Reading Time: 4 minutes

যারা বই পড়তে ভালোবাসেন, তারা যেন দিন-রাতের যেকোনো সময়ই বইয়ের সাথে ব্যস্ত সময় কাটাতে পছন্দ করেন। কাজের ফাঁকে, বিকেলের সময়টাতে এক কাপ চা বা কফি হাতে নিয়ে কিংবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অনেকেই বই পড়তে পছন্দ করেন। ভালোবাসেন বইয়ের জগতে হারিয়ে যেতে। তবে বই পড়ার এই অভ্যাসটা এখন আর কিন্তু ঘরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সময় সুযোগ মতো ব্যস্ততার ফাঁকে কিংবা ছুটির দিনে নিজেকে সময় দেয়ার জন্য অনেকেই পছন্দ করেন ঢাকার বুকশপ ক্যাফে গুলোতে সময় কাটাতে। আর সঙ্গ দিতে সাথে যদি থাকে দারুণ কোন বই, তবে তো কথাই নেই! ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে এমনই কিছু বুকশপ ক্যাফে, যেখানে বসে আপনি বই পড়তে পারবেন, সাথে এক কাপ কফি হাতে আড্ডাও দেয়া যাবে। 

তবে চলুন এমনই কয়েকটি ঢাকার বুকশপ ক্যাফে সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক। 

বেঙ্গল বই

বেঙ্গল বই, ঢাকা
এক কাপ চা সাথে পছন্দের লেখকের বই হাতে সময়টা কাটবে দারুণভাবে!

ঢাকার বুকশপ ক্যাফে এর কথা বললে প্রথমেই যার নাম না নিলেই নয়, সেটা হল বেঙ্গল বই। গল্প-আড্ডা, বই পড়া, চা-কফি খাওয়ার জন্য সাম্প্রতিক সময়ে বেশ পরিচিত এই বুকশপ ক্যাফেটি, যা ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে যাত্রা শুরু করে। বই প্রেমীদের জন্য দারুণ এই জায়গাটি গড়ে তুলেছে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন লেখকের ইংরেজি-বাংলা সব ধরনের বই রয়েছে এই বুকশপ ক্যাফেতে। এখান থেকে যে আপনি শুধু বই কিনতে পারবেন তা নয়, বসে বই পড়ার জন্যও রয়েছে বিশাল ব্যবস্থা। এমনকি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও আয়োজন করা হয় বইয়ের এই আঙিনায়। আর তাই শিল্প-সাহিত্য চর্চার দারুণ জায়গা হিসেবে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বেঙ্গল বই এর প্রাঙ্গন। 

আগের ঠিকানা পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে নতুন ঠিকানা হয়েছে ঢাকার ধানমন্ডির ২৭ নম্বর সড়কের বেঙ্গল শিল্পালয় ভবনের নিচতলায়। ভবনটির ভেতরে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বইয়ের সমাহার। রয়েছে বাচ্চাদের পড়ার জন্য সুন্দর করে সাজানো জায়গা। একাডেমিক বই থেকে শুরু করে, পুরনো বই, ম্যাগাজিন সব কিছুর বিশাল সংগ্রহ রয়েছে বেঙ্গল বই-এ। রয়েছে একটি বই নিয়ে যাওয়ার বদলে নিজের সংগ্রহে থাকা দুইটি পুরনো বই বেঙ্গল বইয়ে দেয়ার দারুণ প্রথা। বই পড়ার পাশাপাশি ঢাকায় ইনডোর কালচারাল ইভেন্ট ভেন্যু হিসেবেও বেঙ্গল বই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।    

 গাছপালা ঘেরা চমৎকার পরিবেশে বই পড়ার পাশাপাশি রয়েছে চা-কফি-নাস্তা খাওয়ার ব্যবস্থা। আর এই বুকশপে আসতে আপনাকে দিতে হবে না কোন এন্ট্রি ফি। তাই যখন-তখন একা অথবা বন্ধু বা পরিবারের সাথে যেতে পারেন ঢাকার বুকশপ ক্যাফে হিসেবে পরিচিত বেঙ্গল বই-তে।  

বাতিঘর

যারা একটু ইন্ট্রোভার্ট প্রকৃতির, অর্থাৎ খুব বেশি আড্ডা বা মানুষের কোলাহল যারা এড়িয়ে চলতে পছন্দ করেন এবং নিজেকে বইয়ের জগতে ব্যস্ত রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, সেসব ইন্ট্রোভার্টদের জন্য ঢাকায় ঘোরার জায়গা রয়েছে বেশ কিছু। এর মধ্যে অন্যতম একটি হল বাতিঘর।

দেয়ালের মধ্যে সাজানো সারি সারি বই। বই পড়ুয়ারা গভীর মগ্ন হয়ে এদিক সেদিক বসে বই পড়ছেন। এই বুকশপের প্রতিটি দেয়াল জুড়েই যেন রয়েছে বইয়ের বিশাল ভাণ্ডার। কোন তথ্য জানতে চাইলে এখনই যেন গরগর করে বলে দিবে সব। দেয়ালের এই বইগুলো ঘিরে কেউ হয়তো পছন্দের লেখককে খুঁজছেন,  কেউ হয়তো যে বইয়ের সন্ধানে ছিলেন তা পেয়ে এখন ভীষণ খুশি। এমনকি বই নিয়ে বন্ধুদের সাথে আলোচনাও চলছে। আর এসবই হচ্ছে বাতিঘরের ভেতরে। 

প্রায় পাঁচ হাজার বর্গফুট জায়গায়, লাখের অধিক বইয়ের সংগ্রহ নিয়ে ঢাকার বাংলা মোটরে অবস্থিত বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের অষ্টম তলায় গড়ে উঠেছে বাতিঘর। মুঘল স্থাপত্য লালবাগ কেল্লার আদলে নির্মিত ঢাকার ‘বাতিঘর’ এ পাঠকদের বই পড়ার সুবিধার্থে বাতিঘরের ভেতরেই রয়েছে ব্যবস্থা। তাদের পছন্দের বই নিয়ে সময় কাটানোর জন্য। পড়তে পারবেন সেখানে বসেই। মুঘল আদলে নির্মিত এই ভবনে রয়েছে শিশুদের জন্য ভিন্ন কর্নার। আপনি চাইলে সারাদিন ধরে এখানে বসেই বই পড়তে পারেন, সে ব্যবস্থাও রয়েছে। তবে গ্রাহকরা এখান থেকে কোনও বই বাসায় নিয়ে পড়তে পারবেন না। সে ব্যবস্থা বাতিঘরে রাখা হয়নি, তবে বাতিঘরের ভেতরে বই পড়ার সুব্যবস্থা করা আছে।  

দ্য রিডিং ক্যাফে, বনানী 

ঢাকার বুকশপ ক্যাফে
দেশি-বিদেশি বিভিন্ন লেখকের বই পড়ার সুযোগ রয়েছে এই বুকশপ ক্যাফেগুলোতে

বই পড়া সাথে কফি খাওয়ার জন্য ঢাকার বুকশপ ক্যাফে গুলোর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে যোগ হয়েছে নতুন আরেকটি নাম, দ্য রিডিং ক্যাফে। এই বুকশপ ক্যাফেটি অবস্থিত ঢাকার বনানীতে। ঢাকা শহর জুড়ে দ্য রিডিং ক্যাফের আরও বেশ কয়েকটি শাখা রয়েছে, তবে সেগুলোর সাথে নতুন সংযোজন বনানীর এই ক্যাফেটি। এই বুকশপ ক্যাফেতে দেশি এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত বিখ্যাত অনেক লেখকের বই, ম্যাগাজিন, শিশুদের গল্পের বই রয়েছে। আরও আছে বাচ্চাদের জন্য খেলার জায়গা। বই পড়া ছাড়াও বই কেনার সুযোগও রয়েছে এই বুকশপে।  

তাই কফি খাওয়ার পাশাপাশি যারা বই পড়তেও ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই জায়গাটি নিঃসন্দেহে দারুণ হবে। বইয়ের রাজ্যে হারিয়ে যেতে পারবেন খুব সহজে। তাই ছুটির দিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার জন্য কিংবা একান্তে বই পড়ে যদি সময় কাটাতে চান, তবে নির্দ্বিধায় চলে আসতে পারেন দ্য রিডিং ক্যাফেতে।      

দ্য নার্ডি বিন কফি হাউজ 

ধানমন্ডিতে অবস্থিত ‘দ্য নার্ডি বিন কফি হাউজ’ নিঃসন্দেহে বই পড়া এবং আড্ডা দেয়ার জন্য দারুণ এক জায়গা। ভিনটেজ স্টাইলে করা ইন্টেরিয়র এবং এ শপের পুরো ডেকোরেশন যেন আপনাকে ভিন্ন কোন দেশের কফি শপে থাকার অনুভূতি দিবে। কফি শপটি সাজানো হয়েছে বই, ছোট ছোট বিভিন্ন প্ল্যান্টস এবং কোটেশন লেখা দারুণ সব ফটোফ্রেম দিয়ে। ঢাকার অন্য কফি শপ গুলো থেকে এটি বেশ ভিন্নই বলা যায়।

ছুটির দিনে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে ঢাকায় ঘোরার জন্য এই জায়গাটি বেশ দারুণ। ছিমছাম এই শপটির সবচেয়ে বেস্ট দিক হচ্ছে এখানে বইয়ের বেশ ভালো সংগ্রহ রয়েছে। আপনি চাইলে কফি এবং সাথে ডেজার্ট অর্ডার দিয়ে বই পড়তে পড়তে ঘণ্টাখানেক সময় খুব সহজেই এখানে কাটিয়ে দিতে পারবেন। যদিও বই পড়ার পাশাপাশি আড্ডাও চলে এই কফি শপে, তাই নীরবতার বিষয়টি সব সময় একই রকম নাও থাকতে পারে। 

যারা ইংরেজি সাহিত্যের বই পড়তে পছন্দ করেন, তাদের জন্য এই কফি শপটি হবে বেস্ট। ধোঁয়া ওঠা এক কাপ কফির সাথে বই পড়ার এমন দারুণ জায়গা পেতে তাই নির্দ্বিধায় চলে আসতে পারেন ধানমন্ডি রোড নম্বর ২ এর দ্য নার্ডি বিন কফি হাউজে। 

ব্যস্ত শহর ঢাকায় গল্পে-আড্ডায় সময় কাটানোর জন্য রয়েছে বেশ কিছু রেস্তোরাঁ এবং কফি শপ। তবে বই পড়তে যারা ভালোবাসেন তাদের কাছে ঢাকার বুকশপ ক্যাফে এর মধ্যে এই ক্যাফে গুলো বেশ জনপ্রিয়। ব্যস্ত দিন থেকে নিজের জন্য কিছুটা সময় বের করে তাই যেকোনো সময় ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার বুকশপ ক্যাফে গুলো থেকে। আর কমেন্ট করে জানিয়ে দিন ঢাকার বুকশপ ক্যাফে গুলো মধ্যে কোনটিতে আপনার যাওয়া হয়েছে। 

Write A Comment

Author