সুপরিকল্পিত নগরায়নের এক চমৎকার উদাহরণ হল উত্তরা মডেল টাউন । মূল ঢাকা শহর থেকে কিছুটা দূরে, ঢাকা জেলার সীমানা ঘেঁষে এর অবস্থান। ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক পূর্ব – পশ্চিমে আড়াআড়িভাবে মোটাদাগে দুইভাগে ভাগ করে এই এলাকাকে। পূর্বপাশে রয়েছে সেক্টর ২, ৪, ৬ এবং ৮ এবং পশ্চিমপাশে ১,৩,৫,৭ সহ বাকিগুলো। বর্তমানে মোট ১৪টি সেক্টরে মানুষ বসবাস করলেও আরও পশ্চিমে উত্তরা তৃতীয় প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুতগতিতে।
কিছুদিন আগেও পুরোপুরি শান্ত এই এলাকা এখন দিনভর থাকে হাজারো মানুষের কোলাহলে মুখরিত। তবে এই ব্যস্ত জীবনের মাঝেও সবাই কোন না কোনভাবে বের করে নেয় একখণ্ড অবসর। নিজের পরিবার এবং আপনজনের সাথে কাটানোর জন্য কিছু একান্ত সময়। হোক তা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সবুজে ঘেরা পার্কে কাটানো কোন বিকেল অথবা সারাদিনের কর্মযজ্ঞ শেষে সবাই মিলে একসাথে রাতের খাবার খাওয়া, কর্মজীবী অথবা শিক্ষার্থীদের জন্য অবসর সময় কাটানোর জন্য কী কী সুযোগ এই উত্তরা মডেল টাউনে রয়েছে? ঢাকার অন্যান্য এলাকার সাথে তুলনায় করলে সেগুলো আসলে কেমন? সর্বোপরি বসবাসের জন্য উত্তরা তার বাসিন্দাদের চিত্তবিনোদনের জন্য কি কি সুযোগ দিতে পেরেছে? জানতে চাইলে পড়ুন বিস্তারিত।
পার্ক, হাঁটার যায়গা এবং খেলার মাঠ
পরিকল্পিত আবাসনের ফলাফল হিসেবে উত্তরাবাসী যে সকল সুবিধা উপভোগ করে, নির্দিষ্ট খেলার মাঠ এবং পার্ক তার মাঝে অন্যতম। প্রায় প্রতিটি সেক্টর সংলগ্নেই রয়েছে একটি করে খেলার মাঠ এবং পার্ক। এরমধ্যে ৩ নম্বর সেক্টর মাঠ (ফ্রেন্ডস ক্লাব মাঠ নামেও পরিচিত), ৪, ১৩ এবং ১১ নম্বর সেক্টর মাঠ সর্বদা মুখরিত থাকে শারীরিক কসরত কিংবা খেলাধুলা করতে ইচ্ছুক মানুষের আনাগোনায়।
উত্তরায় হাঁটার যায়গাগুলো মূলত তিন ধরণের। প্রথমেই আছে পার্কগুলো যা মাঠের পাশে কিংবা আলাদা কোন স্থানে এক টুকরো যায়গা নিয়ে বানানো। ১৩, ৪ বা ৭ নম্বর সেক্টরে এমন পার্ক রয়েছে। অন্যদিকে ৩ নম্বর সেক্টর এবং ১১ নম্বর সেক্টরে দেখা যায় খেলার মাঠের চারপাশ দিয়ে বাঁধানো সুন্দর সার্কিট যা আবালবৃদ্ধবনিতা সকলেই ব্যবহার করেন। উত্তরার কথা আসলে এর দৃষ্টিনন্দন লেকের কথা আসবেই। এই লেকের পার বাঁধাই করে চমৎকার পার্ক তথা ওয়াকওয়েও রয়েছে উত্তরা জুড়ে। এমন একটি পার্ক বা ওয়াকওয়ের পাশেই আপনি চাইতে পারেন একটি ফ্ল্যাটের খোঁজ। সেজন্য দেখে নিন বিপ্রপার্টিতে থাকা উত্তরা মডেল টাউন এ বিক্রির জন্য ফ্ল্যাট।
রেস্টুরেন্ট ও কফিসপ
অবসর সময় কাটানোর জন্য মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের সাথে সাথে চাই চমৎকার খাবারের উপস্থিতিও। আর পুরো উত্তরাজুড়েই গড়ে উঠেছে অসংখ্য রেস্টুরেন্ট এবং কফিশপ। বিভিন্ন ব্র্যান্ড যেমন কে এফ সি, সি এফ সি, রেড চিকেন, পিজ্জা ইন এর রেস্টুরেন্ট যেমন আছে তেমন কফি ওয়ার্ল্ডের মতন কফিশপেরও উপস্থিতি আছে এখানে। জসিমউদ্দিন মোড়, রাজলক্ষ্মী, আজমপুর, হাউজবিল্ডিং এর মত বিভিন্ন ব্যস্ত পয়েন্টে রয়েছে এসব রেস্টুরেন্ট ও কফিসপ। এছাড়া উত্তরা মডেল টাউন সেক্টরের ভেতরেও গড়ে উঠেছে বিভিন্ন মানের অসংখ্য খাবারের দোকান। রাজলক্ষ্মীর কাছাকাছি থাকা উত্তরা কফি হাউজ, ১৩ নম্বর চৌরাস্তার কাছে থাকা চাপ সামলাও বা ১২ নম্বর সেক্টরে সোনারগাঁ জনপথের শর্মা হাউজ এর মধ্যে কয়েকটি।
মুখরোচক চটপটি, ফুচকা আর ফুডকোর্ট
বাংলা খাবারের কথা আসলে বিকেলবেলা চটপটি ফুচকার কথা আসবে না তা কি করে হয়? আর অন্যান্য এলাকার মতন উত্তরাতেও পাবেন অসংখ্য চটপটি এবং ফুচকার সমাহার। মোটামুটি প্রতিটি সেক্টরের ব্যস্ত স্থানেই ভ্যানগাড়িতে চটপটিওয়ালাদের দেখা পাওয়া গেলেও মূলত স্কুল কলেজের আশপাশে এবং ব্যস্ত জংশনগুলোতে তাদের উপস্থিতি চোখে পড়বার মতন। ১৩ নং সেক্টর ব্রিজ, সোনারগাঁ জনপথ রোড, ১২, ১৩ সহ সবগুলো চৌরাস্তায় দেখা যায় অসংখ্য চটপটির মেলা। আপনি যদি রাস্তার পাশে বসে চটপটি উপভোগ না করতে পারেন তাহলে এখন বিভিন্ন রেস্তোরাঁতেও মেলে চটপটির খোঁজ।
এসবের পাশাপাশি উত্তরাতে এখন গড়ে উঠেছে প্রচুর ভ্রাম্যমাণ ফুডকোর্টও। মজাদার সব ফাস্ট ফুড এবং ফ্রাইজ খেতে খেতে এখানে আপনি মেতে উঠতে পারেন বন্ধুদের সাথে আড্ডায়। ভ্রাম্যমাণ এসব ফুডকোর্ট ছাড়াও রাজলক্ষী কমপ্লেক্সের কাছে স্বপ্ন সুপার শপের উপরে কিংবা সেক্টর ১৩’র গাউসুল আজম এভিনিউতে থাকা কাজী অ্যাসপারাগাসও ফুডকোর্ট হিসেবে অনেকেরই প্রিয়।
স্টুডেন্টদের আড্ডা আর টং দোকান
স্বতন্ত্র মডেল টাউন হিসেবে উত্তরা মডেল টাউন জুড়ে আছে একাধিক স্কুল, কলেজ এবং ইউনিভার্সিটি। মূলত এগুলোকে কেন্দ্র করেও গড়ে উঠে বিভিন্ন টং এবং ছাত্র ছাত্রীদের আড্ডার স্থানগুলো। ৭ নম্বর সেক্টরের উত্তরা হাই স্কুল, আজমপুর, সাঈদ গ্র্যান্ড সেন্টার, ৬ নম্বরে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ১০ নম্বরে আইইউবিএটি ইউনিভার্সিটি, ৩ নম্বরের সাংগাম এবং কাবাব ফ্যাক্টরির সংলগ্ন এলাকা, ৪ ও ৬ নম্বরের রেললাইন নিকটস্থ এলাকায় রয়েছে অসংখ্য টং দোকান যা সবসময় মানুষের পদচারনায় মুখরিত।
এবং দিয়াবাড়ি
উত্তরায় ঘুরাঘুরির কথা আসবে আর দিয়াবাড়ির কথা আসবে না তা কি হয়? শুধু উত্তরা না বরং এর আশপাশ এবং ঢাকা শহরের সব জায়গা থেকে মানুষ ঘুরতে আসেন এখানে। দিয়াবাড়ি বলতে মূলত সম্প্রসারিত উত্তরা তথা উত্তরা তৃতীয় প্রকল্পের স্থানকেই বুঝায়। দিগন্ত বিস্তৃত খোলা মাঠ, শরৎকালে শ্বেত শুভ্র কাশফুল, লেকজুড়ে পরিষ্কার স্বচ্ছ পানি আর মন মাতানো হাওয়ার টানে শত শত মানুষ প্রতিদিন ছুটে আসেন এই দিয়াবাড়িতে। পুরো দিয়াবাড়ি জুড়েই আছে অসংখ্য খাবারের স্টল। আছে লেকের পানিতে নৌকা চালানোর সুযোগ। ছুটির দিনে পুরো এলাকা থাকে মানুষের আগমনে সরগরম।
উত্তরাতে অবসর সময় কাটানোর জন্য আর কি কি উপায় রয়েছে? কোনগুলো উল্লেখ না করলেই নয়? আপনি আপনার সময় কিভাবে কাটান? কমেন্টে জানিয়ে দিন আজই! আর এমন আরও চমৎকার ও তথ্যবহুল পোস্টের খোঁজ পেতে ঘুরে আসুন আমাদের বিপ্রপার্টি ব্লগ থেকে।