Reading Time: 3 minutes

সপ্তাহান্তে ছুটির দিনগুলি আসে কিছুটা অবসর আর উপভোগের মন্ত্র নিয়ে। কর্মজীবি জীবনে কারও কারও ছুটি সপ্তাহে একদিন আবার অনেকের দুদিন। অনেকেই ঘরের কাজ শেষে শুয়ে বসে না থেকে পছন্দ করেন ঘুরে বেড়াতে। আমাদের আজকের লেখা তাদের উদ্দেশ্যই যারা উইকেন্ডকে বেঁছে নেন ঘুরাঘুরির জন্য। ঢাকার আশেপাশে ঘোরার জায়গা যে একদম কম তা কিন্তু নয়। কোথায় সে সব জায়গা, কিভাবে যাবেন, কত সময় লাগতে পারে সেখানে পৌঁছাতে এমনসব তথ্য নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।

পুরান ঢাকা

ঢাকার আশেপাশে ঘোরার জায়গা - পুরান ঢাকা
পুরান ঢাকার কোন বাড়ি

সবকিছুরই শুরু রয়েছে। আজকের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, লাখো মানুষের স্বপ্নের নগরী, মেগাসিটি ঢাকার শুরুটা যে জায়গায় কালের বিবর্তনে আজ তা পরিচিত পুরান ঢাকা নামে। পুরান ঢাকা? সে তোঁ সবাই চেনে! তাহলে তা এই লিস্টে স্থান পেল কিভাবে? পুরান ঢাকা কোনভাবেই আর দশটা ঘুরতে যাবার এলাকার মতন নয়। তবে, এই এলাকাতেই রয়েছে দেশের সবচাইতে পুরাতন স্থাপনার কয়েকটি। মুঘল আমলের কিছু এবং ব্রিটিশ আমলের অনেক প্রত্মতাত্তিক নিদর্শন দেখতে পাওয়া যাবে পুরান ঢাকার অলিতে গলিতে যা আপনি সারাদিন দেখেও শেষ করতে পারবেন না। তাছাড়া পুরান ঢাকার মুখরোচক খাবারের কথা কে না জানে? তাই ঘুরে বেড়ানোর জন্য পুরান ঢাকা হতে পারে এক চমৎকার ঠিকানা।

দেখে নিতে পারেন পুরান ঢাকা নিয়ে বানানো এই চমৎকার ভিডিওটি

ঢাকার যেকোন জায়গা থেকে পুরান ঢাকায় আপনি যেতে পারবেন বাসে বা ট্রেনে গেলে নামতে হবে কমলাপুরে। পুরান ঢাকা দেখার একমাত্র নেগেটিভ দিক হতে পারে এর অপ্রসস্থ রাস্তা যা সারাদিনই থাকে জ্যামে ভরপুর! তবে গুলিস্তানে নেমে যেকোন দিকে হাটতে শুরু করুন, দেখার মতন চোখ থাকলে নিশ্চিত, আপনি অসাধারণ কিছু না কিছুর খোঁজ পেয়ে যাবেন!!

বসুন্ধরা রিভারভিউ

ঢাকার আশেপাশে ঘোরার জায়গা - বসুন্ধরা রিভারভিউ
বসুন্ধরা রিভারভিউ-এ কোন বিকেল

একপাশে কুড়িল বিশ্বরোড, একপাশে বাড্ডা রামপুরা আর একপাশে পূর্বাচল নিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা এখন সোনার চেয়েও দামী। তাই ঢাকাবাসী কেউ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা চেনে না, এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। তবে অনেকেই যেটি জানেন না তা হল, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মতনই আরেকটি প্রজেক্ট হল বসুন্ধরা রিভারভিউ। কেরানীগঞ্জে, বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে নির্মানাধীন এই প্রকল্পের কাজ অনেকাংশেই বাকি। আর তাই দিনে গিয়ে দিনে ঘুরে আসার জন্য শুধু এই প্রকল্পই নয় বরং কেরানীগঞ্জই হতে পারে ঢাকার আশেপাশে ঘোরার জায়গা । বিশেষ করে শরৎকালে ঘুরে বেড়ানোর জন্য এটি হতে পারে চমৎকার ঠিকানা! নানারকমের তরুর সমাহার, একদম প্রকৃতির খুব কাছাকাছি। আর কাশফুল তো আছেই!

কেরানীগঞ্জ তথা বসুন্ধরা রিভারভিউতে ঘুরতে যেতে চাইলে আপনি দুইটি ভিন্ন উপায়ে যেতে পারেন। প্রথমটি হল বাস এবং নৌকা। প্রথমে গুলিস্তান থেকে বাসে চড়ে চলে যান শ্যামপুর টার্মিনাল, এবার সেখান থেকে নৌকা ভাড়া করে চলে যান বসুন্ধরা রিভারভিউ। অনেকের জন্য এটিই প্রথম পছন্দের নৌকা ভ্রমণ থাকায়। আর নৌপথে না যেতে চাইলে গুলিস্তান থেকে ডিরেক্ট বাসে উঠে কেরানীগঞ্জ চলে যেতে পারেন এবং সেখান থেকে রিকশা করে পৌঁছে যেতে পারেন আপনার গন্তব্যে।

পানাম সিটি

ঢাকার আশেপাশে ঘোরার জায়গা - পানাম সিটি
পানাম সিটিতে থাকা পুরনো নিদর্শন

সোনারগাঁ হল ঢাকার দক্ষিণ-পূর্বে থাকা নারায়নগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা। তবে পনের শতকের দিকে সোনারগাঁয়ের অবস্থা এমন ছিল না। বরং ঈশা খার আমলে সোনারগাঁ ছিল বাংলার রাজধানী। এই এল্কার বেশিরভাগ স্থাপনাই ব্রিটিশ কলোনি, মুঘল এমনকি কিছু কিছু সুলতানি আমলেরও! পানাম নগর হল তেমনি একটি বিখ্যাত ঐতিহাসিক স্থাপনা।

এমনিতে সোনারগাঁ একটি গুরুত্বপূর্ন অঞ্চল হলেও উনিশ শতকের প্রথম দিকে পানাম নগর বিখ্যাত হয়ে উঠে। ইংরেজরা এটিকে ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলে মূলত ঢাকাই মসলিন কাপড়ের কেনাবেচার জন্য। এছাড়াও মুঘল আমলে এই এলাকায় বেশ কিছু ব্রিজ নির্মাণ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়। এসব ঐতিহাসিক স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ এখনো আপয়ান্র জন্য অপেখহা করে আছে পানাম নগরে। ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণে বাংলাদেশ কখনোই উদাহরণ নয়। তবুও, বেশ কিছু লাল ইটের দালান এখনো টিকে আছে পানাম নগরে যা হতে পারে আপনার ঘুরতে যাওয়ার ঠিকানা।

পানাম নগর যাবার জন্য গাবতলী, মিরপুর, উত্তরা, গুলিস্তান, অর্থাৎ ঢাকা শহরের যে কোন প্রান্ত থেকে সোনারগাঁ গামী বাসে উঠে পড়তে হবে। মোগরাপাড়া ক্রসিং এ নেমে কোন রিকশা নিয়েই চলে যেতে পারেন ঐতিহাসিক পানাম সিটি। এখানে প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা, তবে বিদেশীদের জন্য তা ১০০ টাকা। পানাম নগর প্রতি রবিবার বন্ধ থাকে, সোমবারে অর্ধদিবস আর মঙ্গল থেকে শনিবার খোলা থাকে সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত। তাই পানাম নগরও হতে পারে একদিনের মাঝে ঢাকার আশেপাশে ঘোরার জায়গা ।

শহুরে জীবন থেকে আমরা সবাই চাই ছুটি। আর ভ্রমণে হল মনের অসুখের ঔষুধ। ঢাকা শহরের যান্ত্রিক জীবন থেকে ছুটি পেতে ঘুরে আসতে পারেন উপরে উল্লিখিত যেকোন জায়গা। নিশ্চিতে, নির্ভাবনয়ায় ছুটির দিন কাটিয়ে পূর্ণোদ্যমে যোগ দিতে পারেন সারা সপ্তাহের কাজে।

Write A Comment