Reading Time: 3 minutes

বাড়ি বানানোর পরিকল্পনায় ও নকশায় নানা উন্নত সংযোজন বসবাসের স্বাচ্ছন্দ্য বাড়ায়। মাথার উপর একটা ছাদ কিংবা জীবনের নানা মৌলিক চাহিদা মেটানোতে যেমন বাসস্থানের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে, তেমনি আমাদের লাইফস্টাইলও আমাদের থাকার জায়গার উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। বাংলো, কটেজ, পেন্টহাউজ, ভিলা, ডুপ্লেক্স বাড়ি অনেক ধরণের-ই হতে পারে। সাধারণত, দুই ইউনিটের বিল্ডিংকে ডুপ্লেক্স বলা হয়। সেখানে দুটি ইউনিট পাশাপাশি থাকতে পারে, অথবা উপর নিচে দুটি ফ্লোরেও থাকতে পারে। বাংলাদেশে অবশ্য দোতলা ডুপ্লেক্স বাড়িই চাহিদা বেশি। ডুপ্লেক্স বাড়িগুলো সাধারণত বিলাসযাপনের উদ্দেশ্য কেনা হয়ে থাকে। অনেকে তাদের আবাসিক চাহিদা মেটাতে ডুপ্লেক্স বাড়ি কেনেন, অনেকের আবার থাকে ভাড়া দেয়ার মাধ্যমে বিনিয়োগের পরিকল্পনা। কারণ যেটাই হোক, ডুপ্লেক্স বাড়ি কেনার চিন্তা করলে ভালোমতো ভেবে নেয়া উচিত। কেননা ডুপ্লেক্সের যেমন দারুণ সব সুবিধা আছে, তেমনি কিছু অসুবিধাও আছে। তাই ডুপ্লেক্স বাড়ির সুবিধা অসুবিধা এর কথা আপনার চিন্তা করে নেয়া উচিত:  

ডুপ্লেক্সের সুবিধা

ডুপ্লেক্স বাড়ি
ডুপ্লেক্সের যেমন দারুণ সব সুবিধা আছে, তেমনি কিছু অসুবিধাও আছে

প্রতিটা ডুপ্লেক্স বাড়ির-ই কিছু দারুণ সুবিধা আছে। সাধারণত এই ধরণের বাড়িগুলোর নকশা-ই বিলাসযাপন এবং স্বাচ্ছন্দ্যের জন্যে করা হয়ে থাকে। তাই একটি ডুপ্লেক্সে আপনার এই জিনিসগুলোই খোঁজা উচিত।

প্রাইভেসি এবং স্পেস

বেশিরভাগ ডুপ্লেক্স বাড়ি-ই দারুণ সব নকশায় করা হয়। যেহুতু এখানে জায়গার কোনো সমস্যা নেই, তাই প্রায়ই ডুপ্লেক্স বাড়িগুলোর সামনে একটি বড় লন কিংবা বারান্দা থাকে। সেগুলো বাগান হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। কোনো কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে, যেমন আপনার পরিবারে যদি এমন কেউ থাকে যার নিয়মিত যত্ন ও নজরদারি এবং একইসাথে নিজস্ব গোপনীয়তা ও স্পেস প্রয়োজন, ডুপ্লেক্স বাড়ি সে চাহিদা মেটাতে পারে সহজেই। কারণ এই ধরণের বাড়িতে আপনি অন্য কারো প্রাইভেসিতে হস্তক্ষেপ না করে একটি আলাদা ফ্লোরে থাকতে পারছেন। যেটা ডুপ্লেক্স বাড়ির সুবিধা অসুবিধা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি সুবিধা।   

বেশি মানুষের জন্য জায়গা 

যেহেতু আপনার কাছে বেশি জায়গা এবং অনেকগুলো রুম আছে, তাই বাড়িতে অনেক মানুষ থাকলেও সমস্যা হয় না। ধরুন আপনার পরিবারে দাদা-দাদি আছেন, যাদের বিশেষ যত্ন এবং নজরদারি প্রয়োজন। কিংবা ধরুন আপনি যৌথ পরিবারে বসবাস করেন। এসব পরিস্থিতির চাহিদা মেটাতে ডুপ্লেক্স বাড়ি দারুণ কার্যকরী। বাড়িতে বন্ধুবান্ধব কিংবা অতিথি আসলেও জায়গা নিয়ে চিন্তা করা লাগে না। 

তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী

‘কার্পেট এরিয়া’ – এর কথা চিন্তা করলে একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি একই সমান একটি একতলা বাড়ির তুলনায় বেশ সাশ্রয়ী। তবে এখানে কোন এলাকার বাড়ি নিয়ে কথা বলা হচ্ছে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। এটা অবশ্য শুধু বাংলাদেশে নয়। সারা বিশ্বেই একতলা ফ্যামিলি হোমের চেয়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি বেশি সাশ্রয়ী। 

ক্যাশ ফ্লো বা আয়ের উপায় 

ডুপ্লেক্স বাড়ি থেকে টাকা কামানোরও সুযোগ আছে। আপনার যদি ছোট পরিবার হয় এবং বাসার অতিরিক্ত জায়গাটুকু অন্য কারো সাথে ভাগ করে নিতে কোনো অসুবিধা না থাকে, তবে একটি অ্যাপার্টমেন্ট কিংবা একটি ফ্লোর আপনি ভাড়াও দিতে পারেন। ঋণে বাড়ি কিনলে এই সুযোগটি ভালো কাজে লাগতে পারে। ভাড়ার টাকা ঋণ মেটানোর কাজে আসতে পারে। এছাড়াও, ডুপ্লেক্স বাসার রিসেল ভ্যালু অন্য যেকোনো ধরণের বাড়ির থেকে বেশি।

ডুপ্লেক্স বাড়ির অসুবিধা: 

হাউজ ক্লিনিং মপ
ডুপ্লেক্সের মতো বিশাল জায়গার বাড়িতে রক্ষণাবেক্ষণ সমস্যা হয়ে দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে

অন্য যেকোন ধরণের বাড়ির মতোই ডুপ্লেক্স বাড়ির সুবিধা অসুবিধা দুটোই রয়েছে। বাড়ি কেনার আগে এই সমস্যাগুলোর কথা ভালোভাবে ভেবে নেয়া ভালো। 

রক্ষণাবেক্ষণ

ডুপ্লেক্সের মতো বিশাল জায়গার বাড়িতে রক্ষণাবেক্ষণ সমস্যা হয়ে দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াও আপনার কিছু অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হতে পারে। পুরো প্রক্রিয়ায় আপনার আরো বেশি সময় এবং শক্তির ক্ষয় হওয়ার সুযোগ আছে। বলে রাখা ভালো, পুরো বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি আলাদা মানুষ রাখা লাগতে পারে। না হলে ডুপ্লেক্সের থেকে যেই স্বাচ্ছন্দ্য আশা করছেন, তা না পাওয়ার-ই সম্ভাবনা বেশি। 

প্রচুর ইউটিলিটি বিল

বেশি জায়গার খরচও বেশি। একটা ডুপ্লেক্সে আপনার দুটি ইউনিটের পরিষেবা বিল দেয়া লাগবে। তাই বাসা ভাড়া দেন বা না দেন, বেশ বড় বড় বিলের বোঝা আপনাকে সামলাতে হবেই। 

মানানসই ভাড়াটিয়া পাওয়া 

ডুপ্লেক্স বাড়ির ভাড়াটিয়া বের করা সহজ ব্যাপার নয়। এখানে ভাড়াটিয়া এবং বাড়িওয়ালা একই জায়গায় থাকবেন, তাই মানানসই ভাড়াটিয়া খুঁজে বের করা কঠিন। গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তারও বিষয়গুলোও গুরুত্বপূর্ণ। যেকোন ভাড়াটিয়ার সাথে বাসা ভাগাভাগি করে থাকতে সবাই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ নাও করতে পারেন। বাড়িওয়ালার সাথে ভাড়াটিয়াদের দ্বন্দ্ব তো খুবই সাধারণ বিষয়।  এছাড়াও, ভাড়াটিয়ারা অস্থায়ী বাসিন্দা। তাই সবসময়ই এই ক্যাশ ফ্লো চলবে, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। ডুপ্লেক্স কেনার আগে এই বিষয়গুলো ভেবে নেয়া ভালো। 

সবমিলিয়ে, বিলাসযাপনের জন্য ডুপ্লেক্স বাড়িগুলো অসাধারণ। স্বাচ্ছন্দ্য, প্রাইভেসি কিংবা স্পেইস – কিছু নিয়েই আপনার কোন সমস্যা হবে না। কিন্তু যেকোন বাড়ির মতোই ডুপ্লেক্স বাড়ির সুবিধা অসুবিধা রয়েছে। সেগুলো ভালো মতো ভেবে, হোম ইন্সপেকশনে যা যা দেখবেন তা দেখে নিয়ে যদি আপনার কোনো সমস্যা না থাকে, তবেই ডুপ্লেক্স বাড়ি কিনুন। আশা করা যায় এই লেখাটি পাঠকদের সাহায্য করেছে। যদি করে থাকে, তবে কমেন্ট সেকশনে আমাদের জানিয়ে দিন আপনার প্রতিক্রিয়া।

Write A Comment