ঢাকা শহরবাসীর শতকরা ৮০ শতাংশ মানুষই ভাড়া বাসায় থাকেন। এই অবস্থা যে শুধু রাজধানী ঢাকাতে তাই নয় বরং অন্যান্য প্রধান নগরগুলিতেও খুব কম মানুষই তাদের নিজস্ব অ্যাপার্টমেন্ট অথবা বাসায় থাকার মত সৌভাগ্যবান। জীবনযাত্রার মান হিসেবে যতই তৃতীয় বিশ্বের দেশ হোক না কেন, জীবনযাত্রার খরচ বাংলাদেশে অনেক উন্নত দেশ থেকেও বেশি। এবং এ কারণেই দেখা যায় বাসার মালিকেরা বেশিরভাগ সময় তাদের ভাড়াটিয়াদের উপর নানারকম দাবি জোরজবরদস্তি করে চাপিয়ে দিতে পারেন অথবা দেনও। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভাড়াটিয়াদের হাতে কোন অপশন থাকে না এবং বিনাবাক্যব্যয়ে তারা বাড়ির মালিকের দাবি করা বাড়তি ভাড়াসহ সকল ন্যায্য বা অন্যায্য দাবি মেনে নিতে বাধ্য হন। অ্যাডভান্স ছাড়া বাসা ভাড়া পাওয়া প্রায় স্বপ্নের মত ব্যাপার কিন্তু কখনো কখনো এই অ্যাডভান্সের পরিমাণ সীমা ছাড়িয়ে যায়। বাড়িওয়ালারা সুযোগ বুঝে ৩ বা ৪ মাসের অগ্রিম ভাড়া দাবি করে বসেন। আবার অনেক ভাড়াটিয়াকে বিনা নোটিশে বা স্বল্প সময়ের নোটিশেও বাড়ি ছাড়া করেন অনেক বাড়ির মালিক। মোটকথা অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় বাড়ির মালিকেরা কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেন না। আর এমন সময়েই উঠে একজন ভাড়াটিয়া হিসেবে আপনি কতটুকু সচেতন সেই প্রশ্নটি। আপনি কি বাংলাদেশের বাড়ি ভাড়া আইন সম্পর্কে জানেন?
আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে বাংলাদেশে কোন বাড়ি ভাড়া আইন বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ নেই যা এমন পরিস্থিতি থেকে ভাড়াটিয়াদের রক্ষা করতে পারে। বিষয়টি সত্য নয়, বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১ অনুযায়ী, একজন ভাড়াটিয়া হিসেবে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি আপনার অবশ্যই জেনে রাখা উচিত। এর ফলে ভবিষ্যতে উদ্ভূত যে কোন ধরণের পরিস্থিতি আপনি মোকাবেলা করতে পারবেন আইনীভাবে।
বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত লিখিত চুক্তি
আইনের চোখে মৌখিক কোন কিছুর মূল্য নেই। যেকোন আইনী পদক্ষেপ নিতে গেলে আপনার অবশ্যই প্রয়োজন পড়বে একটি লিখিত চুক্তিপত্রের। এই চুক্তি ছাড়া যে কোন ভাড়াটিয়া আইন অনুযায়ী তার প্রাপ্যতা থেকে বঞ্চিত হবেন। যদিও বর্তমান বাস্তবতায় প্রায় ৯০% বাড়িওয়ালাই এমন চুক্তিপত্র প্রদান করতে চান না। আবার প্রাপ্যতার সল্পতার কারণে ভাড়াটিয়াও খুব বেশি জোর করতে পারেন না লিখিত চুক্তিপত্রের জন্য। সুতরাং উভয়ই একটি মৌখিক চুক্তির উপর নির্ভর করেন এবং বাড়িওয়ালা এই ‘লিখিত চুক্তি না থাকার’ সুবিধাগুলি উপভোগ করেন। দেখা যায় যা অনেক ক্ষেত্রেই অনৈতিক হয়ে থাকে।
তবে, এমন একটি চুক্তি উভয়পক্ষের জন্য উপকারী এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একটি চমৎকার উপায়। তাই আপনি যদি বাড়িওয়ালা হোন তবে বাড়ি ভাড়া আইন অনুসারে আপনার অবশ্যই উচিত ভাড়াটিয়াকে চুক্তিপত্র সরবরাহ করা। ভাড়াটিয়া হিসেবেও আপনার দায়িত্ব এমন একটি লিখিত চুক্তিপত্রের বিষয়টি নিশ্চিত করা উচিত কেননা এটি আপনার ন্যায্য পাওনা এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি দলিল।
বাড়ি ভাড়া আইন অনুসারে ভাড়া প্রাপ্তির রশিদ আদায় বাধ্যতামূলক
এরপরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দলিলটি হল ভাড়া প্রাপ্তির রশিদ। প্রত্যেক বাড়িওয়ালা ভাড়া আদায়ের সময় ভাড়াটিয়াকে একটি ভাড়া প্রাপ্তির রশিদ দিতে বাড়ি ভাড়া আইন অনুযায়ী আইনগতভাবে বাধ্য। অন্যদিকে ভাড়াটিয়া হিসেবে এটি আপনার প্রাপ্যও বটে। উপরে যে লিখিত ডকুমেন্টের কথা বলা হয়েছে, এই ভাড়া প্রাপ্তির রশিদই একমাত্র ডকুমেন্ট যা প্রমাণ করে যে আপনি নিয়মিতভাবে প্রতি মাসে ভাড়া প্রদান করেছেন। কোন বাড়ির মালিক যদি ভাড়ার রশিদ দিতে অস্বীকৃতি জানান তবে তা আইনের ২৭ নম্বর ধারা অনুসারে দন্ডনীয়। এটি সাধারণত আর্থিক দন্ড হিসেবে বিবেচনা করে মালিকের কাছ থেকে জরিমানা হিসেবে আদায়যোগ্য।
নির্বিচারে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিধিনিষেধ
একই আইনের ৭ নং ধারা অনুসারে, উপযুক্ত কারণ ছাড়া বাড়িওয়ালা কোনভাবেই ভাড়া বৃদ্ধি করতে পারবেন না। আইন বলছে যে, কোন প্রপার্টির জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড ভাড়া নির্ধারিত করা থাকবে। এরপর যে কোন সময়, যে কোন পরিমাণে তা বাড়ানো যাবে না বরং এটি নির্দিষ্ট আইন মেনে বাড়াতে হবে। উপরিল্লিখিত ভাড়ার রশিদের কার্যকরীতা এখানেই আসে। আপনি যদি মন করেন অন্যায় ভাবে আপনার ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে তবে তা প্রমাণ করার জন্য ভাড়ার রশিদ প্রয়োজন। এমন একটি রেন্টাল রশিদ দেখিয়ে আপনি কত ভাড়া দিচ্ছেন, কবে থেকে দিচ্ছেন তা প্রমাণ করা সম্ভব। তাই রশিদটির গুরুত্ব অন্যরকম। এছাড়া এই আইনটিই আপনাকে ভাড়াটিয়া হিসেবে নিরাপত্তা দেয় বিনা নোটিশে বাড়ি ছাড়ার মতন কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার হাত থেকে।
বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে ভাড়াটিয়া বা বাড়িওয়ালা আপনার ভূমিকা যা-ই হোক না কেন, বাসা ভাড়া নেয়ার আগে দুই পক্ষেরই কিছু দায়িত্ব পালন করা উচিত। ভাড়াটিয়া হিসেবে আপনার দায়িত্ব বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত আইন সম্পর্কে জানা। একজন বাড়ির মালিকের কর্তব্য সেই আইন অনুসারে সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া। দু’পক্ষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলেই ভবিষ্যতে যেকোন জটিলতা পরিহার করা সম্ভব। আর ঢাকায় বাড়ি ভাড়া নেয়ার জন্য সবচেয়ে ভাল সমাধান হল বিপ্রপার্টি রেন্টাল সার্ভিস।
2 Comments
Dear Concern
Can you please confirm me there was any law for vacating house i.e. how many months I have stay etc.?
Good day, sir. The rental scene of Bangladesh is moderated by the Premises Rent Control Act, 1991 in Bangladesh but it does not mention how long a person would have to stay at a premises before they can vacate. As such, a resident can vacate anytime they deem necessary given they notify one or two months before the intended leaving date, set as per the rental agreement