Reading Time: 4 minutes

আধুনিক বাড়িগুলো টাইলস এর মেঝে ছাড়া যেন কল্পনাই করা যায় না। সাধারণ টাইলস ছাড়াও বাজারে এসেছে আরও কতরকমের টাইলস। বিভিন্ন দামে পাওয়া টাইলসগুলো দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি সাশ্রয়ী। আপনি চাইলে আপনার চাহিদামত টাইলস বেছে নিতে পারেন। টেকসই টাইলসের ক্ষেত্রে আপনি বেছে নিতে পারেন, সিরামিক এবং পোর্সিলিন বা চিনা মাটির টাইলস। আপনি চাইলে এগুলোকে দেয়ালেও লাগাতে পারবেন। চাইলে নিতে পারেন মিরর পলিশড টাইলস এটা ফ্লোরের জন্য বেশ সাশ্রয়ী। আর যদি এমন কোন টাইলস ব্যবহার করতে চান যা কিনা মেঝে বা দেয়াল, দুটোতেই ব্যবহার করা যাবে এক্ষেত্রে রাস্টিক টাইলস বেছে নিন। এ তো গেলো টাইলস নিয়ে অল্প কিছু কথা! টাইলস করার নিয়ম ও বসানোর পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত লিখবো নিচে। পড়তে থাকুন! 

টাইলস ব্যবহারের কারণ

Porcelain tiles
টাইলস সহজে প্রতিস্থাপন করা যায় ও রক্ষণাবেক্ষণও সহজ

টাইলস ব্যবহারের প্রধান কারণ হচ্ছে স্থাপনের সময়, দীর্ঘস্থায়িত্ব, সৌন্দর্য, সহজ পরিচর্যা ইত্যাদি। এছাড়াও টাইলস ব্যবহারের জন্যে রয়েছে নানাবিধ কারণ। যেমনঃ টাইলস অনেকে বাড়ি নির্মাণের জন্য বেছে নেন অল্প সময়ে এটি স্থাপন করা যায় বলে ও সহজে যত্নও নেওয়া যায় বলে। এছাড়াও বাড়ি নির্মাণের খরচ অনেকটা কমে আসে  যেহেতু, দেয়ালে টাইলস ব্যবহারের ক্ষেত্রে রঙ করার প্রয়োজন হয় না। দেয়ালে নোনা ধরার সম্ভাবনা থাকে না একদমই। দেয়াল ড্যাম হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে না। এমনকি মেঝেও সমতল থাকে, আঘাতে সহজে ভাঙ্গে না। এছাড়া, টাইলস সঠিকভাবে বসালে পরে মেঝে এক জায়গায় উঁচু এক জায়গায় নিচু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। যেভাবেই ব্যবহার করুন না কেন সহজে স্ক্র্যাচ বা মরিচা পড়ে না এবং আগুন প্রতিরোধী। আর টাইলস সহজে প্রতিস্থাপন করা যায় ও রক্ষণাবেক্ষণও সহজ। এছাড়া মোজাইক ও মার্বেলের চেয়ে তুলনামূলক কম খরচ ও বেশিদিন টেকেও। 

টাইলস বসাতে যে উপাদানগুলো লাগবে

  •  সিমেন্ট
  •  টাইলস
  •  বালি
  •  পিগমেন্ট
  •  হোয়াইট সিমেন্ট

টাইলসের মশলার অনুপাত 

Cement,Or,Mortar mixer
সিমেন্ট মিক্সচার ছাড়াও রেডি মিক্স সিমেন্ট মিক্সচার ব্যবহার করা যেতে পারে

যেকোন ভবন নির্মণে, নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে বেশি ব্যবহৃত হয় সিমেন্ট। এক ব্যাগ সিমেন্টের সাথে ৩ ব্যাগ বা ৪ ব্যাগ বালি মিশিয়ে শুকনা অবস্থায় এমনভাবে মিক্সিং করতে হবে যেন মিক্সারটি দেখতে ছাই রঙ এর মত হয়। এরপর পরিমিত পানি দিয়ে পুনরায় ভালোভাবে মিক্সিং করতে হবে। তবে মনে রাখা জরুরি, এক ঘন্টার মধ্যেই বানানো মশলা ব্যবহার করে ফেলতে হবে। মশলার উচ্চতা ২ থেকে ৩ সেন্টিমিটার এর মধ্যে হতে হবে। সিমেন্ট মিক্সচার ছাড়াও রেডি মিক্স সিমেন্ট মিক্সচার ব্যবহার করা যেতে পারে।

টাইলস বসানোর পদ্ধতি

Tile floor installation
টাইলস যেন চৌকাঠের উপরে না উঠে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

ফ্লোরে টাইলস বসানোর আগে টাইলস করার নিয়ম অনুযায়ী ওয়াটার পাইপ দিয়ে পুরো ফ্লোরের লেভেল মার্ক করে নিতে হবে। এরপর মশলা দিয়ে একটি টাইলস বসিয়ে ফ্লোরে পায়া করে নিতে হবে। এরপর সুতা বেঁধে ফ্লোর টাইলসগুলো বসাতে হবে। দেয়ালের ক্ষেত্রেও মশলা দিয়ে পায়া করতে হবে যেন সারি ঠিক থাকে। বর্ডার থাকলে তা হিসাবের মধ্যে এনে লাইন-বাই-লাইন টাইলস বসাতে হবে। টাইলস বসানোর সময় কাঠ বা রবারের হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করতে হবে যেন ভিতরে কোন ফাঁপা বা বাতাস না থাকে। টাইলসের মধ্যকার জয়েন্টগুলো যেন ২ মিলিমিটারের চেয়ে বেশি না হয়। যতটুকু সম্ভব দরজা খোলার পর টাইলসের কাটপিস যেন না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং ১.৫” এর বেশি কাটপিস যেন না হয়। টাইলস যেন চৌকাঠের উপরে না উঠে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। ফ্লোর টাইলস পুরো ইউনিটে এক জয়েন্ট হতে পারে অথবা অথবা কমন এরিয়া বা রুম বাই রুম আলাদা হতে পারে। স্কার্টিং এর উচ্চতা সাধারণত ৪” হয় এবং দেয়ালে ফ্ল্যাশ হলে ভালো তা নাহলে ময়লা জমে। নূন্যতম ৭ দিন কিউরিং করতে হবে। সবশেষে দেয়াল বা ফ্লোর টাইলস এর জয়েন্টগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। টাইলসের রঙ মিলিয়ে হোয়াইট সিমেন্ট ও পিগমেন্ট দ্বারা পুটিং বানিয়ে পয়েন্টিং করতে হবে। পয়েন্টিং করার পর সাদা মার্কিং কাপড় দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে এবং ২ দিন ভেজা ন্যাকড়া দিয়ে টাইলস মুছতে হবে।

টাইলসের যত্ন

cleaning mop
সঠিক উপায় জানলে এই ফ্লোরের ময়লা দাগ দূর করা বেশ সহজ

ঘর পরিষ্কারের কোন বিকল্প নেই। জীবাণু থেকে সুরক্ষা পেতে হলে ঘরের মেঝে পরিষ্কার জরুরি।  টাইলস ব্যবহার করলে সবসময় যেটা সবার মাথায় ঘুরপাক খায় তা হল, টাইলসে জমে থাকা ময়লা দাগ দূর করব কীভাবে? এই ময়লা দাগ দূর করাও বেশ কঠিন। কিন্তু সঠিক উপায় জানলে এই ফ্লোরের ময়লা দাগ দূর করা বেশ সহজ হয়ে যায়-  

  • কালচে দাগ যেন না হয়, সে জন্য প্রতিদিনই ঘর পানি দিয়ে মোছা। 
  • টাইলসের ওপর কোনোমতেই যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • রান্নাঘরের টাইলসে ময়লা পড়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই পরিষ্কারক তরল ডিটারজেন্ট দিয়ে সব সময় কিংবা রান্নার পরপরই তেল-চর্বি পরিষ্কার করে রাখতে হবে।
  • সাধারণত টাইলসের জোড়া লাগানো স্থানের কোণায় কোণায় ময়লা জমে কালচে দাগ পড়ে, তাই সপ্তাহে অন্তত এক দিন ডিটারজেন্ট পাউডার গোলা পানি কিংবা ফোমে সাবান বা লিকুইড ক্লিনার ব্যবহার করা যেতে পারে। খুব শক্ত ব্রাশ ব্যবহার করা যাবে না, এতে স্ক্র্যাচ পড়ে যেতে পারে। 
  • তেল-চর্বিজাতীয় দাগ পড়ে টাইলস যেন নষ্ট না হয়, সে জন্য দাগ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা সাবানের পানি দিয়ে ভালো করে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করতে হবে।
  • এ্যালকাইনমুক্ত ও এসিড বিহীন পরিশোধক দ্বারা নিয়মিত টাইলস পরিষ্কার করুন।
  •  টাইলস পরিষ্কারের পর আগের উজ্জ্বলতা ফিরে না আসলে একটা কাপড়ে বেকিং সোডা নিতে হবে। এক্ষেত্রে ফোম ব্যবহার করা সবচেয়ে সুবিধাজনক। এতে টাইলস এ নতুন করে দাগ পড়ে না। ফোম ঘষে দিতে হবে টাইলস এ। খানিক পরেই দেখা যাবে টাইলস নতুনের মত চকচক করছে!
  • টাইলস জীবাণুমুক্ত করার জন্যে ডেটল বা স্যাভলন ব্যবহার করা উচিৎ। আমাদের পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্যে টাইলস পরিষ্কার রাখার কোন বিকল্প নেই।

এছাড়াও আপনি চাইলে আপনার টাইলসের ধরণ অনুযায়ী পরিষ্কার করতে পারেন। একেক রকমের টাইলসের জন্য রয়েছে একেক রকম পরিষ্কার প্রনালী। টাইলস করার নিয়ম সম্বন্ধে খুঁটিনাটি জানার কোন বিকল্প নেই। আজকের এই আর্টিক্যাল  থেকে আশা করি আপনি প্রয়োজনীয় সকল তথ্য পেয়েছেন। আর যদি কোন তথ্য বাকি রয়েছে বলে আপনার মনে হয়, কমেন্ট করে জানিয়ে দিন!

Write A Comment