একটি শহর বা গ্রামকে প্রাণবন্ত করতে বা রাখতে তার যোগাযোগ বা পরিবহন ব্যবস্থার অনেক বড় অবদান রয়েছে। এমনকি অর্থনীতির চাকা সচল রাখতেও এই রাস্তাঘাটের ভূমিকা অনেক বেশি। এই পথগুলো কি শুধুই সড়ক আমাদের কাছে? মোটেও না! এই রাস্তার পাশেই গড়ে উঠেছে এক একটি জীবন। ফুটপাথগুলো জীবনের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ঢাকা শহরের রাস্তার ফুটপাথগুলোতে লুকিয়ে থাকে নানা গল্প। এক রাস্তার মোড় থেকে অন্য রাস্তার মোড়ে পৌছাতে খুঁজে পাওয়া যায় জীবন আর জীবিকা। চলুন এমনই ঢাকা শহরের প্রধান কয়েকটি সড়ক সম্বন্ধে আজ জানা যাক।
সদরঘাট-গাবতলী রোড
এই শহরের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত, সদরঘাট-গাবতলী রোড, যা সবার কাছে মোহাম্মদপুর বেরিবাধ নামে পরিচিত। এই রাস্তাটি পুরান ঢাকাকে গাবতলীর সাথে সংযুক্ত করার পাশাপাশি জাতীয় মহাসড়কের আওতায় এনেছে। এই সড়কটি দেখতে খুব সহজ আর আঞ্চলিক সড়ক মনে হলেও আসলে এটা মহাসড়ক। কিন্তু, যোগাযোগ ব্যবস্থায় এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এই সড়কের ফলে পুরান ঢাকা থেকে মালামাল সদরঘাটের মাধ্যমে দেশের উত্তরাঞ্চলে পাঠানোর সুযোগ পায়। এই সড়কের ফলে বসিলা, সংকর, রায়ের বাজার, হাজারীবাগের মত এলাকা গুলো দ্রুত গতিতে উন্নত হচ্ছে। জীবন যাত্রার মান উন্নত হচ্ছে। যার ফলে এই এলাকাগুলোতে বাসিন্দাদের ভিড় হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। যাতায়াত সুবিধা সবচেয়ে বড় একটি অংশ থাকার জন্য লোকেশন বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে।
মিরপুর রোড
নিউমার্কেট থেকে মিরপুর ১০ ঢাকার অন্যতম একটি ব্যস্ততম সড়ক। এই সড়কটা ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পথ । কেননা, শহরের বিখ্যাত কিছু এলাকা রয়েছে এর পূর্ব পাশে। যেমন, আজিমপুর, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর এবং মিরপুর। শহরের অন্যতম ব্যস্ত সড়ক বলা হয় এই মিরপুর রোডকে। সপ্তাহের ছুটির দিন ছাড়া বাকি ৫ দিন এই সড়কে রাজ্যের ট্র্যাফিক থাকে। অফিসগামী মানুষ থেকে শুরু করে স্কুল ছাত্র সকলেই এই সময়টাতে যাতায়াত করে। এই সড়কে কি নেই! অসংখ্য অফিস, ব্যাংক, শোরুম, শপিংমল, হাসপাতাল, রেস্তোঁরা এবং গ্যাস স্টেশন ইত্যাদি। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও রয়েছে যেমন, নিউ মার্কেট, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন (গণভবন), আসাদ গেট এবং শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম। এমন কি এই সড়কের মাধ্যমে আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি রমনা, সেগুনবাগিচা, গুলিস্তান এবং মতিঝিলের দিকেও যেতে পারছেন। এমনকি গাবতলীর মোড়ে, এটি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের দিকেও নিয়ে যায়। সুতরাং মিরপুরের এই সড়ক অনায়াসে বেশ সুবিধাজনক একটি পথ।
কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এড়িয়ে থেকে বিজয় সরণি মোড় পর্যন্ত এই সড়কটি প্রসারিত। ঢাকা শহরের প্রধান কয়েকটি সড়ক এর মধ্যে এই কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ অন্যতম। মতিঝিল থেকে বাস আবদুল্লাহপুর রুটের জন্য রওনা হয়। হাজারো মানুষ রোজ এই বাস ব্যবহার করে যাতায়াত করে থাকে। এই সড়কের ফলে এটা একটা জমজমাট কমার্শিয়াল স্পেসে পরিণত হয়েছে। কি নেই এখানে! প্রচুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারী হাসপাতাল, অসংখ্য শপিংমল এবং রাস্তায় অবস্থিত অনেক রেস্তোঁরা সচকিছুই নাগরিক জীবনের আকাঙ্ক্ষিত উপকরণ। কিছু সময়ে এই রাস্তা একদম রোবটের মত ছুটে বেড়ায় আবার কিছু সময় একদম ট্র্যাফিকে দাঁড়াতে থাকে। কিন্তু, এই রাস্তা ছাড়া জীবন যেন অচল। এমনকি শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত চৌরাস্তা এই সড়কের মাধ্যমেই পাওয়া গিয়েছে। টিএসসি মোড়, শাহবাগ মোড়, সোনারগাঁও হোটেল মোড় এবং সবচেয়ে বড় কথা ফার্মগেট মোড় যেটা সবচেয়ে বড় বাস স্টপ। এবং এখানেই হচ্ছে মেট্রোরেলের মত উন্নয়ন প্রকল্প। এখনই এই মেট্রো রেল নির্মাণ হচ্ছে যার দরুণ এই পথে চলাচল করা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে কিন্তু খুব শীঘ্রই এই সড়ক হতে যাচ্ছে ঢাকাবাসীদের জন্য যাতায়াতের এক অনন্য পথ।
মগবাজার রোড
এই সড়কটি কাকরাইল সার্কেল থেকে শুরু হয়ে মহাখালী কাঁচা বাজার পর্যন্ত বিস্তৃত। এটা ইস্কাটন, সিদ্ধেশ্বরী, মগবাজার, এবং তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল সহ অসংখ্য অঞ্চল জুড়ে রয়েছে। তেজগাঁয়ের অনেক কারখানার জন্য এই সড়কে যানজট লেগেই থাকে। রাস্তা সংলগ্ন বিশাল ট্রাক ডিপোও রয়েছে, কেননা, ক্রস কান্ট্রি ট্রাকওয়ালের জন্য এটি একটি জনপ্রিয় রাস্তা। সারা দেশের উদ্দেশ্যে এখান থেকে ট্রাক ছেয়ে যায়। তেজগাঁও একটি সমৃদ্ধ এলাকা। কমার্শিয়াল সেক্টর সহ নানা বিখ্যাত ব্র্যান্ডের কার্যালয় রয়েছে এখানে। মগবাজার রোডে রয়েছে মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভার, আর একটি ফ্লাইওভার যা বাংলামোটর, তেজগাঁও, কারওয়ান বাজার এবং মৌচাককে সংযুক্ত করে। এই ফ্লাইওভার হওয়াতে এখানের সেই চরম যানজট কিছুটা কমেছে। এই সড়কটি নতুন বিমানবন্দর রোড পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে যা ঢাকা- ময়মনসিংহ হাইওয়ের অংশ।
আজকের এই ব্লগটি ঢাকার প্রধান সড়কের দ্বিতীয় সিরিজের প্রথম অংশ। আগামী ব্লগে আমরা মিরপুরের বেগম রোকেয়া সরণি এবং হাতিরঝিল সহ ঢাকার আরও বড় ও বিখ্যাত সড়ক গুলো নিয়ে লিখব। তার আগে ব্লগগুলো পড়তে থাকুন।