Reading Time: 4 minutes

ঘরে নান্দনিকতা ও কার্যকারিতার যথাযথ মেলবন্ধন ঘটাতে চাইলে মানানসই ইন্টেরিয়র ডিজাইন স্টাইল বেছে নেয়ার কোনো বিকল্প নেই। আর ইন্টেরিয়র ডিজাইনের স্টাইলগুলো জানা থাকলে উপযুক্ত স্টাইল বেছে নেয়া হবে অনেক সহজ। এ কথা মাথায় রেখেই বিপ্রপার্টি ব্লগের আয়োজনে থাকছে বিখ্যাত কিছু ইন্টেরিয়র ডিজাইন স্টাইল নিয়ে ব্লগ সিরিজ। আজকের ব্লগে জানাচ্ছি ইন্টেরিয়র ডিজাইনে ট্র্যানজিশনাল ডিজাইন স্টাইল এর খুঁটিনাটি।     

ট্র্যানজিশনাল ডিজাইন স্টাইল কী?

ট্র্যানজিশনাল ডিজাইন স্টাইল
ট্র্যানজিশনাল ডিজাইন স্টাইল সবচেয়ে উপযুক্ত ভাবে ট্রেডিশনাল আর কনটেম্পোরারির সংযোগ ঘটায়।

ট্র্যানজিশনাল ডিজাইন স্টাইল মূলত ট্রেডিশনাল আর কনটেম্পোরারি, অর্থাৎ ঐতিহ্যবাহী আর  সমসাময়িক ডিজাইন স্টাইলের মেলবন্ধন। এই মেলবন্ধন এমন হতে হবে যাতে ঘরে এক ক্ল্যাসিক, সংবেদনশীল আবহ সৃষ্টি হয়। এ ডিজাইন স্টাইলে সাজানো ঘর দেখতে তাই পুরোনো ধাঁচেরও না, আবার অত্যাধুনিকও না, তবে এতে কমনীয়তা ও নান্দনিকতার স্পষ্ট ছাপ চোখে পড়ে। আবার কার্যকারিতার দিকটিও বজায় রাখে ট্র্যানজিশনাল ডিজাইন স্টাইল। 

পুরোনো আভিজাত্যের বড়াই নেই এ ডিজাইন স্টাইলে, তবে আছে প্রাচীনত্বের গৌরব। অন্যদিকে আধুনিক ডিজাইন স্টাইলের যান্ত্রিকতা একে জর্জরিত করেনি, বরং বেছে নিয়েছে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ধারা। বিশ্বখ্যাত ইন্টেরিয়র ডিজাইন স্টুডিওর ডিজাইনার ভিক্টোরিয়া স্যাস তাই বলেন, ‘‘ট্র্যানজিট’ শব্দটির মূল কী তা ভেবে দেখতে পারেন। ট্র্যানজিট অর্থ কিন্তু সেই মিডল গ্রাউন্ড, যা অতীত ও বর্তমানের, পূর্ব ও পরবর্তীর মিলনস্থান। ট্র্যানজিশনাল ডিজাইন স্টাইল তাই সবচেয়ে উপযুক্ত ভাবে ট্রেডিশনাল আর কনটেম্পোরারির সংযোগ ঘটায়।’ এই ডিজাইন স্টাইলে দেয়ালে বিচিত্র নকশার আসবাব ব্যবহারে আধুনিকতা আনার রেওয়াজ যেমন আছে, তেমনি উষ্ণ আলোকসজ্জায় স্নিগ্ধতা আনার সুযোগও রয়েছে। 

ট্র্যানজিশনাল  ডিজাইন স্টাইলের ইতিকথা

ট্র্যানজিশনাল ডেকোর স্টাইল
কাঠের ফ্রেমে বড় আয়না বা ধাতব আসবাবের ওপর প্যাটার্নড টেক্সটাইল ট্র্যানজিশনাল ডেকোর স্টাইল ফুটিয়ে তোলে

ট্র্যানজিশনাল ডিজাইন স্টাইলকে বলা হতো ‘ক্ল্যাসিক আধুনিকতা’। ১৯৫০ সালের শুরুর দিকে আগের শতাব্দীতে জনপ্রিয় হওয়া মডার্ন এবং মিড-সেঞ্চুরি মডার্ন স্টাইলের বিপরীত স্রোত হিসেবে এর উৎপত্তি। 

১৯৪০-১৯৮০ পর্যন্ত মডার্নিজমের চর্চা ছিলো তুঙ্গে, সেই ধারাবাহিকতায় তখন বাড়ির নকশায়ও দেখা যায় মসৃণ-সরল রেখা, বড় কাঁচের জানালা, জ্যামিতিক নকশার আসবাবের উপস্থিতি। কিন্তু রান্নাঘরে এমন আধুনিক নকশা মানুষের জীবনযাত্রার সাথে ঠিক যেন মানানসই হচ্ছিলো না। ফলে প্রথমে রান্নাঘরেই ট্রেডিশনাল ডিজাইন স্টাইলের সাথে আধুনিক অর্থাৎ কনটেম্পোরারি ডিজাইন স্টাইলের যোগ ঘটানো হয়। পরে ধীরে ধীরে এই সাম্যমুখী ডিজাইন স্টাইলের ছোঁয়া লাগে বাড়ির অন্যান্য ঘরেও। 

ট্র্যানজিশনাল ইন্টেরিয়র স্টাইলের মূল মন্ত্র

ট্র্যানজিশনাল ডিজাইন
ট্র্যানজিশনাল ডিজাইন আপনার ঘরে আনবে আধুনিকতা ও প্রাচীনত্বের নান্দনিক সন্নিবেশ

প্রাচীন আভিজাত্য আর আরামদায়ক আধুনিকতা মিলেমিশে একাকার হয় ট্র্যানজিশনাল ইন্টেরিয়র স্টাইলে। আর এই মেলবন্ধন যাতে মানানসই হয়, তা নিশ্চিত করতে কিছু দিক খেয়াল করা দারুণ জরুরি। 

নিউট্রাল-ডার্ক রং 

ইন্টেরিয়র ডিজাইনে ট্র্যানজিশনাল ডেকোর স্টাইল আনতে দেয়ালে বা মেঝেতে নিউট্রাল রংগুলো ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ সাদা, বেইজ, গ্রে, ট্যান, ভ্যানিলা শেড এর উপযোগী।  তবে ডার্ক ব্রাউন, নেভি ব্লু, বটল গ্রিনের মতো ডার্ক কিছু শেডও ব্যবহৃত হয় অ্যাকসেন্ট ওয়ালের রং হিসেবে। ট্র্যানজিশনাল স্টাইলে ডার্ক শেডের রং দিয়ে কনট্রাস্ট সৃষ্টির রীতি বহুল প্রচলিত। 

মিনিমালিজম 

ইন্টেরিয়র ডিজাইনে ট্র্যানজিশনাল ডেকোর স্টাইল আনতে চাইলে মিনিমালিজমের দিকে খেয়াল রাখা আবশ্যক। প্রাচীনত্বের ছাপ এ ডিজাইন স্টাইলে থাকে ঠিকই, তবে ভিক্টোরিয়ান স্টাইলের মতো নকশাদার আসবাব, ভারী টেক্সটাইল এর আনুষঙ্গ হয় না। বরং আসবাবে, সজ্জা সামগ্রীতে থাকে ছিমছাম, পরিচ্ছন্ন ভাব। অনেক জিনিস বা ভারী নকশার কিছুই এতে ব্যবহৃত হয় না। ভিন্টেজ আসবাব হিসেবে কিছু ঘরে রাখা হলেও, সেই ঘরের অন্যান্য আসবাব হয় যথেষ্ট অনাড়ম্বর যাতে মিনিমালিজমের সূত্রের বাত্যয় না ঘটে। 

বিভিন্ন উপাদানের লেয়ারিং 

বিভিন্ন উপাদান লেয়ারিং বা স্তর হিসেবে ব্যবহার করা  ইন্টেরিয়র ডিজাইনে ট্র্যানজিশনাল  ডেকোর স্টাইল আনার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। তবে সাধারণত টেক্সচার সহ উপাদানই এখানে লেয়ারিং করা হয়। যেমন কাঠ, কাঁচ, কাপড়, স্টিল, পিতল ইত্যাদি উপাদান ব্যবহৃত হয়। কাঠের ফ্রেমে বড় আয়না বা ধাতব আসবাবের ওপর প্যাটার্নড টেক্সটাইল ট্র্যানজিশনাল ডেকোর স্টাইল ফুটিয়ে তোলে। 

সরলরেখা ও বক্রতার সন্নিবেশ 

আসবাবের নকশায়, ফেব্রিকের প্যাটার্নে সরলরেখার আধিক্যই এখানে বেশি কেননা তা ট্র্যানজিশনাল ডেকোর স্টাইলের এক অনন্য মূলমন্ত্র, মিনিমালিজমের ক্ষেত্রে জরুরি। কিন্তু মডার্ন বা কনটেম্পোরারি ডিজাইন স্টাইলের মতো এখানে শুধু ক্লিন বা স্ট্রেট লাইনের ওপরই ফোকাস করা হয় তা নয়। বরং আসবাবের নকশায় রাউন্ডেড কর্নার (rounded corner), কার্ভি স্ট্রাকচার (curvy structure)-ও বেছে নেয়া হয়। তবে এর পরিমিতিবোধ এখানে গুরুত্ববহ। 

যেভাবে ট্র্যানজিশনাল ইন্টেরিয়র স্টাইলে ঘর সাজাবেন 

ট্র্যানজিশনাল ডেকোর স্টাইল
যদি ট্রেডিশনাল ডাইনিং টেবিল থাকে, তবে আধুনিকতা আনতে মেটালিক পেনডেন্ট লাইট ব্যবহার করতে পারেন

অতীত ও বর্তমান, প্রাচীন ও আধুনিক – এই দুই বৈপরীত্যের সৌন্দর্যই যারা উপলব্ধি ও উপভোগ করতে জানেন, তাদের জন্য ট্র্যানজিশনাল ইন্টেরিয়র স্টাইল বেশ উপযোগী। তবে আসুন জেনে নেই কীভাবে ইন্টেরিয়র ডিজাইনে ট্র্যানজিশনাল ডেকোর স্টাইল আনবেন। 

ট্র্যানজিশনাল ইন্টেরিয়র স্টাইলে এমন কোনো ধরা বাঁধা নিয়ম নেই, যা আপনাকে বলে দেবে যে আপনি আসবাবে আধুনিকতা বেছে নিবেন নাকি সাজসজ্জায়। তবে যদি আসবাবে আধুনিকতা বেছেই নেন, তবে সাজসজ্জায় বেছে নিতে হবে ট্রেডিশনাল কিছু। আর যদি আসবাব হয় প্রাচীন, তবে সাজসজ্জার ক্ষেত্রে আধুনিক ধারা বেছে নিতে বলে এই ডিজাইন স্টাইল। তাই ঘরে যখন ট্র‍্যানজিশনাল ডিজাইন স্টাইল করবেন, তখন এ ব্যাপারটি মনে রাখুন। আপনার খাবার টেবিল যদি মর্ডান, স্লিক ধাঁচের হয়; তবে চেয়ারে ব্যবহার করুন হাতে বোনা ট্রেডিশনাল চেয়ার কাভার, রানার। আর যদি ট্রেডিশনাল ডাইনিং টেবিল থাকে, তবে আধুনিকতা আনতে মেটালিক পেনডেন্ট লাইট ব্যবহার করতে পারেন।

শুধু যে আসবাব আর সাজসজ্জায় বৈপরীত্য থাকবে তা নয়। ম্যাটেরিয়ালের দিকটিও খেয়াল রাখতে পারেন। যেমন ট্রেডিশনাল কিচেনে মেটালিক কিচেন টপ, মডার্ন ফ্লোর টাইলস ব্যবহার করতে পারেন। 

ট্র্যানজিশনাল ডিজাইন আপনার ঘরে আনবে আধুনিকতা ও প্রাচীনত্বের নান্দনিক সন্নিবেশ। এ সম্পর্কে আরো কিছু জানতে চাইলে বা কোনো মূল্যবান মতামত জানাতে চাইলে লিখতে পারেন আমাদের কমেন্টস বক্সে!

চাইলে বিপ্রপার্টি ইন্টেরিয়রের সহায়তায় আপনার বাড়িও সাজিয়ে ফেলতে পারেন এই  ডিজাইন স্টাইলটির মাধ্যমে। বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন এখনই!

কলঃ ০৯৬১২১১০০১১
ইমেইলঃ interior@bproperty.com
ভিজিট করুন https://my.bproperty.com/interior

Write A Comment