প্রকৃতি থেকে এসেছি আমরা, কোথাও না কোথাও প্রকৃতিতেই আমাদের শেষ আশ্রয়। সারা দিনের ছুটে চলা, অফিসের কাজ, নিজের ব্যস্ততা সব কিছুই একসময় একঘেয়ে হয়ে যায়, তখন নতুন করে জীবনী শক্তি ফিরে পেতে ছুটে যাই প্রকৃতির কাছে। প্রকৃতি কখনই আমাদের শূন্য হাতে ফেরায় না, বরং যা প্রয়োজন তাঁর থেকে বেশি পেয়েছি আমরা। আমরা অনেকেই জানি না যে ৪০ টির মত পার্ক ঢাকা শহরকে ঘিরে রেখেছে। প্রকৃতির আংশিক সৌন্দর্য নিয়ে গড়ে উঠা কিছু পার্ক নিয়ে আজ আলোচনা কর হবে। চলুন তাহলে হেঁটে আসি সেই সব বিখ্যাত পার্কের পথ ধরে। ইতিহাস, জনপ্রিয়তা, সৌন্দর্যের তারতম্যে কিছু অন্যতম বিখ্যাত নাম বলা হচ্ছে।
রমনা পার্ক
রমনা পার্ক ঢাকা শহরের সব থেকে পুরানো একটি পার্ক। ১৬১০ সালের মুঘল আমলে এটি নির্মিত হয়েছে। সেই থেকে এ পার্কটি তাঁর খ্যাতি ধরে রেখেছে। সেই থেকে এই পার্কে বাগান, মসজিদ,মাজার এবং মন্দির স্থাপন করা হয় কিন্তু সময়ের প্রবর্তনে এই পার্কের সৌন্দর্য খানিকটাও ব্যাহত হয়নি। এখনো ঢাকার অন্যতম সুন্দর পার্কের একটি এই রমনা পার্ক। ৬৮.৫ একর জমির ওপর নির্মিত এই পার্কে ৭০ টিরও বেশি প্রজাতির গাছপালা,গাছ ও ফুলের গাজ রয়েছে। এই পার্কটি খুব ই জনপ্রিয় এক নাম, দৈনিক ১০০ দর্শনার্থীর মত মানুষ এখানে তাদের পদচারনা রেখে যায়। ছুটির দিন গুলোতে এই পার্কে আরও পদচারনায় মুখোর হয়ে ওঠে। কেননা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাপকাঠিতে রমনা পার্ক অতুলনীয়।
চন্দ্রিমা উদ্যান
লেকের ধার ঘেঁষে গড়ে ওঠা চন্দ্রিমা উদ্যান বিখ্যাত একটি পার্ক। সংসদ ভবনের অপর প্রান্তে এর অবস্থান হওয়ায় সংসদ ভবন ঘুরতে আসা অনেক দর্শনার্থীর দৃষ্টি আকর্ষন করেছে ইতি মধ্যে। সকালের জগিং থেকে শুরু করে নিজের মত করে সময় কাটানোর জন্য অনেক জমজমাট একটি নাম চন্দ্রিমা উদ্যান। ঢাকার বাহির থেকেও দর্শনার্থী এসে একবার হলেও ঘুরে দেখে এই পার্কটি, যদিও সময়ের সাথে ও কর্তৃপক্ষের অবহেলার জন্য চন্দ্রিমা উদ্যানের এখন অনেকটাই সৌন্দর্য ব্যাহত হয়েছে। ক্রিসেন্ট লেকের উপর যে সেতুটি রয়েছে তা জিয়াউর রহমানের স্মৃতিস্তম্ভের সমাধি এবং এ শহরের বাসিন্দাদের কাছে তা জিয়া উদ্যান নামেই বেশি পরিচিত। চন্দ্রিমা উদ্যান ৭৪ একর জমির অপর নির্মিত। ছুটির দিন গুলোতে পথ শিল্পী, ঘোড়ার গাড়িসহ নানা রকমের হকার্সরা বসে থাকে তাদের মালামাল নিয়ে। ঘুরতে আসা বন্ধুরা,পরিবার সকলেই এদের ক্রেতা। খুব মনোরম পরিবেশে এখানে নিজের মত করে সময় কাটানো যায়।
বাহাদুর শাহ্ পার্ক
নাম শুনে হয়তো তেমন পরিচিত কোন পার্ক নাইবা লাগতে পারে কিন্তু এটি ততোটাই অর্থবহ একটি স্থাপনা। ইউরোপীয় সভ্যতায় গড়ে ওঠা এ পার্ক এর অস্তিত্ব অনেক আগে থেকে। ব্রিটিশ আমল থেকে এ পার্ক নাজর কেড়ে রেখেছে দর্শনার্থীদের। তখন এ পার্ককে সকলে ভিক্টোরিয়া পার্ক নামেই বেশি চিনতে পারত। বাহাদুর শাহ্ পার্ক অবস্থিত পুরান ঢাকায়। পার্কটির আশে পাশে আছে স্কুল,কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বলতে গেলে অনেকটা সদরঘাট নৌকা টার্মিনালের নিকটে। এলাকায় থাকা বাসিন্দা কিংবা দূর থেকে ঘুরতে আসা সকলের এক পছন্দ বাহাদুর শাহ্ পার্ক। সকালের জগিং থেকে শুরু করে সান্ধ্য কালীন আড্ডায় সেরা বাহাদূর শাহ্ পার্ক।
ধানমন্ডি লেক পার্ক
ঢাকায় বসবাস করে অথচ ধানমন্ডি লেক সম্বন্ধে জানে না এমন খুব কমই আছে। শান্ত শীতল একটি লেক পার্ক ভাবতেই প্রশান্তি বয়ে যায়। সবুজ শীতল পরিবেশে নিজের করে সময় কাটানো যায় অনেকখন। এই লেকে প্রতিনিয়ত বয়ে চলেছে তুরাগ নদীর একটি শাখা। তাই হয়তো এই পার্কটি শহরের প্রায় সবার ই প্রিয় একটি ঠিকানা। লেকের কোল ঘেঁষেই আছে সাংস্কৃতিক মঞ্চ রবীন্দ্র সরোবর। কিন্তু ধানমন্ডি লেককে আরও আকর্ষনীয় করে তুলেছে, এটার সবুজ শ্যামল পরিবেশ এবং প্রশস্ত মাঠ ঘুরতে আসা সকলের জন্য এটি খুব খোলামেলা একটি জায়গা। ধানমন্ডির সৌন্দর্যে এই লেকটি যোগ করেছে এক অনন্য মাত্রা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ছেয়ে যাওয়া এই লেকটি সকলের কাছে প্রিয় একটি পার্ক। এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার যে কিনা এই লেকে আসেনি।
গুলশান লেক পার্ক
ঢাকার অন্যতম বিলাশবহুল এলাকা হচ্ছে গুলশান। শহরে বুকে যত্নে গড়ে তোলা একটি এলাকা হচ্ছে গুলশান। কূটনৈতিক এলাকায় হওয়ায় সকল এমব্যাসি এখানে পাড়ি জমিয়েছে। তাই দেখতে ছিমছাম এ এলাকা অনেক আকর্ষনীয় একটি জায়গা। কূটনৈতিক জোন হওয়াতে নিরাপত্তা রয়েছে অনেক তাই হয়তো ছিমছাম পরিবেহস বিরাজ করে আর পার্কে দর্শনার্থী এর ভিড় লেগে থাকে। নিরাপত্তার অভাবে অনেকে সন্ধার পর ঘর থেকে বেড় হয়না, অন্তত গুনশানে এই ভয় নেই। তাই হয়তো মানুষ নিশ্চিন্তে ঘুরে দেখতে পারে এবং প্রকৃতির আনন্দ উপভোগ করে। সকালের হাঁটাহাঁটি থেকে সান্ধ্যকালিন আড্ডায় গুলশান লেক এক প্রিয় নাম।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান
বাংলাদেশের ইতিহাসে আমাদের রাষ্ট গঠনে ৭ই মার্চের ভাষণ এর অনেক গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তেমনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেরও রয়েছে স্থানগত ভূমিকা। পাকিস্তান আর্মির আত্মসমর্পণের মাহেন্দ্রখনটির সাক্ষ্য ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। স্বাধীনতার জন্য আমাদের যুদ্ধের সম্মানে স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছিল। এমন প্রাকৃতিক পরিবেশ খোলামেলা আবেশে একটি পার্ক শহরের মধ্যে খুঁজে পাওয়া খুব ই ভার। ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা আশপাশের মধ্যে স্বাধীনতা জাদুঘর দেখে যেতে পারেন। ঐতিহাসিক অবস্থানের পাশাপাশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাপকাঠিতে এটি সব থেকে সুন্দর না বলা যায় নিঃসন্দেহে। গাছাপালা আর ফুলের গাছ দিয়ে ঘেরা এই পার্কটি বয়ে আনে প্রশান্তির ছায়া।
ব্যস্ততা আর জঞ্জালে ঘেরা এই শহরে প্রশান্তি এনে দেবার জন্য এই পার্ক গুলো ছাড়া কোন অপশন মাথায় আসার নয়! তাই ছুটে ছুটে যদি হয়রাণ হয়ে যান একটি প্রকৃতিতে ফিরে গিয়ে জিরিয়ে নিতে পারেন। এই ছয়টি পার্ক না ঘুরলেই নয়। ঘুরে এসে আমাকে জানাতে ভুলবেন না, যে কেমন ঘুরেছেন?