Reading Time: 3 minutes

গল্পের জাদুর গালিচা যদি না ই খুঁজে পান তাহলে মন খারাপের কিছু নেই! কেননা আমাদের আছে স্মৃতির গালিচা, কমলাপুর রেল স্টেশন । ভাবছেন হয়তো, জাদুর গালিচার সাথে কেন কমলাপুর রেল স্টেশন এর কথা জুড়ে দেওয়া হচ্ছে! তাহলে খুলেই বলি, জাদুর গালিচায় চড়ে যেমন মনের খুশি মত জায়গায় যাওয়া যেত, তেমনি কিন্তু বাস্তবের জাদুর গালিচা হচ্ছে এই কমলাপুর রেল স্টেশন। একেকটি প্ল্যাটফর্ম থেকে রোজ না হয় লাখো স্বপ্ন ছেড়ে যায় গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। কেউ আছে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন আবার কেউ আছেন কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে শহরে ফিরছেন। এই সবকিছুর মাঝে কিছু গল্প কিছুটা অপূর্ণই রয়ে যায়। কিছু গল্পের শেষে এভাবেই রুপারা হারিয়ে যায় নয়তো মিলিয়ে যায়। এমন এক হারিয়ে যাওয়া গল্পের রুপাকে আমরা আজ স্মরণ করব অলিগলির এই পর্বে। 

কাপল পিক
প্রেমিক যুগলের এই জায়গাটি ছিল সবচেয়ে প্রিয়

তখনকার ঢাকায় সময় কাটাবার জায়গার অভাব কিন্তু ছিল না। তবুও, প্রেমিক যুগলের যেন এই জায়গাটি সবচেয়ে প্রিয়। বিকেল বেলার সেই আড্ডার কথা আর কারও না হোক প্রেমিক যুগলের মনে ঠিকই গেঁথে আছে। গল্পে গল্পে কতবারই না, যেকনোটি ট্রেন ধরে পালিয়ে যাবার ইচ্ছে হয়েছিল। কিন্তু সব ভেবে আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি।  এমন দ্বিধাদন্দের চিঠি না হলেও হাজার খানেক মিলবে এই স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে। এমনই এক চিঠির গল্প বলা হবে আজ অলিগলির ভ্লগে।

এই স্টেশনের বয়সও কিন্তু কম নয়! তাই হয়তো এত এত হৃদয় মেলার আর ভাঙার গল্প দেখেছে এই রেল স্টেশন। সেই ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৬৯ সালেই পুরোদমে চালু করা হয়। পুরো স্টেশনজুড়েই যাদের স্মৃতি তাদের জন্য দোতালার বিরতি রেস্তোরাঁটাও যেন অনেক বেশি প্রিয়। এই রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাওয়া শেষ করে অনেকেই ধরতেন যার যার ট্রেন আবার কোন কোন প্রেমিক যুগল করত গল্প। ঠিক আমাদের চিঠির রুপাদের মত, তারাও এখানে সময় কাটাতে ভালোবাসতো। ৮ টি প্ল্যাটফর্মের সাথে তাদের এতই সখ্যতা ছিল যে সেখানে পত্রিকা ও ম্যাগাজিন বিক্রেতাদের নাম ও জানা ছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সব কিছুই আজ বদলে গেছে। আগের সেই চির চেনা মানুষগুলো আর নেই। এসেছে নতুন মানুষ। কিন্তু তাতে কি? হাজারো নতুন মুখের ভিড়ে আজও তাদের মায়ায় জড়ানো হাসি খুঁজে পাওয়া যায়।

রেল স্টেশন
সেই হারানো সময়ের সাক্ষী হয়ে আছে এই স্টেশনটা

এই শহরে ছুটে আসা হাজারো মানুষের কতশত স্বপ্ন, আশা, ভালোবাসা এখানে কখনো খুঁজে পায় পূর্ণতা আবার কখনো সময়ের ভিড়ে যায় হারিয়ে যায়। সেই হারানো সময়ের সাক্ষী হয়ে আছে এই স্টেশনটা। এই স্টেশনটা কারও কাছে ঘর আবার কারও কাছে বাড়ির চেয়ে কোন অংশে কম না। এই জাদুর শহরটা কখনও কখনও কিছুটা নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে। তা মানবার নয়। কখনো কখনো কাঠফাটা রোদের দুপুরে বা তুমুল বর্ষার রাতে বড়ই নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে এই শহর। তখন এই আশ্রয়হীন মানুষদের জন্য হয়ে যায় ভীষণ কষ্ট।

ভালবাসতে জানা মনটা আর কিছু জানে না! চাকরির প্রয়োজনটা বোঝে না। রুপা যাকে ভালোবাসত তার চাকরি আর নিজের বাড়ি নেই বলে, রুপাকে হঠাত করে সরিয়ে নেয় রুপার বাবা মা। সেই থেকে ছেলেটি আজও রুপাদের বাসার সামনে দিয়ে এক বার অন্তত আসে, যাতে করে তার প্রিয়তমার দেখা মেলে। কিন্তু সময়ের ফেরে যারা হারিয়ে যায় তারা যে কখনো ফেরে না তা কি আর প্রেমিক হৃদয় বোঝে? 

একটি মেয়ে ও ছবি
কিংবা ভালোবাসার মতো এই চিঠিটাও কমলাপুর স্টেশনের এগলি-ওগলি ঘুরে বেড়াক

সময়ের সাথে ভালোবাসা যেমন হারিয়ে গিয়েছিল তেমনি রেল স্টেশনের সেই অবস্থাও আর নেই এখন। ঐ জমজমাট ব্যাপারগুলো যেন হারিয়ে গেছে, ঘরে বসেই কেটে ফেলে সবাই ট্রেনের টিকিট। কত কিছু নতুন হয়েছে। আজকের এই যাত্রা শুভ হোক এই ভেবে ভালোবাসার যে এই চিঠিটা যেভাবেই হোক সব রুপাদের কাছে যেন পৌঁছে যাক। কিংবা ভালোবাসার মতো এই চিঠিটাও কমলাপুর স্টেশনের এগলি-ওগলি ঘুরে বেড়াক। আজ তাহলে এখানেই বিদায় জানানো হোক। দেখা হবে আবারও কোন এক নতুন পর্বে।

Write A Comment