Reading Time: 4 minutes

মিনিমালিস্ট ডেকোর স্টাইলটি বিংশ শতাব্দীতে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই ইন্টেরিয়র ডিজাইনের মূল ধারণাই হল স্বল্প আসবাব ও ব্যবহার্য জিনিসে চমৎকারভাবে ঘর সাজানো। কীভাবে খুব কম জিনিসের ব্যবহারে মনোমুগ্ধকরভাবে ঘর সাজিয়ে নেয়া যায় তাই এই বিশেষ অন্তরসজ্জার মূলমন্ত্র। মর্ডান ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ক্ষেত্রে তাই এই মিনিমালিস্ট স্টাইলের রয়েছে বিশেষ চাহিদা।   

মিনিমালিস্ট ডেকোর স্টাইল কি? 

Bedroom

সহজ কথায় মিনিমালিস্ট ডেকোরের মাধ্যমে খুব স্বল্প জিনিসের ব্যবহারে চমৎকারভাবে অন্দরসজ্জা করে ফেলা যায়। অর্থাৎ এটি সবচেয়ে ব্যাসিক ডেকোর স্টাইল। অতিরিক্ত চোখে লাগে বা জটিল জিনিস যেমন বাহারী রঙের ব্যবহার, নানান আকৃতির তৈজসপত্র এবং শো-পিসকে সযতনে এড়িয়ে যাওয়া হয় মিনিমালিস্ট ডেকোর স্টাইলে। এই ডিজাইনটি মূলত খুবই সিম্পল এবং সাদামাটা কিন্তু তার সৌন্দর্য অনেক বিস্তৃত।

গোড়ার কথা

Chairs and tables

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ১৯২০ সালের দিকে স্থপতি ভ্যান ডার রোহ প্রথম মিনিমাল ডিজাইনের আইডিয়া উদাহরণসহ প্রদর্শন করেন। এরপর থেকেই মূলত ধীরে ধীরে মিনিমাল পেইন্টিং, বিভিন্ন আর্টিফ্যাক্ট এবং নকশা মিনিমালিস্ট ইন্টেরিয়র ডিজাইনের গতপ্রকৃতি ঠিক করে দেয়। ৬০এর দশকে বিমূর্ত এবং অতিরিক্ত প্রদর্শনমূলক নকশার ধারণা থেকে সরে আসতে শুরু করে। এর পরিবর্তে তারা খুবই সাদামাটা জ্যামিতিক আকৃতিই যে কাঙ্ক্ষিত নকশা অর্জনের পথে মূল পাথেয় তা উপলব্ধি করে। ফলস্বরূপ, বসবাসের স্থানকে অতিরিক্ত জিনিসপত্রের ভারে ভারী না করে খুবই অল্প আসবাব ও শো-পিসের মাধ্যমে সাজানোর দিকে অধিক মনোযোগী হতে দেখা যায় তাঁদের।

আপনার ঘরের জন্য মিনিমালিস্ট ডেকোর স্টাইল টিপস

এক কথায়, ঘর সাজানোর সময় সব ধরণের জটিল চিন্তা মাথা থেকে ফেলুন ঝেরে। মিনিমালিস্ট ডিজাইন মানেই হল, চোখের জন্য যত সহজ দেখতে ততই সুন্দর। ঘরে প্রচুর জায়গা থাকবে, আসবাব থাকবে কম। তবে জিনিস যাই থাকুক না কেন, এর ডিটেইল থাকবে চোখে পরার মতন। হোক তা ঘরের রঙ, পর্দার রঙ কিংবা যে কোন আসবাব। স্বল্প জিনিস থেকে  সর্বোচ্চ সৌন্দর্য বের করে আনাই হবে আপনার প্রধান লক্ষ্য। আর এ জিনিসগুলো হবে সবই আপুনার দৈনন্দিন জীবনের সাথে খাপ খাওয়ানো। অর্থাৎ মিনিমালিস্ট ডেকোর স্টাইল নিয়ে বলতে গেলে বলা  যায় দৈনন্দিন জীবনে সহজ ও সাধারণ সাদামাটা জিনিসগুলোকে নিয়ে অসাধারণভাবে ঘরের ইন্টেরিয়র নির্মাণই এই ডেকোর স্টাইলের মূল লক্ষ্য।

মূল উপাদানগুলো সম্পর্কে জানুন

আপনার ঘর যত বড় বা ছোটই হোক না কেন, মিনিমালিস্ট ডেকোরের জন্য আবশ্যিক হল ফ্রি স্পেস বা উন্মুক্ত স্থান থাকা। অতিরিক্ত আসবাবে পূর্ণ ঘর আপনার মিলিমালিজমের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করতে সক্ষম। তাই একান্তই আবশ্যক না হলে ঘরকে একাধিক ভাগে ভাগ করবেন না। চোখ বন্ধ করে চিন্তা করুন, ঘরকে কেমন দেখলে আপনার মন ভালো হয়? এবার সেভাবেই সাজিয়ে তুলুন। ঠিক কোন কোণ জিনিস আপনার অবশ্য অবশ্যই রুমে থাকা দরকার? সেগুলোকে রেখে বাকি  সব সরিয়ে ফেলুন রুম থেকে।  

কাঠ ও কংক্রিটের মধ্যকার সম্পর্ক অনুধাবন

A drawing room

কাঠের ফার্নিচার, ফ্লোর বা সিঁড়ির সাথে কংক্রিটের ধূসর দেয়াল সত্যিই চমৎকার একটি কম্বিনেশন। হলদে-খয়েরী একটি ওয়্যারড্রোব, খয়েরী লাইনিংজযুক্ত সিঁড়ি, হলদে ল্যাম্প আর এসবের সাথে কংক্রিটের গড়ে বা ধূসর রঙ, রুমের মিনিমালিজমকে বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। ঘরকে করে তোলে অভিজাত ও রুচিসম্মত।

প্রাকৃতিক কালার স্কিম

a toilet cabinet

মনের মত রুচিশীল ডেকোরের জন্য একজন মিনিমালিস্ট ঘরে অবশ্যই প্রাকৃতিক বা ন্যাচারাল রঙের ব্যবহার থাকবে। ফাঁকা থাকা স্থানের রঙের সাথে অবশ্যই মিল থাকতে হবে সাথে থাকা দেয়ালের। খুব স্বল্প পরিমাণে বাহারী রঙ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে তা অবশ্যই এমন হবে না যে দেখতে বাজে দেখায় কিংবা মূল ফোকাস সেই বাহারী রঙের দিকেই চলে যায়। 

সবুজ রঙ বৈচিত্র্যের ব্যবহার

মিনিমালিস্ট ডিজাইনে সবুজের ব্যবহার তো থাকবেই। গ্রে কালারের সাথে সবুজের মেলবন্ধনও হয় ভালো, যা চোখের জন্য প্রশান্তিময়। তাই যেখানেই সম্ভব সবুজের ছোঁয়া লাগিয়ে নেয়ার মধ্যেই লুকিয়ে আছে মিনিমালিস্ট ডেকোরের সার্থকতে। তবে হ্যা, খেয়াল রাখতে হবে তা যেন অতিরিক্ত হয়ে না যায়। অতিরিক্ত যে কোন কিছুই মিনিমালিস্ট ডেকোর স্টাইল ধারণাটির সাথে যায় না।  

নিজের এক টুকরো স্থান

a table, chair and a frame
বাড়ির মাঝে নিজের এক টুকরো জায়গা কিংবা পারসোনাল স্পেসের আকাঙ্ক্ষা থাকে সবারই। নিজের ভেতরের শৈল্পিক স্বত্বাকে বের করে আনতে এবং ক্রিয়েটিভিটিকে কাজে লাগাতে এমন একটি স্পেসের রয়েচ্ছে নিদারুণ প্রভাব। আর সেই স্পেসটি যদি হয় মিনিমালিস্টিক ডিজাইনে সাজানো, তাহলে এর থেকে ভালো আর কী হতে পারে? সবুজ পৃথিবী, মুক্ত আকাশ আর মেঘরাজির থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে মিনিমালিস্টিক ভাবে সাজিয়ে তুলুন আপনার সেই একান্ত স্থানটিকে। খুব বেশি কিছু না, লিভিং রুমের এক কোণে একটি আরামদায়ক চেয়ার, ছোট্ট একটি ডেস্ক আর আপনার ওয়ার্কিং ডিভাইসই কিন্তু গড়ে তুলতে পারে এমন একটি কমফোর্টেবল স্পেস! 

বাদামী রঙের খেলা

বাদামী শেড তথা ব্রাউনিশ তেক্সচারের সাথে ধূসর-সাদার কম্বিনেশনটা বেশ আনকমন এবং প্রশান্তিদায়ক। এটি মিনিমালিস্টিক যে কোন ডিজাইনের সাথে সুন্দর মানিয়ে যায়। সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে এমন কম্বিনেশন চোখের জন্য আরামদায়কই বটে! তাই ড্রয়িং রুম সাজতে পারে এই রঙবৈচিত্রে। কল্পনার রঙে আরেক নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে এর সাথে একটি সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড!

নিজের শৈল্পিক স্বত্বাকে কাজে লাগিয়ে খুব সাদামাটা ও স্বল্প জিনিসের ব্যবহারে অর্জন করা যেতে পারে মিনিমালিস্টিক ডেকোর স্টাইল এর সর্বোচ্চটি। এই ডেকোর স্টাইল আপনার ব্যক্তিগত রুচি ও আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবেও কাজ করে কখনো কখনো! 

Write A Comment