বিশ্ব ডায়েবেটিক দিবস। পৃথিবীজুড়ে ডায়েবেটিক নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর ১৪ই নভেম্বর পালিত হয় এই দিবসটি। তাই নিজের ঘরকে কীভাবে ডায়েবেটিক ফ্রেন্ডলি করে তুলবেন, সেটি নিয়েই আজকের আর্টিকেল। “হোম সেফটি” বিষয়টি এখানে ডায়েবেটিক রোগীদের কথা মাথায় রেখে সম্প্রসারিত হয়েছে। ডায়বেটিস অথবা এ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে সৃষ্ট নানা সমস্যাকে এড়াতে হলে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে? ডায়বেটিক রোগীর নিরাপত্তায় ঘরের ভূমিকা কী হতে পারে? সাধারণ কিছু গাইডলাইন মেনে ঘর গোছালেই মিলিয়ে নেয়া যাবে এসব প্রশ্নের উত্তর।
হাতের কাছেই রাখুন গ্লুকোজ বা চিনি
আপনি যদি ইনসুলিন বা সালফনিলিউরিয়াস ব্যবহার করে থাকেন, বা যদি এমন হয় আপনি ব্লাড সুগারের মাত্রা আঁচ করতে পারেন না, তাহলে আপনি হাইপোগ্লাইসিমিয়া বা লো-ব্লাড সুগারের ঝুকিতে রয়েছেন। যেকোন সময় শরীরে সুগারের পরিমাণ কমে গিয়ে আপনি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। এজন্য দ্রুত কাজ করে এমন গ্লুকোজ, চিনি বা চকলেট রাখুন হাতের কাছে। যে কোনোসময়ই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তাই নিরাপত্তার খাতিরে এমন গ্লুকোজ বা দ্রুত সুগার দিতে পারে এমন কিছু গাড়িতে অথবা যে ব্যাগ আপনি নিয়মিত ব্যবহার করেন, তাতে রেখে দিন।
প্রয়োজনীয় মেডিকেশনের লিস্ট তৈরি করে দেয়ালে টাঙিয়ে রাখুন
হাইপো বা হাইপারগ্লাইসিমিয়ার ক্ষেত্রে, আপনার বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সদস্যদের আপনার হেলথ ইমারজেন্সি দ্রুত জানা প্রয়োজন। সবচেয়ে ভাল হয়, একটি লিস্ট তৈরী করুন। আপনার মেডিকেল কন্ডিশন কী, কোনো কিছুতে এলার্জি আছে কি না, আপনার ওষুধপত্র এবং অন্যান্য ডোজ – সবকিছু তাতে লিখে রাখুন। লিস্টটি দেয়ালে টানিয়ে রাখুন। তাতে করে আপনার আশেপাশের মানুষ যে কোনো ইমার্জেন্সিতে দ্রুত আপনাকে সাহায্য করতে পারবে।
গ্লুকগন কিট প্রস্তুত রাখুন
গ্লুকগন পাউডার হতে পারে জরুরী সময়ে আপনার জীবনরক্ষাকারী উপাদান। তাই গ্লুকগন পাউডার, লিকুইড, একটি পরিষ্কার সিরিঞ্জ আর একসেট সিরিঞ্জ সংগ্রহে রাখুন সবসময়। এরকম ৪/৫টি গ্লুকগন কিট তৈরি করে রেখে দিন নিরাপদ জায়গায় ও সঠিক তাপমাত্রায়। সেইসাথে প্রতি মাসে একবার সেগুলোর মেয়াদ ঠিক আছে কিনা দেখে নিন। আপনার বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সদস্যদেরও জানা প্রয়োজন গ্লুকগন কীভাবে প্রস্তুত ও ব্যবহার করতে হয়। বাড়ির সবাইকে কীভাবে পাউডার এবং লিকুইড মেশাতে হয়, সিরিঞ্জে ভরতে হয় এবং ইঞ্জেকশন দিতে হয় সে ব্যাপারে বাড়ির সকলকে প্রশিক্ষণ দিন। আপনি যদি হাইপোগ্লাইসিমিয়াতে আক্রান্ত হন, একমাত্র তারাই পারবে আপনার জন্য সঠিক সেবাটি নিশ্চিত করতে।
যে কোন জরুরী ডায়েবেটিক পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকুন
হাইপোগ্লাইসিমিয়ার কারনে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া সবার জন্যই আতঙ্ক সৃষ্টি করে, বিশেষত ডায়েবেটিক রোগীরা যারা একা বাস করেন। আপনার কাছের কোনো বন্ধু বা পরিবারের কাউকে বলে রাখুন যাতে করে তারা প্রতি সকালে একবার আপনাকে ফোন দিয়ে আপনার সুস্থতার বিষয়টি জেনে নেন। দরকার হলে, একটি হোম মেডিক্যাল অ্যালার্ট সিস্টেমও সেট করে নিতে চেষ্টা করুন।
ঔষুধপত্র গুছিয়ে রাখুন
টাইপ ২ ডায়েবেটিস এর বিস্তার এতো বেশি যে প্রতি ঘরে একের অধিক সদস্যও ডায়েবেটিকে আক্রান্ত হচ্ছেন। এক্ষেত্রে পরিবারের এক সদস্যের ওষুধ ভুলবশত অন্যজনের সাথে গুলিয়ে ফেলা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। তাই আপনার মেডিকেশন আলাদা জায়গায় সংরক্ষণ করুন। অনেকগুলো চেম্বার আছে এমন ওষুধের বাক্সে ওষুধ রাখুন। আরো ভালো হয় বাক্সের উপরে একটি পার্মানেন্ট মার্কার দিয়ে গুরুত্বপুর্ণ ওষুধের নাম লিখে রাখলে। তাতে করে কোন সময় কোন ওষুধ খেতে হবে এ নিয়ে দ্বিধান্বিত হতে হবে না।
মেঝে পরিষ্কার এবং শুকনা রাখুন
সবসময় ঘরের মেঝে পরিষ্কার আর শুকনো রাখুন। আপনি যদি ডায়েবেটিক নিউরোপ্যাথিতে আক্রান্ত হন, তাহলে ঘরের মেঝে অ্যান্টিসেপটিক মেডিসিন দিয়ে পরিষ্কার করা ও শুষ্ক রাখা খুবই জরুরি। সবসময় বাড়িতে ব্যবহারের জন্য একজোড়া রাবারের স্যান্ডেল আলাদা করে রাখুন।
ডায়েবেটিক আক্রান্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের যারা একা থাকতে পছন্দ করেন, তাঁদের উচিৎ স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারে এমন একজন হোম হেলথ কেয়ার বা সার্টিফাইড নার্সিং অ্যাসিসট্যান্ট রেখে নেয়া। তবে সবচেয়ে জরুরি হল বাড়িতে ডায়েবেটিক ফ্রেন্ডলি কেন জরুরি সেটা বুঝা ও পরিবারের ডায়েবেটিক আক্রান্ত সদস্যদের সুস্থতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
অনেকে বলেন “ট্রিপল ডি” (D-D-D) হল ডায়াবেটিক রোগীদের সুস্থ থাকবার সর্বোত্তম পত্থা। আর এই তিনটি ডি হল – ডায়েট, ড্রাগ এবং ডিসিপ্লিন। তাই আপনি ডায়াবেটিক রুগী হলে সঠিক নিয়ম শৃঙ্খলাই পারে আপনার দীর্ঘায়ু নিশ্চিত করতে। এই লেখা নিয়ে আপনার কোন পরামর্শ থাকলে তা আমাদেরকে কমেন্ট সেকশনে জানাতে ভুলবেন না।