Reading Time: 4 minutes

এই ব্যস্ত জীবনে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি যে যার গতিতে। যেখানে প্রিয় মানুষকে কাছে পাওয়া একরকম মৌলিক চাহিদা হয়ে উঠেছে। আমরা দিনের বেশির ভাগ সময় কাটাই অফিস কিংবা ইউনিভার্সিটিতে যেখানে থাকে মানুষের ভিড়। এই ভিড়ে যেখানে নিজের জন্যই স্বস্তি মেলে না সেখানে কাউকে সময় দেয়া তো অসম্ভব। এই শহরে সবসময়ই লেগে থাকে মানুষের ভিড়। হতে পারে তা পথঘাট কিংবা শপিংমল কোথাও নির্জনতা নেই। এমন শহরটি ইন্ট্রোভার্টদের জন্য বিভীষিকাময় বলা যায়। ব্যক্তি হিসেবে হয়তো আপনি ইন্ট্রোভার্ট এবং ভাবছেন হয়তো আপনাদের জন্য এমন কোন জায়গা হয়তো নেই ঢাকায়। যেখানে আপনি নিরিবিলি চুপচাপ কিছু সময় নিজের মত করে কাতাবেন। তবে আপনার ভাবনা কিছুটা ভুল, কেননা ঢাকার মধ্যে বেশ কিছু ইন্ট্রোভার্টদের ঘোরার জায়গা রয়েছে। যেগুলোতে আপনি পাবেন সম্পুর্ণ ব্যক্তিগত স্পেস এবং  নিজস্ব কমফোর্ট। শুরু করা যাক কোথায় রয়েছে ইন্ট্রোভার্টদের ঘোরার মত ৭ টি জায়গা।

টেগোর টেরেস (রবি প্রাঙ্গণ)

রবি প্রাঙ্গণ
রবি প্রাঙ্গণ এ কাটাতে পারেন কিছু সময়

ঠিকানা: বাসা নং- ৪৪, রোড -২, 

সময়: প্রতিদিন,  ১২ – ১১ টা

নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে পারেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আবেশে ডুবিয়ে নিতে। এমন একটি ক্যাফে যেখানে আপনি রবীন্দ্র মায়ায় কাটাবেন কিছু সময়। খুব বেশি বয়স হয়নি এই ক্যাফের, অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে এটি। ছাঁদের উপরে হওয়াতে আপনি ঘর এবং বাহির দুটো ফ্লেভারই পাচ্ছেন! অর্থাৎ ঘরে বাইরে দুই জায়গায়ই সময় কাটাতে পারবেন। ক্যাফের ভেতরকার ইন্টেরিয়রকে ফুটিয়ে তুলেছে রঙ্গিন উজ্জ্বল রঙের সোফা আর ছড়ানো বেশ কিছু বুক শেলফ যেখানে শোভা পেয়েছে রবীন্দ্রনাথের লেখা কিছু বই। ক্যাফের ভেতরে বাজতে থাকে রবীন্দ্রসংগীত।  বিখ্যাত স্থপতি মোস্তফা খালিদ পলাশ এই ক্যাফের প্রতিষ্ঠাতা ও ডিজাইনার। এই সুন্দর নিরিবিলি ক্যাফেটি ইন্ট্রোভার্টদের ঘোরার জায়গা হিসেবে বশ ভালো প্রমাণিত হবে। যেখানে আপনি এক কাপ কফি এবং বই নিয়ে কাটিয়ে দিতে পারেন একটি সুন্দর বিকেল।

কাপা কফি লাউঞ্জ

টেবিলে রাখা একটি কফি
একটি কফি একটি সুন্দর দিনের মূল উপাদান

ঠিকানাঃ ভবন- ১১, রোড নং ৪৬, গুলশান – ২।

সময়ঃ রোজ ১০ টা থেকে ১১ টা

বাইরে থেকে তাকিয়ে আপনি কখনই বুঝতে পারবেন না যে এই ক্যাফেটি এতটা সুন্দর। গুলশান, বনানী বা বারিধারায় যারা আছেন তাদের জন্য এই ক্যাফের ঠিকানা খুবই কনভিনিয়েন্ট কেননা, গুলশান ২ সার্কেলে এটি অবস্থিত। এই ক্যাফের মেনুতে কফির পাশাপাশি রয়েছে নানারকম স্বাদের খাবার। অফিসের ক্লান্তি দূর করতে এই ক্যাফেটি খুব কার্যকরী। নিরিবিলি বসে নিজের মত সময় কাটাতে আমরা কে না চাই! যারা ইন্ট্রোভার্ট তাদের জন্য এই জায়গাটি অনেক ভালো। একাকী বসে কাটাতে পারবেন অনেক সময়। শুধু যে ইন্ট্রোভার্টদের জন্য এই জায়গাটি বেষ্ট তা কিন্তু নয়, সবার জন্যই রয়েছে সালসা নাইটের মত ভিন্নধর্মী আয়োজন।

নর্থ এন্ড কফি রোস্টার্স

নর্থ এন্ড এর ছবি
প্রগতি সরণি এর নর্থ এন্ড ক্যাফেটি বেশ নিরিবিলি

ঠিকানাঃ খ-৪৭, প্রগতি সরণি।

সময়ঃ রোজ ৭ঃ৩০ টা থেকে ১০ টা

নর্থ এন্ড তাদের প্রথম যাত্রা শুরু করে এই এলাকার শাখা থেকে। ইতিমধ্যে তাদের আরও অনেক শাখা ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠেছে এবং কেড়ে নিয়েছে সকলের মনোযোগ। এই এলাকায় নর্থ এন্ডের অবস্থানের জন্য অনেক মানুষ এটি সম্বন্ধে জানেই না। যার কারনেই ইন্ট্রোভার্টদের ঘোরার জায়গা হিসেবে এটি বেশ জনপ্রিয়। আপনি চাইলে অফিসের কাজ নিরিবিলিতে এখানে সেরে ফেলে পারবেন। কখনো কাজ করতে না চাইলে নিজের মত করে এক কাপ কফি নিয়ে বসে থাকতে পারেন। ক্যাফেটিতে মানুষের আনাগোনা কম থাকার জন্যই হয়তো ওয়ান টু ওয়ান মিটিং এখানে খুব ভালো ভাবেই করে ফেলতে পারবেন। যেহেতু নিরবিলি আপনি এখানে একটি রোম্যান্টিক ডেট উপভোগ করতে পারেন।

ক্যাফে মেমোয়ার

ক্যাফের ছবি
বেশ জনপ্রিয় একটি জায়গা চুপচাপ সময় কাটানোর জন্য

ঠিকানাঃ বাসা নং- ৫৫, ১ম তলা, শাহ মাখদুম এভিনিউ, সেক্টর ১২, উত্তরা।  

সময়ঃ রোজ ১২ টা থেকে ১১ঃ৩০ টা

এই ক্যাফেটি উত্তরাবাসীদের কাছে বেশ পছন্দের। মজাদার কফির সাথে এই জায়গাটি একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করে যেখানে পরিবার কিংবা প্রিয়জনদের নিয়ে কাটাতে পারবেন কিছুটা সময়। তাদের মজাদার মেনুর মধ্যে স্টেক এবং কালামারি সবার মনে ছাপ ফেলেছে প্রচুর। উত্তরা সময়ের সাথে দ্রুত বেড়ে উঠছে কিন্তু পারফেক্ট রেস্টুরেন্টের অভাব এখনও রয়েছে। তবে আশা করাই যায় এই ক্যাফেটি আপনার অভিজ্ঞতায় শ্রেষ্ঠ হিসেবে নির্বাচিত হবে।

ক্যাফে ম্যাংগো

ঠিকানাঃ বাসা নং-৫৮, রোড নং- ১৫/এ, ধানমন্ডি।

সময়ঃ রোজ ৮ঃ৩০ টা থেকে ১১ টা।

ঢাকার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ধানমন্ডিকে বলাই যায়। কি নেই এই এলাকায়? খাবারের বিশাল সমাহার থেকে শুরু করে বিনোদন ও সংস্কৃতির সবকিছু পাবেন এই এলাকায়। তাই ইন্ট্রোভার্টদের ঘোরার জায়গা এখানে খুঁজে পাওয়া কিছুটা মুশকিল হলেও ধন্যবাদ দিতে আমরা বাধ্য প্রিয় ম্যাংগো ক্যাফেকে। শীতল পরিবেশ আর ছিমছাম ইন্টেরিয়েরের জন্য এই ক্যাফের ভক্ত আপনাকে হতেই হবে। এখানকার নিরিবিলি আবেশে আপনি ডুবে যেতে বাধ্য। আপনার যত দুশ্চিন্তাই থাকুক না খানিক সময়ের জন্য এই ক্যাফে আপনাকে একটু রিলাক্স করবে। আপনি ধানমন্ডির বাসিন্দা হোন কিংবা অন্য এলাকার এই ক্যাফেটি মাস্ট ভিজিট আপনার জন্য।

বাতিঘর

ঠিকানাঃ ৭ম তলা, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র ভবন, বাংলা মোটর।

সময়ঃ রোজ ১০ঃ০০ টা থেকে ১০ টা

প্রায় লক্ষাধিক বইয়ের ভাণ্ডার নিয়ে থাকা এই বইয়ের দোকানটি সবার কাছে একটি বইয়ের দোকানের চেয়েও বেশি কিছু। এখানে আপনি বই যেমন কিনতে পারবেন তেমনি বই এখানে বসে পড়তেও পারবেন। অনেকটা লাইব্রেরীর মত এটি। হাজারো লেখকের বইগুলো আপনাকে কখনো হতাশ করবে না। বরং আপনার সময়াটকে করে তুলবে আরও সুন্দর। এই বাতিঘরের ভেতরকার ইন্টেরিয়র অনেকটা লালবাগের মত। নিজেকে যদি এই ব্যস্ততা থেকে অবসর দিতে চান তবে বাতিঘর আপনার জন্য মাস্ট ভিজিট। বইয়ের রাজ্যে হারানোর জন্য একবার বাতিঘরে যাওয়া চাই।  

স্বাধীনতা জাদুঘর

ঠিকানাঃ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।

সময়ঃ শনিবার থেকে বুধবার, সকাল ১০.৩০ থেকে ৫টা এবং শুক্রবার ৩ থেকে ৮টা

এটি দেশের এক মাত্র মাটির নীচের জাদুঘর। বিখ্যাত স্থপতি মরিনা তাবাসসুম এবং কাশেফ চৌধুরী এই জাদুঘরের ডিজাইন করেছেন। ৫৬৬৯ বর্গ মিটারের এই জাদুঘরে রয়েছে মুঘল আমল থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক সকল উপাদান। আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে আমাদের ফেলে আসা ঐতিহাসিক দিনগুলো। এই জাদুঘরে রয়েছে একটি মাল্টিমিডিয়া প্রজেকশন থিয়েটার, অ্যাম্ফিথিয়েটার এবং তিনটি ওয়াটার পুল। আপনি যখন ক্যাফেতে বসতে বসতে ক্লান্ত হয়ে যাবেন তখন এই জাদুঘরটি হবে আপনার লাইফ সেভার। নিরিবিলি ইতিহাস ঐতিহ্যে সময় কাটানোর এর থেকে ভালো কোন উপায় হতে পারে না। এছাড়া আপনি যদি স্বভাবে একজন ইন্ট্রোভার্ট হয়ে থাকেন তবে আপনার এই জায়গায় অবশ্যই যাওয়া উচিৎ কেননা, গতানুগতিক জায়গা থেকে এখানে মানুষের ভিড় অনেকটাই কম থাকবে।

ওপরের কোন জায়গায় আপনি ঘুরতে যাচ্ছেন? আমাদের জানাতে এখনই কমেন্ট করুন!  

1 Comment

Write A Comment