Reading Time: 4 minutes

অনেকে ভাবেন ইন্টেরিয়র ডিজাইন কেবলই ফেব্রিক, ফার্নিশিং এবং ঘরের সবকিছু সুন্দর আর পারফেক্ট করার ভেতরই সীমাবদ্ধ!  এবং বাকিরা ভাবেন ইন্টেরিয়র ডিজাইন কেবল টিভি সিনেমার ঘর বাড়ির মতই অবাস্তব বা শুধু টিভি স্ক্রিনের জন্যই উপযুক্ত। এতো গেল ইন্টেরিয়র ডিজাইন সম্পর্কে কিছু ছোট খাটো ভুল ধারণা। ইন্টেরিয়র ডিজাইন সম্পর্কে ভুল ধারণা আরও বেশ কিছু রয়েছে যেগুলো এখনো অনেকের মনের ভেতর গেঁথে আছে। ইন্টেরিয়র ডিজাইন সম্পর্কে ভুল ধারণা গুলো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হোম ডেকোর বা ইন্টেরিয়র ডিজাইনে প্রভাব ফেলে। আজকের ব্লগে আমরা চেষ্টা করবো, বেশ কিছু ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ভুল ধারণাগুলো তুলে ধরার  যেগুলো হয়তো আপনার সাথে মিলে যেতে পারে আর কিছু হয়তো নতুন করে জানবেন। চলুন তাহলে একে একে জেনে নেই ইন্টেরিয়র ডিজাইন সম্পর্কে ভুল ধারণা গুলো সম্বন্ধে!

ডাইনিং রুম
ইন্টেরিয়র ডিজাইনের সত্যি মিথ্যে কিছু ধারণা

“ইন্টেরিয়র ডিজাইনার নিয়োগ অনেক ব্যয়বহুল একটা প্রক্রিয়া”

ইন্টেরিয়র ডিজাইন সম্পর্কে ভুল ধারণা গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং বেশি প্রভাবিত করে যে ধারণাটি সেটা হচ্ছে, ইন্টেরিয়র ডিজাইন কেবল উচ্চবিত্তের সামর্থ্যে সম্ভব। কিংবা কেবল উচ্চবিত্তরাই ইন্টেরিয়র ডিজাইন করিয়ে থাকে। এটা পুরোটাই ভুল! কেননা, সকল বাজেটেই আপনি ইন্টেরিয়র ডিজাইনার নিয়োগ করতে পারবেন। ঘরের জন্য ইন্টেরিয়র ডিজাইন কাস্টমাইজও করা সম্ভব। সব রকম রুম ও সাইজের জন্য রয়েছে আলাদা বাজেট। আপনি চাইলেই ঘরের একটি দেয়ালে ইন্টেরিয়র ডিজাইন করতে পারেন আর বাকি ঘরের দেয়াল প্লেইন রাখতে পারেন। তাহলে, ইন্টেরিয়র ডিজাইনে যেমন কাস্টমাইজেশন আনা যায় তেমনি ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের ফী’তেও আনা যেতে পারে কাস্টমাইজেশন! 

“আমি নিজেই তো সব পারি, কেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার নিয়োগ করবো”

এই ধারণাটাও বেশ পুরনো আর প্রচলিত। অনেকেই মনে করেন ফর্ম, ফাংশন এবং রঙ নিয়ে তাদের যথেষ্ট জ্ঞান রয়েছে বলে তারা নিজেরাই বাসা বাড়ির ইন্টেরিয়র ডিজাইন করতে পারবেন।  আপনি কী চান, কীভাবে তা পাবেন সেই সকল মন্ত্র আপনার জানা থাকলেও, এমন কিছু মূল্যবান বিষয় বা তথ্য থাকে যা কেবল একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনারই জানবেন।  এমনকি কোন কাজটা করলে ভবিষ্যতে কেমন ফলাফল হবে সেটাও কিন্তু একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার আপনাকে জানাতে পারবেন। এছাড়াও ডিজাইনের ক্ষেত্রে কোন ম্যাটারিয়াল কোথায় ব্যবহার করবেন এবং এই সব ম্যাটারিয়াল কোথা থেকে সংগ্রহ করবেন সে বিষয়েও একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার আপনাকে গাইড করবেন।

“ইন্টেরিয়র ডিজাইন, শুধু বড় বড় স্পেসের জন্যই উপযুক্ত”

যদি আপনি মনে করে থাকেন যে, আপনার বাসা বা অফিস ইন্টেরিয়র ডিজাইন করানোর জন্য বেশ ছোট, আপনি অবশ্যই ভুল ধারণায় আছেন। কেননা, আপনার অবশ্যই একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের প্রয়োজন রয়েছে যে কিনা আপনার এই কম স্পেসের জায়গাটাকে যথাযথ ডিজাইনের মাধ্যমে ব্যবহারের দিক দিয়ে উপযুক্ত করে তুলবে। তাছাড়াও এমন অনেক ইন্টেরিয়র ডিজাইনার আছেন যারা ছোট স্পেসে কাজ করতে যেমন পছন্দ করেন তেমনই অক্লান্ত প্রচেষ্টা করে সেই ছোট স্পেসকেই পারফেক্ট বানিয়ে তোলেন।

“ইন্টেরিয়র ডিজাইনার তার নিজের মত করে ডিজাইন করে দেন, অ্যাপার্টমেন্ট মালিকের কথা তেমন শোনেন না” 

অনেকেই আছেন যারা ভাবেন, ইন্টেরিয়র ডিজাইনার তার নিজের মত করে ডিজাইন করে দিবেন, আমার পছন্দ অপছন্দ একদমই খেয়াল করবেন না! এমন ভাবনা থাকলে তা একদমই ভুল! কেননা, ইন্টেরিয়র ডিজাইন প্রফেশনালরা ক্লায়েন্টদের পছন্দ-অপছন্দ মাথায় রেখেই কাজে নামেন। তাদের কাছে ক্লায়েন্টের মতামত অনেক অর্থ বহন করে। কেননা, দিনশেষে সেই বাড়িটাতে থাকবেন আপনি। আপনার মতামত নিয়ে তবেই ঘরের সকল কাজ করা হবে তাই স্বাভাবিক।

বেডরুম
ঘরের প্রতিটি ইঞ্চির জন্য তাদের প্ল্যান তৈরি করতে হয়

“ইন্টেরিয়র ডিজাইন মানেই তো ডেকোর আর রঙ, এর বাইরে এ আর এমন কী”

অনেকেই ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা আসলে কী করেন সে বিষয়ে সন্দিহান! অনেকেই বিশ্বাস করে তারা কেবল ফেব্রিক, রঙ এবং ডেকোরেশন নিয়ে কাজ করেন, যদিও এটা পুরো সত্যি নয়! ফেব্রিক, রঙ এবং ডেকোরেশন ইন্টেরিয়র ডিজাইনের একটা ছোট অংশ। আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকে যেগুলো একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনারকে করতে হয় যেমন, স্পেস প্ল্যানিং, লাইট ব্যালেন্সিং, ডিজাইন ফাংশানালিটি, ওয়ারিং, প্লাম্বিং, বাথরুম এবং কিচেন ডিজাইন এবং জানালা ও দরজার পরিমাপ। এই সমস্ত বিষয়ে তাত্ত্বিক জ্ঞান ছাড়া কখনই একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার কোনো প্রজেক্টে হাত দেন না। ঘরের প্রতিটি ইঞ্চির জন্য তাদের প্ল্যান তৈরি করতে হয়। 

“ইন্টেরিয়র ডিজাইন মানেই ঘরের সব পুরনো কিছু বাতিল করে দেয়া”

মর্ডানাইজেশন আর ডিজাইন দুটো সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস। ইন্টেরিয়র ডিজাইন করা মানে এই নয় যে আপনার ব্যবহৃত জিনিসপত্র বাতিল করে নতুন কিছু বেছে নিতে হবে। মডার্ন ট্রেন্ডস থেকে আইডিয়া বা উৎসাহ নেয়া মন্দ কিছু নয় কিন্তু, একটি ভালো ইন্টেরিয়র ডিজাইন সবসময়ই চিরন্তন। তাই নতুন ফার্নিচার বা জিনিস কেনার চিন্তা আর নয়।  

“ইন্টেরিয়র ডিজাইন কেবল বাসা বাড়ির জন্য”

ইন্টেরিয়র ডিজাইন মানেই শুধু বাসা বাড়ির ডিজাইনই করা হয়ে থাকে যা আসলে সত্যি নয়। এখন বাসা বাড়ির পাশাপাশি অফিস এবং কমার্শিয়াল স্পেসেও ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হায়ার করা হচ্ছে। এখন বাসা বাড়ির পাশাপাশি ইন্টেরিয়র ডিজাইন অফিস বা বিভিন্ন কমার্শিয়াল স্পেসে জরুরী হয়ে পড়েছে। সকলেই চান নিজের একটা স্টাইল অফিস বা কমার্শিয়াল স্পেসে থাকুক। তাই খুব শীঘ্র আমাদের এই সকল ইন্টেরিয়র ডিজাইন সম্পর্কে ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এটা না বললেই নয়, যেকোন স্পেস যদি ইন্টেরিয়র ডিজাইনের দিক থেকে সুসজ্জিত এবং রুচিশীল হয় তা  আপনার বস কিংবা কাস্টমারের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।  

“ঘরের সৌন্দর্যে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের প্রয়োজন নেই”

এতে কোন সন্দেহ নেই যে আমরা যেখানে বসবাস করি তা আমাদের মানসিকভাবে বেশ প্রভাবিত করে। তাই আপনি যেখানে রাতে গিয়ে ঘুমোবেন বা সকালে উঠে নাস্তা করবেন কিংবা পরিবার নিয়ে সময় কাটাবেন সে জায়গাটাও কিন্তু সুন্দর আর মনের মত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। সঠিক স্পেস আপনাকে ইতিবাচক মনোভাব যেমন এনে দিবে তেমনি উৎসাহিত করবে একটি নতুন দিনের জন্য! 

হতে পারে ইন্টেরিয়র ডিজাইন মৌলিক কোন চাহিদা নয় কিন্তু, ঘরের সাজে ইন্টেরিয়র ডিজাইন ব্যবহার করে আমরা চাইলে লাভবান হতেই পারি, তাইনা? ইন্টেরিয়র ডিজাইন সম্পর্কে ভুল ধারণাগুলো বদলে গেছে কিনা তা জানাতে কমেন্ট করুন। কিংবা আমি কোনটা ভুলেও গিয়েছি কিনা সেটাও লিখুন!

Write A Comment