Reading Time: 5 minutes

 

রেসিডেনসিয়াল বিল্ডিং
যে বিষয়টি মুখ্য হয়ে দাড়ায় সেটি হচ্ছে আপনার আর্থিক অবস্থা

আবাসন খাতে যেকোন রকমের বিনিয়োগ করাই অনেকের কাছে ভীষণ কঠিন একটি কাজ। প্রথম বারের মত যারা অ্যাপার্টমেন্ট কিনছেন বা যেকোন বিনিয়োগ করতে যাচ্ছেন তাদের জন্য তো আবাসন খাতে বিনিয়োগের সঠিক সময় টা বুঝতে পারাই যেন একটা চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পাড়ি দিতে হয়, নানা ধরণের আইনী প্রক্রিয়া, আনুষ্ঠানিকতা এবং চাহিদা । এরপরই কাঙ্ক্ষিত প্রপার্টি কেনার সুযোগ মেলে। যেকোন ধরণের বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেবার আগে প্রত্যেকের উচিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অনুসরণ করে এবং আবাসন খাতে বিনিয়োগের সঠিক সময় চিহ্নিত করা। এই ব্লগটি আপনাকে সাহায্য করবে আবাসন খাতে বিনিয়োগের সঠিক সময় নির্ধারণ করতে। 

আপনি কী আর্থিকভাবে সচ্ছল বা স্থিতিশীল? 

আবাসন খাতে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্তটি যেমন সারা জীবনের তেমনি বিনিয়োগের সঠিক সময়টা বেছে নেওয়ার প্রভাবটাও থেকে যায় সারাজীবনই। আপনি যখন বাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নেন প্রথমেই যে বিষয়টি মুখ্য হয়ে দাড়ায় সেটি হচ্ছে আপনার আর্থিক অবস্থা। কেননা, আপনার সব পুঁজি যদি বিনিয়োগ খাতে ব্যয় হয় তাহলে আপনার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হতে পারে।  লোন নেবার প্রয়োজন হলে আপনার দৈনন্দিন খরচের জায়গাটি আপনাকে দেখতে হবে। বাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে, গাড়ির খরচ, ইউটিলিটি বিল, বাচ্চাদের খরচ এবং সঞ্চয়ের পয়সা এই সমস্ত খরচের বিষয়ে ভেবে তবেই লোনের দিকে এগুতে হবে। বিপরীতে, যদি আপনার পর্যাপ্ত নগদ মজুদ থাকে তাহলে কোন প্রকার লোন আপনাকে নিতে হচ্ছে না আর মাসে মাসে কিস্তি দেওয়ার মত ঝামেলা থেকেও আপনি বেঁচে যাচ্ছেন। অনেকেই মনে করেন,  আবাসন খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বয়স একটি বাঁধা। কিন্তু অনেকের কাছেই  আবাসন খাতে বিনিয়োগের জন্য যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে আর্থিক স্থিতিশীলতা বা সচ্ছলতা। বয়স নির্বিশেষে কেউ যদি আবাসন খাতে বিনিয়োগের সমর্থ্য রাখেন তবে তাদের নির্দিধায় এগিয়ে যাওয়া উচিত।

সঠিক প্রপার্টি বাছাই করা  

ল্যাপটপ
সঠিক প্রপার্টি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে লোকেশন এবং প্রতিবেশী পরিবেশ সম্বন্ধেও ভাবতে হবে

আবাসন খাতে বিনিয়োগের সঠিক সময় নির্ধারণ করতে প্রপার্টি বাছাইয়ের প্রক্রিয়াগুলো আপনাকে সম্পূর্ণ রূপে সাহায্য করে থাকবে। প্রপার্টি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে প্রপার্টির অপশনগুলো আপনাকে দ্বিধা দ্বন্দে ফেলতে পারে। সাইজ ও মূল্য ভেদে থাকতে পারে অসংখ্য প্লট। প্লট বাদেও রেডি অ্যাপার্টমেন্ট বা নির্মাণাধীন অ্যাপার্টমেন্টগুলোও বেছে নিতে হতে পারে। সঠিক প্রপার্টি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে লোকেশন এবং প্রতিবেশী পরিবেশ সম্বন্ধেও ভাবতে হবে। এই সমস্ত বিষয়গুলোই নিশ্চিত করবে আপনার ভবিষ্যতের আবাসন কেমন হতে যাচ্ছে।

চোখ বন্ধ করে আপনি কখনই বিনিয়োগ করতে পারবেন না। যথাযথ সময় আর অধ্যবসায় থাকা উচিত যেকোন অ্যাপার্টমেন্ট বা জমি কেনার ক্ষেত্রে। প্রপার্টির লোকেশন যাচাইয়ের পাশাপাশি প্রপার্টি ইন্সপেকশনের ক্ষেত্রেও রাখুন কড়া নজর। এরপর সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা এবং কাগজপত্রের কাজ দিয়ে শুরু করুন। এটা হয়ে গেলে এরপর জমির মালিক বা ডেভেলপার সম্বন্ধে খোঁজ খবর নিন, নির্মাণ কাজে কী কী ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার হয়েছে সে সম্বন্ধেও খোঁজ নিন। এর পাশাপাশি যে পরিমাণ অর্থ আপনি বিনিয়োগ করছেন এর কত পরিমাণ অর্থ আপনার রিটার্ন আসবে সে সম্বন্ধেও খোঁজ রাখুন। এই সমস্ত পদক্ষেপ এবং প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন হবার পর আপনার পক্ষে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে।  

আপনার লক্ষ্য কি ঠিক আছে?

আমাদের যেকোন কাজের পিছনেই লুকিয়ে থাকে উদ্দেশ্য। তেমনি, আপনি কেন জমি বা অ্যাপার্টমেন্ট নিতে চাচ্ছেন সে সম্বন্ধে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন। এই ধাপটি আপনাকে সাহায্য করবে আবাসন খাতে বিনিয়োগের সঠিক সময় চিনতে। সময় নিয়ে ভাবুন, আপনার লক্ষ্য কী দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য না স্বল্প মেয়াদী! আপনি কী নিজের বাড়ির মালিকানা চান নাকি বাড়িওয়ালাদের ভাড়া দেওয়া পছন্দ করবেন? যেকোনও সম্পত্তি কেনার ক্ষেত্রে এই সমস্ত প্রশ্নগুলি আসলেই প্রাসঙ্গিক। এমন একটি পথ বেছে নেওয়া উচিত যা আপনার জন্য সুবিধাজনক প্রমাণিত হবে। আপনার কাছে কোনটা বেশি সুবিধার প্রতি মাসে ভাড়া দেওয়া নাকি প্রতি মাসে কিস্তি দেওয়া! ভাড়া বাসা আপনাকে সময় সময়ে অ্যাপার্টমেন্ট পরিবর্তন করার স্বাধীনতা দেয়। অন্যদিকে, ফিক্সড লোকেশনে থাকার পরও নিজের  আবাসন খাতে বিনিয়োগ করলে অ্যাপার্টমেন্টের মালিক হবার সুযোগ পাওয়া যায়। এই সমস্ত ধাপ আপনাকে সাহায্য করবে  আবাসন খাতে বিনিয়োগের সঠিক সময় নির্ধারণ করতে। 

বাজারের পরিস্থিতি

গ্রাফ
এই সমস্ত ধাপ আপনাকে সাহায্য করবে আবাসন খাতে বিনিয়োগের সঠিক সময় নির্ধারণ করতে

সামষ্টিক অর্থনৈতিক কারণ যেমন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার, সুদের হার, জনসংখ্যার হার ইত্যাদি এই জাতীয় সুদের হার আবাসন খাতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে এবং এতে একটি বড় ভূমিকা পালন করে প্রপার্টি কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া। তবে, আমরা যদি বর্তমান মহামারীর আলোকে রিয়েল এস্টেটের বাজারটি বিবেচনা করতে চাই, তাহলে পরিস্থিতি কিছুটা আলাদা বলে মনে হতে পারে।

মহামারীর দরুন বৈশ্বিক রিয়েল এস্টেটের বাজারটি বড়সড় ধাক্কার সম্মুখীন হয়। বিনিয়োগ বা প্রপার্টি কেনা বেচা বিশালভাবে ব্যাহত হয়েছিল। বিশাল আকারে বেকারত্ব, মজুরির হার হ্রাস এবং ব্যবসায়িক ক্ষয় ক্ষতি সাধন হয়। লকডাউনের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে সহজেই জিনিসগুলি পরিবর্তন হতে শুরু করে। এক্সপার্টদের মতে, স্বল্প সুদের হার এবং আবাসিক প্রপার্টির মূল্য হ্রাসের সাথে বিশ্ববাজারে অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা বাড়তে শুরু করে, যা শেষ পর্যন্ত এই খাতে আগের অবস্থা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছিল। বাংলাদেশের আলোকে, লকডাউনের আগে  রিয়েল এস্টেটের বাজারের পরিস্থিতি স্থিতিশীল ছিল এবং ছিল আশাবাদী লক্ষণও। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা  প্রচুর ক্রেতাকে উৎসাহিত করেছিল রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগের জন্য। তবে দেশজুড়ে মহামারী ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে সবকিছু থেমে গেছে। এর পরে পরিস্থিতি বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। লকডাউনের কারণে, কাস্টমাররা তাদের সর্বোত্তম সাধ্য দিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রপার্টি দেখাতে সাহায্য করে। এর ফলে, বিনিয়োগকারী ও ডেভেলপাররা তাদের সকল পরিকল্পনা স্থগিত করেছিলেন। পর্যাপ্ত শ্রমিক এবং কাঁচামাল সরবরাহ না থাকার জন্য যেকোন প্রোজেক্ট সম্পন্ন করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। যার ফলে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই পড়েছিল বিশাল এক দ্বিধায়। যদিও এই অবস্থার অবসান এখন হয়েছে। 

বাজেট প্রবিধান 

২০-২১ এর অর্থবছরের নতুন বাজেটের ফলে রিয়েল এস্টেট খাতে এসেছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। এই খাতের গতি কিছুটা বাড়াতে সরকার বেশ কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছিল। পদক্ষেপগুলো যদি বাস্তবে রূপ নিতে পারে তাহলে অনেকে যারা কিনা বাড়ির মালিক হবার স্বপ্ন দেখে খুব শীঘ্রই তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হবে বলে আশা করা যায়। রিয়েল এস্টেট খাতে আরও বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের হারকে একক অঙ্কে কমিয়ে ৯% নির্ধারণ করেছে। এছাড়াও, প্রপার্টির জন্য লোন নেওয়া কখনই সহজ ছিল না। তাই যারা এমন প্রক্রিয়ায় যেতে চায় না তাদের জন্য এটা এখন আকর্ষণীয় সুযোগ।  

এ ছাড়া নিম্ন আয়ের পরিবারগুলিকে মধ্যম আয়ের বিষয়টি মাথায় রেখে সরকার একটি জিরো-ইক্যুইটি হোম লোন চালু করেছে। এই লোনের মাধ্যমে যারা অনেক দিন ধরে নিজের ঠিকানা খুঁজছে তারা এবার তা হাতের মুঠোয় পেয়ে যাবেন। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কোনরকম তদন্ত ছাড়াই অপ্রকাশিত আয় রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগ করার অনুমতি দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তে রিয়েল এস্টেট খাতে বিপুল পরিমাণের বিনিয়োগ আনার সম্ভাবনা রয়েছে।  এমনকি সরকার অ্যাপার্টমেন্টগুলোর নিবন্ধনকরণ ব্যয়কে ১৪% থেকে ১০% করে দিয়েছে। এতে করে প্রপার্টি ক্রয়ের প্রতি মানুষ ঝুঁকে পড়বে সহজেই। এই ৪% রেজিস্ট্রেশন ফি অপসারণ করার ফলে ভবিষ্যতে রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগের হার বৃদ্ধি হতে পারে। 

আপনি কি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবার জন্য প্রস্তুত? 

বিল্ডিং
বিনিয়োগের কারণে আপনার ভবিষ্যত কতটা উজ্জ্বল হতে পারে তা বোঝার চেষ্টা করুন

আবাসন খাতে বিনিয়োগের ফলে মুনাফা বেশি পাবার সম্ভাবনা থাকে সব সময়ই। তাই বিবেচনা করে সাবধানতার সাথে পদক্ষেপ নেবেন। এই ধরণের বড় বড় সিদ্ধান্তের জন্য ইচ্ছাশক্তি এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধতার প্রয়োজন হয় সবচেয়ে বেশি। প্রযুক্তিগত দিক থেকে রিয়েল এস্টেট খাতে চলে এসেছে বিশাল এক অগ্রগতি। প্রপার্টি খুঁজে পাওয়া এখন বেশ সহজ হয়েছে। বর্তমানের পরিবর্তনগুলি সম্পর্কে আপনি যত বেশি জানবেন, এর সাথে খাপ খাইয়ে নেবেন, রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগের সঠিক সময় সনাক্ত করা আপনার পক্ষে ততোটাই সহজ হবে। বিনিয়োগের ফলে লাভের কারণগুলি মূল্যায়ন করুন। এই বিনিয়োগের কারণে আপনার ভবিষ্যত কতটা উজ্জ্বল হতে পারে তা বোঝার চেষ্টা করুন। তাহলে আর অপেক্ষা কেন? আপনি কি কোন প্রপার্টি কেনার কথা ভাবছেন? তাহলে কমেন্টে আমাদের জানিয়ে দিন।

Write A Comment