Reading Time: 4 minutes

ব্যাংকিং এর ধারণাটি (যেমন টাকা জমা দেওয়া বা ডিপোজিট করা, টাকা ধার দেওয়া এবং তার উপরে সুদের হার নির্ণয় করা ইত্যাদি) শুরু হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৬ শতাব্দীতে যখন ধাতব মুদ্রার প্রচলন হয়। এরপর থেকে যত সময় গিয়েছে, নতুন নতুন সভ্যতা ব্যাংকিংকে যত আত্তীকরণ করেছে, ততই এই ধারণাটির উন্নতি ঘটেছে। তবে ব্যাংকিং খাতের রয়েছে কিছু সীমাবদ্ধতা। শিল্প বিপ্লবের সাথে সাথে ব্যাংকের বাইরেও নতুন নতুন ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন যেমন এনবিএফআই বা “নন-ব্যাংকিং ফিনান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন” এর উদ্ভব ঘটে। ব্যাংক ও এনবিএফআই দুটি প্রতিষ্ঠানই একই ধরনের সার্ভিস দিয়ে থাকে তবে তাদের সেই সার্ভিস দেওয়ার মেথড আলাদা। দেশের সেরা রিয়েল এস্টেট সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে এই লেখায় আমরা দেখব হোম লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক ও এনবিএফআই এদের মধ্যে কোনটি সুবিধা কেমন। অর্থাৎ এ লেখাটি হল বাংলাদেশে ব্যাংক ও এনবিএফআই -এর মধ্যে একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ।

ব্যাংক ও এনবিএফআই মধ্যে মিল-অমিল

ব্যাংক ও এনবিএফআই
ব্যাংক ও এনবিএফআই এর মধ্যে আছে মিল-অমিল

ব্যাংক এবং এনবিএফআই, কে কিভাবে হোম লোন ইস্যুকে হ্যান্ডেল করে তা জানার আগে আমাদের জানতে হবে ব্যাংক ও এনবিএফআই এর মধ্যে মূল পার্থক্য আর মিল কোথায়। তাহলে কিছু স্বাভাবিক বিষয় খুব সহজেই বোঝা যাবে।

মিলসমূহ

  • দুটো প্রতিষ্ঠানই একই উপায়ে তাদের প্রাইমারি সিকিউরিটিজ (যাতে ফাইন্যান্স করা হচ্ছে) সংগ্রহ করে এবং বিনিময় গ্রাহকদেরকে ডিমান্ড ডিপোজিট (যে অর্থটি কোনরকম পূর্বঘোষণা ছাড়া একজন গ্রাহক তুলে নিতে পারেন) অফার করে।
  • বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে ডিমান্ড ডিপোজিট তৈরি করে। অন্যদিকে এনবিএফআই ব্যাংকের মতো কোন ডিমান্ড ডিপোজিট তৈরি করে না । বরং তারা বিভিন্ন ধরনের ইন্ডিরেক্ট ডেবট প্রস্তুত করে এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে।
  • দুটো প্রতিষ্ঠান ধার দাতা এবং ধার গ্রহণকারীর মধ্যে একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে এবং নিজের লভ্যাংশ আয় করে।
  • দুটো প্রতিষ্ঠানই লিকুইড ফান্ড প্রোভাইড করে।

পার্থক্যসমূহ

  • বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের কাছে বন্ধক থাকা সম্পত্তি থেকে সরাসরি পণ্য সম্পত্তি একুয়ার করতে পারে। অন্যদিকে এনবিএফআই সরকারি নিয়ম নীতির কারণে এটি করতে পারে না তারা শুধুমাত্র লিকুইডিটি তৈরি করতে পারে।
  • ক্যাশ রিজার্ভ এর বেলায় দুটি প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ আলাদা।সকল বাণিজ্যিক ব্যাংকের একটি সর্বনিম্ন পরিমাণ ক্যাশ রিজার্ভ রাখতে হয়। অন্যদিকে এনবিএফআই এর ক্ষেত্রে এমন কোনো ধরাবাধা নীতিমালা বা আইন নেই।
  • লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে এনবিএফআই অধিক সুবিধাজনক কেননা তারা কম নীতিমালার মাধ্যমে আবদ্ধ। কিন্তু একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করতে হলে অনেক বেশি প্রসেসের মধ্যে দিয়ে আসতে হয়। 
  • এনবিএফআই ডিমান্ড ডিপোজিট গ্রহণ করতে পারে না তারা শুধুমাত্র বিনিয়োগ করতে পারে অথবা অর্থ ঋণ দিতে পারে।

বাংলাদেশে ব্যাংক ও এনবিএফআই – কীভাবে গৃহঋণ প্রক্রিয়াজাত করা হয়

stack of coins and miniature home
দুটো প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই আছে মিল ও অমিল

এ পর্যায়ে এসে আমরা এ দুটো প্রতিষ্ঠান কিভাবে গৃহঋণ প্রক্রিয়াজাত বা প্রসেস করে সে বিষয়ে আলোচনা করব। আগে যেমনটা বলা হয়েছে ব্যাংক এবং এনবিএফআই এর কার্যপ্রণালী ও পদ্ধতি আলাদা। তাই বলা যায় যে দুটো প্রতিষ্ঠান একজন মানুষের অভিজ্ঞতা অনেকটাই আলাদা হতে পারে। নিচে ব্যাংক ও এনবিএফআই এই দুটি অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হলো। 

সুদের হার 

গৃহঋণ বা যে কোন ধরনের ঋণ নিতে গেলে সবচেয়ে বড় নির্ণায়ক মাপকাঠিটি হলো “সুদের হার কত?” এই প্রশ্নের উত্তর। বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য সর্বোচ্চ সুদের হার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ কারণে ব্যাংকগুলো অনেক কম ইন্টারেস্টে লোন দিতে পারে। যদিও এনবিএফআই-গুলো চেষ্টা করছে সুদের হার কমিয়ে নিয়ে আসার, তবে বড় পার্থক্যটি এখনো দৃশ্যমান।

উদাহরণস্বরূপ আপনি যদি ডেলটা ব্রাক হাউসিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন লিমিটেড (DBH) থেকে লোন নিতে চান তাহলে সর্বনিম্ন যে ইন্টারেস্ট রেট তারা অফার করতে পারে তা হচ্ছে ১১%। যদিও বিপ্রপার্টির গ্রাহকেরা এক্সক্লুসিভলি ৯.৯৯% হারে লোন পান তবুও ব্যাংকের ইন্টারেস্ট রেট থেকে যা দৃশ্যতই ০.৯৯% বেশি।

প্রসেসিং টাইম

হোম লোনের জন্য প্রসেসিং টাইম আরেকটি ক্রুশিয়াল ফ্যাক্টর। অনেকেই এই দীর্ঘ এবং জটিল প্রসেসের কারণেই ব্যাংক থেকে হোম লোন নিতে ইচ্ছে প্রকাশ করেন না, পিছিয়ে আসেন এই চমৎকার সুবিধাটি থেকে। আবার ব্যাংকের ক্ষেত্রেও এত সহজে একটি লোন প্রসেস করা সম্ভব না, সেখানে চলে আসে অনেক নিয়মনীতি ও শর্তাবলীর বিষয়ে। যে কারণে একটি লোন পাস হতে সময় লেগে যায় অনেক বেশি। 

ব্যাংক বাদে অন্যান্য অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে এসব নিয়ম-নীতি অনেক ক্ষেত্রেই শিথিল। আবার বেশিরভাগ এনবিএফআই, কোন প্রজেক্ট এর খুব বেশি গভীরে গিয়ে চেক করে না। তাই কোন লোনের আবেদন করা থেকে শুরু করে সেই লোন পাশ হয়ে আসার ক্ষেত্রে এসব অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান অনেক দ্রুত প্রসেসিং এর কাজটি করতে পার।

নিয়ম ও শর্তাবলী

আগেই বলা হয়েছে কোন লোন প্রসেসিং এর সময় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কঠোর নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হয়। এছাড়া হোম লোন এর ক্ষেত্রে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিক বিবেচনা করতে হয়। আপনাকে হোম লোন দেওয়া সম্ভব কি-না সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের তথ্য নিয়ে থাকে এবং যাচাই-বাছাই করে থাকে। এসব তথ্যের মধ্যে আছে আপনার মাসিক আয় বয়স কাজের এক্সপেরিয়েন্স ইত্যাদি।

কিন্তু অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যারা হোম লোন দিয়ে থাকে, তাদের ক্ষেত্রে এসব নিয়ম-নীতি অনেকটাই শিথিল। এ কারণে তারা ভিন্ন ভিন্ন রূপে, ভিন্ন ভিন্ন ধরনের হোম লোনের ব্যবস্থা করতে পারে। 

তাই দেখা যাচ্ছে যে ব্যাংক ও এনবিএফআই উভয়ই একই ধরনের লোন দিতে পারে কিন্তু এর মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্যও রয়েছে। যদি আপনি কম ইন্টারেস্ট রেট খুঁজে থাকেন এবং সময় আপনার জন্য কোন ইস্যু না হয়ে থাকে তাহলে ব্যাংক লোন আপনার জন্যই। আর আপনার যদি লোনটি দ্রুত প্রস্থান করা প্রয়োজন হয় তাহলে নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউশনের দিকে যাওয়াটাই ভালো।

এখানে আমরা চেষ্টা করেছি বাংলাদেশে ব্যাংক ও এনবিএফআই নিয়ে একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ প্রদান করতে। কী কী মিল – অমিল রয়েছে, হোম লোন কীভাবে প্রসেস করা হয়, কেমন সময় লাগে ইত্যাদি। আপনার কোন কিছু জানার থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানাতে পারেন আমাদের। 

Write A Comment