প্রতিটা বাড়িরই নাকি নিজস্ব গল্প আছে! আর এই গল্পগুলো প্রতিটা মানুষের মতই আলাদা। ঘরের একেক কোণায় লুকিয়ে আছে আমাদের অসংখ্য ভালো লাগা মন্দ লাগা। ঘরের কোন দেয়ালে যেমন জীবনের পাওয়াগুলোকে ফ্রেমে বাঁধাই করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে আবার কোথাও, শখের পর্দা দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছে উত্তরের দেয়ালটিকে। ডাইনিং এর জায়গা বাচাতে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যাডজাস্টেবল ডাইনিং টেবিল। বাড়ির গল্প বলুন আর সমাধান সবকিছুই কিন্তু, আমরা একটি পাত্রে রেখে পরিবেশন করি, আর এই পাত্রগুলোই যেন একেকটা স্টাইল। নিজের গল্পগুলোকে পছন্দের স্টাইলে পরিবেশন করতেই আমরা বেছে নেই একেকটি স্টাইল। যেমন আজকের গল্প বলার জন্য যে স্টাইলটা বেছে নেওয়া হয়েছে, সেটা হচ্ছে কনটেম্পোরারি ডেকোর স্টাইল । কনটেম্পোরারি ডেকোর স্টাইল এর খুঁটিনাটি জানা যাক।
কনটেম্পোরারি ডেকোর স্টাইলটা আসলে যেমন!
মডার্নিজম কনসেপ্ট থেকেই মূলত কনটেম্পোরারি ডেকোর স্টাইল টা এসেছে। সে কারণেই হয়তো এই ডেকোর স্টাইলটা এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মর্ডান ডেকোর যেমন শীতল একটা অনুভব দিয়ে থাকে তেমনি, এই কনটেম্পোরারি ডেকোর স্টাইল টা ঠিক বিপরীত। ঘরের ভেতর উষ্ণ একটা আমেজ এনে দেয় এই ডেকোর স্টাইলটা। কনটেম্পোরারি ডেকোর স্টাইল বরাবরই ছিমছাম আর সতেজ। তবে এই স্টাইলটা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে বর্তমান ট্রেন্ড থেকে খুঁটিনাটি নিয়ে নিয়মিত আপডেটেড হয়ে থাকে। তাই হয়তো এটা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ইন্টেরিয়র ডিজাইন স্টাইল।
কনটেম্পোরারি ডিজাইন স্টাইলের ইতিহাস
১৯ শতকের দিকে বেশ কিছু মানুষ ট্র্যাডিশনাল ডেকোর স্টাইল থেকে বেড়িয়ে এসে নতুন ও উদ্ভাবনী স্টাইল বা ডিজাইন বেছে নিতে শুরু করলেন। কিন্তু, আজকের এই কনটেম্পোরারি ডিজাইন স্টাইলটা ঠিক ৭০ শতক থেকে যাত্রা শুরু করে । শুরুর দিকে এই স্টাইলটা নিজের কোন ছায়া খুঁজে না পেলেও ধীরে ধীরে মর্ডানিজাম, ডেকো আর্ট ও ফিউচারিজমের মত স্টাইলগুলো থেকে অনুপ্রাণিত হতে শুরু করে।
কনটেম্পোরারি ইন্টেরিয়র স্টাইলের মূল মন্ত্র
মিনিমালিস্টিক কনসেপ্টে কনটেম্পোরারি ডেকোর করা হয়ে থাকে বলে সহজেই এই স্টাইলে স্বাচ্ছন্দ্য ও উষ্ণতা খুঁজে পাওয়া যায়। এই স্টাইলে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ রং, স্পেস এবং আকৃতির দিকে দেওয়া হয়েছে বলে, কনটেম্পোরারি ডেকোর স্টাইল এ সবসময়ই সতেজ ভাব বিরাজ করে থাকে।
নিউট্রাল রঙ
নিউট্রাল রঙগুলো এই স্টাইলের ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। কেননা এই রঙের উপর আপনি ইচ্ছে মত কনটেম্পোরারি ডেকোর ব্যবহার করতে পারবেন। সাদা, বাদামী এবং বেইজ রঙগুলো বেশ জনপ্রিয়।
ক্লিন লাইন
কনটেম্পোরারি ডেকোর স্টাইলের অন্যতম আকর্ষণীয় একটি উপাদান। আর এই উপদানকে ডেকোরে ফুটিয়ে তুলতে সোজা বা হোরাইনজন্টাল লাইন ব্যবহার করার পাশাপাশি কার্ভড বা বাকানো শেইপও ব্যবহার করা যায়।
ওপেন স্পেস
আর ওপেন স্পেস হচ্ছে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যেকোন আধুনিক স্টাইলে ওপেন স্পেস রাখাটা বেশ জরুরী। ওপেন স্পেস কেবল চলাচলের জন্যই জায়গা দেয় না বরং ডেকোরে মিনিমালিস্ট ভাব এনে দেয়।
উজ্জ্বল ইন্টেরিয়র
কনটেম্পোরারি ডেকোর স্টাইলে লাইট খুব রুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রাকৃতিক আলো এবং কৃত্রিম আলোর সংমিশ্রণটি ঘর আলোকিত করতে অনায়াসে ব্যবহার করা যেতে পারে।
উষ্ণতা
এই ডেকোরে স্টাইলে উষ্ণ এবং আন্তরিক একটা অনুভূতি পাওয়া যায়। প্যাস্টেল রঙের আরামদায়ক আসবাবের ব্যবহারের সাথে ঘরের ভেতর কনটেম্পোরারি ডেকোর স্টাইলটা সহজেই ফুটিয়ে তোলা সম্ভব।
যেভাবে কনটেম্পোরারি ডেকোর স্টাইল ফুটিয়ে তুলবেন
আমরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সম্বন্ধে আলোচনা করেছি যেগুলো ব্যবহার করেই মূলত কনটেম্পোরারি ডেকোর স্টাইলটা তৈরি করা হয়েছে। তাই এখন আমরা দেখবো কীভাবে ঘরের ভেতর কনটেম্পোরারি ডেকোর স্টাইল ফুটিয়ে তোলা যায়।
কনটেম্পোরারি আসবাব
এই ডেকোরের আসবাবে কোনরকম অলংকরণ থাকবে না। মিনিমাল সাজসজ্জার উপর জোড় থাকবে বেশি। এই ডেকোরকে ঘরের ভেতর ফুটিয়ে তুলতে আসবাবে ক্লিন লাইন থাকা অত্যন্ত জরুরী। এবং ঘরের ভেতর খোলামেলা ভাব রাখুন।খুব বেশি আসবাব রেখে জায়গা বন্ধ করবেন না।
বোল্ড অ্যাকসেন্ট
নিউট্রাল রঙের দেয়ালের সাথে উজ্জ্বল বা বোল্ড রঙের অনুষঙ্গ বেছে নিন। উদাহরণে বলা যেতে পারে, পেছনে যদি নিউট্রাল রঙের দেয়াল থাকে এক্ষেত্রে উজ্জ্বল রঙের সোফা বা ফুলদানি ব্যবহার করা যেতে পারে।
উন্মুক্ত (Exposed) ম্যাটেরিয়াল
এই উন্মুক্ত ম্যাটেরিয়ালগুলো কনটেম্পোরারি ডেকোর স্টাইলের অনেকটাই ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করে। দেয়ালে ইটের কাজ বা প্লাম্বিং পাইপ উন্মুক্ত করার মাধ্যমেও হতে পারে।
মেটালের অনুষঙ্গ
মেটালের জিনিসপত্রগুলো বেশ সুন্দরভাবেই ডেকোর স্টাইলে ব্যবহার করা যায়। বেশ সহজেই মানিয়ে যায়। কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স থেকে শুরু করে বাথরুম ফিটিংস সবকিছুতেই ব্যবহৃত হয় মেটাল। এমনকি ছবির ফ্রেমেও নিঃসন্দেহে ব্যবহার করা যেতে পারে মেটালের ফ্রেম।
মসৃণ ফ্লোর
কনটেম্পোরারি ডেকোর স্টাইলের মেঝে অবশ্যই হতে হবে মসৃণ। টাইলস এবং উডেন ফ্লোর হলে বেশি মানিয়ে যায়। আপনি চাইলে কার্পেট ব্যবহার করতে পারেন। তবে খেয়াল করবেন যেন কার্পেট বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে।
রিসেসড লাইট
রিসেসড লাইটগুলি কেবল ঘর আলো করতেই ব্যবহার কয়া হয়ে থাকে না, বরং ডেকোরেশন পিস হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়। এই লাইটগুলো ঘরের সাজে যেমন যুক্ত করা যায় তেমনি কোন আর্ট ওয়ার্ক হাইলাইট করার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যায়।
আর্ট ওয়ার্ক
কনটেম্পোরারি ডেকোরকে ফুটিয়ে তুলতে কনটেম্পোরারি আর্ট ওয়ার্ক তো লাগবেই। স্টাইল ও আর্ট ওয়ার্ক একই হলে ঘরের ভেতর ফুটে ওঠে অন্য আমেজ।
এই ডেকোর স্টাইলটি সত্যি অর্থেই বেশ স্টাইলিশ দেখেই এটা কেড়েছে এত মানুষের মন। ঘরের ভেতর উষ্ণ ও আন্তরিক আমেজ তৈরি করতে পারে বলে এই ডেকোর স্টাইলটা সবার প্রিয়।