Reading Time: 3 minutes

ব্যস্ততা থেকে অবসর নিয়ে চলুন না একটা দিন হারিয়ে যাই, ঘুরে আসি লাল গোলাপের রাজ্য আমাদের প্রিয় গোলাপ গ্রাম থেকে। নিরিবিলি আর প্রকৃতির মাঝে একটি দিন কাটাতে গোলাপ গ্রাম এর থেকে উত্তম কোন ঠিকানা আমার জানা নেই। শরতকালে গোলাপের রাজ্যে হারানোর জন্য সেরা সময়। অনেক তো হাটলেন রাজপথের ফুটপাতে এবার না হয় লাল মাটির মেঠোপথে হেঁটে দেখলেন। মনটা মূহুর্তেই সজীবতায় ভরে যাবে। শুনতে বহুদূরের পথ মনে হলেও এই গোলাপের রাজ্য কিন্তু শহরের খুব কাছেই। সাভারের তুরাগ নদীর কোল ঘেঁষে বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদুল্লাহপুর গ্রামে এই গোলাপের রাজ্য তৈরি হয়েছে। চলুন এই রাজ্য সম্বন্ধে আরও জেনে নেই     

যেভাবে যাবেন এই গোলাপের রাজ্যে

লাল গোলাপ
সাদুল্লাহপুরের গোলাপ গ্রাম

ঢাকা থেকে এই গোলাপ গ্রামের দূরত্ব মাত্র ২৫ কিলোমিটার। গাড়ি বা সিএনজি দিয়ে সরাসরি যাওয়া গেলেও যাত্রা পথে আপনি চাইলে কিছুটা ভিন্নতা আনতে পারেন। আর এই ভিন্নতার জন্য বেছে নিতে পারেন ট্রলার। নৌকাও মন্দ হবে না। বিরুলিয়া পৌঁছানোর আরও সোজা পথ আছে। বাসে-রিকশায় চলে যাওয়া যাবে অনেক কাছাকাছি। ঢাকা থেকে বাসে সাভার বাসস্ট্যান্ড, সেখান থেকে মিনিবাসে বিরুলিয়া বাজার। এরপর আপনি চাইলে হেঁটে বা রিকশায়ও চলে যেতে পারেন গ্রামের ভেতরে। তবে, নির্জন সকাল বা দুপুরে রিকশা খুঁজে পাওয়া একটু কঠিন বৈকি। আর যেতে পারেন ঢাকার মিরপুর-১ থেকে বেড়িবাঁধ হয়ে নদী পার হয়েও। বেড়িবাঁধে রিকশা বা বাস যাই থাকুক বলতে হবে বিরুলিয়া যাব। তাহলেই আপনাকে নামিয়ে দেওয়া হবে খেয়াঘাটে। নৌকায় মাত্র কিছু সময়েই পার হয়ে যাবেন নদী। ওপারেই সাদুল্লাহপুর গ্রাম। শুধু সাদুল্লাহপুর নয়, আশেপাশের শ্যামপুর, কমলাপুর, বাগ্মীবাড়ি গ্রামের গোলাপের রাজ্যে চোখ আটকে যাবে যে কারও। গোলাপের সৌন্দর্য দেখতে অনেকেই দল বেঁধে চলে আসেন সাদুল্লাহপুরে। সাদুল্লাহপুর পোঁছানোর সময়টা নিঃসন্দেহে সুন্দরভাবেই কাটবে এই সময়টা।

লাল গোলাপের দেশে

লাল গোলাপ
একটি দিন অন্যরকম করে তুলুন

সাদুল্লাহপুর যাওয়ার পথেই পড়বে একটি বাজার। লাল গোলাপ সাধারণত ফোটে বিকালের দিকে। তাই দুপুরে পোঁছে গেলে ভয় পাবার কিছু নেই। দুপুরের খাওয়া দাওয়াটা সেরে নিতে পারবেন এই বাজারের যেকোন হোটেলে। সবসময় তো ফাস্ট ফুড কিংবা রেস্টুরেন্টের খাবার খাওয়া হয় এবার না হয় একদম গ্রামের খাঁটি বাংলা খাবার খেয়ে দেখলেন। এবার নাহয় গোলাপ গ্রামের দিকে হাটা যাক। আঁকাবাঁকা পথের দু-ধারেই ছেয়ে আছে গোলাপফুল। সমস্ত গ্রামই যেন লালে ছেয়ে আছে। বিকেলের দিকে ফুটতে শুরু করে গোলাপ এবং মূহুর্তেই চারিদিক ভরে উঠে লাল গোলাপে। গ্রামের শতকরা ৯০ শতাংশ মানুষের পেশা হল গোলাপ চাষ। সাধারণত মিরান্ডা প্রজাতির ফুল এখানে বেশি চাষ হয়। তবে গোলাপ ছাড়াও আরও বেশ কিছু ফুল এখানে আছে। যেমন, সাদা গোলাপ, জারবেরা ও গ্ল্যাডিওলাস। এমন সুন্দর দৃশ্য শুধু দেখেই উপভোগ করবেন তা কিন্তু না। চাইলে ৫০ বা ১০০ টা গোলাপও কিনে নিতে পারেন প্রিয়জনের জন্য। গোলাপের সুবাসে ছেয়ে যাবে আপনার জীবন। বিকেল বেলায় গোলাপ ফুটে থাকে দেখে, সকল চাষিরা বিকেলেই ফুলগুলো তুলে গ্রামের হাঁটে তোলেন বিক্রির জন্য। সাদুল্লাহপুর গ্রামের আশে পাশে রয়েছে ৩ টি হাট। যেখানে সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয়ে যায় ফুল ব্যবসায়ীদের আনাগোনা। আর রাতভর চলতে থাকে ফুলের কেনাবেচা। জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারিতে গোলাপের চাহিদা বেশি থাকে। এছাড়া, যখনই বাজারে গোলাপ কম থাকবে তখনই গোলাপ বিক্রি হয় চড়া দামে। সাধারণত এভাবেই গোলাপের চাহিদা বাড়ে কমে।    

ফেরার পথে

গোলাপ গ্রাম
এই গোলাপ গ্রাম আমাদের মনে থেকে যাবে চিরকাল

ফুলের রাজ্যে থাকতে কার না ভালো লাগবে। লালের সমারোহে হারিয়ে গেলে ফিরে আসা অনেক কঠিন কিন্তু ব্যস্ততা থেকে সময় ফাঁকি দিয়ে বেশি সময় থাকার অনুমতি আমাদের কারও নেই। সেজন্য ফেরার কথা আমাদের ভাবতেই হয়। যতই ভালো লাগুক না কেন তাই বলে কি সেখানে চিরকাল থাকা যাবে? নিশ্চয়ই না। ফেরার কথা ভাবতেই হয়। খেয়াঘাটের পথে বাড়ি ফিরতে পারেন। কিংবা, ওপরে লেখা যেকোন উপায়েই পোঁছাতে পারেন আপনার ঠিকানায়।  এই গোলাপ গ্রামের মত ঢাকার আশেপাশে ঘোরার জন্য সুন্দর জায়গার কিন্তু অভাব নেই। এমনই সব সুন্দর ঘোরার জায়গা যেখানে আপনি যেতে চাইবেন বারবার। আসলে কতটা এই গ্রাম সুন্দর তা জানতে নিচের ভিডিওটি দেখে নিতে পারেন। ঘুরে এসে আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের জানাতে ভুলবেন না। কেননা, এই ভিডিওটা দেখলে আপনি অবশ্যই এখানে অন্তত একবার যেতে চাইবেন। এমন আরও সুন্দর ভিডিও দেখতে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলের অলিগলি প্লে লিস্টটি দেখুন।

Write A Comment