রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করার সুবিধা রয়েছে অনেক। নির্বাচিত প্রপার্টি থেকে নগদ প্রবাহ বা ক্যাশ ফ্লো, রিটার্ন এবং কর প্রদানের মত নানাবিধ সুবিধা উপভোগ করার পাশাপাশি এই সেক্টরে বিনিয়োগের মাধ্যমে পয়সা ও ব্যাংক ব্যাল্যান্স তৈরি করার যথেষ্ট সম্ভাবনা প্রদান করে থাকে। গত দশকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো, বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট মার্কেটও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ এখন বেশ সহজ এবং জনপ্রিয় একটি ক্ষেত্র। কেবল রাজধানী ঢাকাই এখন বিনিয়োগকারীদের জন্য একমাত্র আকর্ষণ নয়। রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও ঢাকার মতই বিনিয়োগের চাহিদা রয়েছে। আপনি কি চট্টগ্রাম রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ নিয়ে সন্দিহান? আজকের ব্লগে আমরা চট্টগ্রাম রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগের সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করবো!
চলমান উন্নয়ন

গত এক দশকে, চট্টগ্রাম কিছু অবিশ্বাস্য উন্নয়নের সাক্ষী হয়েছে। এই শহরের প্রবৃদ্ধি ছিল লক্ষণীয়, অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে শুরু করে সমুদ্র বন্দর এমনকি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ইত্যাদি সবকিছুই এখন আলোচনার মূল বিষয়। মিরসরাই ইকোনমিক জোন একটি শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চল যা বর্তমানে মীরসরাই উপজেলা, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ চ্যানেলের তীরে নির্মাধীন। এটি ৩০,০০০ একর জমিতে উন্নীত হচ্ছে এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) দ্বারা পরিচালিত। এই ইকোনমিক জোন প্রস্তুত হলে তা অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে, রপ্তানি-আমদানি ব্যবসায়ে সাহায্য করবে, যা রিয়েল এস্টেটের চাহিদা বিপুলভাবে পূরণ করবে।
খুব শীঘ্রই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন হবে যার ফলে চট্টগ্রামে ভ্রমণ আগের চেয়েও সহজ হয়ে উঠবে। চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাংলাদেশের দ্বিতীয় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প, যা শাহ আমানত বিমানবন্দরকে লালখান বাজারের সাথে সংযুক্ত করবে। এর ফলে, বিমানবন্দরের আশেপাশে আবাসন সুবিধা আরও বৃদ্ধি পাবে সুতরাং এই এলাকায় বিনিয়োগ করা হবে একটি বুদ্ধিমানের কাজ।
সময়ের সাথে চট্টগ্রামের আবাসিক এলাকাগুলো বেশ উন্নত হয়েছে। নাসিরাবাদের মতো এলাকাগুলোতেও হয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ। নাসিরাবাদ চট্টগ্রামের অন্যতম সমৃদ্ধ একটি এলাকা। এই এলাকাটির অবস্থান গোটা চট্টগ্রাম শহরকেই আরও আকাঙ্ক্ষিত করে তোলে। এলাকার চারপাশে সুসজ্জিত রাস্তা থাকায় নাসিরাবাদে সামাজিক সুবিধা ও অন্যান্য পরিষেবার কোনো অভাব নেই। নাসিরাবাদকে বিএনবিসির সকল নিয়ম-কানুন অনুসরণ করে নির্মিত, ঢাকার কিছু সুগঠিত আবাসিক এলাকার সাথেও তুলনা করা হয়।
চাকরি ও ব্যবসার সুযোগ

চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অন্যতম বাণিজ্যিক বিভাগীয় শহর। দেশের বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম প্রায় সব আমদানি-রপ্তানির প্রধান কেন্দ্রবিন্দু এই শহর এবং এখান থেকেই প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করা হয় যা প্রচুর বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে। অন্যদিকে, এখানে কাজের সুযোগও প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। সরকারি অফিস থেকে শুরু করে এমএনসি পর্যন্ত সবরকম চাকরির সুযোগে উত্তপ্ত চাকরির বাজার। ইউনিলিভার, নোভারটিস লিমিটেড, বিএটি, বিকাশের মত আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের মাধ্যমে চাকরি ও ব্যবসায়ের সুযোগ তৈরি করেছে। চট্টগ্রামের চাকরির বাজার যেমন প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি আবাসন চাহিদাও বাড়ছে। অনেকেই এখন চাকরি বা ব্যবসার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামে চলে যাচ্ছে। মানুষের আবাসন চাহিদা পূরণের জন্য, চট্টগ্রামে আবাসিক বা বাণিজ্যিক খাতে বিনিয়োগ করা বিনিয়োগকারীর জন্য সম্ভাবনাময় একটি সুযোগ হতে পারে।
সহজ যাতায়াত ব্যবস্থা

চলমান কর্ণফুলী টানেল উদ্বোধনের মাধ্যমে চট্টগ্রামের সাথে দেশের অন্যান্য শহরের সংযোগ এবং সহজলভ্যতা আশা করা হচ্ছে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। আরেকটি প্রকল্প, ‘চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড’ সম্প্রতি উদ্বোধন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) মহানগরীতে যানজট কমাতে এবং চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্যবাহী যান চলাচলের সুবিধার্থে এই প্রকল্প আউটার রিং রোড কাম বেড়িবাঁধ’ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এই বাঁধের ফলে চট্টগ্রাম থেকে অন্যান্য শহরে যাতায়াত সহজ এবং দ্রুত করা সম্ভব। যাতায়াত যে শহরে সহজ হবে সে জায়গাকে অনেকেই নিজের বসবাসের ঠিকানা হিসেবে বেছে নিবে। এতে করে অনেকেই এখানে বিনিয়োগ করা শুরু করবে এবং বিনিয়োগকারীরা এই সুযোগে লাভবান হবেন।
রিয়েল এস্টেট খাতের চাহিদা

রিয়েল এস্টেটের চাহিদা বর্তমান সময়ে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। চট্টগ্রামের মতো শহরে এখন রিয়েল এস্টেটের চাহিদাও লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অবকাঠামগত উন্নয়নের সাথে শহরে রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রমাণিত রেকর্ডও রয়েছে। বিপ্রপার্টির সংগৃহীত সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত চট্টগ্রামে আবাসন চাহিদা প্রায় ৩৩% বৃদ্ধি পেয়েছে। খুলসী, লাল খান বাজারের মতো লোকেশনগুলো বিনিয়োগকারীদের জন্য ছিল সেরা পছন্দ।
প্রতিযোগিতামূলক গতিতে বাড়তে থাকা মূল্য

সাধারণভাবেই রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করা বেশ বুদ্ধিমত্তার কাজ তার মধ্যে জায়গাটা যদি চট্টগ্রাম হয় তাহলে তো এখানে লাভের সম্ভাবনা অফুরন্ত। বর্তমান সময়ে চট্টগ্রামের প্রপার্টির চাহিদা রয়েছে বেশ। তার মধ্যে এখানের প্রপার্টির মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে উল্লেখ্যযোগ্য ভাবে। বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে ঢাকায় প্রপার্টির দাম প্রতি স্কয়ার ফিটে ৩৯.৮১ % পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। একইভাবে, চট্টগ্রামে এই বছরের জানুয়ারি থেকে প্রপার্টির দাম প্রতি স্কয়ার ফিটে ২৩.৭২ % পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রতিবেদনগুলি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে চট্টগ্রামে প্রপার্টির দাম দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বছরের জুন থেকে চট্টগ্রামের সমৃদ্ধ এলাকা যেমন খুলশী, মুরাদপুর, দক্ষিণ কুয়ারির মতো এলাকায় বিনিয়োগ করলে তা আপনাকে বেশ চমৎকার রিটার্ন এনে দিবে বলে বেশ কিছু প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করা অনেক বড় একটি আর্থিক সিদ্ধান্ত। তাই যেকোন জায়গা হোক ঢাকা কিংবা চট্টগ্রাম বিনিয়োগের আগে অবশ্যই সেই জায়গার ভবিষ্যতের সম্ভাবনাগুলো মূল্যায়ন করে নেয়া উচিত। চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক উন্নতি, ক্রমবর্ধমান রিয়েল এস্টেটের চাহিদা এবং প্রতিযোগিতামূলকভাবে বাড়তে থাকা মূল্যের কথা মাথায় রেখে, চট্টগ্রামের রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগের পরিকল্পনা হতে পারে সময় উপযোগী স্মার্ট একটি বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত।