Reading Time: 4 minutes

প্রিয় এই শহর কেবল ইতিহাসেই সমৃদ্ধ নয়, সৌন্দর্য ও রহস্যেও তুলনাহীন। এই শহরের আপনি নিজেকে এক মায়াজালের ভেতর গুটিয়ে ফেলবেন। কখন যে এ শহরের প্রেমে পড়েছেন নিজেই জানতে পারবেন না। এই শহরের গল্পটাই এমন আসলে। এই শহরে কি নেই দর্শনীয় মসজিদ, দূর্গ, স্মৃতিসৌধ ইমারত কত কি। এই মুগল যুগ থেকে সময় সময় সবাইকে আবাক করে আসছে এই শহরের স্থাপত্যগুলো। তার মধ্যে অন্যতম, ঢাকায় ঘোরার জায়গা হল এই ৪ টি। যারা ঢাকায় থাকেন কিংবা ঘুরতে আসবেন বলে ভাবছেন এই ৪ টি চমৎকার জায়গা আপনাদেরই জন্য অপেক্ষা করছে। দেরি না করে জেনে নিন ঢাকায় ঘোরার জায়গা কোনগুলো! 

আহসান মঞ্জিল

আহসান মঞ্জিল
আহসান মঞ্জিল

আহসান মঞ্জিল কেবল নবাব যুগের একটি শক্তিশালী অনুস্মারক হিসাবে পরিচিত নয় বরং বিশ্বব্যাপী  আর্কিটেকচারাল শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক। এটি ছিল তখনকার নবাবদের সরকারি আবাসিক প্রাসাদ। দুর্দান্ত কাঠামো নিয়ে তৈরি এই ভবনটির নির্মাণ কাজ ১৯ শতকের শেষদিকে সম্পন্ন হয়েছিল। দ্বিতল প্রাসাদটি দুটি ভাগে বিভক্ত: রঙমহল এবং অন্দরমহল। প্রাসাদের ভেতরের নকশায় রয়েছে বিভিন্ন ধরণের লতা পাতা। আরও রয়েছে আকর্ষণীয় কাঠের সিঁড়ি এবং একটি ভল্টেড কৃত্রিম সিলিং। এই দর্শনীয় ভবনটি অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ইংলিশ-ফরাসী যুদ্ধ অন্যতম। ১৯৮৫ সালে, ঢাকার জাতীয় যাদুঘর এর মালিকানা অর্জন করে এবং এটাকে একটি সংগ্রহশালা হিসাবে মনোনীত করে। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত, এই চমৎকার স্থাপনাটি দেখতে আপনাকে অবশ্যই পুরান ঢাকার কুমারটুলি অঞ্চলে যেতে হবে।

লালবাগ কেল্লা ও খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ, পুরান ঢাকা 

লালবাগ কেল্লা
লালবাগ কেল্লা

মুঘল স্থাপত্যের একটি অনবদ্য সৃষ্টি হয়ে আজও সে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশের একটি গর্বিত নির্মাণ শৈলী হয়ে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে। মূল্যবান সাদা মার্বেল এবং লাল বেলেপাথরের নৈপুণ্যময় ব্যবহার এই ইমারতকে করেছে আরও আকর্ষণীয়। যা এই ইমারত জুড়ে দেখা যায়। যেহেতু কিছু অংশ অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, তাই কেল্লার আসল অঞ্চলটি আজও রয়েছে অজানা। প্রায় ৪০০ বছর পুরনো এই কেল্লা কিন্তু রহস্যের উন্মোচন এখনো পুরোপুরি হয়নি। দীর্ঘ সময় ধরে,অনেকে জানতেন কেল্লার কেবল, তিনটি প্রধান ভবন রয়েছে: মসজিদ, বিবি পরীর সমাধি এবং দিওয়ান-ই-আম। তবে সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানে আরও বেশ কয়েকটি কাঠামোর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেছে। এই ভবনগুলোর মধ্যে, দিওয়ান-ই-আম একাধিক কারণে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল। বাংলার সুবাদার শায়েস্তা খান এখানেই থাকতেন। এই ভবনে সকল দৈনন্দিন সুযোগ সুবিধা ছিল যেমন, হাম্মামখানা (বাথরুম)। যেখানে গরম করার জন্য ছিল পোড়ামাটির পাইপ। এছাড়াও বলা হতো সেখানে ছিল এক রহস্যময়ী সুরঙ্গ যেখানেও কেউ ঢুকলে কখনো ফিরে আসতে দেখা যেত না। এমন অনেক গল্পই খুঁজে পাওয়া যাবে। আরও কাছে থেকে দেখতে এই কেল্লাটি ঘুরে আসুন। 

দুর্গের ঠিক পাশেই অবস্থিত, খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদটি আর একটি আকর্ষণীয় স্থান। মসজিদটিতে তিনটি গম্বুজ রয়েছে। মাটি থেকে প্রায় ১৭ ফুট উচু প্লাটফর্মের ওপরে তৈরি এ স্থাপনাটিই খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ। মসজিদটি উঁচুতে নির্মিত হয়েছিল তাই প্রায় ২৫ টি সিঁড়ি পেরিয়ে এর ভেতর প্রবেশ করতে হবে আপনাকে। দূর থেকে দেখে যে কেউ ভাবতে পারেন: স্থাপনাটি আসলে পোড়া মাটির তৈরি। লাল ইট আর চুনাপাথরের মিশ্রনে স্থাপনাটির রঙ অনেকটা পোড়া মাটির মত।  রঙের দিক থেকে কেউ কেউ আবার মিল খুঁজতে পারেন দিল্লীর লাল কেল্লার সঙ্গেও। ওপরে উঠতেই চোখ ভরে যাবে অভিজাত মুঘল স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম নিদর্শন এ মসজিদটি দেখে। 

তারা মসজিদ 

তারা মসজিদ
তারা মসজিদ

মসজিদের শহর এই ঢাকা। চারদিক থেকে যখন আযানের ধ্বনি আসে তখন মন প্রাণ সবকিছুই আনন্দে ভরে ওঠে। প্রশান্তি অনুভব হয় সবদিকে। ঢাকা শহরে এক হাজারেরও বেশি মসজিদ রয়েছে এবং এই মসজিদের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে আরও বাড়ছে। তবে এইসবের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর যে মসজিদটি তা হল এই তারা মসজিদ। আরমানিটোলারমসজিদটি জনপ্রিয়  তারা মসজিদ হিসাবে। এর নিখুঁত নকশা, নীল নক্ষত্র এবং ফুলের সুন্দর মোটিফের জন্য বিখ্যাত। ঢাকায় ঘোরার জায়গা হিসেবে যদি এই তারা মসজিদের কথা ভাবছেন তাহলে অবশ্যই এই স্থান আপনাকে নিরাশ করবে না। মির্জা গোলাম পীর ১৯ শতকের গোড়ার দিকে এই মসজিদটি নির্মাণ করেন।  মূলত মসজিদটি ছিল তিন গম্বুজ বিশিষ্ট কাঠামো। এরপরে বিশ শতকের গোড়ার দিকে মির্জা আহমেদ জান স্টার-প্যাটার্ন দিয়ে নীল টাইলস যুক্ত করে এটাকে পুনর্গঠন করেন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

একাত্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের জাতীয়তাবাদ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল, সে সম্পর্কে সম্ভবত কেউ দ্বিমত পোষণ করবেন না। আধুনিক ইতিহাসের পাশাপাশি বাংলাদেশের উত্থানেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এই কারণে বা কাঠামোগত নৈপুণ্যতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনা নেই বললেই চলে। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে দেশের বেশ কয়েকটি দর্শনীয় ভাস্কর্যও রয়েছে। টিএসসি হ’ল আরেকটি জায়গা যেখানে সর্বস্তরের মানুষ সংস্কৃতিকে অনুভব করতে আসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ঠিক পাশেই রয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। ভাষা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে এই অসামান্য স্মৃতিস্তম্ভটির নির্মাণ হয়েছিল। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঐতিহাসিক তাৎপর্যপূর্ণ আরেকটি স্থান। এই মাটিতে প্রচুর মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছিল। আপনি যদি একবারে ঢাকার একাধিক রূপ দেখতে চান তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্যই একটি দেখার মত জায়গা। ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধ কাঠামো যা এই শহরকে প্রাণবন্ত করে রেখেছে। রূপ দিয়েছে সমৃদ্ধের। সংস্কৃতি এবং ইতিহাসকে প্রতিফলিত করেছে এই কাঠামোর মধ্য দিয়ে।

আপনি যদি শহরের সাংস্কৃতিক মূলে পৌঁছতে চান জানতে চান কীভাবে এটা বাস্তবের রূপ নিয়েছে তবে এই জায়গাগুলো অবশ্যই ঘুরে দেখুন। বাংলাদেশের বুকে গড়ে ওঠা এই স্থাপত্য বিস্ময়গুলো একদিনে হয়ে ওঠেনি কালের বিবর্তনে এগুলো আজ বিশ্ব সেরা হয়েছে। সংস্কৃতির উপর এই স্থাপত্যগুলোর প্রভাব অনেক। এমন আরও স্থাপত্য বিস্ময় সম্বন্ধে জানতে পড়তে থাকুন বিপ্রপার্টির ব্লগ। 

Write A Comment