ক্ষুদ্র বাড়ি বা মাইক্রো হোম বানানোর কনসেপ্টটি কিন্তু বেশ মজার। থাকার জন্য অল্প জায়গার মধ্যে একদম প্রয়োজনীয় কিছু ব্যবস্থা রেখে একটা বাড়ি বানিয়ে ফেললে কেমন হয় বলুন তো? অল্প জায়গা হলেও থাকবে না বাড়তি কোন ঝামেলা। একেবারে মিনিমালিস্ট জীবনযাপন। ঘর পরিষ্কারের কাজটাও হয়ে যাবে একেবারে সহজ। মাইক্রো-হাউজ এর এই ধারণাটি পৃথিবী জুড়ে খুব বেশি পরিচিত না হলেও, এরই মধ্যে এ ধরনের বেশ কিছু বাড়িও কিন্তু বানানো হয়েছে। যা বেশ পরিচিতিও পেয়েছে। আর এই তালিকার মধ্যে থাকা বিশ্বের ক্ষুদ্রতম ৫টি বাড়ি সম্পর্কে বিস্তারিত থাকছে আমাদের আজকের ব্লগে।
বিশ্বে যে হারে জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে, তাতে বসবাসের জায়গার কথা চিন্তা করলে ক্রমেই অনিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে যাওয়া এই পৃথিবীতে এরকম ক্ষুদ্র বাড়ি থাকার একটা ব্যবস্থা করা গেলে ভালোই হয় কিন্তু! কম জায়গাতেও যে থাকা যায়, এই ক্ষুদ্র বাড়িগুলো তারই এক একটি উদাহরণ। জাঁকজমকপূর্ণ বাড়ি কিংবা আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত থাকার জায়গার চাহিদা যখন দিনকে দিন বেড়েই যাচ্ছে, তখন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় যদি আপনার থাকার জায়গাটিও ঠিক এরকমই সীমিত জায়গার মধ্যে হয়, তবে কেমন হবে বলুন তো?
স্থান- ওয়েলস, ব্রিটেন
ওয়েলসের একটি শহর কোনওয়ে। এই শহরে রয়েছে ৬০ স্কয়ার ফুট আয়তনের ছোট্ট লাল রঙের এই বাড়িটি। কোনওয়ে শহরে ঘুরতে যাওয়া টুরিস্টদের জন্য এটি অন্যতম আকর্ষণীয় একটি স্থান। এই বাড়িটি ব্রিটেন এর সবচেয়ে ছোট বাড়ি হিসেবে পরিচিত। যার নাম ‘ক্যোয়ে হাউজ’। ১০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৬ ফুট প্রস্থের এই বাড়িটিতে একটি স্টোভ, ক্যাবিনেট, বিছানা এবং পানির ব্যবস্থা রয়েছে। ১৬শ শতক থেকে এখন পর্যন্ত অনেকেই এই বাড়িটির তত্ত্বাবধায়নে ছিলেন, এর মধ্যে ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতার একজন জেলে অন্যতম। তবে বর্তমান সময়ে আপনি যদি এই বাড়িটি দেখতে যেতে চান, তবে আপনাকে ১.৩০ ডলার খরচ করতে হবে ছোট্ট এই বাড়ির ভেতরটা উঁকি মেরে দেখার জন্য।
স্থান- রোম, ইতালি
ইতালির রোম শহরে অবস্থিত ৭৫ স্কয়ার ফুট এর এই বাড়িটি বিশ্বের ক্ষুদ্রতম ৫টি বাড়ির মধ্যে একটি। আর্কিটেক্ট এবং ডিজাইনার মার্কো পিরাজ্জি রোমান ল্যান্ডমার্ক থেকে কিছুটা দূরে এই পরিত্যাক্ত এক রুমের বাড়িটির খোঁজ পেয়েছিলেন। পরিত্যক্ত হলেও এখানে থাকার মতো বসবাসযোগ্য করা যাবে এমন সম্ভাবনা তিনি দেখেছিলেন ছোট্ট এই বাড়িটিকে ঘিরে। যেই ভাবা সেই কাজ। তিনি বাড়িটি কিনে নিলেন এবং ঠিকঠাক ভাবে মেরামত করে নিলেন। এরপর সন্তানের জন্মের আগ পর্যন্ত সস্ত্রীক তিনি এই বাড়িতেই থাকলেন। তবে বর্তমানে পিরাজ্জি ইতালির সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম এই বাড়িটি ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। রোমান হলিডে তে থাকার জন্য পিরাজ্জির এই বাড়িটি যেন অ্যাডভেঞ্চার থেকে কোন অংশে কম নয়। কেননা একটি বাড়িতে আরাম করে থাকতে যা যা জিনিস দরকার পরে, সেরকম প্রয়োজনীয় সব কিছুর ব্যবস্থাই তিনি এখানে রেখেছেন। একটি পরিপূর্ণ কিচেন থেকে শুরু করে, শাওয়ার এর ব্যবস্থা-সহ বাথরুম, ছোট একটি সোফা যা বিছানাতেও রূপান্তর করা যায় এমন এবং একটি এলইডি টিভি; ব্যাস থাকার জন্য আর কী চাই!
স্থান- অলিম্পিয়া, ওয়াশিংটন
সেন্ট্রাল আমেরিকার দেশ গুয়েতেমালা থেকে দারুণ এক ট্রিপ শেষ করে এসে ডি উইলিয়ামস নামের একজন নারী চিন্তা করলেন তিনি তার ১৫০০ স্কয়ার ফুটের বাড়িতে না থেকে, ৮৪ স্কয়ার ফুটের ছোট একটি বাড়িতে থাকবেন। যেই ভাবা সেই কাজ, বিশাল বাড়িটি থেকে বেরিয়ে এসে তিনি সত্যিকার অর্থেই ছোট একটি বাড়ি বানিয়ে ফেললেন। আর এই বাড়িটির ঠিকানা হল উইলিয়ামস এর এক বন্ধুর বাড়ির পেছনের অংশে বা উঠোনে।
‘দ্য লিটল হাউজ’ নাম দেয়া এই বাড়িটি বানাতে খরচ পড়েছে ১০ হাজার ডলারের মতো। তবে এর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কিন্তু এর চেয়েও অনেক কম। রান্নার কাজ করার জন্য এখানে রয়েছে একটি ছোট গ্যাসের ট্যাংক এবং বিদ্যুতের জন্য সোলার প্যানেল এর ব্যবস্থা, এসব কিছু মিলেও উইলিয়ামসকে এই বাড়িতে থাকার জন্য খুব বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়নি।
স্থান- এডিনবার্গ, স্কটল্যান্ড
পৃথিবী জুড়ে থাকা অদ্ভুত সব বাড়ি এর মধ্যে ১০০ স্কয়ার ফুটের এই ছোট এই বাড়িটি ‘ইকো কিউব’ নামে পরিচিত। আয়তনের হিসেবে ছোট হলেও এই বাড়িটিতে একটা ছোট লিভিং রুম, ডাইনিং রুম, কিচেন, ওয়াশার এবং ড্রায়ার, ক্লোজেট, শাওয়ার নেয়ার ব্যবস্থা, টয়লেট এবং বড় একটি বেড রাখার মতো জায়গা রয়েছে। এই বাড়িটির ডিজাইন করেছিলেন হার্টফর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের কিউব প্রজেক্ট এর ফাউন্ডার ড. মাইক পেজ। এই বাড়িটি বানানোর পেছনে তার লক্ষ্য ছিল এমন একটা বাড়ি বানানো যার প্রভাব পরিবেশের উপর তেমন কোন ক্ষতি তো করবেই না, বরং সেখানে অত্যাধুনিক সব ব্যবস্থাও থাকবে, সাথে আরামদায়ক বসবাসের ব্যবস্থা তো আছেই।
স্থান- সিটল, ওয়াশিংটন
ক্রিস এবং ম্যালিসা ট্যাক তাদের ১০৪ স্কয়ার ফুটের এই বাড়িটি নির্মাণ করেছেন সিটল শহরের ঠিক বাইরে। প্রযুক্তি শিল্পে কাজ করা তারা দুজনই মূলত প্রযুক্তি এবং বস্তুনির্ভর জীবন থেকে সরে এসে খুব ছোট এবং সাধারণ একটি বাড়ি বানানোর চিন্তাভাবনা করছিলেন। আর সেই চিন্তা থেকেই মূলত এই বাড়ি বানানো। যেখানে রয়েছে কিচেন, লিভিং রুম, ডাইনিং স্পেস, বাথরুম, স্টোরেজ এরিয়া এবং শোবার জায়গা। আর এই বাড়ির পেছনে খরচ হওয়া অর্থের পরিমাণও কিন্তু বেশি নয়, যা নিয়ে তারা দুজনেই বেশ খুশি।
আপনিও কি এরকম মাইক্রো হোম এর মালিক হতে চান? আপনার ভবিষ্যৎ বাড়িটি যদি এ ধরনের হয়, তবে কেমন হয় বলুন তো?