Reading Time: 4 minutes

সাম্প্রতিক মহামারী এবং অস্থায়ী সময়ের জন্য সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়াতে সমস্ত দেশ ও দেশের মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মাঝে ভর করেছে স্থবিরতা। এমন অচলাবস্থার মাঝেই গত ১১ই জুন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম. মোস্তফা কামাল আগামী ২০২০-১১ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন। এ বাজেট অনুসারে ৮.২% জিডিপি বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। এছাড়া মুদ্রাস্ফীতির হারকে ৫.৪% এর নিচে রাখারও লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। সব মিলিয়ে একে বেশ উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা মনে হলেও একে অর্জন করা কিন্তু অসম্ভবও নয়। নতুন বাজেট অনুসারে বিশেষ করে রিয়েল এস্টেট খাতকে বেশ সম্ভাবনাময় বলেই মনে হচ্ছে। এই চলমান সঙ্কটের সময়ই এখন সঠিক সময় উপযুক্ত নেতৃত্বের মাধ্যমে খাতটির অতীত অবস্থা পুনরুদ্ধার এবং একে সঠিকভাবে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে তোলার।

ফিরে দেখা অর্থবছর ২০১৯-২০

২০১৯-২০ অর্থ বছরে প্রস্তাবিত বাজেটের পর বেশ কিছু পরিবর্তন প্রতিফলিত হয়েছে রিয়েল এস্টেট খাতে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি  হলঃ

  • গৃহ ঋণের উপর সুদের হার হ্রাস করে সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে নিয়ে আসা 
  • স্ট্যাম্প ডিউটি বা শুল্ক কমিয়ে আনা
  • মধ্যম এবং স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের জিরো-ইকুইটি হাউজ লোন স্কিম চালু
  • ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে একাধিক মার্কেটপ্লেস ও অফিস স্থাপনের মাধ্যমে বিপ্রপার্টি ডট কম-এর দেশের রিয়েল এস্টেট খাতে মানুষকে সব ধরণের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে আরও প্রস্তুতি ও দক্ষতা অর্জন

তাই একথা বলাই যায় যে ২০১৯-২০ অর্থবছর কিছু বিশেষ পরিবর্তন ও পরিমার্জনের মাধ্যমে রিয়েল এস্টেট খাতে পূনঃগঠনে রেখে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এছাড়া কোন প্রপার্টি কেনার সময়ে কত ধরণের এবং কী পরিমাণ ফি প্রদান করতে হবে, সে বিষয়টিতেও বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে এ সময়টিতেই। এসকল পদক্ষেপের ফলে সাধারণ মানুষের জন্য রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগ করা অনেকটাই ঝামেলাবিহীন হয়ে উঠছে। 

পুরাতন অর্থবছরের শেষে এবং নতুন বাজেট শুরুর সময়ের অবস্থা

a financial graph on a paper with ruler, pens and pencils
রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগের দিকে ধীরে ধীরে মানুষের আগ্রহ আবার বাড়ছে

মহামারী এবং লকডাউনের প্রভাবে সব ধরণের নির্মাণ কাজই প্রায় বন্ধ। এমন অচলবস্থা চলে আসছে প্রায় ২-৩ মাস ধরে। এমনকি মে মাসের শেষ থেকে কিছুটা সীমিত পরিসরে অফিস আদালত খুলে গেলেও নির্মাণ শ্রমিকদের স্বাস্থ্যগত ঝুকির কথা মাথায় রেখে প্রায় সব রিয়েল এস্টেট প্রজেক্টের নির্মাণ কাজই বন্ধ আছে। এর ফলে ঘটে গেছে বিশাল ক্ষতি। যারা চিন্তা করছিলেন রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগের, লকডাউন শুরু হবার পর থেকেই তাদের অনেকেই সে চিন্তা থেকে সরে এসেছেন। তবে আশার কথা হল, লকডাউন শিথিল করার পর থেকে বিপ্রপার্টির ওয়েবসাইটে ভিজিটর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। এ থেকে ধারণা করা যায় যে, বাজেট ঘোষণা হোক কিংবা অন্য কোন কারণে, রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগের দিকে ধীরে ধীরে মানুষের আগ্রহ আবার বাড়ছে।

প্রণীত নতুন বাজেট অনুসারে রিয়েল এস্টেট খাতের মূল কিছু পরিবর্তন

bird's eye view of some houses
নতুন বাজেটে নেয়া দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত রিয়েল এস্টেট খাতে বড় সর পরিবর্তন নিয়ে আসতে সক্ষম

নতুন বাজেট ঘোষণার প্রায় এক মাস পেরিয়ে গিয়েছে। পুরানো নীতিগুলো সাথে সাথে সরকার মূলত দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা রিয়েল এস্টেট খাতে বেশ বড় পরিবর্তন নিয়ে আসতে সক্ষম। এ বিষয়গুলো নিঃসন্দেহে বিনিয়োগকারীদেরকে এখনই বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করে তুলবে। দেখে নেয়া যাক এগুলো সম্পর্কে চলুন,

রিয়েল এস্টেট খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের উপর শিথিলতা 

সদ্য পাশ হওয়া নতুন বাজেট রিয়েল এস্টেট খাতের জন্য অনেক বড় একটি সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কারও অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগ করা হলে তা দূর্নীতি দমন কমিশন বা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কারই অনুসন্ধানী আতশ কাচের নিচে পড়বে না। এরকম একটি সিদ্ধান্ত অবশ্যই রিয়েল এস্টেট খাতের বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। কারণ এতে এই খাত আরও প্রসারিত হবার সুযোগ পাবে এবং এর উন্নয়ন সাধিত হবে। এর প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী। এরফলে অনেক বিনিয়োগকারীই নিশ্চিন্তে বিনিয়োগ করতে উদ্বুদ্ধ হবে এই খাতে। ফলে যে শুধু একটি খাতেরই মঙ্গল হবে তাই না, বরং সমগ্র দেশের অর্থনীতিতেই থাকবে এর ভূমিকা। 

প্রপার্টি রেজিস্ট্রেশন খরচে বিভিন্ন পরিবর্তন

পূর্বে কোন প্রপার্টি ক্রয় করলে তার রেজিস্ট্রেশন ব্যয় ছিল মূল দামের ১৪%। তবে নতুন অর্থ বছরে তা কমিয়ে আনা হয়েছে ১০% এ, শুধু তাই না, এই ১০ শতাংশের মাঝে পরিশোধ হয়ে যাবে স্ট্যাম্প ডিউটি, ভ্যাট এবং লোকাল গভর্নমেট ট্যাক্সের মত বিষয়গুলো। সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দার বিরুদ্ধে লড়তে এবং মন্দার বাজারকে চাঙ্গা করে তুলতে এ সিদ্ধান্ত কার্যকরী হবে। রিহ্যাবের পক্ষ থেকেও এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়েছে এবং অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হলেই রিয়েল এস্টেট খাতের পূনঃগঠনে মনোযোগী হবার  সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

প্রপার্টির মূল্যের বিপরীতে নতুন প্রস্তাবিত রেজিস্ট্রেশন খরচের একটি ব্রেকডাউন নিচে দেয়া হল।

ক্রেতাকে পরিশোধ করতে হবে (প্রপার্টির মূল্যের শতাংশ হারে)

  • রেজিস্ট্রেশন ফি – ১%
  • স্ট্যাম্প ডিউটি ১.৫%
  • ভ্যাট ৩%
  • লোকাল গভর্মেন্ট ট্যাক্স ২%

a pie charrt showing the percent composition of property registration cost

এই রেজিস্ট্রেশন খরচকে আরেকটু গভীরভাবে খতিয়ে দেখলে দেখা যায় যে রেজিস্ট্রেশন ফি হিসেবে খরচ হচ্ছে ১৩%, স্ট্যাম্প ডিউটি হিসেবে ২০%, ভ্যাট ৪০% এবং লোকাল গভর্মেন্ট ট্যাক্স ২৭%। অর্থাৎ এই খরচের একটি বড় অংশ যাচ্ছে ভ্যাট আদায়ের পেছনেই আর খুব কম অংশই যাচ্ছে প্রপার্টির মূল রেজিস্ট্রেশন খরচের পেছনে। সরকারের এমন একটি সিদ্ধান্ত কাঠামোগত উন্নয়নের পেছনে বিনিয়োগ এবং সক্ষমতা অর্জনে অবশ্যই কার্যকরী হবে। এছাড়া এর ফলে সাধারণ ক্রেতাগণ অতিরিক্ত ৪% রেজিস্ট্রেশন ফি এর খরচের হাত থেকেও নিস্তার পাবেন।

তো সদ্য পাশ হওয়া এই নতুন বাজেট অনুসারে রিয়েলে এস্টেট খাতের উপর আর কী ধরণের প্রভাব পড়তে পারে বলে আপনি মন করেন? সামনের দিনগুলোতে কী রিয়েল এস্টেট খাতের সুদিন ফিরে আসছে? আপনার যে কোন মন্তব্য জানাতে কমেন্ট করুন আমাদের ব্লগের কমেন্ট সেকশনে।   

Write A Comment