Reading Time: 3 minutes

দেশের অন্যতম প্রধান দুটি শহর ঢাকা এবং চট্টগ্রাম। বেশীরভাগ সময় এই দুটি শহরের মধ্যে তুলনা যেন লেগেই থাকে। জীবনযাত্রার দিক থেকে কিংবা বসবাসের সুবিধার্থে এই দুটি শহরে জীবনযাপন আসলে কেমন? এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই আসতে পারে। তাই আজকে এই দুটি জায়গার শহুরে জীবন নিয়ে আলোচনা করবো। যথেষ্ট কারণ রয়েছে কেন সবাই এই শহরগুলোকে বসবাসের জন্য বেছে নেয়। ঢাকা বনাম চট্টগ্রাম – এখানে শহুরে জীবন আসলে কেমন জানা যাক। 

আবাসন ও বসবাসের খরচা

বসবাসের জন্য যেকোন জায়গা বা এলাকা বেছে নেওয়ার জন্য আবাসন এবং বসবাসের খরচা অন্যতম একটি কার্যকরী প্রভাবক বলা যেতে পারে। অর্থাৎ, যে এলাকা বা জায়গায় আবাসন ও বসবাসের খরচা কম সেখানে মানুষ সহজেই বসবাস করতে রাজি হবে। আর বসবাসের জন্য রাজধানী শহর অবশ্যই ব্যয়বহুল। ধানমন্ডি, বসুন্ধরা আর / এ, উত্তরা, মিরপুরের মতো আবাসিক এলাকায় একটি সাধারণ দুই বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া ২০,০০০ টাকা থেকে ৩০,০০০ টাকায় পাওয়া যেতে পারে। আর এই টাকার অংকটা কেবল ভাড়া নিয়েই আরও অনেক খরচ যেন বাদই। অন্যদিকে চট্টগ্রামে আবাসনের এই খরচটা একদমই কম। সবরকম আধুনিক সুবিধাসহ দুই বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্ট ১৫,০০০ টাকা থেকে ২০,০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। তবে যেকোন প্রপার্টির বিনিয়োগ মুনাফা চট্টগ্রামের তুলনায় ঢাকায় অনেক বেশি। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি ১০ বছরের মধ্যে ঢাকায় ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকার প্রপার্টিতে বিনিয়োগ করেন তবে বেশ কয়েক বছরে মূল্য দ্বিগুণ হওয়া সম্ভব। 

আগ্রাবাদ
যেকোন প্রপার্টির বিনিয়োগ মুনাফা চট্টগ্রামের তুলনায় ঢাকায় অনেক বেশি

পরিবহন খরচ

নিয়মিত যাতায়াতের জন্য চট্টগ্রাম বেশ সাশ্রয়ী। এ শহরে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে খুব একটা সময় লাগে না। ঠেলতে হয় না ট্র্যাফিক। ঢাকার বাসে ২০ মিনিটের পথ আপনাকে পাড়ি দিতে হবে ২০ টাকার বিনিময়ে। কিন্তু চট্টগ্রামে ঠিক উল্টো। এই ২০ মিনিটের পথই আপনি পাড়ি দিতে পারছেন এই অর্ধেক দামে। সুতরাং পরিবহন ব্যয়ের ক্ষেত্রে, ঢাকা বনাম চট্টগ্রামেরগ্রামের তুলনায় ঢাকার খরচ নিঃসন্দেহে বেশি এবং যাতায়াত ব্যয়বহুল। তাছাড়া, গণপরিবহন ছাড়াও উবার, পাঠাও, সহজ এর মতো রাইড শেয়ারিং এর সকল অ্যাপ্লিকেশনগুলো ঢাকা এবং চট্টগ্রাম উভয়তেই রয়েছে। উভয় শহরে এই পরিষেবার ভাড়াগুলো কমবেশি একই রকম। 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

ঢাকা দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত। রয়েছে সেরা স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, স্কলাস্টিকা, ম্যাপেল লিফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, এনএসইউ, ব্র্যাক, আইইউবি, এআইইউবির মতো শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলি বছরের পর বছর ধরে সেরা মানের শিক্ষা প্রদান করে আসছে। এখানের সরকারী বা বেসরকারি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই সেরা। সেদিক থেকে চট্টগ্রামও খুব বেশি একটা দূরে নয়, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল, ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম গ্রামার স্কুল, মাস্টারমাইন্ড ইন্টারন্যাশনাল চট্টগ্রামের বৃহত্তম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং চুয়েট সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় রয়েছে শীর্ষে। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে, আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় অনুমোদিত বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি। 

চট্টগ্রাম বন্দর
ঢাকা দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত তবে চট্টগ্রামও খুব বেশি পিছিয়ে নেই

ব্যবসা ও বাণিজ্য

বর্তমান সময়ে, চট্টগ্রামে চাকরির সুযোগ প্রচুর পরিমাণে বেড়েছে। ইউনিলিভার, নোভার্টিস এলটিডি, বিএটি, বিকাশ ইত্যাদির মতো আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় সংস্থাগুলি তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে চট্টগ্রামেও। এর ফলে আপনি ঢাকার বাইরে থেকেও চাকরির চাকুরীর সুযোগ পাবেন। তবে, ঢাকা দেশের রাজধানী হওয়ায় অবশ্যই এখানে চট্টগ্রামের তুলনায় চাকরির সুযোগ সংখ্যায় অনেক বেশি।

তবে, আপনি যদি চট্টগ্রামের স্থানীয় হয়ে থাকেন এক্ষেত্রে লিংক এবং নেটওয়ার্কিং এর জন্য চট্টগ্রাম আপনার জন্য বেশ সম্ভাবনাময় একটি জায়গা। চাকরি খাতের তুলনায় চট্টগ্রামে ব্যবসায়িক সেক্টরে ভালো করার অনেক সুযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম দেশের বন্দর রাজধানী হওয়ায় রপ্তানি-আমদানি ব্যবসাও এখন বেশ সম্ভাবনাময় এখানে।

নাসিরবাদ
চট্টগ্রাম দেশের বন্দর রাজধানী হওয়ায় রপ্তানি-আমদানি ব্যবসাও এখন বেশ সম্ভাবনাময়

লাইফস্টাইল ও বিনোদন  

সবুজ পাহাড় আর নীল সমুদ্রেই চট্টগ্রামের সৌন্দর্য সমাপ্তি ঘটেনি। এই শহরের দর্শনীয় স্থানগুলো আরও বেশি সুন্দর। বেশীরভাগ মানুষ সমুদ্র আর পাহাড় দেখেই ফিরে আসে নিজ ঠিকানায় কিন্তু, চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থানগুলো এতই সুন্দর যেন একবার দেখলে দেখতে ইচ্ছে করবে বারবার। আর চট্টগ্রামের তুলনায় ঢাকায় এই দর্শনীয় স্থানের বেশ অভাব রয়েছে। চট্টগ্রামে কি নেই, ডিসি পাহাড়, পার্কি, কাটালি এবং পতেঙ্গা  মত জায়গায় আপনি নিয়মিত সময় কাটাতে পারবেন। এইদিক থেকে ঢাকায় কেবল নামীদামী রেস্তোরাঁ রয়েছে যেখানে চার দেয়ালের মাঝেই সময় কাটাতে হয়।

সংস্কৃতি

সাংস্কৃতিক দিক থেকে, ঢাকা এবং চট্টগ্রাম সম্পূর্নই আলাদা। চট্টগ্রাম যদিও নৃতাত্ত্বিকভাবে সমৃদ্ধ, এবং জনসংখ্যার অনেকটাই আদিবাসী তিব্বত-বর্মানের লোক। অমিতব্যয়ী বিবাহ, দুর্দান্ত আতিথেয়তা চট্টগ্রাম সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।  অন্যদিকে, ঢাকা সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ। ঢাকা বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ এবং সংগীত ও চারুকলার একটি প্রাণবন্ত কেন্দ্র। শহুরে জীবন এর পুরোটাই এখানে রয়েছে। ঢাকার উল্লেখযোগ্য স্মৃতিস্তম্ভগুলির মধ্যে রয়েছে, লালবাগ দুর্গ, আহসান মঞ্জিল, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর ইত্যাদি।   

ঢাকা বনাম চট্টগ্রাম শহুরে জীবন কেমন তা বেশ সুন্দর করে তুলে ধরা হল। আপনি যদি আমাদের সাথে একমত থাকেন তাহলে কমেন্ট করে আপনার মতামত জানিয়ে দিন।

Write A Comment