সকলের বুকের মধ্যে যেসব শহরতলী আছে,
সমুদ্রবন্দর আছে
সাঁকো ও সুড়ঙ্গ আছে, ঘরবাড়ি
আছে
একেকটি প্রেমিকা আছে, প্রিয় বন্ধু আছে
কেন থাকবেন শহরতলীতে?
মহাদেব সাহার কবিতার পংক্তি থেকে যদি উত্তর দেই, তাহলে, স্বপ্ন মানুষ হয়ে বাঁচতে থাকবেন শহরতলীতে। ঢাকার কাছাকাছি আমাদের পরিচিত শহরতলীগুলোতে হয়তো কবিতার মতো সমুদ্রবন্দর নেই, সাঁকো ও সুড়ঙ্গ নেই। তবে এ সত্যটুকুও অস্বীকার করবার উপায় নেই যে আমরা যারা সবুজ দেখতে দেখতে বড় হয়েছি, বৃষ্টির জলে গা ভিজিয়ে বড় হয়েছি, খোলা মাঠে খেলতে খেলতে বড় হয়েছি, তাদের সকলের বুকের মধ্যেই একটি করে শহরতলী আছে। বুকের সেই শহরতলীকে লালন করতেই হয়তো আমরা অনেকেই থাকতে চাই শহরতলীতে। শহরতলীতে গড়ে তুলি আমাদের ঘরবাড়ি, গড়ে তুলি প্রেম ও বন্ধুত্ব। তবে এতসব আবেগের বাইরেও শহরতলীতে বসবাসের কিছু বাস্তবসম্মত কারনও রয়েছে। কেন থাকবেন শহরতলীতে? প্রশ্নের উত্তরে সেইসব কারনগুলো নিয়েই কথা হবে। কথা হবে শহরতলীতে বসবাসের নানা সুবিধাদি নিয়ে।
শহরতলী কী ও কেন?
আপনি যদি সমস্ত আয়োজনের প্রাণকেন্দ্রে থাকতে চান, তবে শহরই আপনার জন্য আদর্শ, যেখানে রয়েছে নাগরিক জীবনের সমস্ত আধুনিক সুবিধা। আপনি যদি কোলাহলহীন, নিরিবিলি অনাড়ম্বর জীবন ভালোবাসেন, তবে ফেলে আসা মফস্বলই ডাকছে আপনাকে। কিন্তু আপনি যদি আমার মতোই একজন হয়ে থাকেন, যিনি ভালোবাসেন স্বপ্নমানুষ হয়ে বাঁচতে! যিনি শহুরে জীবনের সুবিধা আর মফস্বলের শান্ত সবুজ পরিবেশ দুটোই চান একসাথে? তাহলে আপনার জন্যই প্রিয় শহরতলী।
সামগ্রিকভাবে শহরতলী বলতে বোঝায় শহরের এক প্রান্তে অবস্থিত নিরিবিলি, কম জনবহুল এলাকা। শহর থেকে একটু দূরে হলেও যেখানে বসবাসের জন্য নাগরিক জীবনের যাবতীয় সুবিধাদি বিদ্যমান থাকে। বৈশ্বিকভাবে শহরতলীর ধারণাটি এমন হলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কিন্তু এ ধারণা পুরোপুরি মিলবে না। তবে, ঢাকার মূল কেন্দ্র থেকে অদূরেই অবস্থিত পূর্বাচল, সাভার কিংবা টঙ্গীর মতো অঞ্চলগুলোকে আমরা যদি শহরতলী বলে আখ্যা দেই তাহলেও কিন্তু ভুল হবে না। শহরের ব্যস্ততা থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় কোলাহলহীন, শান্ত সবুজ পরিবেশ এখানে হাতছানি দেবে আপনাকে। সাথে সাথে হাতের নাগালেই থাকবে নাগরিক জীবনের চাহিদা মেটানোর মতো প্রয়োজনীয় উপকরণ।
কম জনবহুল
শহর মানেই জনাকীর্ণ এলাকা, যেখানে একটু বেশি উপার্জনের আশায় ভীড় করে মানুষ। অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানা শহরে অবস্থিত হওয়ায় কাজের তাগিদেই শহরমুখী হয় তারা। শহরমুখী হবার এ প্রবণতাই শহরগুলোকে করে তুলেছে জনাকীর্ণ। শহর মানেই তাই চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক ঝাঁক কর্মব্যস্ত মানুষের মেশিনের মতো ছুটে চলা, মাইলের পর মাইল তীব্র জানজটে থেমে থাকা মহাসড়ক। আর সেইসাথে জীবন থেকে অসংখ্য সময়ের অপচয়।
আর এখানেই ব্যতিক্রম শহরতলী। শহরতলীতে মানুষের চাপ কম। ফলে রাস্তায় বের হলেই মানুষের হৈ হট্টগোলের ভয় নেই। যানজটের চিন্তা নেই।। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, মূল্যবান সময়ের অপচয় নেই। এখানে আপনি একটি নির্মল সকাল উপভোগ করতে পারবেন। শহরগুলোর মতো উঁচু উঁচু দালানকোঠার ভীড়ে চোখ আটকাবে না। অন্যদিকে, শহরের কাছাকাছি হওয়ায় এখানেও আপনি থাকার জন্য আধুনিক আবাস, হাতের নাগালে সুপার শপ, প্রশস্ত সড়কসহ যাপিত জীবনে যা কিছু প্রয়োজন তার সবই উপভোগ করতে পারবেন।
প্রশস্ত পরিসর
শহরাঞ্চলে সরু গলিপথ, কিংবা ক্ষুদ্র একটি থাকার জায়গা যেন পরিচিত স্বাভাবিক দৃশ্য। শহরতলী সেখানে এই দৃশ্যপট থেকে বেরিয়ে এসে স্বস্তিতে নিশ্বাস ফেলবার জায়গা। শহরতলীতে মানুষের চাপ কম বলেই, এখানে খোলামেলা, প্রশস্ত পরিসরে নিখাঁদ আনন্দ উপভোগ করা যায়। মূল শহরগুলোতে নানা কারনে আমাদের বাধ্য হয়েই ছোট ফ্ল্যাটে থাকতে হয়। ছোট ঘরকে কীভাবে সাজাব এ নিয়েও থাকে অজস্র চিন্তা আর মন খারাপের গল্প। অথচ শহরতলীতে বেশিরভাগ ঘর এমনিতেই বড় করে তৈরি, জমির দামও তুলনামূলক কম। সুতরাং বাজেটের মধ্যে থেকেই আপনি যদি একটি বিশাল ফ্ল্যাট নিয়ে থাকতে চান, কিংবা জমি কিনে একটু বড় পরিসরে বাড়ি বানাতে চান তাহলে শহরতলীর কোনো বিকল্প নেই। শহর জীবনে ব্যালকনিই আপনার আকাশ দেখার একমাত্র রানওয়ে। অথচ শহরতলিতে পুরো আকাশটাই থাকছে আপনার জন্য। কি ব্যালকনি, কি খোলা প্রান্তর, কি ঘরের আঙিনা, যে কোনো জায়গা থেকে আপনার দৃষ্টি প্রসারিত হবে বহুদূর অব্দি। সূর্যাস্ত থেকে সুর্যাদয়, মধ্যাহ্নের আকাশ কিংবা অপরাহ্নের, সবটাতেই অধিকার থাকবে আপনার।
ব্যক্তিগত গোপনীয়তা
শহরগুলোতে দালানকোঠার গায়ে লেগে দালানকোঠারা বসবাস করে। মানুষের গায়ে লেগে বসবাস করে মানুষ। এতো বেশি জনাকীর্ণ বলেই এখানে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সুযোগ কম। তবে শহরের সুবিধা আর ব্যক্তিগত প্রাইভেসি দুটোই যদি আপনার কাছে সমানভাবে প্রাধান্য পায়, সেক্ষত্রে শহরতলীই কিন্তু আপনার বসবাসের জন্য সবচেয়ে ভালো বিকল্প। নিজের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা একটি জায়গা খুব সহজেই করে নেয়া যায় শহরতলীর প্রশস্ত ঘরগুলোতে। কেউ সেখানে আপনার জীবনযাপনে দখলদারিত্ব করতে আসবে না, কারো সাথে মানিয়ে নিয়ে দিনযাপন করার বাড়তি চাপও পোহাতে হবে না। আপনার যা কিছু ব্যক্তিগত, তার সবই সুরক্ষিত রাখার সুযোগ পাচ্ছেন এখানে।
প্রকৃতির সান্নিধ্য
শহরতলীর সাথে কিন্তু প্রকৃতির ঘনিষ্ঠতা অনেক বেশি। চাইলেই হাত বাড়িয়ে সবুজ পাতা ছুঁয়ে দেয়া যায়। ভোরের বেলা শিশির ধোঁয়া নরম ঘাসে পা রেখে বহুদূর হেঁটে আসা যায়। খোলা পার্কে কাটিয়ে দেয়া যায় গোটা বিকেল। প্রকৃতি যারা ভালবাসেন, অথচ নাগরিক সুবিধাদিও হাতছাড়া করতে চান না, তাদের জন্য শহরতলীর থেকে ভালো আবাসন আর কী হতে পারে! ট্রাফিকের সাইরেন নেই, জনতার কোলাহল নেই। নিশ্চিন্তে নির্ভেজাল এক জীবন উপহার দিতে জুড়ি নেই শহরতলীর।
সীমিত খরচ
ঢাকার মতো কেন্দ্রীয় শহরগুলোতে বসবাসের খরচ বরাবরই বেশি। বাসা ভাড়া থেকে যাতায়াত, খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে বিলাসদ্রব্য, সাধ্যের মধ্যে সাধ পূরনে হিমশিম খেতে হয় অধিকাংশ শহরবাসীর। এদিক থেকে, আপনি যদি বসবাসের জন্য শহরতলীকে বেছে নেন সেক্ষেত্রে জীবনযাপনের খরচ কমে যাবে অনেকখানি। বাসা ভাড়া কম বলে ব্যয়ের সবচেয়ে বড় খাতটি সীমিত হয়ে আসবে। যাতায়াত থেকে শুরু করে দৈনন্দিন পণ্য, সবকিছুই তুলনামূলক কম মূল্যে পেয়ে যাবেন এখানে। ফলে শহরতলীতে বসবাস কেবল মানসিকভাবেই নয়, আর্থিকভাবেও আপনাকে স্বস্তি দেবে।
কেন থাকবেন শহরতলীতে? এই প্রশ্নের উত্তরে বারবারই উঠে আসবে শহরতলীতে বসবাসের অসংখ্য সুবিধার কথা। পার্থিব এসব সুবিধার বাইরেও শহরতলী একটি খন্ড আবেগ, যে আবেগের টানে কেউ যদি শহরের আয়েশী জীবন ছেড়ে শহরতলীর নির্ভেজাল সুখে ডুব দেন, তাহলে তা একান্তই তার সিদ্ধান্ত অথবা শহরতলীর স্বপ্নমানুষ হয়ে উঠবার প্রথম ধাপ অতিক্রম! আপনিও কি শহরতলীতে থাকতে চাওয়া সেইসব স্বপ্নমানুষদের একজন? জানিয়ে দিন কমেন্টে।