Reading Time: 4 minutes

সাহিত্য আর সংস্কৃতি যাদেরকে উজ্জীবিত রাখে তাদের কাছে এই ইনডোর কালচারাল ইভেন্ট ভেন্যুগুলো এমন জায়গা, যেখানে জীবন থাকে। ব্যস্ত সময় থেকে নিজেকে চুরি করে বইয়ে ডুবে থাকা বা কোন কালচারাল পরিবেশে সুন্দর সময় কাটানো। সংস্কৃতিমনা যারা তাদের জন্য এই ইনডোর কালচারাল ইভেন্ট ভেন্যুগুলো সাপ্তাহিক মিলনমেলার এর জন্য এক অনন্য ঠিকানা। বিভিন্ন সংস্কৃতিকে একটু কাছে ছোঁয়া যায় এখানে। কখনো ভিন্ন দেশীয় গানের কনসার্ট, কখনোবা আর্ট এক্সিবিশন আবার কখনো অন্য দেশীয় ভাষা শেখার সুযোগ। ইনডোর কালচারাল ইভেন্ট ভেন্যুগুলো তে আবার দেশীয় সংস্কৃতিকেও তুলে ধরা হয়ে থাকে। ইচ্ছা মত বই পড়ার পাশাপাশি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার মতও চমৎকার সুযোগও এখানে আছে! আর্ট আর সাহিত্যের এমন সংমিশ্রণ হরহামেশা কোথায় দেখা যায়? যে সমস্ত জায়গায় এমন সুযোগ রয়েছে এমন কয়েকটি জায়গা নিয়ে আজকের এই ব্লগ! 

বুক ক্যাফে 

ঢাকার বুক ক্যাফেগুলোতে প্রায়ই প্রকাশনা উৎসব, সাহিত্য সভার আয়োজন করা হয়
ঢাকার বুক ক্যাফেগুলোতে প্রায়ই প্রকাশনা উৎসব, সাহিত্য সভার আয়োজন করা হয়

বই পড়ে সময় কাটানো যাদের পছন্দের কাজ তারা ছুটে যেতে পারেন এই বুক ক্যাফেগুলোতে। যেখানে নিরিবিলি বসে ইচ্ছে মত বই পড়তে পারছেন। বইয়ের সমারোহ থেকে আপনি ইচ্ছে মত বই পড়তে পারছেন। বই পড়ার পাশাপাশি এই সমস্ত ক্যাফেতে বন্ধুদের নিয়ে সময়ও কাটাতে যেমন পারবেন। বই পড়া বা আড্ডা দেয়ার পাশাপাশি এই ক্যাফেগুলোতে হয়ে থাকে,গল্পবলা, কবিতা পাঠের আসর, নতুন লেখা ও লেখকের সঙ্গে পরিচিতিমূলক সভা, প্রকাশনা উৎসব, চিত্র ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজন। বেঙ্গল বই ঘর, পাঠক সমাবেশ ও বাতিঘর এই বুক ক্যাফেগুলোতে আপনি বই পড়ার পাশাপাশি এই সবকিছুই করতে পারছেন। শুধু বই পড়া বা কালচারাল ইভেন্ট নয়। বই পড়ার পাশাপাশি এই বুক ক্যাফেগুলোতে পাওয়া যায় নানান লেখাপড়ায় সহায়ক নানা আকর্ষণীয় সামগ্রী। ছুটির দিনগুলোতে এই জায়গাগুলোতে থাকে উপচে পড়া ভিড়। সপ্তাহের একটি সন্ধ্যা বই আর গল্প আড্ডায় কাটাতে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন এই বুক ক্যাফেগুলোতে। প্রিয়জনদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে চলতে পারে আড্ডা।

কালচারাল সেন্টার 

আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকা
আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকা প্রায়ই নানান ইনডোর প্রোগ্রাম আয়োজন করে থাকে

সাধারণভাবে সংস্কৃতি হলো বিশেষ কোনো জাতি বা জনগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য এবং জ্ঞান। যার মধ্যে ভাষা, ধর্ম, খাদ্যাভ্যাস, সামাজিক আচার, সঙ্গীত এবং শিল্পকলা এই বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত থাকে। মানে একেক দেশের একেক ভাষা হয়। এক দেশের বাসিন্দা অন্য দেশের চলাফেরা, বুলি বা ভাষা সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করার জন্য দেশের ভেতরে কালচারাল সেন্টার তৈরি করা হয় যেখানে গেলে আপনি সে দেশ সম্বন্ধে আরও ভালো করে জানতে পারবেন। তাদের ভাষা শিখতে পারবেন। তাদের সংস্কৃতি সম্বন্ধে জানতে পারবেন। সেই সাথে অন্য দেশে লেখাপড়া করারও সুযোগ পাওয়া যায়। এই সেন্টারগুলোতে শেখানো হয়ে থাকে, নাচ গান বা বাদ্য যন্ত্র চালানো। দেখানো হয়ে থাকে ভিনদেশী সিনেমা। এছাড়াও, স্টুডেন্ট ইমিগ্রেশন ভিসা কনসালটেন্সি করার ব্যবস্থা করা হয়। বেশ কিছু জনপ্রিয় কালচারাল সেন্টার রয়েছে যেখানে আপনি জানতে পারবেন অন্য সংস্কৃতি সম্বন্ধে। গ্যেটে ইনস্টিটিউট, রাশিয়ান সেন্টার ফর সাইন্স এন্ড কালচার, ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার, ইরান কালচারাল সেন্টারগুলোতে আপনি যেমন তাদের দেশীয় সংস্কৃতি সম্বন্ধে জানতে পারবেন তেমনি উপভোগ করতে পারবেন তাদের সংস্কৃতি। 

গ্যালারী সমূহ 

গ্যালারি
গ্যালারিগুলোও ইনডোর কালচারাল ইভেন্ট ভেন্যু হিসেবে ব্যবহার করা হয়

আর্ট শব্দটির গভীরতা সম্ভবতই কেউ মাপতে পেরেছে কিন্তু ডুবে গিয়েছে অনেকেই। অনেকেই। মানুব জীবনের একদম শুরু থেকে যদি ভাবি, সবথেকে বড় যে আর্ট তা আমার মতে হবে প্রকৃতি। প্রকৃতি নিজেই নিজের মধ্যে একটি আর্ট আর এই বিশাল বিশ্বটা তার গ্যালারি। গ্যালারিগুলোওইনডোর কালচারাল ইভেন্ট ভেন্যু হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। লা গ্যালারী অ্যাট অ্যালায়েন্স ফ্রাঞ্চাইস দে ঢাকাঃ ফরাসি দূতাবাসের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এই গ্যালারীতে বছরে ২০ টির মত প্রদর্শনী হয়। বাংলাদেশ ও ফরাসি সংস্কৃতির একটি মিশ্রণ এই গ্যালারী তাই বিশেষভাবে এই ধারা বজায় রেখে তারা প্রদর্শনী আয়োজন করে থাকে। গ্যালারি চিত্রক, বেঙ্গল  আর্ট গ্যালারি, জাতীয় চিত্রশালা (ন্যাশনাল আর্ট গ্যালারী) এই গ্যালারিগুলো নানা ইনডোর ইভেন্টের ভেন্যু হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 

শিল্পকলা একাডেমী 

১৯৭৪ সাল থেকে শিল্পকলা একাডেমীর যাত্রা শুরু হয়েছে। ৪ যুগ আগে  গড়ে উঠেছিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী নামের এই জাতীয় প্রতিষ্ঠান। রমনায় সেগুনবাগিচা এলাকার দুর্নীতি দমন কমিশনের বিপরীতে অবস্থিত শিল্পকলা একাডেমী। শিল্পকলা একাডেমী তৈরি মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশ করার জন্য। শিল্পকলা একাডেমীর আরও বেশ কিছু বিভাগ রয়েছে যেমন, চারুকলা বিভাগ, নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিষয়ক বিভাগ, সংগীত ও নৃত্যকলা বিভাগ, গবেষনা ও প্রকাশনা বিভাগ, প্রশিক্ষণ বিভাগ, প্রযোজনা বিভাগ, প্রশাসন ও অর্থ বিভাগ ও প্রশিক্ষণ প্রদান। শিল্পকলা একডেমীর আরও বেশ কিছু প্রকাশনা রয়েছে। নাটক ও নাট্যকলা বিষয়ক বই থেকে আর্ট অব বাংলাদেশ সিরিজ শিল্পকলা বুলেটিন এর মত জনপ্রিয় সব প্রকাশনা রয়েছে। মিলনায়তন, সভা, সেমিনার, নাট্যশালা অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্য শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালা মূল থিয়েটার হল, এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হল বা পরীক্ষণ থিয়েটার হল ও ষ্টুডিও থিয়েটার হল আছে। কালচারাল ইভেন্ট এর জন্য আপনাকে অন্তত ১ মাস আগে বুকিং দিতে হবে। শিল্পকলা একাডেমীতে হয়ে থাকা নানা  ইনডোর কালচারাল ইভেন্টগুলো অনেকের বেশ প্রিয় বলে সবাই অপেক্ষা কর থাকে, শিল্পকলায় ঘুরে আসার জন্য।

বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র 

আবদুল্লাহ আবু সাইদ ৬০ এর দশকে বাংলাদেশকে একটি স্বশিক্ষিত জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে, আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে ১০ জন তরুণ নিয়ে ও তাদের জন্য দশটি বই কেনার দাম বাবদ এক ভদ্রলোকের কাছ থেকে পাওয়া ৩৪ টি টাকা সম্বল করে শুরু হয়েছিল বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের যাত্রা। সেই সদস্য সংখ্যা আজ ২৮ লক্ষে। এসে দাঁড়িয়েছে। আলোর মানুষ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে আজ থেকে প্রায় চল্লিশ বছর আগের এই পথযাত্রা আজ অনেক আলোর যাত্রী জন্ম দিয়েছে। সারাদেশের আলোকিত মানুষ গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি করা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মূল লক্ষ্য। এই লক্ষ্যগুলোকে সফল করে তোলার জন্য বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ১৯৭৮ সাল থেকে এ-পর্যন্ত আয়োজন করেছে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি। স্কুল-কলেজ কর্মসূচি, উন্নয়ন কার্যক্রম, জাতীয় ভিত্তিক লাইব্রেরি কার্যক্রম,ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি,ঢাকা লাইব্রেরি,আলোর ইশকুল,প্রকাশনা কার্যক্রম, শ্রবণ-দর্শন কার্যক্রম, বাংলাভাষার চিন্তামূলক রচনা সংগ্রহ ও প্রকাশনা কার্যক্রম, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র সাংস্কৃতিক ভবন, ভ্রাম্যমাণ বইমেলা।

ইনডোর কালচারাল ইভেন্ট ভেন্যুগুলো কেমন লেগেছে জানাতে কমেন্ট করুন! 

Write A Comment