Reading Time: 4 minutes

উত্তরা একটি সুপরিকল্পিত এলাকা। সুপরিকল্পিত নগরায়নের চমৎকার উদাহরণ এটি। এই এলাকার রাস্তাঘাট, লেক, পার্ক, মাঠ এবং প্রপার্টি সবই অত্যন্ত পরিকল্পিত উপায়ে তৈরি। এজন্য ঢাকার সবচেয়ে বাসযোগ্য এলাকার একটি এটি। উত্তরার সবগুলি রাস্তাই সুনির্মিত এবং দরকারী যান চলাচলের উপযুক্ত। উত্তরার ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া সবচেয়ে বড় রাস্তাটি হল ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ে যা উত্তরাকে পূর্ব ও পশ্চিমে দুটি ভাগে ভাগ করেছে। তবে এই হাইওয়ে ছাড়াও অত্যন্ত প্রশস্থ কিছু রাস্তা উত্তরার আছে। সমগ্র উত্তরাই বিভিন্ন সেক্টরে বিভক্ত। সেক্টরের ভেতরে আছে আলাদা আলাদা নাম্বারযুক্ত সব রোড। কিন্তু এই সুপ্রশস্থ রাস্তাগুলো প্রায় সবগুলিই রয়েছে যে কোন দুটি সেক্টরের মাঝখানদিয়ে সীমানা নির্ধারণী রাস্তা হিসেবে। এগুলোই হল উত্তরার এভিনিউ বা সরণী যা এই আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয়। এই উত্তরার এভিনিউ বা সরণীগুলো আরেকটি বিশেষ কারণে বেশ আগ্রহ-জাগানিয়া, প্রতিটি উত্তরার এভিনিউ বা সরণীই বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিত্বের নামে নামকরণ করা হয়েছে। 

১. শায়েস্তা খাঁ এভিনিউ (সেক্টর ২ – ৪)

এয়ারপোর্ট এলাকা হল ঢাকা শহর থেকে উত্তরার প্রবেশদ্বার। আর প্রবেশের সময়  ভৌগলিকভাবে প্রথম যে উত্তরার এভিনিউ এর দেখা মেলে সেটি শায়েস্তা খাঁ এভিনিউ। ২ নম্বর এবং ৪ নম্বর সেক্টরের মাঝখান দিয়ে পূর্ব-পশ্চিমে আড়াআড়ি চলে যাওয়া রাস্তাটিই শায়েস্তা খাঁ এভিনিউ। 

এই এভিনিউয়ে কাছাকাছি উল্লেখযোগ্য স্থাপনার মধ্যে আছে র‍্যাব ১ এর সদরদপ্তর যা উত্তরার ২ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত। এছাড়া একটি ফুট ওভার ব্রিজ আছে খুব কাছেই। শায়েস্তা খাঁ এভিনিউটি পশ্চিম দিকে এই ফুটওভার ব্রিজ থেকে শুরু করে পূর্বে রেললাইনের কাছে কসাইবাড়ি রেলগেট পর্যন্ত বিস্তৃত। এর দৈর্ঘ্য প্রায় আধা কিলোমিটার বা ৫০০ মিটার। এলাকার সর্ব দক্ষিণে হওয়ায় এটি তুলনামূলকভাবে কম ব্যস্ত একটি এভিনিউ। তবে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে ওভারব্রিজের কাছে থেকে আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান এইচএসবিসি ব্যাঙ্কের ব্রাঞ্চের কথা উল্লেখযোগ্য। 

২. জসীমউদ্দিন এভিনিউ (সেক্টর ১ – ৩, এয়ারপোর্ট ওয়াল)

Jasimuddin avenue

ঢাকা ময়মনসিংহ হাইওয়ে একটি ৮ লেনের অতি প্রশস্থ ওয়ানওয়ে রাস্তা। নির্দিষ্ট ইউ লুপ ছাড়া এই রাস্তা দিয়ে ভিন্ন দিকে যাবার উপায় নেই। ঠিক এজন্যই ভৌগলিকভাবে শায়েস্তা খাঁ এভিনিউ প্রথমে থাকলেও উত্তরায় প্রবেশের সময় যে এভিনিউ প্রথম পাওয়া যায় সেটি জসীমউদ্দিন এভিনিউ। অতি ব্যস্ত এই এভিনিউ এতটাই কর্মচঞ্চল যে এর সর্ব-পূর্বে থাকা বাস স্টপেজের নামই হয়ে গিয়েছে সরণীর নামে! আড়াআড়ি পূর্ব-পশ্চিমে চলে যাওয়া এই সরণীর এক পাশে আছে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টর। অন্য পাশে একার্ধ ১ নম্বর সেক্টর এবং বাকিটুকু এয়ারপোর্টের সীমানাপ্রাচীর।
প্রায় ৭০০ মিটার দীর্ঘ এই এভিনিউএর পূর্ব পাশে রয়েছে সুউচ্চ উত্তরা টাওয়ার। এছাড়াও সমগ্র এভিনিউ জুড়েই আছে বিভিন্ন ব্র্যান্ড এবং নন ব্র্যান্ডের দোকান যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বেঙ্গল মিট, ব্রেড অ্যান্ড বিয়ন্ড, হোন্ডা মটর সাইকেলের শোরুম ও সার্ভিস পয়েন্ট ইত্যাদি।  

৩. রবীন্দ্র সরণী (সেক্টর ৩ – ৭)

Rabindra sarani

জসীমউদ্দিন এভিনিউকে রেখে হাইওয়ে ধরে আরও সামনে এগিয়ে গেলে পরবর্তী যে সরণী আমাদের হাতের বামে পড়বে তার নাম রবীন্দ্র সরণী। উত্তরার আজমপুর বাস স্টপেজের পশ্চিম পাশ থেকে শুরু হয়ে এটি চলে গিয়েছে প্রায় ৭০০ মিটার ভেতরে। একদম শুরুতেই আছে বেশ বড় দুটি মার্কেট রাজউক কমার্শিয়াল এবং আমির কমপ্লেক্স। যত ভেতরে যাওয়া হয়েছে তত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকান, রেস্টুরেন্ট, ব্যাংক ইত্যাদির দেখা মিলেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, লা-বাম্বা, মিনিসো, ফড়িং, ট্রেন্ডজ ইত্যাদির শোরুম। আছে উত্তরার একটি ব্যস্ত হাসপাতাল, ক্রিসেন্ট হসপিটালের দুটি বিল্ডিং। বিপ্রপার্টি রেন্টাল মার্কেটপ্লেস যা দেশের একমাত্র প্রপার্টি রেন্টাল মার্কেটপ্লেস, তার অবস্থানও রবীন্দ্র সরণীর নন্দন দীপ্তি টাওয়ারে। রবীন্দ্র সরণী সেক্টর ৩ এবং সেক্টর ৭কে আলাদা করেছে। 

৪. শাহজালাল এভিনিউ (সেক্টর ৪ – ৬)

উত্তরা আজমপুরের পূর্বপাশেই রয়েছে শাহজালাল এভিনিউটি। এটি রবীন্দ্র সরণী বা এভিনিউয়ের ঠিক উল্টোপাশেই অবস্থিত। ঢাকা – ময়মনসিংহ হাইওয়ে শুধু উত্তরাকেই নয় বরং এই দুটি এভিনিউকেও একে অপরের থেকে আলাদা করেছে। প্রায় ৫০০ মিটার দীর্ঘ এই সরণীটি একপাশে আজমপুর থেকে আরম্ভ হয়ে প্রায় রেললাইন পর্যন্ত বিস্তৃত। উল্লেখযোগ্য স্থাপনার মধ্যে আজমপুরের কাছেই আছে নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল ও কলেজ। উল্টোপাশে আছে সুউচ্চ আপডেট টাওয়ার যেখানে রয়েছে সুপারমার্কেট আগোরা, বিখ্যাত স্ট্যান্ডার্ড চ্যাটার্ড ব্যাংক, মেকওভার পার্লার পারসোনাসহ আরও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও সমস্ত শাহজালাল সরণীজুড়েই আছে প্রয়োজনীয় ব্র্যান্ডেড ও নন-ব্র্যান্ডেড বিভিন্ন দোকান ও স্থাপনা। একদম শেষ মাথায় আছে রাজধানীর বিদ্যুতের জন্য নিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ডেসকোর অফিস। শাহজালাল এভিনিউ ৪ নম্বর সেক্টরকে ৬ নম্বর সেক্টর থেকে আলাদা করেছে। 

৫. ঈশা খাঁ এভিনিউ (সেক্টর – ৬)

উত্তরার আর সবকটি এভিনিউ থেকে এই এভিনিউটি আলাদা। কারণ অন্যান্য এভিনিউয়ের মত এই উত্তরার এভিনিউ দুটি সেক্টরের সীমানায় নয় বরং একটি সেক্টরের ভেতরেই অবস্থিত! বলছি ৬ নম্বর সেক্টরের  ঈশা খাঁ এভিনিউয়ের কথা। এর একমাথা শুরু হয়েছে ৬ নম্বর সেক্টর কাচাবাজার থেকে যা বিডিআর মার্কেট নামেও পরিচিত। এরপর দেশের অন্যতম বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের দেয়াল ঘেঁষে এগিয়ে গিয়েছে পুবদিকে। এই এভিনিউওতে আছে বেশকিছু ফাস্টফুডের দোকান, আছে লাইফ প্রিপেরাটরি স্কুল। এবং শেষ মাথায় আছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বা বিএনসিসির হেডকোয়ার্টার।
এই এভিনিউটি আরেকটি কারণে বিশেষ, সংজ্ঞানুসারে এটি একটি “কানাগলি”, অর্থ্যাৎ এটির শেষ মাথা অন্য কোন রাস্তার সাথে সংযুক্ত নয় বরং রেইললাইনের আগে এটি শেষ হয়ে ইউটার্ন নিয়েছে। শেষ মাথায় আছে একটি প্রাচীর যেখানে প্রায়ই কিশোরদের ক্রিকেট খেলতে দেখা যায়।   

৬. আলাওল এভিনিউ (সেক্টর ৬ – ৮)

ঈশা খাঁ এভিনিউয়ের সমান্তরালে থাকা উত্তরার সর্ব উত্তরের একটি এভিনিউ হল আলাউল এভিনিউ। এলাকার হাউজবিল্ডিং মোড়ে এর এক প্রান্ত শুরু। প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে এটি শেষ হয়েছে ৮নং রেলগেট সংলগ্ন স্থানে। উত্তরার অন্যান্য সরণী থেকে এটি আলাদা কেননা অন্য এভিনিউগুলো একটি সরলরেখা বরাবর থাকলেও একমাত্র আলাওল এভিনিউয়ের মাঝখানেই প্রায় ৯০ডিগ্রি একটি বাঁক রয়েছে
আলাওল এভিনিউ সেক্টর ৬ এবং ৮কে বিভক্ত করেছে। ৮ নং সেক্টরে রয়েছে বিভিন্ন কোয়ার্টার। এভিনিউয়ের শুরুতেই রয়েছে হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের স্টাফ কোয়ার্টার। সমগ্র আলাওল এভিনিউ জুড়েই রয়েছে বিভিন্ন দোকানপাট ও প্রতিষ্ঠান তবে একটি বিশেষ কারণে এই এভিনিউতে উত্তরাবাসীকে আসতেই হয়। সেটি হল কুরিয়ার সার্ভিসের আধিক্য। এস এ পরিবহন, জননী, ওমেক্সসহ দেশের প্রায় সব কুরিয়ার সার্ভিসের অফিসই এই এভিনিউতে। যে দুয়েকটি এই এভিনিউতে নেই তারাও এই এভিনিউয়ের আশেপাশেই তাঁদের অফিস নির্ধারণ করেছে। 

এই ছিল উত্তরার এভিনিউ নিয়ে দুই খন্ডের পরিচিতি পর্বের প্রথম পর্ব। এ পর্বে আমরা দেখেছি ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ের দুপাশে থাকা প্রায় সবগুলি এভিনিউ সম্পর্কে। এরপরের পর্বে আমরা জানব উত্তরার সবচেয়ে দীর্ঘ এভিনিউ সোনারগাঁ জনপথ, সবচেয়ে কম পরিচিত এভিনিউ কবি নজরুল এভিনিউ এবং উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত গাউসুল আজম এভিনিউ, শাহ্‌ মকদুম এভিনিউ আর মহাব্যস্ত গরীবে নেওয়াজ এভিনিউ সম্পর্কে। সে পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকুন। আর উত্তরার এভিনিউ সম্পর্কে যে কোন জিজ্ঞাসা থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদেরকে জানাতে পারেন কমেন্ট বক্সে।

Write A Comment