Reading Time: 3 minutes

ইন্টেরিয়র ডিজাইন এখন আর বিলাসিতা বা শখের বিষয় নয়, বরং প্রয়োজন। ঘরের ইন্টেরিয়রে নিজের ছাপ বা ভালো লাগা ছড়িয়ে রাখতে তাই অনেকেই পছন্দ করেন। বাড়ির একেকটি কোণা একেক রকম করে সাজিয়ে রাখতে কার না ভালো লাগে। ঘরের ইন্টেরিয়রের পাশাপাশি এখন অফিসেও ইন্টেরিয়র ডিজাইনের চর্চা হতে দেখা যাচ্ছে বেশ। সব অফিসই চায় ইন্টেরিয়রের মাধ্যমে নিজের উপস্থিতি সকলের সামনে রাখতে। যেমন নিজের বাড়িতে হোম ইন্টেরিয়রের মাধ্যমে ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলা যায় তেমনি অফিসেও সম্ভব। যেকোন কর্মক্ষেত্রেই নানারকম ব্যক্তিত্বের মানুষ কাজ করতে আসে। তাই অফিস ইন্টেরিয়র এমন হওয়া উচিত যেটা কম বেশি সবার সাথেই মানিয়ে যায়। কিন্তু বর্তমান সময়ে সবার জন্য উপযোগী এমন ইন্টেরিয়র করতে দেখা গিয়েছে। অফিস ডিজাইনে ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে অনেক। তা নাহলে একজন কর্মচারী তার কর্মক্ষেত্রের সাথে মানিয়ে নিবে কি করে? কর্মক্ষেত্রে যদি স্বাচ্ছন্দ্য অনুভূত না হয় তাহলে সেখানে কখনোই কাজ করে আরাম পাওয়া যাবে না। তাই চলুন জানা যাক, অফিস ডিজাইনে ব্যক্তিত্ব এর গুরুত্ব আসলে কতটুকু! 

অফিস ইন্টেরিয়রে  ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে যা যা করা সম্ভব  

অন্তর্মুখী এবং বহির্মুখী

অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্বের মানুষগুলো প্রাইভেসি পছন্দ করেন। নিরিবিলিতে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তাদের জন্য বসার ব্যবস্থা এমন করতে হবে যেন তারা কোনভাবেই অস্বাভাবিক বোধ না করেন। অফিসের ডিজাইন লোকেশন এমন হওয়া উচিত যেখানে সবরকম ব্যক্তিত্বের মানুষই যেন স্বস্তি খুঁজে পান। নতুবাতাদের জন্য অফিসের পরিবেশটাও হয়ে উঠবে কঠিন। অন্যদিকে রয়েছে বহির্মুখী ব্যক্তিত্বের মানুষগুলো যারা কিনা ওপেন অফিসের মত নতুন ধারার ইন্টেরিয়রেও বেশ সুন্দর ভাবে মানিয়ে নিতে পারে। আচমকা মিটিং বা যেকোন রকমের প্ল্যানিং এর জন্য তারা সবসময়ই প্রস্তুত থাকে। তাই তাদের জন্য অফিসের পরিবেশ হতে হবে আনন্দময় ও ওয়েলকামিং। 

ফেমিনিন 

অনেক কর্মক্ষেত্র রয়েছে যেখানে নারী কর্মচারীদের সংখ্যা বেশি। সে হিসেবে ইন্টেরিয়রটা এমন হতে হবে যেন নারীরা সেখানে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এবং এক রকমের সংযুক্তি অনুভব করেন। এক্ষেত্রে সুন্দর উজ্জ্বল রং ব্যবহার করা যেতে পারে। আসবাব বা দেয়ালের প্রান্তগুলো নমনীয়হতে হবে। প্রাথমিক রংগুলো বেছে নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। হালকা ও উজ্জ্বল রংগুলো এক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে। এই ব্যক্তিত্বটি নিরাপদ অনুভব করতে চায় সবসময় তাই ইন্টেরিয়রের দিকে সেটা খেয়াল করতে হবে। 

ম্যাসকুলিন 

গাড় রং, শক্ত প্রান্ত এবং দীর্ঘমেয়াদী ফেব্রিক যেমন লেদার এই সমস্ত উপাদান দিয়েই চাইলে তৈরি করা যাবে ম্যাসকুলিন ব্যক্তিদের জন্য ইন্টেরিয়র। ব্যক্তিত্বের সাথে মিলিয়ে ইন্টেরিয়র করা উচিত এতে করে সকল কর্মচারী তাদের কর্মক্ষেত্রের সাথে নিজেকে সংযুক্ত অনুভব করবে এবং কাজের একটা আনন্দ খুঁজে পাবে। 

হিউম্যান সেন্টার্ড ইন্টেরিয়র

এটার মানে হচ্ছে যারা আসলেই এখানে কাজ করে তাদের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করে একটা অফিস লে আউট তৈরি করা। তবে এর মানে এই নয় যে প্রতিটি কর্মচারীর চাহিদা অনুযায়ী ইন্টেরিয়র হতে হবে। তবে এমন একটি লে আউট তৈরি করতে হবে যা কম বেশি সকলের জন্যই সুবিধাজনক হবে। 

একান্তে কাজ করার জায়গা 

ঘরে শিশুর লেখাপড়ার ব্যবস্থা করুন ঠিক এই ভাবে । বিপ্রপার্টি

অধিকাংশ আধুনিক অফিসের লে আউট এমন ভাবে তৈরি করা হয়ে থাকে যেখানে ওপেন স্পেসে বসে সবাই মিলে মিশে কাজ করতে পারে। গতানুগতিক অফিস ইন্টেরিয়রের ভাবনা থেকে অফিস লে আউটে এসেছে নতুনত্ব। কিন্তু এই নতুনত্ব অনেকের কাছেই হয়ে উঠতে পারে কঠিন এক টাস্ক। অনেকেই ওপেন স্পেসে কাজ করতে ইতস্তত বোধ করেন। এমন পরিস্থিতি এড়াতে প্রতিটি অফিসেই “বুথ”, পডস এবং ছোট মিটিং রুমের ব্যবস্থা রাখতে হবে। যখনই ওপেন স্পেসে কাজ করতে একটু সমস্যায় পরা হবে তখনই এই নির্দিষ্ট স্পেসগুলো ব্যবহার করতে হবে। এই স্পেসগুলো সকল ব্যক্তিত্বের মানুষরাই ব্যবহার করতে পারবে। যখনই নিজের মত করে কাজ করার ইচ্ছে হবে এই স্পেসগুলো তাদের জন্য স্কেপরুম হিসেবে কাজ করবে।  

ব্রেক আউট বা বিরতি স্থান 

এই স্পেসটা প্রতিটি টিম বা ডিপার্টমেন্টের জন্য আশ্চর্যজনকভাবে কাজ করতে পারে। এই স্পেসগুলো রোজ ডেস্ক এবং কম্পিউটারের স্ক্রিন থেকে বাঁচার সুযোগ করে দেয়। দিনের একটা সময় যদি এখানে একটু সময় কাটানো যায় তা যেমন কর্মক্ষমতা বাড়ায় তেমনি কাজের মানও উন্নত করে। একটানা ডেস্কে কাজ করতে থাকলে তা যেমন একঘেয়ে লাগে তেমনি কাজের প্রতি অনীহা তৈরি হয়। তাই ব্রেক আউট স্পেসগুলো আপনাকে রিলাক্স করে তুলবে এবং কাজের জন্য নতুন করে উজ্জীবিত করবে। 

অফিস ডিজাইনে ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা 

কর্মক্ষেত্র এমন একটি জায়গা যেখানে নানারকম ব্যক্তিত্বের মানুষের আনোগোনা লেগেই থাকে। তাই সবাই যেন একটু স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে পায় সেই লক্ষ্যে ইন্টেরিয়রে থাকা চাই সকল ব্যক্তিত্বের সংমিশ্রণ। যখন কর্মচারীরা নিজেদেরকে স্বাচ্ছন্দ্যে খুঁজে পাবে তখনই আসলে কাজের ক্ষেত্রে তাদের সেরাটা বেড়িয়ে আসবে। যদিও এই পদক্ষেপটি একটু ব্যয়বহুল হতে পারে কিন্তু, এর ভবিষ্যৎ ফলাফল অবশ্যই লাভজনক। অফিস ইন্টেরিয়র যেমন কর্মক্ষমতা বাড়ায় তেমনি টার্নওভারও কমাতে পারে। সব দিক থেকেই অফিস ইন্টেরিয়র এখন প্রয়োজনীয় একটি বিষয়।   

অফিস ডিজাইনে ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলার অনেকগুলো কারণ রয়েছে যেগুলো যেকোন কর্মক্ষেত্রকে পৌঁছে দিতে পারে সাফ্যলের শিখরে। আপনারও যদি এমনটাই মনে হয়ে থাকে তাহলে কমেন্টে জানিয়ে দিন। 

Write A Comment