Reading Time: 4 minutes

টুক করে আকাশ ছুঁয়ে আসার জন্য আমরা ঘুরে আসি ছাদ থেকে। আকাশ ছোঁয়ার মত দুঃসাহসটা আমরা পাই মাথার উপর ছাদ আছে বলেই! ঢাকা শহরের ছাদে রয়েছে নানারকম গল্প। আর এই গল্পগুলোর একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে এই ছাদ বাগানগুলো। কোন ছাদে থাকে ফুলের বাগান আবার কোন ছাদে থাকে কৃষি বাগান। এখন বেশিরভাগ ছাদেই রয়েছে কিছু না কিছু গাছ। হোম কোয়ারেন্টাইনে যেখানে সবাই ঘরবন্দী, এমন সময়ে একটু একটু করে বাগানের কাজ করলে কিন্তু খারাপ হয় না! ছাদে সম্ভব না হলেও ঘরের বেলকনিতে বাগান তৈরি করুন। কিভাবে কি করবেন না জানলে এখান থেকে জেনে নিন। জেনে নিয়ে  তৈরি করুন ছাদ বাগান ! 

নিজের ইচ্ছে আর গাছের প্রতি ভালোবাসা থাকলে ছাদের সব জায়গাটুকু ব্যবহার করেই বাগানের শখ পূরণ করা যায়। তার জন্য জানতে হবে ছাদে গাছ লাগানোর পদ্ধতি, ছাদে বাগান উপযোগী ভালো জাতের গাছ সম্বন্ধে ও অন্যান্য পরিচর্যার বিষয়গুলো।  

আপনার ছাদ কেমন বা জায়গা কতটুকু আছে? 

 আপনার ছাদে কেমন জায়গা আছে এবং কতটুকু জায়গা আপনি ব্যবহার করতে পারবেন তা আগেই জানতে হবে! জায়গার উপর নির্ভর করে আপনি গাছ কেমন লাগাবেন সেই ধারনা পাবেন। আপনার ছাদটি কত তলা, আশে পাশে কত তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং আছে বা বড় আকারের গাছপালা আছে কিনা? সারাদিন কেমন আলো বাতাস পাবে এমন বিষয়গুলো আগেই বিবেচনায় আনতে হবে। শুধু বাগান তৈরি করলেই হবে না, আলো বাতাস বৃষ্টি সবকিছু নিশ্চিত করতে হবে আপনাকে। 

ফুল,ফল নাকি সবজি? 

প্রথমেই টবের জন্য উপযুক্ত গাছ নির্বাচন করুন। দীর্ঘজীবী অথবা বৃক্ষজাতীয় গাছ টবে বেশিদিন বাঁচে না। নানা ধরণের মৌসুমি ফুল টবের জন্য সবচেয়ে ভালো। সব মৌসুমের ফুল কিছু কিছু করে লাগাতে পারেন। এতে সারা বছরই বিভিন্ন ফুলের দেখা মিলবে আপনার টবে। আবার বেশ কিছু ফল বা শাক সবজির দেখা মিলবে যেগুলো টবে বেঁচে থাকে সেগুলো বাছাই করে নিন। বেশীরভাগ ছাদ বাগানে চিন্তার বিষয় হয়ে থাকে ছাদের ক্ষয়ক্ষতি সুতরাং আপনার ছাদ বুঝে আপনাকে টব/ড্রাম/বেড বেছে নিতে হবে। ছাদ বাগানের জন্য ফল চাষাবাদে কলম ও হাইব্রিড জাত ব্যবহার করলে বেশি ভালো ফলাফল দেখায়।  

ছাদে যেসব ফুল,ফল বা সবজি রোপণ করা যাবে 

বাগান
ছাদেও এমন বাগান করা সম্ভব

ছাদে বাগান করার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন যেন বড় আকারের গাছ না হয়। তাই ছোট আকারের গাছে বেশি ফল ধরবে এমন গাছ বাছাই করতে হবে। এক্ষেত্রে হাইব্রিড জাতের বা কলম করা গাছ লাগানো যেতে পারে। আমের বিভিন্ন হাইব্রিড বা কলমের জাত যেমন আম্রপালি ও মল্লিকা জাতের আম, আপেল কুল, পেয়ারা, লেবু, পেঁপে, জলপাই, আমড়া, করমচা, শরিফা, আতা, ডালিম, এমনকি কলা গাছও লাগানো যাবে। এছাড়া কলমের জলপাই, থাইল্যান্ডের মিষ্টি জলপাই, কলমের শরিফা, কলমের কদবেল, ডালিম, স্ট্রবেরি, বাউকুল, আপেলকুল, নারিকেলকুল, লিচু, থাইল্যান্ডের লাল জামরুল, গ্রিন ড্রপ জামরুল, আপেল জামরুল, আঙ্গুর পেয়ারা, থাই পেয়ারা, ফলসা, খুদে জাম, আঁশফল, জোড় কলমের কামরাঙা, এমনকি ক্যারালা ড্রফ প্রজাতির নারিকেলের চাষ করা যেতে পারে। ফুলের বেলা গোলাপ, গাঁদা, বেলি, অপরাজিতা, ডালিয়া, চন্দ্রমলি­কা, নয়নতারা, গন্ধরাজ গাছ লাগাতে পারেন ছাদে বা বারান্দায়। বড় বা মাঝারি টবে হাসনাহেনা, জুঁই, বাগানবিলাস, টগর, জবা কিংবা শিউলি ফুল গাছ রাখা যেতে পারে। ফুলের পাশাপাশি ফল গাছও লাগাতে পারেন টবে। যেহেতু ছাদেই বাগান করছেন সবচেয়ে ভালো টবে ফলের গাছ লাগালে। পেয়ারা, আমলকী, জাম্বুরা, ডালিম, লেবু, মরিচ গাছ ছাদে বা ড্রামে লাগানো যেতে পারে। শাক সবজির ভেতর টমেটো, বেগুন, মরিচ, শশা, ঝিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, মটরশুটি, কলমি শুটি, কলমি শাক, লাউ, পুই শাক, পেঁপে, পুদিনাপাতা, ধনেপাতা, থানকুনি, লেটুস, ব্রকলি এসব টবে লাগানো যেতে পারে।

যত্ন ও পরিচর্যা 

নিজের মত করে তৈরি করুন ছাদ বাগান । কিন্তু নিজের হাতে তৈরি হওয়া বাগানের পরিচর্যা বেশ জরুরী। কিভাবে করবেন একদম সহজ করে লিখেছি… 

যেকোন চারা রোপণের আগে দোঁআশ মাটির সঙ্গে তিন ভাগের এক ভাগ পরিমাণ জৈব সার মিশিয়ে মাটি তৈরি করে নিতে হবে। সঙ্গে একমুঠো হাঁড়ের গুঁড়া, দুই চামচ চুন, দু’মুঠো ছাই মিশিয়ে নিতে পারেন। এতে টবের মাটির উর্বরতা অটুট থাকবে দীর্ঘদিন। চারাটি যেন সতেজ ও প্রাণবন্ত হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরী। গাছ লাগানোর পর আস্তে আস্তে চাপ দিয়ে গোড়ার মাটি শক্ত করে দিতে হবে। তারপর গোড়ায় পানি দিন সামান্য। গাছ লাগানোর পরপরই কড়া রোদে রাখবেন না। কয়েক দিন ছায়ায় রেখে তারপর রোদে দিন। সকাল ও বিকেলের হালকা রোদে দিতে পারেন প্রথম কিছুদিন। দ্রুত বেড়ে ওঠা শুরু করলে গাছকে সোজা রাখার জন্য বাঁশের কঞ্চি বা স্টিক ব্যবহার করতে পারেন। তবে টবের গাছ খুব বড় হতে দিবেন না। বাড়তি অংশ ছেঁটে দিন কিছুদিন পর পর। মাসে একবার নিড়ানির সাহায্যে গোঁড়ার মাটি খুঁচিয়ে জৈব সার দিন। গাছের ফুল শুকিয়ে গেলে একটু নিচ থেকে ডালসহ কেটে দিন। নতুন পাতা গজানোর সময় এক চিমটি ইউরিয়া সার এক লিটার পানিতে গুলে গাছের গোঁড়ায় দিন। ট্যাবলেট সারও দিতে পারেন। ফুলের আকৃতি বড় হবে। গাছে কীটনাশক দিন নিয়মিত। খুব প্রয়োজন না হলে এক টব থেকে অন্য টবে গাছ স্থানান্তর করতে যাবেন না।

বাগান
বড় টবে ছোট গাছ কিংবা ছোট টবে বড় গাছ একদমই দিবেন না!

গাছে নিয়মিত পানি দিতে হবে, যদি দু বেলা করে পানি দেন সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন টবের নিচে যেন ৫ থেকে ৬ টি ছিদ্র থাকে, নয়তো বা পানি জমাট বেঁধে যাবে। সপ্তাহে এক থেকে দুবার গাছের পাতায় পানি স্প্রে করতে হবে। গাছে নিয়মিত সার দিতে হবে, একটু এদিক সেদিক হলেই গাছ মারা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে সার যেখানে দিচ্ছেন সেই জায়গাটা বেশ ছোট তাই এক মুঠো সারই যথেষ্ট একটি গাছের জন্য। এবং গাছের গোড়ায় কখনো সার দেওয়া যাবে না ৪ থেকে ৫ সেঃ মিঃ দূরে দিতে হবে। মিশ্র সার বেশ ভালো। সবচেয়ে ভালো হয় যদি গোবর সার দেওয়া যায়। কিন্তু, গোবর সার গুড়ো করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।কেউ যদি চান তাহলে সবজির ছোলা পঁচিয়ে জৈব সার তৈরি করে নিতে পারেন সেটাও গাছের জন্য খুব ভালো। গাছ পরিপক্ক হলে বা ফুল আসার ২-৩ সপ্তাহ আগে সার দিতে হবে।

গাছ থাকলেই সেখানে দেখা দিবে নানা রকম পোকা মাকড়। সেক্ষেত্রে আপনাকে হতে হবে আরও সাবধান। পোকা আক্রান্ত পাতা বা ডাল কেটে দিতে হবে সাথে সাথে। সম্পূর্ণ গাছে সাবান পানি স্প্রে করতে হবে। তাহলে পোকা মাকড় থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া যাবে।নিজের ঘর, ছাদ, বেলকনি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশের জন্য গাছের বিকল্প নেই।

টগর ফুল
টবে ফোটা টগর ফুল

এই ব্লগটি পড়ে আপনি নিজেই তৈরি করুন ছাদ বাগান । আমি ব্যক্তিগত ভাবে গাছ গাছালি বেশ পছন্দ করি। নিজের করা কিছু ছবি শেয়ার করছি! যদিও এগুলো ছাদের নয় কিন্তু আমার নিজের করা বাগান! আপনার করা বাগানের ছবি দেখাতে কমেন্ট করুন। আমিও দেখতে চাই!

Write A Comment