটান অফ লাস ভেগাস
লাস ভেগাস, যুক্তরাষ্ট্র
বানানোর খরচঃ ৩.৯০ বিলিয়ন ডলার (৩৩০৩৭ কোটি টাকা প্রায়)
কসমোপলিটান অব লাস ভেগাসের জনপ্রিয় নাম কসমো। ৩০০অ টি রুম বিশিষ্ট এই অতি-বিলাসবহুল হোটেলটি প্রথম উদ্বোধন হয় ২১০ সালে বং তখন্থেকেই লাস ভেগাসের একটি অন্যতম আকর্ষণে পরিণত হয় তা। কসমোতে আছে দুটি টাওয়ার যেগুলো ১৮৪মিটার উচু। আছে ১ লক্ষ দোষ হাজার বর্গফিটের ক্যাসিনো, কনভেনশন সেন্টার এবং আরও অনেক কিছু। জার্মান ব্যাংক “ডুটশে বাঙ্ক” প্রায় ৩.৯ বীলিয়ন মার্কিন ডলার খরচে এটি নির্মাণ করে। পরবর্তীতে অবশ্য আমেরিকান কোম্পানি ব্ল্যাকস্টোন গ্রুপ করপোরেশন এটি ১.৭৩ বিলিয়ন ডলারে কিনে নেয়। তবুও এটী বিশ্বের সবচেয়ে দামী ভবন এর একটি।
এমিরেটস প্যালেস
আবুধাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাত
বানানোর খরচঃ ৩.৯০ বিলিয়ন ডলার (৩৩০৩৭ কোটি টাকা প্রায়)
সৌখিন ও বিলাসবহুল হোটেল, ভিলা, রিসোর্ট ডিজাইনের জন্য প্রসিদ্ধ স্থপতি জন এলিয়ট এমিরেটাস প্যালেসের ডিজাইন করেন। এটি আবুধাবির একদম কেন্দ্রে অবস্থিত এবং সরকারি মালিকানাধীন একটি ভবন। এটি ব্যবহৃত হয় দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের অফিসিয়াল গেস্ট হাউজ হিসেবে। এতে আছে ১১৪টি গুম্বুজ যেগুলো ৮০মিটার উচু। ভেতরে আছে ৮ লক্ষ ৫০ হাজার বর্গমিটারের কল্পনাতীত রকমের বিশাল স্পেস। এরভেতরে জায়গা হয় ৩৯৪টি থাকার জায়গার। যার ৯২টি স্যুইট, ২২ টি আবাসিক স্যুইট। এগুলো স্বর্ণ ও মার্বেল পাথর দিয়ে ঘেরা। ভেতরে আছে ২টি স্পা, ৪০ টি মিটিং রুম, দেড় কিলো লম্বা বিচ, ২টি হেলিকপ্টার ল্যান্ডিং প্যাডসহ আরও অনেক কিছু।
মেরিনা বে স্যান্ডস
মেরিনা বে, সিঙ্গাপুর
বানানোর খরচঃ ৫.৫০ বিলিয়ন ডলার (৪৬৫৯১ কোটি টাকা প্রায়)
মেরিনা বে স্যান্ডস পৃথিবীর সবচেয়ে দামী রিসোর্ট ও ক্যাসিনোর একটি। প্রায় সড়ে ৪৬ হাজার কোটী টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই স্থাপনা পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খরুচে ভবন। মেরিনা বে স্যান্ডস মোত ৩টি ৫৫তলা ভবন নিয়ে মেরিনা বে সিঙ্গাপুরের সম্মুখে অবস্থান করছে। এই ভবনগুলো যুক্ত আছে ৩৪০ মিটার লম্বা স্কাই পার্ক ও একটি ১৫০ মিটার ইনফিনিটি সুইমিং পুল দিয়ে। ইজ্রায়েলি-কানাডিয়ান স্থপতি মোশে সাফদি এই বিশাল ২০ হেকটর জায়গাজুড়ে থাকা স্থাপনার ডিজাইনার। এই রিসোর্টে আছে ২৫৬১টি বিলাসবহুল রুম। পৃথিবীর সবচেয়ে দামী ক্যাসিনোর একটিও এখানেই।
আব্রাজ আল বাইত
মক্কা, সৌদি আরব
বানানোর খরচঃ ১৫.০ বিলিয়ন ডলার (১,২৭,০৬৬ কোটি টাকা প্রায়)
আমরা আমাদের সবচেয়ে দামী ভবন নিয়ে করা লিস্টের এমদম শেষে চলে এসেছি। আর এই লিস্টে সবচেয়ে খরুচে যে স্থাপনার কথা রয়েছে তার খরচ যে আসলে কত, তা বুঝে উঠতেও বেশ বড়সর একটা দম নিয়ে উঠতে হয়। ১৫ বিলিয়ন ডলার, বাংলাদেশি টাকায় তা ১ লক্ষ ২৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
জল্পনা কল্পনা রেখে চলুন এর সম্পর্কে জানি। এর নির্মাণ করে ছেলে সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সৌদি বিনলাদিন গ্রুপ। এটি সরকারী মালিকানাধীন একটি কমপ্লেক্স যেখানে আচে ৭টি আকাশছোঁয়া ভবন। এর মধ্যে সবচেয়ে উচু ভবনটির উচ্চতা ৬০১ মিটার যা পৃথিবীর তৃতীয় সর্বোচ্চ। এখানে আচে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ঘড়ি, যার ব্যাস প্রায় ৪৩ মিটার। সৌদি সরকারের তথ্যমতে সম্পূর্ণ প্রকল্পের নির্মাণে খরচ হয়েছে ১৫বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তুলনা করলে বলা যায়, আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর আনুমানিক বাজেট ৩.৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ একটি আব্রাজ আল বাইত বানানোর খরচে ৪টির বেশি পদ্মা সেতু বানানো সম্ভব! নিশ্চিতভাবেই এটি পৃথিবীর সবচেয়ে দামী ভবন ! এখানে মোট ফ্লোর এরিয়া ১৫ লক্ষ বর্গ মিটার। একসাথে থাকতে পারবেন ১ লাখ মানুষ, আচে দুটো আলাদা মসজিদ, একটি পুরুষ এবং অন্যটি নারীর জন্য, একসাথে নামাজ আদায় করতে পারেন ১০ হাজার মানুষ। প্রতিবছর অবস্থাসম্পন্ন হাজীদের অনেকে এই কমপ্লেক্সের একটি হোটেল অবস্থান করেন।
এই ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে দামী কয়েকটি স্থাপনা নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন। এগুলোর অনেকগুলোই এখনো ক্রম বর্ধমান। আবার কিছুদিনের মাঝেই হয়ত এর থেকেও দামী স্থাপনা তৈরি হয়ে যাবে কে জানে!