১৯৯৪ সালের ১৫ই মে থেকে প্রথমবারের মত বিশ্ব পরিবার দিবস পালন করা শুরু হয়। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের নিজেদের মধ্যে আত্মিক সম্পর্ক আর পুরনো স্মৃতি রোমন্থনই এই দিনকে পালন করার মূল উদ্দেশ্য বলে ধরা হয়। এখনকার কোভিড ১৯ মহামারীর মাঝে যা আরও বেশি বাস্তব ও কার্যকর। পৃথিবীর সকল স্থানে এই দিনকে উদযাপনকারী মানুষেরা ভিন্ন ভিন্ন পরিবারের ভিন্ন ভিন্ন প্রজন্মের মাঝে এক চমৎকার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে কাজ করে। তাই বিশ্ব পরিবার দিবস যে শুধু আপনার পরিবারের সাথে মিলবন্ধন গড়ে তোলার ক্ষেত্র তাই নয়, বরং সামাজিক দায়িত্ব পালনের সুযোগও বটে।
কীভাবে এল বিশ্ব পরিবার দিবস
বিশ্ব পরিবার দিবস মূলত জাতিসংঘের একটি উদ্যোগ। সর্বপ্রথম ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘ এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব উত্থাপন ও পাশ করে। সারা পৃথিবীজুড়ে থাকা সকল পরিবারের জীবনের মানোন্নয়ন এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতিসংঘের অবদান রাখাই ছিল এই দিবস পালনের মূলতম উদ্দেশ্য। এলক্ষ্যেই ১৯৯৫ সালের ১৫ই মে প্রথমবারের মতন এই দিবস পালিত হয় জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে।
বিশ্ব পরিবার দিবস ২০২০ এর প্রতিপাদ্য
১৯৫৫ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে সামাজিক উন্নয়ন সম্মেলনে সম্পাদিত হয় কোপেনহেগেন ডেক্লেরেশন। একই বছর চীনের বেইজিঙে সম্পাদিত হয় বেইজিং প্ল্যাটফর্ম ফর অ্যাকশন। ২০২০ সালে এসে এ দি উদ্যোগের বয়সই ২৫ ছাড়িয়েছে। আর এদেরকে ফোকাসে রেখেই এবারের বিশ্ব পরিবার দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হল “পরিবারের উন্নয়ন, কোপেনহেগেন ও বেইজিং +২৫”।
বর্তমানে আমরা যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি সেদিক থেকে চিন্তা করলে এমন একটি দিবস আমাদের জনমানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ছোঁয়াচে কোভিড মহামারী আমাদের উপলব্ধি করছে, মানুষ হিসেবে এখনো আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা আমাদের পরিবার। বিপদ আর আতংকের মাঝে সবচেয়ে বড় আশার জায়গা, নির্ভরতার জায়গা আমাদের পরিবার। প্রতিটি পরিবার যেন তার সদস্যদের জন্য এক বিশাল বটবৃক্ষস্বরূপ, যা সকল বিপদআপদ থেকে আগলে রাখে পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে। আর পরিবার দিবসের মূলভাবনাই এরকম।
২০২০ সালে কীভাবে পালন করতে পারেন এই দিবস
কোভিড মহামারী আমাদেরকে হয়ত একে অপরের মধ্যে কয়েক ফিট দূরত্ব সৃষ্টি করেছে কিন্তু সামাজিকভাবে আমরা এখন অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় বেশি কাছাকাছি। আর সবচেয়ে কাছাকাছি আমাদের পরিবারের সাথে। পরিবারের বন্ধন দিনে দিনে আরও শক্ত হয়ে উঠছে। আর তাই এই দিবসে আপনি পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে তাদের প্রতি আপনার শ্রদ্ধা ও ভালবাসার কথা জানাতে পারেন। এই যে সামাজিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি, সে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে পারেন। সামনের থাকা সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দার বিরুদ্ধে কীভাবে পরিবারের সবাই একজোট হয়ে কাজ করবেন, সে পরিকল্পনা করতে পারেন। প্রতিটি পরিবারের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অবদানই সামগ্রিকভাবে বিশাল হয়ে উঠতে পারে সামনের দিনগুলোতে। আর বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের মূল ধারণাও কিন্তু এমনই, নিজের পরিবারের মাধ্যমে সামগ্রিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করা।
মূল প্রতিপাদ্যের আলোকে যেসব পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে এই পরিবার দিবসে
জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়াদি সংক্রান্ত দপ্তরের তথ্যমতে ২০২০ সালের পরিবার দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় সম্পর্কে দুটি আলাদা ধরণের উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
বেইজিং +২৫ এর আলোকে আলোচিত হয় প্রতিটি পরিবারের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে। এই পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে কীভাবে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে পরিবারগুলো, কীভাবে লিঙ্গ নির্ভর পরিবার ব্যবস্থায় বেইজিং প্লাটফর্ম ফর অ্যাকশনকে এগিয়ে নিয়ে যায়, এ সম্পর্কে বিভিন্ন উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে।
অন্যদিকে কোপেনহেগেন +২৫ থিমটি কাজ করবে পরিবারের মাধ্যমে সামাজিক প্রভাব এবং আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের উন্নয়ন নিয়ে। দুটি উদ্যোগই শেষ পর্যন্ত এক হয়ে আগামীর পৃথিবীতে একটি ক্ষুধা, দরিদ্রতামুক্ত, লিঙ্গবৈষম্যহীন, নিরাপদ সমাজ সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করবে।
প্রতিদিনের দুনিয়ায় আমরা যে সব সমস্যার মুখোমুখি হই, পারিবারিক বন্ধনই পারে তাকে প্রশমিত করতে। তাই সামগ্রিকভাবে বিশ্ব পরিবেশ দিবসের ভুমিকা অনস্বীকার্য। আমরা অনেকেই আমাদের পরিবারের মূল্য বুঝে উঠতে পারি না, এই দিন আমাদেরকে সে বিষয়ে আত্মউপলব্ধি করতেও সহায়ক হতে পারে।